
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা যদি বর্তমানে অপরিবর্তিত থাকে, তাহলে শিগগিরই তার ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি জানান, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার মতো শারীরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর তারেক রহমান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন। পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন।’
এ বিষয়ে, আগে দুপুরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তিনি এখনো ট্রাভেল পাসের জন্য আবেদন করেননি। চাওয়ামাত্রই ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হবে এবং তাকে দেশে ফিরতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে। তাছাড়া, খালেদা জিয়া দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে চাইলে সরকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে, তবে সিদ্ধান্ত দল ও পরিবারের ওপর নির্ভর করবে।
এর আগে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। দুই বছরের বেশি সময় তিনি কারাবন্দি ছিলেন। করোনা পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন সরকার নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেন। পরবর্তীতে নিয়মিত আবেদনের ভিত্তিতে সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও বৃদ্ধি পায়। তবে চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি মুক্তি পান। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। সেখানে ১১৭ দিন চিকিৎসা শেষে ৬ মে দেশে ফিরেন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছিল। সেখানে ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে এবং অবস্থা সংকটময় বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়। ২৭ নভেম্বর থেকে তাকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়, যেখানে নিবিড় চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি ও বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেখছেন।
এদিকে, গত রাত থেকে হাসপাতালের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। প্রধান ফটকের সামনে দুই পাশে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে এবং পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। হাসপাতালের আশপাশে শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই চলাচল করতে পারছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, রোগী ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অপ্রয়োজনীয় ভিড় রোধে হাসপাতালের চারপাশে পুলিশের মোতায়েন করা হয়েছে।