জাবি ভিসিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলেন শিক্ষকদের একাংশ

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলাসহ উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমসহ প্রশাসনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা করেছে শিক্ষকদের একাংশ। শনিবার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাজ’–এর ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকেরা। সংবাদ সম্মেলনে ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার তিন দফা লিখিত দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো—২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে এবং হলগুলোকে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী মুক্ত করতে হবে, উপাচার্য মো. নূরুল আলম, সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মঞ্জুরুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার, প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবিরকে পদত্যাগ করতে হবে, ১৫ জুলাই রাতে বহিরাগত সন্ত্রাসী ও ছাত্রলীগ কর্মীদের দ্বারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের যারা নৃশংসভাবে আঘাত করেছে, তাদের বিচার করতে হবে। এসময় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় প্রশাসন প্রত্যক্ষ মদদদাতা উল্লেখ করে মাফরুহী সাত্তার বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারা দেশের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গত ১৫ জুলাই শান্তিপূর্ণ মিছিলে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাসীরা বিনা উসকানিতে হামলা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে বিচারের দাবিতে অবস্থান নেন। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি প্রক্টর, উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের ইন্ধনে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে শিক্ষকসহ অনেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক সামছুল আলম, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রানা, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, কলা ও মানবীকি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহাকারী অধ্যাপক শিবলী নোমান ও সালমা সাবিহা প্রমুখ।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাবি-রুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, যোগ দিলেন শিক্ষকরা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে সারাদেশের সাথে সমন্বয় করে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ গণমিছিলে হামলা, ছাত্র হত্যা ও নয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় বর্তমান সরকারকে 'স্বৈরাচার' উল্লেখ করে পদত্যাগ দাবি করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। রাবি ও রুয়েটের শিক্ষকরাও একাত্মতা পোষণ করে এ বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়। শনিবার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১০টায় রাবির প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে এ সমাবেশ শুরু করেন তারা। এসময় নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এসময় 'এক দুই তিন চার, স্বৈরাচার তুই গদি ছাড়', 'শিবির ট্যাগের ছলচাতুরী, বুইজা গেছে জনগণ', 'দফা এক দাবি এক, স্বৈরাচারের পদত্যাগ', 'নয় ছয় বুঝি না, কবে যাবি হাসিনা', 'আবু সাঈদ মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই', 'দিয়েছি তো রক্ত, আরো দেবো রক্ত', 'রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়', 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' এমন স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। রুয়েট শিক্ষার্থী তানভির হাসান বলেন, সারাদেশের সাথে সমন্বয় করে আজকে আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি। এখানে আমাদের একটাই দাবি স্বৈরাচার সরকারের পদত্যাগ। সরকারের পদত্যাগ ছাড়া শিক্ষার্থী সমাজ আর ঘরে ফিরবে না। এ আন্দোলন আর কোটা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। পুলিশ প্রশাসন আমাদের ভাইদের উপর গুলিয়ে চালিয়েছে, তাদেরকে বলবো এখন সাবধান হোন। আপনাদেরও ছেলে-মেয়ে আছে, তাদের দিকে তাকান। রাবি শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদ বলেন, আবু সাঈদের মতো জীবন দিতে আজকে মাঠে নেমেছি। হয়তো জীবন দেবো না হয়তো স্বৈরাচার সরকার পদত্যাগ করে মাঠ ছাড়বো। আমার ভাইগুলোর রক্তের দাগ বাংলার জমিনে এখনো শুকায়নি। কী দোষ ছিল তাদের? তারা সংবিধান অনুযায়ী তাদের অধিকারের কথা বলেছিল। আজকে আমাদের আন্দোলনের দাবি একটা, স্বৈরাচার সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। এসময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. ফজলুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করে আমরা তাদের সাথে যোগ দিয়েছি। আর কত ঘরে বসে আমার ছেলেদের রক্ত দেখবো। শিক্ষার্থীদের গায়ে গুলি করতে স্বৈরাচার সরকারের কি একটুও বুক কাঁপেনি? আজ থেকে এ আন্দোলনে গুলি চালালে সেই গুলি আগে শিক্ষকদের গায়ে লাগবে, তারপর আমাদের ছাত্রদের। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের আর কোনো ভয় পাবার কারণ নেই। তাদের পিতৃতুল্য শিক্ষকরা আজ থেকে তাদের সামনে থাকবেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে আমরা একাত্মতা পোষণ করছি এবং তাদেরকে সুরক্ষা দিতে সবসময় তাদের সাথেই আমরা আছি। গণহত্যার দায় স্বীকার করে স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি।

