
দুর্নীতি ও অনিয়মের তিনটি মামলায় বিচার স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করেছেন। তার দাবি, বহুদিন ধরে চলা এই বিচার দেশের “সংহতিকে নষ্ট” করছে।
রোববার (৩০ নভেম্বর) এই আবেদন প্রকাশ্যে আসার পরই তেল আবিবজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
প্রেসিডেন্ট হারজগের কার্যালয় এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর পাঠানো চিঠিকে “নজিরবিহীন” বলে মন্তব্য করেছে।
রোববার রাতে ক্ষমার আবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর হাজারো মানুষ প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। অনেকেই কয়েদির কমলা পোশাক পরে এবং কেউ কেউ কলার স্তূপ সাজিয়ে নেতানিয়াহুকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করেন। বিক্ষোভে যোগ দেন বিরোধী দলীয় এমপি নাআমা লাজিমিও।
সরকারবিরোধী আন্দোলনকারী শিকমা ব্রেসলার বলেন, “তিনি (নেতানিয়াহু) কোনো দায়ভার না নিয়ে, দেশকে যেভাবে বিভক্ত করেছেন তার কোনো মূল্য না দিয়ে, বিচার বাতিল করতে চাইছেন। ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ এখান ঝুঁকির মুখে।”
প্রেসিডেন্ট কার্যালয় জানায়, নেতানিয়াহুর আইনজীবীদের পাঠানো ক্ষমার অনুরোধ তারা পেয়েছে এবং চিঠির বিষয়বস্তু প্রকাশও করেছে। একই সঙ্গে গত মাসে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাঠানো চিঠির কথাও নিশ্চিত করেছে দপ্তর।
তবে নতুন করে এই ক্ষমার আবেদন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। নেতানিয়াহুর সাবেক আইনজীবী মাইকা ফেটম্যান বলেন, আদালতে দোষ স্বীকার না করলে প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া আইনগতভাবে সম্ভব নয়। চ্যানেল-১২ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ক্ষমা অপরাধীকেই দেওয়া হয়, আইনে সেটাই বলা আছে।”
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ঘুষ, জালিয়াতি ও আস্থা ভঙ্গের অভিযোগে তিনটি মামলার বিচার চলছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের বিনিময়ে তিনি ও তার স্ত্রী সারা ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চুরুট, গয়না ও শ্যাম্পেনসহ ২ লাখ ৬০ হাজার ডলারের বেশি মূল্যের বিলাসপণ্য গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি তার পক্ষে ইতিবাচক সংবাদ কাভারেজ নিশ্চিত করতে দুইটি গণমাধ্যমের সঙ্গে দেনদরবারের অভিযোগেও আরও দুইটি মামলা রয়েছে।
এসব মামলাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলে তীব্র রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হয়েছে। নেতানিয়াহু ও তার সমর্থকদের দাবি, সব অভিযোগই ভিত্তিহীন এবং বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ৭৬ বছর বয়সী নেতানিয়াহু দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘসময় দায়িত্বপালনকারী প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে তিন মেয়াদে তিনি ১৮ বছরের বেশি সময় রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। ২০২২ সালে বর্তমান মেয়াদ শুরু হওয়ার পর তিনি বিচার বিভাগে বড় ধরনের সংস্কার প্রস্তাব করেন, যা ঘিরে তীব্র বিক্ষোভ দেখা দিলেও ২০২৩ সালের গাজা যুদ্ধের পর তা কিছুটা স্তিমিত হয়। সমালোচকদের মতে, এসব সংস্কার আদালতকে দুর্বল করবে।
লিকুদ পার্টির প্রধান নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২৬ সালের শেষের দিকে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন।