
বেতন-ভাতা ছাড়াই সাড়ে তিন লাখ শিক্ষকের ঈদ
পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে রংপুরের একটি বেসরকারি স্কুলে চাকরিতে যোগ দেন আবু রাশেদ নোমান। জানুয়ারিতে মিলেছে ইনডেক্স নম্বর। তবে এখনো পাননি বেতন। নোমান বলেন, ‘কেমন যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আছে। চাকরি করি কিন্তু বেতন নাই। নিজের জন্য কিছু কেনার চিন্তাও করি না। বাবা-মাকে যে কিছু কিনে দেবো সে ক্ষমতাও নাই। উল্টো রোজার সময় কয়েক হাজার টাকা ধার হয়েছে। কীভাবে কী করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।’ গত ডিসেম্বর থেকে বেতন পান না আরেক শিক্ষক সাদিকুল্লাহ আমিন। তিনি বলেন, ‘ঈদের এই সময়টায় রীতিমতো পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ঈদটা পার হলেই বাঁচি। আমার দুইটা বাচ্চা আছে ভাগ্য ভালো নানা বাড়ি থেকে তারা নতুন জামা পেয়েছে। না হলে আমার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাগুলোরও ঈদ মাটি হয়ে যেতো। ঈদে টালবাহানা করে বলেছি এবার কাজের অনেক চাপ বাড়ি যেতে পারবো না। বাধ্য হয়ে মিথ্যা বলতে হচ্ছে।’ কয় দিন বাদেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। এই উৎসব ঘিরে গোটা দেশে আনন্দের ছটা। কিন্তু এর ছোঁয়া লাগেনি প্রায় তিন লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষকের ঘরে। মেলেনি বেতন-ভাতা। ঈদের আগে বেতন পাবেন এই সুযোগও নেই। শিক্ষকদের অভিযোগ, কর্মকর্তাদের সদিচ্ছার অভাবেই এই অবস্থা। তারা চাইলেই ঈদের আগে বেতন-ভাতা দিতে পারতেন। ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে বেতন-ভাতা দেয়া শুরু হয়েছে শিক্ষকদের। শিক্ষকদের বেতন তোলা নিয়ে ভোগান্তি লাঘবের জন্যই নতুন এই পদ্ধতি। কিন্তু নোমান-আমিনের মতো প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষক চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় আছেন বেতনের। বৃহস্পতিবার বেতন-ভাতা ছাড় হলেও তা তুলতে না পারার শঙ্কা রয়েছে শিক্ষকদের মধ্যে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বলছে, ‘বৃহস্পতিবারের মধ্যেই শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ব্যাংকে পাঠানোর চেষ্টা চলছে।’ তথ্যমতে, গত ১ জানুয়ারি ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক ইএফটি’র মাধ্যমে বেতন-ভাতা পান। দ্বিতীয় ধাপে ৬৭ হাজার, তৃতীয় ধাপে ৮৪ হাজার এবং চতুর্থ ধাপে ৮ হাজার ২০০ এর অধিক শিক্ষক-কর্মচারীকে ডিসেম্বর মাসের বেতন দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অধিকাংশ পেয়েছেন জানুয়ারি মাসের বেতন। তবে মার্চ শেষ হতে চললেও ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন ও ঈদ উৎসব ভাতা পাননি শিক্ষকরা। শুধু তাই নয়, ডিসেম্বরের বেতন মেলেনি সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর। গত মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) এ ধাপের ৪ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের বেতনের মেসেজ পেয়েছেন। তবে তুলতে পারেননি সে অর্থ। নোয়াখালীতে চাকরি করেন আসাদুল্লাহ মিয়াজী। বাড়ি তার দিনাজপুরে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষক মানুষ। না পারি মানুষের কাছে ধার দেনা করতে আবার না পারি ভিন্ন পেশায় যাইতে। ধার করে ঈদে বাড়ি আসছি। এখনও এক মাসের বাসা ভাড়া বাকি। কিস্তি দেয়া লাগে। এরপর আবার ধার করে চলছি। আমার ওষুধ কেনা লাগে প্রতি মাসে প্রায় দুই হাজার টাকার। ফার্মেসিতেও বাকি পড়ছে। কীভাবে চলছি আল্লাহ্ জানে।’ মিয়াজী আরো বলেন, ‘আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সনদপত্রের নামের মিল নেই। এখন ত্বরিত নামটাও সংশোধন করতে পারছি না। এই কারণে সার্ভারে এন্ট্রি দিতে পারিনি। বেতন ছাড়া অনেক কষ্টে জীবন চলছে। এখন এসেছি সমাধানের জন্য।’ বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রভাষক মো. শান্ত আলী বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বোনাস প্রদানে মাউশি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবেহলা আমাদেরকে চরমভাবে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বিভিন্ন বিষয়ে সবসময় মাউশি গা-ছাড়া ভাব দেখিয়ে এসেছে। শিক্ষকরা যদি সরকারের আওতাভুক্ত হয়ে থাকে তাহলে সরকারের ঘোষণা সত্ত্বেও ২৩ তারিখের মধ্যে বেতন বোনাস দেয়া হলো না কেন?’ তিনি বলেন, ‘কয়েক লাখ শিক্ষকের ঈদ আনন্দ ইতিমধ্যে ম্লান হয়ে গেছে। সমাজ ও পরিবারের কাছে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছে না। এভাবে আসলে আর চলতে দেয়া যায় না। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অভিভাবকের প্রশ্নে নতুন করে ভাববার সময় এসেছে। তরুণ শিক্ষকরা এই বৈষম্য ও অবহেলা সহ্য করবে না।’ শান্ত বলেন, ‘আমি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ করবো অতি দ্রুত শিক্ষকদের বেতন-বোনাস প্রদানের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’ ওদিকে মাউশি বলছে, ‘নতুন একটি প্রক্রিয়া। তাই কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। মাউশি’র এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ইএমআইএস) সেল জানায়, প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে নাম। অনেকেই নাম সনদপত্রে একই নাম নেই। আগে সমস্যা হয়নি কিন্তু সার্ভারে ভিন্ন নামের কারণে আটকে গেছেন। আবার অনেক নারী বিবাহের পর পরিবর্তন করেছেন নামের। আবার অনেকেরই ডট, কমা, হাইফেন ইত্যাদিতে রয়েছে ভিন্নতা। তবে ইএফটি সেল ডট, কমা, হাইফেন এসবে ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেভাবেই সংশোধন করা হবে সার্ভার। তবে যাদের সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে নামের ভিন্নতা বেশি (৫০ শতাংশের বেশি অমিল) ও জন্মতারিখ সঠিক নয় তাদের সংশোধন করেই ইএফটিতে যুক্ত হতে হবে।’ সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইএমআইএস সেলের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট খন্দকার আজিজুর রহমান বলেন, ‘সার্বিক বিষয়ের কাজটি খুবই জটিল। এখানে প্রতিটি শিক্ষকের তথ্য পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে হচ্ছে। আমরা ছাড় দেয়ার প্রবণতা দেখাচ্ছি কিন্তু ভুল করতে চাই না।’ মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান বলেন, ‘প্রায় চার লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন অনলাইনে দেয়া খুব সহজ বিষয় না। অনেকের তথ্যগত ভুল রয়েছে। তবুও মানবিক বিবেচনায় তাদের বেতন দেয়া হচ্ছে। আমরা আমাদের কাজ শেষ করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদনও দিয়েছে। বাকি কাজ অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ব্যাংকের।’ তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রণালয়, আইবাস ও ইএমআইএস সেলের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলা হয়েছে। তারা সমাধানের চেষ্টা করছেন।’

এবার দাখিলের বাংলা প্রথমপত্র-উচ্চতর গণিত পরীক্ষা পেছাল