আজও বিক্ষোভে নামছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচিকে ঘিরে আবারও উত্তপ্ত দেশ। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ শনিবার (৩ আগস্ট) সম্মিলিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শুক্রবার (২ আগস্ট) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও পেশাজীবীদের কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শনিবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পাশে যমুনা গেটে বেলা ১১টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন নর্দান, নর্থ সাউথ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল, স্টেট, গ্রিন, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ও ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা। একই সময়ে ব্র্যাক ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি রামপুরা এলাকায় পালন করবেন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় ৯ দফা দাবি ও অসহযোগ আন্দোলন সফলের অংশ হিসেবে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। এদিকে, আজ শনিবার (৩ আগস্ট) সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ। একইসঙ্গে আগামীকাল রোববার থেকে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি’ ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার (২ আগস্ট) এক ভিডিও বার্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এ কর্মসূচি ঘোষণা দেন। আরও পড়ুন: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ আজ তিনি বলেন, সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও ৯ দফা দাবিতে শনিবার (৩ আগস্ট) সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হলো। আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ঘোষণা করছি, আগামীকাল (শনিবার) সারা দেশের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়, প্রতিটি জায়গায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। আগামীকালের পর থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন পালিত হবে।’

বৃষ্টিতে ভিজেই ব্র্যাক ও ইস্ট ওয়েস্টের শিক্ষার্থীদের গণমিছিল

শিক্ষার্থী-জনতাকে হত্যা করার প্রতিবাদে ও ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে গণমিছিল কর্মসূচি পালন করেছেন ব্র্যাক ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কয়েকশ’ শিক্ষার্থী। এ সময় শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিতে থাকেন। শুক্রবার (২ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাজধানীর আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের এই গণমিছিল শুরু হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের গণমিছিলটি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে থেকে শুরু হয়ে রামপুরা ব্রিজ ঘুরে ব্র‍্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে যায়। পরে গণমিছিলটি ব্র‍্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে আবারও রামপুরা ব্রিজ হয়ে দুপুর ১২টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে গিয়ে শেষ হয়। পুলিশের ২৫-৩০ জনের একটি দলকে শিক্ষার্থীদের গণমিছিলের সঙ্গে সঙ্গে চলতে দেখা গেছে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গণমিছিলের সামনে ও পেছনে অবস্থান নিয়ে চলতে থাকে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য তারা এসেছেন। যেন কোনো দুষ্কৃতকারী শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে। তবে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পুলিশকে বলা হয়, তারা কোনো ধরনের পুলিশি নিরাপত্তা চান না। শিক্ষার্থীরা পুলিশের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কেন এখানে এসেছেন? আপনারা এখান থেকে চলে যান। শিক্ষার্থীরা গণমিছিলে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। তারা স্লোগানে বলেন, ‘আমার ভাই কবরে খুনি কেন বাইরে’, ‘পা চাটলে সঙ্গী না চাটলে জঙ্গি’ ও ‘আবু সাঈদ মরল কেন প্রশাসন জবাব দে’। এর আগে, সকাল ১০টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে কয়েকশ শিক্ষার্থী জড়ো হন। এ সময় তারা ইস্ট ওয়েস্টের প্রধান ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা নানা রকম স্লোগান ও বক্তব্য দেন। তারা ৩-৪টি গান পরিবেশন ও কবিতা আবৃত্তি করেন। সমাবেশ চলাকালে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী ও সমন্বয়ক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশে অস্থির পরিবেশের মধ্যে সারা দেশে শিক্ষার্থী-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এসবের প্রতিবাদে ও ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের আমরা আমাদের আজকের কর্মসূচি পালন করছি। আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সারা দেশের মানুষ যোগ দিয়েছে। যত দিন না আমাদের দাবি মানা হবে এবং শিক্ষার্থী জনতাকে হয়রানি বন্ধ করা হবে, ততোদিন আমরা রাজপথে থাকব। নামাজের পর আমাদের শহীদ ভাইদের জন্য দোয়া করা হবে।

কাল দেশব্যাপী ছাত্রজনতার গণমিছিল

ঢাবি: চলমান আন্দোলনে আগামীকাল শুক্রবার (২ আগস্ট) দেশব্যাপী প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দারি আদায়ের লক্ষ্যে আগামীকাল মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া, শহীদদের কবর জিয়ারত, মন্দির, গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন ও জুমার নামাজ শেষে ছাত্রজনতার গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। ছাত্রদের এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে শ্রমিক, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী, আলেম-ওলামাসহ বাংলাদেশের সব স্তরের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একইসঙ্গে মসজিদের ইমাম ও খতিব এবং মাদরাসার শিক্ষকদের ‘ছাত্র জনতার গণমিছিল’ বের করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পরিহার করার আহ্বান ঢাবি নীল দলের শিক্ষকদের

