
মোবাইল ফোন বাজারে সম্ভাব্য অস্থিরতার আশঙ্কায় এনইআইআর কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চেয়ে রাজধানীতে মানববন্ধন করেছে মোবাইল ব্যবসায়ীরা। নীতিমালা সংস্কার ও সমান প্রতিযোগিতার সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি তুলে ধরেন তারা।
রোববার ৩০ নভেম্বর কারওয়ান বাজার ও পান্থপথ এলাকায় আয়োজিত এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের নেতারা বলেন, দেশের মোবাইল ফোন ব্যবসার ৭০ শতাংশের বেশি অংশ যাদের হাতে, তাদের মতামত ছাড়াই ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার চালু করা অযৌক্তিক। তারা জানান, তারা এনইআইআরের বিরোধী নন, বরং নীতিমালার প্রয়োজনীয় সংস্কার, ন্যায্য কর কাঠামো এবং বাজারে সমান সুযোগ নিশ্চিত করাসহ কয়েকটি প্রস্তাবনা সরকারকে জানাতে চান। তাদের অভিযোগ, এত বিশাল সংখ্যক ব্যবসায়ীর কথা না শুনেই সরকার একতরফাভাবে ব্যবস্থা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, পূর্ব সতর্কতা ছাড়া হঠাৎ এনইআইআর বাস্তবায়নের ঘোষণা বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এতে প্রায় ২৫ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও এই খাতে যুক্ত ২০ লাখের বেশি মানুষের জীবিকা সংকটে পড়বে। তারা দাবি করেন, বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে স্টকে কোটি কোটি টাকার হ্যান্ডসেট রয়েছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে এ সব পণ্য বিক্রি করা সম্ভব নয়। তাদের অভিযোগ, কয়েকজন ব্যবসায়ীর সুবিধার জন্য এমন সিদ্ধান্ত হলে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা না হলে সারাদেশের মোবাইল ব্যবসায়ীরা ঢাকায় সমবেত হয়ে কঠোর আন্দোলনে নামবেন।
এমবিসিবির নেতারা আরও বলেন, এনইআইআরের বর্তমান কাঠামো অপরিবর্তিত থাকলে শুল্ক বাড়ানো বা কমানো কোনোভাবেই বৈধ আমদানিকে সহজ করবে না। বিটিআরসির নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে, কোনো বিদেশি ব্র্যান্ড স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বা সংযোজন করলে সেই ব্র্যান্ডের কোনো মডেল অন্য প্রতিষ্ঠান আমদানি করতে পারবে না। ব্যবসায়ীদের মতে, এই নিয়ম বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য তৈরির পথ খুলে দিচ্ছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, প্রতিযোগিতা কমে গেলে ১৮ কোটির মোবাইল বাজার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে, স্মার্টফোনের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং সাধারণ ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। একই সঙ্গে দেশের ডিজিটাল উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
মানববন্ধনে মোবাইল খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সংগঠনটি সরকারের কাছে কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরে। এর মধ্যে ছিল প্রস্তুতকারকের সঙ্গে বাধ্যতামূলক চুক্তি বাতিল, বিল অফ এন্ট্রি জমা দিলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে হ্যান্ডসেট রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা, স্টকে থাকা পণ্য বিক্রির জন্য অতিরিক্ত সময় বা নীতিমালা ঘোষণা, বিদেশি হ্যান্ডসেটে ৫৭ শতাংশ শুল্ক হ্রাস, স্থানীয় প্রস্তুতকারকদের খুচরা বিক্রয় চেইনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা, এনইআইআর ব্যবস্থাপনা একাধিক মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা এবং গবেষণাভিত্তিক বাস্তবসম্মত নীতিমালা প্রণয়ন।
মানববন্ধনে এমবিসিবির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধিসহ ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মীরা অংশ নেন। কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় এর আগের দিন শনিবার সারাদেশে সকল মোবাইল ফোনের দোকান বন্ধ রাখা হয়। একই দাবিতে বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।