ঢাকা, ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার
মেনু |||

বহিরাগতদের অস্ত্রাগার পরিদর্শন, চাকরি গেল এসপির

অসদাচরণের দায়ে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। মো. শাহেদ ফেরদৌসের (রানা) বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৯ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

গত ৯ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। বুধবার (১৭ এপ্রিল) ওয়েবসাইটে প্রজ্ঞাপনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

শাহেদ ফেরদৌস পুলিশের খুলনা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে নিয়োজিত ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা এসপিবিএন–১ এ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় ২০২০ সালের ২৯ আগস্ট তিনি দুজন পুলিশ পরিদর্শক ও তিনজন উপপরিদর্শকের সহায়তায় তিনজন বহিরাগত ব্যক্তিকে অস্ত্রাগার পরিদর্শনের সুযোগ করে দেন। ওই ব্যক্তিরা অস্ত্রাগার পরিদর্শন এবং অস্ত্রের বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করেন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০২০ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায় স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রোটেকশন ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিন বহিরাগতকে অস্ত্রাগার পরিদর্শন করানো, অস্ত্রের বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারের সুযোগ দিয়েছিলেন খুলনার রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ের পুলিশ সুপার শাহেদ ফেরদৌস রানা। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন পুলিশ পরিদর্শক (সশস্ত্র) গোলাম মোস্তফা, পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) সৈয়দ আনিসুর রহমান, এসআই (নিরস্ত্র) নুর-এ-সরোয়ার রিপন, এসআই (সশস্ত্র)-১২১২৬ আবু সাঈদ মো. ওবাইদুর রহমান এবং এসআই (সশস্ত্র) মানিক খান।

এতে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে ফেরদৌস রানার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০২২ সালের ২৭ জুলাই পুলিশ অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পরে ১০ অক্টোবর কারণ দর্শানোর জবাব দিয়ে ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন করেন তিনি। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ১১ নভেম্বর তার ব্যক্তিগত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

শুনানিকালে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ, লিখিত জবাব, উভয়পক্ষের বক্তব্য ও উপস্থাপিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণাদি পর্যালোচনায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে গুরুদণ্ড আরোপের পর্যাপ্ত ভিত্তি রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গত ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা বিধিমতে সাক্ষ্য, সাক্ষীদের জেরা, উপস্থাপিত ভিডিওসহ সব দলিলপত্রাদি পর্যালোচনা ও সরেজমিনে তদন্ত অন্তে গত ২৩ মে তার বিরুদ্ধে আনিত ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে মর্মে মতামতসহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

অভিযোগ, লিখিত জবাব, শুনানিকালে উভয়পক্ষের বক্তব্য, তদন্ত প্রতিবেদন ও প্রাসঙ্গিক দলিলপত্রাদি পর্যালোচনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ প্রমাণিত হওয়ায় কেন তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অন্য কোনো গুরুদণ্ড প্রদান করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ১৩ জুন দ্বিতীয় কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠানো হয়। ২০ জুলাই দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দাখিল করেন ওই পলিশ সুপার। অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ, অভিযুক্ত কর্মকর্তার দেয়া কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব, তদন্ত প্রতিবেদন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রাদি পুনরায় পর্যালোচনায় তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ খণ্ডনের মতো কোনো যুক্তি তিনি উপস্থাপন করতে সক্ষম হননি।

পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলায় উপস্থাপিত ভিডিওটি সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য বলা হয়। পরে ২৪ আগস্ট সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের পাঠানো প্রতিবেদনে উপস্থাপিত ভিডিওটি সম্পাদনা করা হয়নি অর্থাৎ প্রকৃত মর্মে মতামত দেওয়া হয়।

অসদাচরণের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গুরুদণ্ড হিসেবে তাকে ‘বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান’র প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শ চাওয়া হয়। গেল ১ জানুয়ারি সরকারি কর্ম কমিশন বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের দণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্তকরণে পরামর্শ প্রদান করে।


ঢাকাওয়াচ/টিআর

সম্পাদকঃ মোঃ শাখাওয়াত হোসেন সজীব
নিবন্ধন নং -১৬৬