কোটা সংস্কার নিয়ে সরকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্থীদের দাবির কাঙ্ক্ষিত সমাধান দিয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পথ পরিহার করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে ভূমিকা রাখার ও রাষ্ট্রদ্রোহী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার না হওয়ার ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে চারটি দফা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল। আজ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে আয়োজিত ‘দেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এই দাবি জানান সংগঠনটি। নীল দলের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত সকল ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের অবিলম্বে শান্তির আওতায় আনা; দ্রুততম সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা; আবাসিক হলসমূহে বৈধ ও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিশ্চিত করা এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এসময় লিখিত বক্তব্য প্রদানকালে নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম আমজাদ আলী বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং জনজীবনে অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সারাদেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনভিপ্রেত ঘটনায় নীলদল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে অপ্রত্যাশিতভাবে শিক্ষার্থীসহ অনেকেই নিহত এবং আহত হয়েছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রাণহানির ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নীলদল গভীরভাবে শোকাহত এবং নিহতদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছে। তিনি বলেন, ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে যেকোনো নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার সম্পর্কিত যৌক্তিক দাবিসমূহের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নীলদল বরাবরই ইতিবাচক অবস্থানে থেকেছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই আন্দোলন শুরুতে শান্তিপূর্ণ থাকলেও পরবর্তীকালে সহিংস হয়ে ওঠে, যা গভীর উদ্বেগের। এই আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে কেউ কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও রাজপথে স্বাধীনতা বিরোধী স্লোগান উচ্চারণ করেছে, যা নিন্দনীয়। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি বিবেচনায় নিয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের গত ২১ জুলাইয়ের রায় কোটা সংস্কার দাবিকারী শিক্ষার্থীদের অনুকূলে হওয়ায় নীলদল সন্তুষ্টি প্রকাশ করছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার এই রায়কে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করায় নীলদল সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে। বক্তব্য প্রদানকালে তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে দেশজুড়ে সহিংসতা, নৈরাজ্য, হত্যাযজ্ঞ, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ধ্বংস, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে কক্ষ ভাঙচুর ও সম্পদের প্রভূত ক্ষতি সাধন এবং কারাগার আক্রমণের মতো রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে স্বার্থান্বেষী একটি মহল। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্তরালে নাশকতাকারীরা মেট্রোরেল, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, সেতু ভবন, বিআরটিএ, এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। আমরা এই ঘৃণিত চক্রান্তকে আমরা নিন্দা জানাই। নিরপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেফতার এবং হয়রানি না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, যেকোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে যথাযথ সম্মান দেখিয়ে সুবিবেচনা এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে সমাধানের পথ নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি সরকার এই আন্দোলনে নিহত এবং আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার যে দ্বার উন্মোচন করেছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড মো. নিজামুল হক ভূইয়া, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবদুর রহিম, বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল বাছির,টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভূঁইয়া প্রমুখ।

বৃষ্টিতে ভিজেই ঢাবিতে শিক্ষকদের বিক্ষোভ মিছিল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুই শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও ‘সারাদেশে শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে হত্যা’র প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এসময় শিক্ষকদের সাথে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। এরপর সমাবেশ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করছে। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করছে শিক্ষার্থীরা। এর আগে সকাল ১০টায় লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষকরা এবং ১১টায় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকরা সমাবেশ করেন।

ঢাবিতে প্রবেশ করল র‌্যাবের ২০টি গাড়ির বড় বহর

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে র‌্যাব সদস্যরা ক্যাম্পাসে ঢুকে উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, র‌্যাবের প্রায় ২০ থেকে ২২টি গাড়ির বহর উপাচার্য বাসভবনের সামনে টহল দিচ্ছে। এসময় এলাকায় কোন শিক্ষার্থীকে দেখা যায়নি। এর আগে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসেই সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। মঙ্গলবার রাত নয়টায় বিজিবির সদস্যরা ক্যাম্পাসে ঢুকে উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এছাড়াও রাত সাড়ে ৮টার পর কর্মসূচি শেষ করে ফিরে গেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে রাত সোয়া ১২টার দিকে বুধবারের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। তবে টিএসসির পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসি চত্বরে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, বুধবার আমাদের কর্মসূচি থাকবে। কিন্তু এদিন পবিত্র আশুরা থাকায় আমরা আলোচনা করে রাতে এ বিষয়ে জানাব। পরে রাত সোয়া ১২টার দিকে বুধবারের নতুন কর্মসূচি দেন তারা। এদিন দুপুর ২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল’ করবেন তারা।

ঢাবি বন্ধ ঘোষণা, সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভার শুরুতে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সংঘর্ষে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় এবং তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের আহত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়। সভার সিদ্ধান্তসমূহ উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩-এর আর্টিকেল ২৪(এল) ধারার ক্ষমতাবলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং একাডেমিক পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সকল আবাসিক হল/হোস্টেলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের হল/হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। হল খোলার পর মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ করে শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানো হবে। বহিরাগত কাউকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও অবস্থান না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সমাধানের জন্য সরকারের কাছে আহবান জানানো হলো। এর আগে, চলমান কোটা আন্দোলনে সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার রাতে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা ও শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ার বিষয়ে নির্দেশনা দিতে উপাচার্যদের চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভা ডাকা হয়। এর আগে সোমবার কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এতে হামলার শিকার হন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষের ঘটনায় চট্টগ্রামে তিনজন, রাজধানীতে দুজন এবং রংপুরে একজন-মোট ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা চার শতাধিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল বন্ধের ঘোষণা দিলেও শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানা গেছে।