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার সময়সূচি নিয়ে গোলমেলে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দফায় দফায় পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এরই মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার সূচি দুই দফা পরিবর্তন করা হয়েছে। এবার দাখিল পরীক্ষার সূচিও দ্বিতীয়বারের মতো সংশোধন করলো বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। বুধবার (২৬ মার্চ) মাদরাসা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ‘সর্বশেষ সংশোধিত’ দাখিল পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দুটি পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করেছে বোর্ড। তাছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষার সূচিতেও কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। সময়সূচি বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগের রুটিনে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২০ এপ্রিল, রোববার। সংশোধিত রুটিনে তা পরিবর্তন করে ২১ এপ্রিল, সোমবার করা হয়েছে। আর উচ্চতর গণিত পরীক্ষা আগের রুটিন অনুযায়ী আগামী ১২ মে (সোমবার) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেটিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধিত রুটিন অনুযায়ী, দাখিলের উচ্চতর গণিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ মে (বৃহস্পতিবার)। এদিকে, আগের রুটিন অনুযায়ী, দাখিলের ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল ১৪ মে, যা ১৮ মে তারিখের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা ছিল। তবে পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- ১৬ মে ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হয়ে চলবে ২০ মে পর্যন্ত। সর্বশেষ প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী- চলতি বছরের দাখিল পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ১০ এপ্রিল। এ বছর সারাদেশ থেকে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে দুই লাখ ৯৫ হাজার ৭২৬ জন। গত বছরের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে অর্ধলাখেরও বেশি। মাদরাসা বোর্ড সূত্র জানায়, গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় মোট ২ লাখ ৪২ হাজার ৩১৪ জন। সেই হিসাবে এ বছর পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৫৩ হাজার ৪১৩ জন।

চবির ‘ডি’ ইউনিটের ফল প্রকাশ, পাশের হার ৩৬.৬১ শতাংশ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ( চবি ) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষায় পাশ করেন ১৭ হাজার ৯৭ জন বা ৩৬.৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী। মেধা তালিকায় প্রথম হওয়া শিক্ষার্থী পেয়েছেন ৯১.৫০ নম্বর। সোমবার ( ২৪ মার্চ ) সন্ধ্যা ৭.৩০ টায় এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীরা ফলাফল দেখতে পারবেন। বিস্তারিত ফলাফল পরবর্তীতে নিজ নিজ প্রোফাইলে লগইন করে দেখতে পারবেন। ফলাফলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন মজুমদার। চলতি মাসের ২২ মার্চ "ডি" ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার অনুষ্ঠিত হয়। চবির "ডি" ইউনিটে ৯৫৮ টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেন ৬০ হাজার ৫২২ জন শিক্ষার্থী। আসন প্রতি লড়েছেন ৬৩ জন ভর্তি পরীক্ষার্থী। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন মজুমদার বলেন, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট রেজাল্ট দেখতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সাথে মিটিং করে আমরা পরবর্তীতে সাবজেক্ট চয়েস ও ভর্তি কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিব।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণহত্যা দিবস ও স্বাধীনতা দিবস পালনের নির্দেশ
