
রাজধানীর চানখারপুলে গত বছরের ৫ আগস্ট ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৮ ডিসেম্বর নতুন তারিখ ঠিক করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনার পতনের দিন হিসেবে আলোচিত সে দিনের ঘটনাপ্রবাহকে কেন্দ্র করেই মামলাটি হয়।
রবিবার ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার ও সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বিচারিক প্যানেল এ তারিখ নির্ধারণ করেন।
এ দিন প্রসিকিউশনের হয়ে শুনানি পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, তারেক আবদুল্লাহ এবং সহিদুল ইসলাম। শুনানিতে শাহবাগ থানার তৎকালীন ওসি অপারেশন মো. আরশাদ হোসেনের সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদন উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন অভি। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করে তিনজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের অনুমতি দেন। আরশাদের আইনজীবী ২৭ নভেম্বর এ আবেদন করেন।
এর আগের কার্যক্রমে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলামের জেরা সম্পন্ন করেন স্টেট ডিফেন্স এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ১২ নভেম্বর তার জবানবন্দি শুরু হওয়ার পর টানা তিন দিনে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুলে ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় নিজের তদন্তের বিস্তারিত এবং জব্দ করা প্রমাণ উপস্থাপন করেন। মোট ২৩ কার্যদিবসে ২৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়েছে।
মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামি হলেন শাহবাগ থানার সাবেক ওসি অপারেশন মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
পলাতক আসামিরা হলেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম এবং রমনার সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।
ট্রাইব্যুনালে এর আগে ১২ নভেম্বর জব্দতালিকার সাক্ষী কামরুল হাসান ২৫ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। ৯ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা। তার সাক্ষ্য শেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফজলে নূর তাপসের দুটি ফোনালাপ আদালতে বাজানো হয়। একই দিনে ২৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন মাসুদ রানা।
প্রসিকিউশন জানায়, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ছাত্র-জনতার ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এর পরিণতিতেই ৫ আগস্ট চানখারপুলে ছয়জন মারা যান। তদন্ত রিপোর্টে দেখা যায়, সেদিন দায়িত্বে থাকা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল পঞ্চাশের বেশি এবং তাদের অধিকাংশই গুলি চালান। তবে লেথাল ওয়েপন ব্যবহারের অভিযোগে মাত্র তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
গত ১৪ জুলাই আটজন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুলে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালায়। এতে বহু আহত হওয়ার পাশাপাশি নিহত হন শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক এবং মানিক মিয়া শাহরিক।