ঢাবি ক্যাম্পাসে বিজিবি, টহল দিচ্ছে র‍্যাব

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও রয়েছেন। র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সদস্যরা গাড়ি নিয়ে টহল দিচ্ছেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাত পৌনে ১০টার দিকে ঢাবি ক্যাম্পাস ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে গেছেন। তবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা টিএসসিতেই অবস্থান করছেন। পরিস্থিতি এখন কিছুটা শান্ত। এদিকে রাতে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে হলে ফিরেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৭ জুলাই) পবিত্র আশুরা থাকায় তারা মঙ্গলবার রাতে আলোচনার পর কর্মসূচি নেবেন। রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসি চত্বরে এ ঘোষণা দেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, আগামীকালও আমাদের কর্মসূচি থাকবে। কিন্তু আগামীকাল পবিত্র আশুরা থাকায় আমরা আলোচনা করে রাতে এ বিষয়ে জানাব। এর আগে জগন্নাথ হল থেকে সরে মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বরে আসেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারপর সেখান থেকে যে যার মতো হলে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের এক দফা দাবি, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালের পর থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ হতে দেখা যায়। বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এদিন সংঘর্ষে কয়েকজনের প্রাণহানির খবরও মিলেছে।

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেরোবির শিক্ষার্থী নিহত

রংপুর: পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আবু সাঈদ নামে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে বেরোবিতে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যাচ্ছিল। এসময় ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়লে এক শিক্ষার্থী নিহত হন। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন স্কুলকলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়। এরপর তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। একজন শিক্ষার্থী মারা গেছেন বলে শুনেছি। তবে তিনি কীভাবে মারা গেছেন তা বলতে পারছি না।

আতঙ্কে হল ছাড়ছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের পর পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় ছাত্রলীগ। এরপর সোমবার রাতে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হলে হলে ছাত্রলীগের মারধরের ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালেও শিক্ষার্থীদের আতঙ্কে হল ছাড়ার চিত্র দেখা যায়। কবি জসীমউদ্দীন হল, বিজয় একাত্তর হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলসহ প্রায় সব হল থেকেই হল ছাড়ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রোকেয়া হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, সকাল থেকে আমার রুম ও পাশের রুম থেকে সব শিক্ষার্থী আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে। আমিও কিছু সময় পর চলে যাব। বাসা থেকে বাবা-মা অনেক ফোন দিচ্ছেন। ওনারা চিন্তা করছেন, আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে। এজন্য কুষ্টিয়া গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছি। ক্যাম্পাসের পরিবেশ স্বাভাবিক হলে ফিরবো। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে এবং ছাত্রলীগের এ ধরনের হুমকি-হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি। এদিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মাইক নিয়ে প্রতিটি হলের মাঠে গিয়ে ‘কারো রাজনৈতিক চালের বলি না হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। ’ তাদের বলতে শোনা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা, আপনারা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। আপনাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ আপনাদের হাতে। আপনারা ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেবেন। এর আগে সোমবার (১৫ জুলাই) বিকেল ৪টা থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ভিসি চত্বরে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এছাড়া কিছু নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে পাহারা দেওয়ার মতো করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরেছেন। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে সোয়া দুইশ’র বেশি জন আহত হয়েছেন। ২২৬ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

ঢাবির হলে বহিরাগত অবস্থানে নিষেধাজ্ঞাসহ ৫ নির্দেশনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): ক্যাম্পাসে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও হলে বহিরাগত অবস্থানে নিষেধাজ্ঞাসহ ৫ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। সে অনুযায়ী নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৫ জুলাই) বিকেলে হল প্রভোস্টদের নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো- শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব হলে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবেন; প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে সার্বক্ষণিকভাবে হলে অবস্থান করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন; হলসমূহে কোনো বহিরাগত অবস্থান করতে পারবেন না; যেকোনো ধরনের গুজব ও অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানানো হচ্ছে; সকলকে নাশকতামূলক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বলা যাচ্ছে। কেউ নাশকতামূলক কাজে জড়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং বিভিন্ন হল ও হোস্টেলসমূহের প্রাধ্যক্ষ এবং ওয়ার্ডেনবৃন্দ।

পাবিপ্রবির ছাত্রকে পেটানোর অভিযোগ সাবেক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে

