
ময়মনসিংহের ত্রিশালে সরকারি নজরুল একাডেমি মাঠে ভয়াবহ এক হত্যাকাণ্ডে নিজের বন্ধুকেই কুপিয়ে হত্যা করেছেন অহিদুল ইসলাম। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি দাবি করেছেন, “আমাকে কালো জাদু করেছে তাই তাকে আমি খুন করেছি।”
নিহত মুনতাসির ফাহিম ত্রিশাল ইউনিয়নের চিকনা মনোহর গ্রামের বাদল মিয়ার ছেলে। মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম চার মাস আগে দেশে ফিরেছিলেন। ২৯ নভেম্বর তার মালয়েশিয়া ফেরার কথা ছিল; ২৫ ডিসেম্বর থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার সময়সূচি নির্ধারিত ছিল।
অভিযুক্ত অহিদুল ইসলাম ত্রিশাল পৌরসভার দরিরামপুর গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শৈশব থেকেই ফাহিম ও অহিদুল (ডাকনাম অনিক) ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একসঙ্গে স্কুল, একসঙ্গে পথচলা—বন্ধুত্ব ছিল গভীর। মালয়েশিয়া থেকে ফিরে ফাহিম আবার অহিদুলের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেন। তবে কিছুদিন পর অহিদুল মনে করতে থাকেন, তাকে নাকি ‘কালো জাদু’ করা হয়েছে এবং এ কাজটি করেছে ফাহিম। এই কুসংস্কারের জেরে তিনি প্রতিশোধের নামে বন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করেন।
ফাহিমের স্কুলবন্ধু সোহান বলেন, “ফাহিমের সঙ্গে আমাদের অনেক ভালো সময় কেটেছে। স্কুলের দিনগুলো থেকে সে ছিল উজ্জ্বল মুখ। কখনো দুঃখ-কষ্ট প্রকাশ করত না। এমন ঘটনা কীভাবে ঘটল বুঝতে পারছি না—এটা যেন দুঃস্বপ্ন।”
নিহতের মা ফাতেমা খাতুন বলেন, “আমার ছেলে এ ধরনের কালো জাদুতে নেই। এগুলো সে বিশ্বাসও করে না। অনিক মিথ্যা বলছে।”
তিনি আরও জানান, অনিক ও ইব্রাহিম কয়েকদিন আগে বাড়িতে এসে ফাহিমের খাবার নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি
করেছিলেন। তার ভাষায়, “আমি বুঝতে পারিনি, সে আমার ছেলেকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছিল।” তিনি খুনির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
ত্রিশাল থানার ওসি মনসুর আহমেদ বলেন, দুই তরুণ ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। হত্যার পর অহিদুল থানায় এসে জানান, ফাহিম নাকি কালো জাদু করে তার জীবন নষ্ট করেছে, তাই তিনি তাকে হত্যা করেছেন।
আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতেও তিনি একই কথা বলেন।
ত্রিশাল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এসএম হাসান ইসরাফিল বলেন, অভিযুক্তের দাবি অনুযায়ী, ভিকটিম তাকে নাকি কালো জাদু করে অক্ষম করে রেখেছিল। তিনি আরও বলেন, “আমরা ধারণা করছি, এর পেছনে নারীসংক্রান্ত বিষয়ও থাকতে পারে। পাশাপাশি কালো জাদুর প্রসঙ্গটিও যাচাই করে দেখা হচ্ছে।”
ঘটনাটি প্রকাশ পায় বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে। হাতে একটি ‘চাইনিজ কুড়াল’ নিয়ে অহিদুল থানা হাজির হয়ে পুলিশকে জানান, তিনি ফাহিমকে কুপিয়ে হত্যার পর এখানে এসেছেন। তার তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ নজরুল একাডেমি মাঠে গিয়ে পূর্ব পাশে পানির ট্যাংকের কাছে ফাহিমের মরদেহ উদ্ধার করে।