কাল মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) গণহত্যা দিবস ও পর দিন বুধবার (২৬ মার্চ) স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। দিবস দুটি যথাযথভাবে পালনের জন্য জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। জাতীয় কর্মসূচির আলোকে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৫ মার্চ গণহত্যা ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালনের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে দেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তি/বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে গণহত্য ও ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ সুবিধাজনক সময়েও এই কর্মসূচি পালন করতে পারবে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে যথাযথ মর্যাদায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে রচনা ও আবৃত্তি করা হবে। জাতীয় কর্মসূচির আলোকে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুবিধাজনক সময়ে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভার আয়োজন করবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস যথায়থভাবে পালনের ব্যবস্থা নেবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর, কারিগরি শিক্ষা অধিফতর ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।

চীনের ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা খরচে বাংলাদেশিদের পড়ার সুযোগ
প্রতিবারের ন্যায় ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষেও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা খরচে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে চীন সরকার। দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো মেধাবীদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা রেখেছে। এগুলোর আওতায় টিউশন ফি মওকুফসহ আবাসন, চিকিৎসা সুবিধা এবং মাসিক ভাতারও সুবিধা রয়েছে। এশিয়ার এই দেশটিতে অধ্যয়নের এমন সুবর্ণ সুযোগ বাংলাদেশি মেধাবীদের জন্যও অফুরন্ত সম্ভাবনা। চলুন তাহলে চীনের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি স্কলারশিপের ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেই। ২০২৫ সালে চীনের উচ্চশিক্ষায় শীর্ষ ১০টি স্কলারশিপ সিএসসি স্কলারশিপ (CSC Scholarship) এই বৃত্তি প্রকল্পটির পূর্ণরূপ Chinese Scholarship Council। এর মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীরা চীনের ২৮০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, মাস্টার্স এবং পিএইচডি অধ্যয়নের সুযোগ পান। চীনা সরকার এই স্কলারশিপের অধীনে শিক্ষার্থীদের আবাসন ও মৌলিক স্বাস্থ্য বীমা প্রদান করে থাকে। প্রদেয় মাসিক ভাতার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ চাইনিজ ইউয়ান, যা বাংলাদেশি টাকায় ৫৮ হাজার ৬৪৫ টাকার (১ চাইনিজ ইউয়ান = ১৬ দশমিক ৭৬ বাংলাদেশি টাকা) সমতূল্য। ইতোমধ্যে যে শিক্ষার্থীরা চীনের কোনও বৃত্তি পেয়েছে তাদের জন্য CSC Scholarship প্রযোজ্য নয়। এর আবেদনের জন্য নিবন্ধন করতে হবে সিএসসি পোর্টালে-(https://studyinchina.csc.edu.cn/?S8cMF5lUCwGD=1742626962725#/register)। অতঃপর যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক সেখানে পৃথকভাবে আবেদন জমা দিতে হবে। তিয়াঞ্জিন গভর্ণমেন্ট স্কলারশিপ এককভাবে নান্কাই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদেরকে দেওয়া হয় তিয়াঞ্জিন গভর্ণমেন্ট স্কলারশিপ। স্নাতক, মাস্টার্স ও পিএইচডি লেভেলের জন্য উন্মুক্ত এই প্রকল্পে মাসিক সর্বোচ্চ ২ হাজার ইউয়ান (৩৩ হাজার ৫১১ টাকা) পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। আবেদনের শেষ সময় সাধারণত মে মাসের শেষের দিকে হয়ে থাকে। আবেদনকারীদেরকে https://tju.at0086.cn/StuApplication/Login.aspx লিঙ্কের মাধ্যমে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে। নান্কাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চূড়ান্ত অনুমোদনই শিক্ষার্থীদের Tianjin Government Scholarship প্রাপ্তির প্রধান মাপকাঠি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে- https://sie.tju.edu.cn/en/jxj/tjszfjxj/ লিঙ্কে। সাংহাই গভর্ণমেন্ট স্কলারশিপ চীনের প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক পরিচালিত অনুদানগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে এই সাংহাই গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ। পিএইচডি, মাস্টার্স, এবং নূন্যতম স্নাতকের ক্ষেত্রে প্রদানকৃত এই অনুদান তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। টাইপ এ (মাস্টার্স বা পিএইচডি), টাইপ বি (স্নাতক), এবং টাইপ সি (দীর্ঘমেয়াদী উচ্চতর অধ্যয়ন, যেমন চীনা ভাষা কোর্স)। সাংহাই সরকার এগুলোর মধ্যে দুই ক্যাটাগরিতে স্কলারশিপ প্রদান করে। টাইপ এ’তে ফুল ফান্ডিং দেয় (ভর্তি ফি, আবাসন, চিকিৎসা বীমা এবং মাসিক ভাতা প্রদান) এবং টাইপ বি’তে আংশিক ফান্ডিং (শুধুমাত্র টিউশন ফি ও স্বাস্থ্য বীমা। Shanghai Government Scholarship চীনা ভাষা কোর্সের মতো দীর্ঘমেয়াদী কোনও অধ্যয়নের জন্য প্রযোজ্য নয়। ডিগ্রী বিশেষে স্কলারশিপের মূল্যমান ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ ইউয়ান (৪১ হাজার ৮৮৯ থেকে ৫৮ হাজার ৬৪৫ টাকা) পর্যন্ত। আবেদনের সাধারণ সময় জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত এবং আবেদনের প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে- https://www.study-shanghai.cn/c.asp?action=AS_SS_Entry। বেইজিং গভর্ণমেন্ট স্কলারশিপ (Beijing Government Scholarship) চীনের প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রথম স্কলারশিপ কর্মসূচি হচ্ছে এটি। সরাসরি বেইজিং সরকার থেকে হওয়া এই অর্থায়নের একমাত্র সুবিধাভোগী হচ্ছে পিএইচডি, মাস্টার্স ও স্নাতক শিক্ষার্থীরা। স্কলারশিপের আওতায় প্রদেয় আর্থিক সহায়তার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৪০ হাজার ইউয়ান (৬ লাখ ৭০ হাজার ২২৬ টাকা)। সাধারণত প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে জুনের মধ্যে আবেদন কার্যক্রম শেষ করা হয়। Beijing Government Scholarship প্রদানকারী সুনির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা পাওয়া যাবে- https://english.beijing.gov.cn/studyinginbeijing/choices/-লিঙ্কে। এখান থেকে একটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের পর তৎসংলগ্ন ওয়েবসাইটেই পাওয়া যাবে আবেদনের প্রক্রিয়া। হুবেই গভর্ণমেন্ট স্কলারশিপ (Hubei Government Scholarship) এই স্কলারশিপটিও স্নাতক, মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য। স্নাতক শিক্ষার্থীরা বছরে ১০ হাজার ইউয়ান (১ লাখ ৬৭ হাজার ৫৫৬ টাকা) এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা ১৫ হাজার ইউয়ান (২ লাখ ৫১ হাজার ২৩৫ টাকা)। পিএইচডি শিক্ষার্থীরা পান ২০ হাজার ইউয়ান (৩ লাখ ৩৫ হাজার ১১৩ টাকা)। সাধারণ গবেষণা স্কলারশিপ হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদের ভিত্তিতে ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার ইউয়ান (৮৩ হাজার ৭৭৮ থেকে ৩ লাখ ৩৫ হাজার ১১৩ টাকা) প্রদান করা হয়ে থাকে। স্কলারশিপের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হয় প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে। আবেদনের জন্য Hubei Government Scholarship প্রদানকারী বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করার পর সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। সিআইএস