পাবনা: রুমের দরজা খোলাকে কেন্দ্র্র করে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্স শেষবর্ষের এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করে হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাছেল হোসেন রিয়াদের বিরুদ্ধে। রোববার (১৪ জুলাই) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে। আহত ওই শিক্ষার্থীকে রাতেই পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।বিষয়টি নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আহত ওই শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতালের অর্থপেডিক্স বিভাগ থেকে ইএনটি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীর নাক, গলা, মুখ ও মাথায় আঘাত লেগেছে। অভিযুক্ত সাবেক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে এর আগেও ক্যাম্পাস ও হলে বেশ কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার বিষয়ে আহত শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়া বলেন, রাতে হলের দরজা খোলাকে কেন্দ্র করে রুমের বড় ভাই আমাকে জুতা দিয়ে পিটিয়েছেন। এমনটা এর আগেও তিনি বেশ কিছু হলের সাধারণ শিক্ষর্থীদের সঙ্গে করেছেন। তার ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস করে না। আমাকে মেরে হল থেকে আমার সমস্ত কিছু বাইরে ফেলে দিয়েছেন। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা চরম আতঙ্কে রয়েছি, কখন কি করে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. কামাল হোসেন বলেন, রাতের ঘটনাটি আমি সকালে এসে জানতে পারি। সঙ্গে সঙ্গে হলের দায়িত্বরত শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে তাকে দেখে এসেছি। তুচ্ছ ঘটনায় এ রকম করাটা ঠিক হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ছেলেটা আহত অবস্থায় রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়। আমরা সমস্ত কিছু পরীক্ষা করে দেখেছি। বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে সে। মাথায় নাকে মুখে আঘাত পেয়েছে। চিকিৎসা চলছে, আশা করছি ঠিক হয়ে যাবে। অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবি ছাত্রলীগের

চট্টগ্রাম: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবিতে মিছিল-সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি মুনির ইসলাম। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনের নামে একটি মহল দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাই। এসব ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাডেমিক পরিবেশ অব্যাহত রাখতে হবে। এ সময় তিনি জনদুর্ভোগ তৈরি না করে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে এবং কোটার বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের প্রতি আস্থা রাখতে ছাত্রসমাজের প্রতি আহ্বান জানান। এতে আরও বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মুনির উদ্দিন, হাসমত খান আতিফ, জাহিদ হাসান সাইমুন, রাকিবুল ইসলাম সাইক, মামুনুর রশীদ নিরব, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল সাইমুন, মুনির উদ্দিন রেহান, মহিউদ্দিন বাপ্পি, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান সুজন, রাশেদুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক জামসেদ উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন সাজিদ। মিছিল-সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা আসেফ, কায়েস মাহমুদ, মোস্তফা আমান, ইয়াছির আরফাত রিকু, সুলভ বড়ুয়া, ফুরকান উদ্দিন, মোহাম্মদ রুবেল, ইমতিয়াজ বাবর, আকবর খান, মোহাম্মদ হোসাইন চৌধুরী, তারেক মোহাম্মদ, গোবিন্দ দত্ত, বিশাল হাজারী, সাকিব, হাসনাত, ওসমান প্রমুখ।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত

কুমিল্লা: সরকারি সব গ্রেডের চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশ, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেল সোয়া ৩টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, বিকেলে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ির দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। এতে পুলিশ ও শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। বিকেল সাড়ে ৩টার পর আনসার ক্যাম্পের সামনে আবারও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় পুলিশ ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এদিকে মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ি অংশের চারদিকেই অবস্থান নিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তবে কাউকেই সড়কে দেখা যায়নি। যারাই সড়কে যেতে রওনা হন তাদেরই আটকে দিচ্ছে পুলিশ। এদিকে আনসার ক্যাম্প এলাকায় এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, পুলিশের অবস্থানের খবর আমরা জেনেছি। কেন্দ্রে থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। কেন্দ্র যা সিদ্ধান্ত দেবে আমরা তাই মানব। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, আজ শিক্ষার্থীদের রাস্তায় উঠতে দেওয়া হবে না। সড়ক ক্লিয়ার রাখার নির্দেশনা আছে।

ববিতে কর্মকর্তাদের সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি

বরিশাল: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবি সংক্রান্ত কর্মবিরতির সময় কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২ জুলাই) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে ওই অফিস আদেশে বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবি সংক্রান্ত কর্মবিরতির সময় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে সংগঠনের মধ্যে উদ্ভূত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হলো। কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শফিউল আলমকে আহ্বায়ক ও রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এছাড়া কমিটিতে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খোরশেদ আলম ও একই বিভাগের অপর সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজ আলমকে সদস্য করা হয়েছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠনের ব্যানারে যে কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সাময়িক স্থগিত করে নোটিশ জারি করা হয়। প্রক্টর অফিসের পূর্বানুমতি ব্যতীত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠনের ব্যানারে কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন করা যাবে না বলে নোটিশে উল্লেখ করায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছেন। তারা বলছেন, প্রক্টর অফিসের অনুমতি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়, আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে অনুমতি ভিসির দপ্তর বা অফিস কর্তৃপক্ষ দিয়ে থাকেন। গ্রুপিং থাকলেও নোটিশে শিক্ষকদের সংগঠনগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়নি, যা বৈষম্যের শামিল বলেও মনে করেন কেউ কেউ। মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে কর্মকর্তারা কর্মবিরতি শুরু করেন। তাদের কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানার নিয়ে কর্মসূচি পালন করতে কিছু কর্মকর্তা সেখানে আসেন। এ সময় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা তাদের বাধা দেন এবং ব্যানার ছিনিয়ে নেন। পরে আবারও ব্যানার ছাড়া ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মসূচিস্থলের পাশেই অবস্থান নেন। কিছুক্ষণ অবস্থান নেওয়ার পর ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানার আনা হলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা আবারও তাতে বাধা দেন। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে হামলা ও মারামারির ঘটনা ঘটে। উভয় গ্রুপ একে অপরের দিকে চেয়ার ছোড়াছুড়িও করেন। এ ঘটনায় দুই পক্ষের ১০ জন আহত হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।

