ঢাকা, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার
মেনু |||

‘আবুল কালাম আজাদ হাওলাদার, একজন স্বচ্ছ রাজনৈতিক কর্মীর নাম’

আনোয়ার কবির: একই জেলায় জন্মগ্রহণ করলেও আজাদ ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় হয় ২০০৭ সালের আগস্ট মাসে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে আগস্টের শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানে। তিনি তখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনীতি শেষ করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হয়েছেন। আর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য ঢাকায় আসলাম। পরিচয়ের প্রথম দিনেই তাকে একজন একনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে মনে হলো।

 

আমার মোবাইল নাম্বার নিজে চেয়ে নিলেন এবং তার ফোন নাম্বারটি আমাকে দিলেন। ফেসবুক না থাকার কারণে সেই দুঃসময়ের ছবি গুলো নেই। আমরা যখন শ্রদ্ধা নিবেদন করে এসে দাঁড়ালাম পুলিশ এসে আমাদের উপর লাঠি চার্জ করলো এবং কয়েক জন কে পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে গেলো। আমরা মুহুর্তে যে যার মতো পালিয়ে গেলাম এবং পথের পথিকদের মাঝে হারিয়ে গেলাম। এরপর থেকেই তার সাথে প্রায় সকল রাজনৈতিক কর্মসূচীতে আমার দেখা হতো এবং ফোনে কথা হতো। যখনই দেখা কিংবা কথা হতো একটা কথাই বলতেন রাজনীতি কর স্বচ্ছতার সাথে একদিন সফলতা আসবেই।

 

আজ দীর্ঘ ১৩ বছরে তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি কোনদিন হতাশ হতে দেখিনি। আমার চোখের সামনেই চরম দুঃসময়ের মুখোমুখি হতে দেখেছি কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি। আমি কিছু দিন একজন মাননীয় উপমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারীর দায়িত্ব পালন করেছি, তখন অনেক পরিচিত বড় ভাই, ছোট ভাই, বন্ধু বিভিন্ন কারণে তদবির করেছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমি তাদের উপকার করতে ব্যার্থ হয়েছি। কিন্তু আজাদ ভাইয়ের একজন কাছের এবং স্নেহের ছোট ভাই হিসেবে কোনদিন তদবিরে জন্য একটা ফোনও করেননি। বরং আমি একদিন তাকে ফোন করে মন্ত্রণালয়ে চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলাম। চায়ের টেবিলে আক্ষেপ করে বললেন, “বড় ভালো লাগলো একজন ছোট ভাই মন্ত্রণালয়ে দাওয়াত দিয়ে চা খাওয়ালেন, কিন্তু অনেক বড় ভাইয়েরা বড় বড় চেয়ারে বসে থাকলেও কোনদিন খোঁজ নেয়নি দুঃসময়ের রাজপথের সহযোদ্ধা কেমন আছে। সমস্যা নেই আল্লাহ সবার দিন নিবে।

 

এই রাজনীতির জন্য নিজের ব্যবসাটাও আজ ধ্বংসের মুখে।” এরপর আমিও মন্ত্রণালয়ের চাকরি থেকে অব্যাহতি পেলাম এবং আবারও আজাদ ভাইয়ের খুব কাছাকাছি গেলাম। নিজের পকেটের টাকা দলের পিছনে খরচ করতে দেখেছি। আমার চোখের সামনে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যেতে দেখলাম এবং তার সংসার জীবনে একটা চরম দুঃসময় দেখতে পেলাম। অনেকই দেখেছি দলের কোনো পদ পদবি ছাড়াই শুন্য থেকে কোটিপতি হতে, শিল্পপতি হতে। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন এবং ক্ষমতায় অপব্যবহার দেখেছি। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কখনো কখনো ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা আজাদ ভাইকে দেখেছি নীরবে নদীর স্রোতের মতো দলের প্রতিটি কর্মসূচির সাথে বয়ে যেতে।

 

এতো দিনে তার পুরো পারিবারিক খবর আমার কাছে চলে এসেছে। তার পরিবার একটা আওয়ামী পরিবার এবং রাজনৈতিক পরিবার। তার পরিবার থেকে বারবার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। জনগণের খুব কাছাকাছি থাকা একটা পরিবারে সন্তান আজাদ ভাই কি তার দীর্ঘদিনের ত্যাগ, শ্রম, ঘাম এবং সততার পুরষ্কার পাবেনা? আর যদি সে পুরষ্কার না পায় তাহলে আগামী দিনের রাজনীতির মাঠে এমন আজাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা! আমার দৃঢ় বিশ্বাস আজাদ ভাই আপনি হারবেননা, আপনি হারতে পারেন না। আপনি হারলে আমার মতো অসংখ্য যুবকের রাজনীতির প্রতি আরও বেশি ঘৃণা জন্মাবে যারা আপনার মতো নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক কর্মীদেরকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন।

 

একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনে করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপনার শ্রম, ত্যাগ, মেধা এবং সততার মূল্যায়ন করবেন। রাজনৈতিক স্বচ্ছ কর্মীদের সফলতা আসবেই, ইনশাআল্লাহ।

 

লেখকঃ আনোয়ার কবির, সাবেক ছাত্রনেতা এবং ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার।


ঢাকাওয়াচ/স

সম্পাদকঃ মোঃ শাখাওয়াত হোসেন সজীব
নিবন্ধন নং -১৬৬