
ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের প্রতিবাদে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে শনিবার (২৯ নভেম্বর) লাখো মানুষ রাস্তায় নামে। জাতিসংঘ ঘোষিত ফিলিস্তিনি মানুষের সঙ্গে সংহতির আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধে কঠোর আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করেন।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যে ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসের বানি সুহেইলা শহরে ড্রোন হামলায় আট ও দশ বছর বয়সী দুই শিশু নিহত হন।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বিক্ষোভে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ অংশ নেন। তারা ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে “গাজা, গাজা, প্যারিস তোমার সঙ্গে” ও “প্যারিস থেকে গাজা—প্রতিরোধ” স্লোগান দেন। ফ্রান্স প্যালেস্টাইন সলিডারিটি অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান অ্যান তুয়াইয়ো বলেন, “১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির সাত সপ্তাহ পরও কোনো সমাধান হয়নি। ইসরায়েল প্রতিদিন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে এবং মানবিক সাহায্যে বাধা দিচ্ছে।”
ইউরোপের অন্যান্য শহরেও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। লন্ডনে প্রায় এক লাখ মানুষ অংশ নেন, যেখানে তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তোলেন এবং ফিলিস্তিনি নাগরিকদের নিরাপত্তার দাবি জানান।
রোমে অনুষ্ঠিত প্রধান বিক্ষোভে যোগ দেন জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রানচেসকা আলবানেসে এবং জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। আলবানেসে বলেন, “ইসরায়েল শুধু গাজায় নয়, পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে।”
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন সমর্থিত যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী ইসরায়েল সেনারা গাজার ভেতরে ‘হলুদ রেখা’ পর্যন্ত পিছিয়ে গেলেও ভূখণ্ডের অর্ধেকের বেশি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। যুদ্ধবিরতির পর থেকে অন্তত ৫০০টি লঙ্ঘন রেকর্ড হয়েছে। এই সময়ে ৩৪৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮৮৯ জন আহত হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “এত মানুষ হত্যা, পুরো জনগোষ্ঠীকে বাস্তুচ্যুত করা এবং মানবিক সাহায্যে বাধা দেওয়া কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।”
আলজাজিরার গাজা সিটি প্রতিবেদক জানান, আন্তর্জাতিক সংহতি ফিলিস্তিনিদের মনোবল বাড়ালেও সেখানে মানুষের মূল লড়াই এখন বেঁচে থাকার। হাজারো মানুষ এখনো তাঁবুতে বসবাস করছে, যেখানে পানি, ওষুধ ও শিক্ষা সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়।
এর আগে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও সতর্ক করে জানিয়েছে যে, যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েল গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে এবং মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।