আইইউবিএটিতে মেথডস অব স্ট্যাটিসটিক্স উইথ অ্যাপ্লিকেশনস বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

ঢাকা: শনিবার (২৯ জুন) বেলা ১১টায় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে (আইইউবিএটি) মেথডস অব স্ট্যাটিসটিক্স উইথ অ্যাপ্লিকেশনস নামে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটি লিখেছেন আইইউবিএটির তিনজন শিক্ষক অধ্যাপক ড. খন্দকার সাইফ উদ্দিন, অধ্যাপক ড. অনিল চন্দ্র বসাক ও অধ্যাপক ড. রাজীব লোচন দাস। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজসমূহের নানাবিধ বিষয়ের স্নাতক সম্মান প্রোগ্রামের ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে এ বইটি লেখা হয়েছে।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইইউবিএটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রব। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইইউবিএটির কোষাধ্যক্ষ ও অধ্যাপক সেলিনা নার্গিস। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. খন্দকার সাইফ উদ্দিন বইটি লেখার প্রেক্ষাপট ও যৌক্তিকতা বর্ণনা করেন। প্রধান অতিথি ড. মো. শাহজাহান কবীর সব ক্ষেত্রে বিশেষ করে কৃষি, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে গবেষণা কাজের জন্য পরিসংখ্যানের তাৎপর্য বর্ণনা করেন। তিনি একটি ভালো বইয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং উক্ত বইটির সাফল্যের ব্যাপারে তার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আব্দুর রব অন্যান্য অনুষদের পাঠ্যপুস্তক রচনায় শিক্ষকদের এগিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করেন। তিনি লেখকদের জন্য শুভকামনা ও বইটির সাফল্য কামনা করেন। অধ্যাপক ড. অনিল চন্দ্র বসাক বই উন্মোচন অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করবার জন্য সম্মানিত অতিথি, উপস্থিতি ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

ঢাবির হল ক্যান্টিনে তরকারিতে মিলল টাকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলগুলোর ক্যান্টিনে প্রায় প্রায়ই নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি এতে পোকা-মাকড় ও ময়লা আবর্জনা পাওয়ার খবর শোনা যায়। কিন্তু এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ক্যান্টিনে খাসির মাংসের তরকারিতে দশ টাকার নোট পাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২৮জুন) দুপুর ২টার দিকে হলটির ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী শামীম ক্যান্টিনে খাবার খেতে গেলে এ দৃশ্য দেখতে পান। পরে সেটির ছবি তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করলে মুহুর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায় এবং শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে হাস্যরসাত্মক বিভিন্ন কথা-বার্তা বলতে থাকেন। এ বিষয়ে শামীম বলেন, জুমার নামাজ শেষে ক্যান্টিনে খাবার খেতে গেলে আমি খাসির মাংসের তরকারি অর্ডার করি। তরকারি থালায় ঢালতে গিয়ে দেখি এতে দশ টাকার নোট। তখন ক্যান্টিন ম্যানেজারকে এটি দেখালে সে তা পরিবর্তন করে দেয়। এদিকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানারকমের হাস্যরসাত্মক মন্তব্য করছেন শিক্ষার্থীরা। 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ' নামে এক ফেসবুক গ্রুপে মাইনুদ্দিন গাউস নামে এক শিক্ষার্থী লেখেন, মুহসীন হলের ক্যান্টিনে টাকাও রান্না করা হয়! দানবীর হল বলে কথা, পাইসা হি পাইসা। খাশির গুদ্দাতে নোটটি পায় এই হলেরই শিক্ষার্থী শামিম। এই পোস্টের কমেন্ট বক্সে আবরার রাকিব নামের এক শিক্ষার্থী লেখেন, ভাই এইটা সম্ভবত আপনাকে ক্যাশব্যাক দিছে ইনস্ট্যান্ট। নাফিস ইকবাল লিখেছেন, ছোটবেলায় যে আইসক্রিম এর ভেতরে কয়েন দিতো এখন খাবারের ভেতর বোধহয় নোট দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে ক্যান্টিনের ম্যানেজার রিপন বলেন, নামাজের পর অনেক চাপ থাকে। সবাই একসঙ্গে খেতে আসে। ভিড়ের মধ্যে ভুলে তরকারির মধ্যে নোটটি পড়ে গেছে। ক্যান্টিন মালিক নূর আলম বলেন, খাবার যেখান থেকে দেওয়া হয় সেখান থেকে টাকা উড়ে মাংসের পিরিচে পড়তে পারে। ভুলক্রমে এটা হয়ে গেছে, ইচ্ছাকৃত নয়।

