
পাবনার ঈশ্বরদীতে বিএনপি–জামায়াত সংঘর্ষের সময় গুলি ছুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া যুবক তুষার মণ্ডল জামায়াতে ইসলামের কর্মী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রোববার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ স ম আব্দুন নূর।
তিনি বলেন, “সংঘর্ষের দিন অস্ত্র হাতে গুলি ছোড়া যুবক তুষার মণ্ডল জামায়াতের কর্মী। তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তবে এখনো তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও পুলিশ তাকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছে।”
তুষার মণ্ডল ঈশ্বরদী পৌরসভার ভেলুপাড়া এলাকার তাহের মণ্ডলের ছেলে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, তিনি পাবনা জেলা জামায়াতের আমির ও পাবনা-৪ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডলের ভাতিজা মামুন মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন কার্যক্রমে তুষারের সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের হওয়া দুই মামলায় উভয় দলের পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাতের অভিযানে জামায়াতের দুইজন এবং বিএনপির তিন কর্মীকে আটক করা হয়। রোববার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে শনিবার দুপুরে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করে।
সাহাপুর ইউনিয়ন কৃষকদলের আহ্বায়ক মক্কেল মৃধার ছেলে ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক বাঁধন হাসান আলিম বাদী হয়ে ৩২ জন জামায়াত নেতার নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। এতে আরও ১৫০–২০০ জন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে জেলা জামায়াত আমির ও পাবনা–৪ আসনের প্রার্থী আবু তালেব মণ্ডলকে।
অপরদিকে ঈশ্বরদী উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৩৮ জন বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে আরেকটি মামলা করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে মক্কেল মৃধাকে। পাশাপাশি ১০০–১৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়, যাদের বেশিরভাগই বিএনপি প্রার্থী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবের ঘনিষ্ঠজন ও অনুসারী।
পুলিশ ও স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চর গড়গড়ি গ্রামে জামায়াত প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক আহত হন। ঘটনার পর এলাকা উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে, এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গ্রেফতার এড়াতে বিএনপি–জামায়াত উভয় দলের অনেক নেতাকর্মী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
এদিকে শনিবার বিকেলে সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ি এলাকায় মক্কেল মৃধার বাড়ির পাশের বাঁশঝাড় ও জঙ্গল থেকে জামায়াতকর্মীদের ব্যবহৃত নয়টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযানে অংশ নেয় ঈশ্বরদী থানা পুলিশসহ পাকশী ও রূপপুর ফাঁড়ির সদস্যরা।