
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কেন্দ্র করে মৃত্যু গুজব ও সহিংসতার আশঙ্কা বাড়ায় রাওয়ালপিন্ডিতে সব ধরনের জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফের (পিটিআই) ঘোষিত আন্দোলনের আগে জননিরাপত্তা বজায় রাখতেই সরকার ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
রাওয়ালপিন্ডির ডেপুটি কমিশনার ড. হাসান ওয়াকার চীমার স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, ১ থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন দিনের জন্য দণ্ডবিধির সংশোধিত ১৪৪ ধারা কার্যকর থাকবে। এ সময় পাঁচজনের বেশি মানুষের যে কোনো সমাবেশ, মিছিল, বিক্ষোভ, জুলুস বা ধর্না সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আরও রয়েছে- অস্ত্র, লাঠি বা যেকোনো ক্ষতিকর বস্তু বহন, পেট্রোল বোমা ও বিস্ফোরক সামগ্রী রাখা কিংবা প্রদর্শন, উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া, পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে জমায়েতের চেষ্টা, মোটরসাইকেলে পিলিয়ন রাইডিং এবং লাউডস্পিকার ব্যবহার।
আদেশে উল্লেখ করা হয়, ‘জেলায় একটি আসন্ন হুমকি তৈরি হয়েছে’ এবং নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন গোষ্ঠী বড় সমাবেশ ও বিক্ষোভের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা বা নরম টার্গেট লক্ষ্য করে সহিংসতায় জড়াতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়।
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকেই ইমরান খান রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দি। তিনি অভিযোগ করে আসছেন যে তার বিরুদ্ধে আনা মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পরিবারের দাবি, এক মাসের বেশি সময় ধরে তাকে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না তারা।
তার ছেলে কাসিম খান রয়টার্সকে বলেন, ‘বাবা নিরাপদ, আহত, নাকি জীবিত- কিছুই জানতে না পারা এক ধরনের মানসিক নির্যাতন।’ তিনি জানান, আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও সাপ্তাহিক সাক্ষাৎ বন্ধ রয়েছে এবং কয়েক মাস ধরে কোনো যোগাযোগও নেই। কাসিমের ভাষায়, ‘আজ আমরা তার অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্যই জানি না। আমাদের সবচেয়ে বড় ভয়, কিছু বিষয় আড়াল করা হচ্ছে।’ তিনি আগে অভিযোগ করেছেন যে তার বাবাকে ‘ডেথ সেল’-এ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রাখা হয়েছে।
এদিকে পিটিআইয়ের খাইবার পাখতুনখাওয়া শাখা ইসলামাবাদ হাই কোর্টের সামনে বিক্ষোভের ঘোষণা দেয়। এর আগে থেকেই ইসলামাবাদ প্রশাসনও ১৪৪ ধারা জারি করে জানিয়ে দেয় যে রাজধানীতে কোনো ধরনের বিক্ষোভ বা জনসমাবেশের অনুমতি নেই এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় থাকবে। নাগরিকদের নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানিয়ে প্রশাসন সতর্ক করে, ১৪৪ ধারা ভাঙলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের সঙ্গে সরকারি সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করবে বলেও জানানো হয়।
অন্যদিকে খাইবার পাখতুনখাওয়া মুখ্যমন্ত্রী সোহেল আফরিদি আটবার চেষ্টা করেও আদিয়ালা কারাগারে ইমরানের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। ২৬ নভেম্বর সাক্ষাতের অনুমতি না পেয়ে তিনি আদিয়ালা রোডে ১৬ ঘণ্টা অবস্থান ধর্মঘট করেন। দলীয় নেতাদের অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ইমরানের সঙ্গে পরিবারের নিয়মিত সাক্ষাৎ বন্ধ করে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে পরিস্থিতিকে অনিশ্চিত করে তুলছে।