ইবির গণরুমে রাতভর র‍্যাগিং, ৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

ইবি (কুষ্টিয়া): ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলের গণরুমে আল-ফিক্হ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অপু নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এতে জড়িত পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজনকে এক বছরের জন্য (দুই সেমিস্টার) বহিষ্কার ও অপর দুজনকে সতর্ক করা হয়েছে। গত ২৯ মে ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির ১৩তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রোববার (২ জুন) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান স্বাক্ষরিত পৃথক পৃথক পাঁচটি অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। বহিষ্কৃতরা হলেন- শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মুদ্দাসসির খান কাফি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের উজ্জ্বল হোসেন ও সাগর প্রামাণিক। তাদের বিরুদ্ধে কেন চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে মর্মে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থনপূর্বক রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। এদিকে, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের শিক্ষা এবং পাঠচক্র সম্পাদক নাসিম আহমেদ মাসুম ও ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের মিসনো আল আসনাওয়ীকে সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সংযুক্ত হলে তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে বলে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। গত ০৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের গণরুমে (১৩৬ নম্বর কক্ষ) রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। এতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে রাতভর র‌্যাগিং, নগ্ন করে রড দিয়ে মারধর, পর্নোগ্রাফি দেখানো ও টেবিলের ওপর কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষ।

৪০০ গাছ কেটে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা জাবি প্রশাসনের

বিগত কয়েক বছরের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে গরমের দাপটে দেশ বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে । চলতি গ্রীস্ম মৌসুমে তীব্র গরমে নাজেহাল মানুষসহ অন্যান্য জীবজন্তুরাও। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে গাছ লাগানোকে একমাত্র উপায় বলে জানিয়েছেন দেশের পরিবেশবিদরা। তাদের ভাষ্য, দেশের সবুজ বনায়ন বাড়াতে বৃক্ষরোপন শুরু করলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এই পরিস্থিতির বদল হবে। গরমের তীব্রতা কমে আসবে। গরম থেকে গাছই যখন পরিবেশ রক্ষা করে, ঠিক এমন সময় ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় ৪০০ গাছ কাটার প্রস্তুতি নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসন। জানা গেছে, চারুকলা অনুষদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বেরুনি হলের বর্ধিতাংশের জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই জায়গাগুলোয় ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় ৪০০ গাছ কাটার বন্দোবস্ত করেছে। পাশাপাশি চারুকলা ভবনের জন্য বরাদ্দ করা জায়গা অতিথি পাখির ‘ফ্লাইং জোন’ হিসেবে পরিচিত। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, সারা বিশ্বে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের অংশ হিসেবে বাদ নেই আমরাও। বাংলাদেশে মনুষ্যসৃষ্ট কারণ যেমন: গাছপালা কেটে ফেলা, বন উজাড় করা, গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জলাশয় ভরাটের কারণে দিন দিন তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। কিন্তু এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের এমন সিদ্ধান্ত অবাক করার মতো। এর মধ্যেই চারুকলা অনুষদের ভবন, গাণিতিক ও পদার্থবিদ্যা বিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন ও জীববিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের জন্য টিনের ঘেরাও দিয়েছে প্রশাসন বলেও জানা গেছে। ভবন নির্মানের জন্য আহ্বান করা দরপত্র থেকে জানা যায়, জীববিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য ৪৮ কোটি, গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য ৫৮ কোটি ও চারুকলা অনুষদের জন্য ৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। জীববিজ্ঞান অনুষদ ও গাণিতিক ও পদার্থবিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হচ্ছে আর চারুকলা অনুষদ ভারত-বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে। জীববিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণাগারের বিপরীতে এবং গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য পদার্থবিজ্ঞান ভবনের পাশের জলাশয়ের জায়গা বরাদ্দ করেছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত হচ্ছে ১০ তলাবিশিষ্ট লেকচার থিয়েটার হল কাম এক্সামিনেশন হল। নির্মিতব্য এই লেকচার থিয়েটারে ৬২টি সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ থাকবে, যাতে একসঙ্গে ১০০ জন শিক্ষার্থী বসতে পারবেন। প্রতিটি ক্লাসরুমে ওয়াল র‍্যাক থাকবে, যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাপটপ ও অন্যান্য পাঠ-প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা যাবে। আরও থাকবে ১০টি ল্যাব, যা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অন্য শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে পারবে। নির্মাণাধীন লেকচার থিয়েটার দুটি চালু হলে ক্লাস রুম সংকটের পাশাপাশি ল্যাব সংকট ও দূর হবে। কেবল বরাদ্দ থাকায় নতুন ভবন নির্মাণ করাকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। অপরিকল্পিত উন্নয়নের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসা ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, তারা মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া কাজ শুরু করতে চায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই। কারণ তারা লুকোচুরি করে কাজ শুরু করতে পারলে তাদের কোনও স্টেকহোল্ডারদের কাছেই জবাবদিহি করতে হয় না। লেকচার থিয়েটার হলে ৬২টি ক্লাসরুমে প্রতি ঘণ্টায় ৬ হাজার ২০০ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করতে পারবে। তারপরও তিনটি অনুষদের এক্সটেনশন বিল্ডিং তাদের দরকার। তিনি আরও বলেন, যেখানে দ্বিতীয় রেজিস্ট্রার ভবনটাই পূর্ণাঙ্গ করা যায় মাত্র ৪০ কোটি টাকায়, সেখানে কিছু তোয়াক্কা না করে প্রশাসন ‍তৃতীয় প্রশাসনিক ভবন করতে চায়। কারণ অর্থ অপচয় করে পকেট ভারী করা যায়। ফলে প্রকল্প অফিস হয়ে গেছে জাহাঙ্গীরনগরে দুর্নীতির আঁতুড়ঘর। টাকা আসছে টাকা খরচ করতে হবে, ভাগবাঁটোয়ারা করতে হবে—তারা আছে এই নীতিতে। যে কারণে মাস্টারপ্ল্যানের তোয়াক্কা না করে এ রকম ধ্বংসাত্মক ক্যাম্পাস তৈরি করছে। দীর্ঘমেয়াদি প্ল্যান করে যদি এই কাজগুলো হতো, তাহলে আমাদের তাতে কোনও বাধা থাকতো না। এই পরিস্থিতি বড় কোনও আন্দোলনের দিকেই আমাদের নিয়ে যাচ্ছে। ঢাকাওয়াচ/টিআর

আবারও বাসে আগুন দিলো চুয়েট শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম: সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহত ও এক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার প্রতিবাদে আরও একটি বাসে আগুন দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় চুয়েট সংলগ্ন এলাকায় এ যাত্রীবাহী বাসে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা আগুন দেয়। রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, চুয়েটের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আরও একটি বাসে আগুন দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ অবস্থান করছে। ঢাকাওয়াচ/টিআর

হিট স্ট্রোকে চলে গেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক ওয়ারেছ তূর্য মারা গেছেন। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে তিনি মারা যান। তীব্র তাপপ্রবাহে হিট স্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন তার স্বজনরা। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও জনসংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক আসিফ বিন আলী  এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক ওয়ারেছ তূর্য বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকতেন। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন বলে তার পরিবার ও স্বজনরা ধারণা করছেন। আমরা তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। ইশতিয়াক ওয়ারেছ তূর্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ২০২তম ব্যাচের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে। তূর্যের বাবা ওয়াহিদুজ্জামান মিনু আফজাল হোসেন মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন তূর্য। এদিকে, মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় তূর্যের মৃত্যুর পর বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে তার মরদেহ নিজ জেলা সিরাজগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাদ জোহর সিরাজগঞ্জ আলিয়া মাদরাসা মাঠে তার জানাজা হবে। তীব্র তাপপ্রবাহে গত ২১ এপ্রিল থেকে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির অনলাইন ক্লাসই চলমান থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তূর্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী এসময়ে বাসায় বসে অনলাইনে ক্লাস করছিলেন। ঢাকাওয়াচ/টিআর

জবিতে পহেলা বৈশাখ পালিত হবে বৃহস্পতিবার

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): নানা আয়োজনে আগামী বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হবে। সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলা ১৪৩১ সনের পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান আগামী ১৮ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) উদযাপন করা হবে। এদিন বর্ষবরণ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এদিন সকালে ক্যাম্পাস থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক ঘুরে আবার ক্যাম্পাসে এসে শেষ হবে। এরপর একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ভাস্কর্য চত্বরের সামনে আলোচনা সভা, সংগীত বিভাগের আয়োজনে সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং নাট্যকলা বিভাগের আয়োজনে যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হবে। পরে বিকেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, আবৃত্তি সংসদ ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনা এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড মিউজিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রযোজনায় রাত ৮টা পর্যন্ত ব্যান্ড সংগীত পরিবেশিত হবে। এদিন বর্ষবরণের বর্ণাঢ্য এসব অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে অংশ নিতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে চারপাশের দেয়ালে দেয়ালচিত্র এঁকেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া রিকশাচিত্রকে উপপাদ্য করে এ চিত্রাঙ্কন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রে ফুটে উঠেছে ফুল, মাছ, নৌকা, বাঘ, ময়ূরসহ নানা ধরনের চিত্র। ঢাকাওয়াচ/টিআর