
গরুর মাংসের বাজারমূল্য কেজিপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা হলেও তা অতিরিক্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, “আমরা গরুর মাংস প্রতিদিন খাই না। তবুও অনেকেই আমাদের বলছেন যে, বাইরে থেকে মাংস আমদানি করতে হবে। গরুর মাংস যেহেতু রেড মিটের অন্তর্ভুক্ত, তাই খাদ্যাভ্যাসে শুধু এটি নয়- মহিষ, ভেড়া, মুরগি বা ব্রয়লার মাংসকেও নিয়মিত রাখতে হবে।"
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) আয়োজিত চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের একটি সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মতামত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএজেএফ সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু খালিদ।
দেশের নদী-খাল, হাওর অঞ্চলের মাছের বৈচিত্র্য ও স্থানীয় প্রাণিসম্পদের গুরুত্ব তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, “আমরা সবকিছু শুধুই উৎপাদনশীলতা দিয়ে বিচার করতে পারি না, খাদ্য চাহিদা, রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা, নারীর জীবন-জীবিকার সঙ্গে মিল- সবকিছুকে বিবেচনা করতে হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, গ্রামের কৃষকের বাড়িতে মাছ, গরু, ধান- সবকিছুই থাকে; তাই কৃষিকে শুধু খাদ্য উৎপাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ভাবলে চলবে না। উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্য ও পুষ্টির মানও নিশ্চিত করতে হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ভর্তুকি না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষিতে ভর্তুকি থাকলেও এই খাতে সুবিধা নেই; অথচ এখনো ৭০-৮০ শতাংশ উৎপাদন আসে গ্রামীণ পর্যায় থেকে।
ফরিদা আখতার জোর দিয়ে বলেন, দেশীয় জাত রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। সংকর জাত তৈরিতে আপত্তি নেই, তবে এতে যেন দেশীয় জাত হারিয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পুষ্টি নিরাপত্তার সঙ্গে এ খাত প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পুষ্টির ঘাটতি দূর করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জিরো হাঙ্গার মানে শুধু পেট ভরা খাবার নয়, পুষ্টি যোগ্য খাবার নিশ্চিত করা। তাই ক্যালরি নয়, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল- সবকিছুর সমন্বিত গ্রহণ জরুরি।
মাছ ও ডিমের নিত্যগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের এভারেজ দিয়ে গরিব মানুষের খাদ্য চাহিদা বিচার করা ঠিক নয়। খাদ্য শহরকেন্দ্রীক নয়, দেশের সকল মানুষের কাছে পৌঁছানো দরকার।”
এছাড়া একোয়াকালচারের সুফল-ঝুঁকি দুটোর কথাই উল্লেখ করেন তিনি। নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবস্থাপনায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেন এবং প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
গরুর মাংস আমদানির প্রস্তাবের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দেশের খামারিদের উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং ভেড়া, হাঁস, মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের মাংস খাদ্যাভ্যাসে যুক্ত করতে হবে খাদ্যের বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে।
খাদ্য নিরাপত্তা ও কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়েও সতর্ক করেন ফরিদা আখতার। তাঁর ভাষায়, “চকচকে টমেটো বা ফুলকপি কিনে খেলে হবে না, যদি তাতে কীটনাশক থাকে। খাদ্যই রোগের উৎস হয়ে গেলে তা ব্যবহারযোগ্য হবে না।”
সাংবাদিকদের ভূমিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি প্রচার যেমন জরুরি, তেমনি মাঠের কৃষকরা কী করছেন, তা তুলে ধরা আরও গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও যোগ করেন, সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজন, “এটি শুধু আমার ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, আমাদের দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য।”