
ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরে আটটি কুকুর ছানাকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। ঘটনার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়রা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং দোষীর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ চত্বরের আবাসিক এলাকায় গেজেটেড ভবনে থাকা মা কুকুর সম্প্রতি আটটি ছানা প্রসব করেছিল।
রোববার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর ছানাগুলো নিখোঁজ হওয়ায় মা কুকুরটি দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে এবং দীর্ঘ সময় ধরে প্রচণ্ড আর্তচিৎকার করে। সারারাত তাকে আবাসিক এলাকা, অফিসার্স ক্লাব ও বিভিন্ন বাড়ির সামনে ঘুরতে দেখা যায়। খাবার দেওয়া হলেও সে কিছু খায়নি। তখনও কেউ বুঝতে পারেননি, ছানাগুলোর সঙ্গে কী ঘটেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনের কেয়ারটেকার জাহাঙ্গির আলম বলেন, “সোমবার সকালে নয়ন স্যার মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। আমি ছানাগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু জানেন না বললেন। তখন তার ছেলে জানায়, ‘আম্মু ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছেন।’ এরপর আমরা দ্রুত পুকুরে গিয়ে মুখ বাঁধা একটি বস্তা ভাসতে দেখে তুলে আনলাম। খোলার পর ৮টি ছানাই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।”
ঘটনার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর শত শত মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাবেক ইউএনও সুবির কুমার দাশ মন্তব্যে লিখেছেন, “এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।” এছাড়া অনেকেই লিখেছেন, “মানুষ নামের কলঙ্ক”, “ঘৃণিত কাজের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত”, “প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয় না” এবং “দোষীর তদন্ত হোক।”
অভিযুক্ত নিশি বেগমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্বামী, ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়ন, ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “এ ঘটনায় আমি মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।”
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বলেন, “এটি অত্যন্ত অমানবিক ঘটনা। মা কুকুর ইতোমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছে; তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ইউএনও স্যার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। আমি যাচাই করছি, সম্ভব হলে মামলা করব।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মনিরুজ্জামান জানান, “পরিষদ চত্বরে সংঘটিত এ ঘটনায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত। সকালে আমরা অফিসারদের নিয়ে জরুরি সভা করেছি। তদন্ত চলছে। দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”