
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছেন। প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, এই আবেদনটির জাতীয় ও আইনি গুরুত্ব বিবেচনা করে তারা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
রোববার (৩০ নভেম্বর) বিবিসি এই খবর প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু গত পাঁচ বছর ধরে তিনটি পৃথক দুর্নীতি মামলার মুখোমুখি আছেন। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ঘুষ গ্রহণ, জালিয়াতি এবং আস্থাভঙ্গ। তিনি সবসময়ই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। একটি ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেছেন, “আমি চাইলে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত দেখতে পারতাম, তবে জাতীয় স্বার্থ অন্যথা দাবি করেছে।”
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে ‘সম্পূর্ণ ক্ষমা’ দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টের কাছে আহ্বান জানান। হারজগ তখন জানিয়েছিলেন, ক্ষমা পেতে হলে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করতে হবে। প্রেসিডেন্ট কার্যালয় রোববার নেতানিয়াহুর আবেদনপত্র প্রকাশ করেছে, যদিও সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দিষ্ট সময় এখনও জানা যায়নি।
নেতানিয়াহু ২০২০ সালে বিচারাধীন অবস্থায় দায়িত্ব পালন করা প্রথম ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী হন। তার বিরুদ্ধে তিনটি প্রধান অভিযোগ রয়েছে।
১. ধনী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উপহার গ্রহণের বদলে বিশেষ সুবিধা দেওয়া।
২. একটি ইসরায়েলি পত্রিকায় ইতিবাচক সংবাদ কভারেজ নিশ্চিত করার জন্য সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি।
৩. বড় টেলিকম কোম্পানির মালিককে নিয়ন্ত্রক সুবিধা দেওয়া, যাতে তাদের নিউজ ওয়েবসাইটে নেতানিয়াহুকে নিয়ে অনুকূল সংবাদ প্রকাশ হয়।
বিবিসি জানিয়েছে, নেতানিয়াহু এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ‘উইচ হান্ট’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ইসরায়েলের আইন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট দণ্ড মওকুফ বা লাঘব করতে পারেন, এমনকি দণ্ড ঘোষণার আগে ক্ষমা দেওয়ার সুযোগও রয়েছে—যদি তা জনস্বার্থ বা বিশেষ পরিস্থিতির জন্য প্রযোজ্য হয়।
নেতানিয়াহুর লিকুদ দল ও ডানপন্থীরা সবসময়ই ক্ষমার পক্ষে। তবে ইসরায়েলের অনেক নাগরিক, বিশেষত বামপন্থিরা এটিকে দেশের শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা থেকে এক ধাপ পিছিয়ে যাওয়া হিসেবে দেখছেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে বিচার বিভাগীয় সংস্কারকে কেন্দ্র করে দেশে কয়েক মাসব্যাপী গণবিক্ষোভ হয়েছিল। ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন হামলার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায় এবং গাজা যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে।