
রোববার (৩০ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খবর জানতে আগ্রহী সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। দলীয় পক্ষের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও মানুষ ধীরে ধীরে হাসপাতালের সামনে জড়ো হচ্ছেন। যদিও তারা নেত্রীকে সরাসরি দেখতে পারছেন না, তবু স্বাস্থ্য পরিস্থিতি জানতে উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অসুস্থতার খবরের সঙ্গে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও প্রার্থনা এখন সমর্থকদের প্রধান ভরসা।
সরেজমিনে সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালের সামনে এই চিত্র চোখে পড়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানাচ্ছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ওঠানামা চলছে। তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা বহুজাতিক মেডিকেল বোর্ড নিবিড় পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গন এবং পরিবারে উদ্বেগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের বাইরে স্বাভাবিকভাবেই সমর্থকদের আগ্রহও বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে; ভিড় না করতে, হাসপাতালের প্রবেশপথ বন্ধ না করতে এবং চিকিৎসা কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করতে। তবু শনিবার ও রোববার সকালে এভারকেয়ারের সামনের ভিড় চোখে পড়েছে।
হাসপাতালের সামনেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। পাশেই টেলিভিশন সাংবাদিকরা ক্যামেরা স্থাপন করেছেন। ফুটপাত ও সড়কের একাংশজুড়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সমর্থকরা দাঁড়িয়ে আছেন। তারা সরাসরি হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারছেন না, কিন্তু কাছাকাছি অবস্থানটিকে একটি নীরব দায়িত্ববোধের প্রকাশ হিসেবে দেখছেন।
কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সমর্থকরা বাস, ট্রেন বা হঠাৎ সিদ্ধান্তে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। নাজমুল আলম নামের এক নেতা বলেন, "আমাদের প্রিয় নেত্রী মৃত্যুশয্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। চাইলেই আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না। গতকালও গভীর রাত পর্যন্ত হাসপাতালের সামনে ছিলাম। আত্মার টানে আজ আবারও সকালে চলে এসেছি। হাসপাতালের ভেতরে ঢুকার সুযোগ নেই, তাই দূরে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু মন টানলে বাসায় থাকা যায় না।"
আরেক সমর্থক জানান, নেত্রীর শারীরিক অবস্থা ওঠানামা করছে শুনেছেন। "যেটুকু পারি, দোয়া করছি।" কিশোরগঞ্জ থেকে আসা টিপু সুলতান দুই দিন ধরে হাসপাতালের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, "ফেসবুক ও ইউটিউবে খবর দেখে আর ঘরে বসে থাকতে পারিনি। সকালে নিজের ছোট দোকান খুলে দিয়ে ট্রেনে রওনা হলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। বিমানবন্দর স্টেশনে নেমে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে চলে এসেছি। খালেদা জিয়া যদি বাঁচেন, আর ডাক্তাররা যদি বলেন আমার ফুসফুস কাজে লাগবে, আমি দিতে রাজি। আল্লাহ আমাকে যতটা শক্তি দিয়েছে; সবটুকুই দেব।"
বিএনপি নেতারা হাসপাতালের সামনে ভিড় না করার কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন। দলটি বলছে, ভিড় তৈরি হলে অন্যান্য রোগী ও চিকিৎসকদের কাজে বিঘ্ন ঘটতে পারে। পরিস্থিতি শান্ত রাখা এবং চিকিৎসকদের কাজ নির্বিঘ্ন রাখা এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি জানিয়েছে, "বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, দেশনেত্রীর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে গণমাধ্যমে ব্রিফ করবেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে ব্রিফ করবেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।"
হাসপাতালের সামনেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রবেশপথে ব্যারিকেড রাখা হয়েছে এবং পুলিশ দূরত্ব বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করছে। এক কর্মকর্তা বলেন, "ভিড় যাতে হাসপাতালের কাজে বিঘ্ন না ঘটায়, সেটাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব।" হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, প্রতিদিনের রোগীসেবা নিশ্চিত করতে শান্ত পরিস্থিতি বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ভিড় যাতে জরুরি সেবা ব্যাহত না করে, সেই নির্দেশনা জোরদার করা হয়েছে।