স্কলারশিপ (CIS Scholarship) শিক্ষা খাতে এই সরকারি প্রকল্পটির পূর্ণরূপ Confucius Institute Scholarship। এর আওতাভূক্ত প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে- চীনের বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য পিএইচডি গবেষণা, গবেষণামূলক সফর, আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ, এবং চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি কোর্স। ১৫০টিরও বেশি চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই আর্থিক সুবিধা গ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে। CIS Scholarship-এ টিউশন ফি, আবাসন ব্যয়, চিকিৎসা বীমা এবং মাসিক ভাতা অন্তর্ভূক্ত। স্নাতক বা চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি কোর্স গ্রহণকারীরা মাসিক ২ হাজার ৫০০ ইউয়ান (৪১ হাজার ৮৮৯ টাকা) পেয়ে থাকেন। মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে মাসিক ৩ হাজার ইউয়ান (৫০ হাজার ২৬৭ টাকা)। সাধারণত মে এবং নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে দুটো পৃথক শিডিউলে আবেদন গ্রহণ করা হয়। অনলাইন আবেদনের সাইট: http://www.chinese.cn/page/#/pcpage/project_detail। ইউনান প্রোভিন্সিয়াল গভর্ণমেন্ট স্কলারশিপ (Yunnan Provincial Government Scholarship) বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অধীনে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই স্কলারশিপ। এর নেপথ্যের প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সিএসসি। এই ব্যবস্থায় স্নাতক, মাস্টার্স, ডক্টরেট, প্রশিক্ষণ ও স্বল্পমেয়াদী কোর্সের জন্য আবেদন করা যায়। ফুল ফান্ডিং-এর এই প্রকল্পে রয়েছে টিউশন ফি মওকুফ, বিনামূল্যে অন-ক্যাম্পাস আবাসন, মাসিক ভাতা এবং চিকিৎসা বীমা ও সুরক্ষা সুবিধা। সাধারণত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে আবেদন গ্রহণ কর্মসূচী। Yunnan Provincial Government Scholarship-এ আবেদনের প্ল্যাটফর্ম ইউনান নরমাল ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাই; http://ynnu.at0086.cn/student। জিঞ্জিয়াং উইঘুর অটোনমাস রেজিন গভর্ণমেন্ট স্কলারশিপ (Xinjiang Uygur Autonomous Region Government Scholarship) স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সরকার পরিচালিত এই বৃত্তি প্রকল্পে ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডির পাশাপাশি চীনা ভাষা কোর্সও বিনা খরচে অধ্যয়ন করা যায়। পূর্ণ অর্থায়নের এই সুবিধায় জীবনযাত্রার ভাতা, আবাসন, চিকিৎসা বীমা ও টিউশন ফি অন্তর্ভূক্ত। সাধারণত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ থাকে। স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির অধীনে নির্ধারিত কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো বিষয়ের জন্য এই আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। এই তথ্যসহ স্কলারশিপের যাবতীয় কার্যক্রমের জন্য রয়েছে স্বতন্ত্র স্কলারশিপ ম্যানেজমেন্ট ইন্ফরমেশন সিস্টেম। এই সিস্টেম (http://studyinchina.csc.edu.cn/#/register) Xinjiang Uygur Autonomous Region Government Scholarship-এর আবেদনের জন্য নিবেদিত প্ল্যাটফর্ম। একই ভাবে আবেদন জমা দিতে হয় জিঞ্জিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে (http://xju.at0086.cn/StuApplication/Login.aspx)। নাঞ্জিং গভর্ণমেন্ট স্কলারশিপ (Nanjing Government Scholarship) এই সরকারি স্কলারশিপটি বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্নাতক ও মাস্টার্স পর্যায়ে আংশিক ফান্ডিং দেয়। এর পাশাপাশি অন্য কোনো সংস্থার বৃত্তি একত্রে গ্রহণ করার নিয়ম নেই। Nanjing Government Scholarship শুধুমাত্র নাঞ্জিং ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে দেয়া হয়। স্নাতক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি একাডেমিক বছরে সরকার থেকে আসে ১০ হাজার ইউয়ান (১ লাখ ৬৭ হাজার ৫৫৬ টাকা)। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অতিরিক্ত সহায়তা হিসেবে আসে ৫ হাজার ইউয়ান (৮৩ হাজার ৭৭৮ টাকা)। মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর ২০ হাজার ইউয়ান (৩ লাখ ৩৫ হাজার ১১৩ টাকা) করে পান। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শুধু জীবনযাত্রার ব্যয়টা মওকুফ করে। আবেদন কার্যক্রম অব্যাহত থাকে সাধারণত এপ্রিল মাসের মধ্যভাগ পর্যন্ত। প্রার্থীদের আবেদন গ্রহণ করা হয় https://nuist.17gz.org/member/login.do ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। এ সময় প্রোগ্রাম হিসেবে নির্বাচন করতে হয় ‘চাইনিজ লোকাল গভর্ণমেন্ট স্কলারশিপ’। ইয়াংঝৌ ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ (Yangzhou University Scholarship) এই বৃত্তির ম্যাধমে ইয়াংজৌ ইউনিভার্সিটি তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া বৈশ্বিক ছাত্রছাত্রীদের পূর্ণ অর্থায়ন নিশ্চিত করে। একাডেমিক ডিগ্রীগুলোর মধ্যে রয়েছে স্নাতক, মাস্টার্স এবং পিএইচডি। এই প্রকল্পের মধ্যে সুবিধা হিসেবে রয়েছে টিউশন ফি মওকুফ, আবাসন ও মাসিক ভাতা। প্রার্থীদের জানুয়ারি থেকে মে মাসের মাঝামাঝিতেই শেষ করতে হয় যাবতীয় আবেদন প্রক্রিয়া। Yangzhou University Scholarship-এ স্নাতক পর্যায়ে শুধুমাত্র আবাসনের ব্যয় ও টিউশন ফি মওকুফ করা হয়। মাস্টার্সে টিউশন ও আবাসন ব্যয় ছাড়াও রয়েছে প্রতি মাসে ১ হাজার ৫০০ ইউয়ান (২৫ হাজার ১৩৩ টাকা) করে জীবিকা ভাতা। এটি চলে ১০ মাস পর্যন্ত। পিএইচডিতে টিউশন ও আবাসন ব্যয়ের পাশাপাশি গবেষকরা মাসে ২ হাজার ৫০০ ইউয়ান (৪১ হাজার ৮৮৯ টাকা) পর্যন্ত জীবিকা ভাতা পেয়ে থাকেন। এর স্থায়ীত্বকাল ১০ মাস পর্যন্ত। পূর্ণ আবেদন সম্পন্ন করার জন্য প্রার্থীদের যেতে হবে- https://yzu.at0086.cn/StuApplication/Login.aspx ওয়েবসাইটে। এই ১০টি চায়না স্কলারশিপ চীনের শিক্ষা খাতে দেশটির সরকারের অবদানকে অর্থবহ করে তুলেছে। বৃত্তি প্রকল্পগুলোর প্রত্যেকটিই ব্যাচেলর থেকে শুরু করে পিএইচডি পর্যন্ত সকল পর্যায়ের মেধাবীদের জন্য প্রযোজ্য। তন্মধ্যে সরাসরি প্রধান সরকারি প্রকল্পভূক্ত হচ্ছে সিএসসি এবং সিআইএস স্কলারশিপ। তিয়াঞ্জিন, শাংহাই, বেইজিং, হুবেই, ইউনান প্রভিন্সিয়াল, জিঞ্জিয়াং উইঘুর অটোনমাস রেজিন এবং নাঞ্জিং গভর্ণমেন্ট স্কলারশিপগুলো পরিচালিত হয় প্রাদেশিক সরকারের অধীনে। তালিকার একমাত্র বেসরকারি উদ্যোগ হচ্ছে ইয়াংঝৌ ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ। সর্বসাকূল্যে, এই চাইনিজ স্কলারশিপগুলোর যে কোনওটি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা গ্রহণের পথে উৎকৃষ্ট বাহক।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হামলা: কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ঢাবি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী সবাইকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি কোনো শিক্ষক হামলায় পরোক্ষভাবে ইন্ধন দিয়েছিলেন কি-না তা তদন্তে নতুন দুইটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ‘হামলাকারীদের বহিষ্কারের সুপারিশ করা হবে আর কারও ছাত্রত্ব শেষ হলে বাতিল হবে সনদ।’ এছাড়া বহিরাগত কেউ হামলায় জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও থানার মাধ্যমেই শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘কোনো অপরাধী যেন পার পেয়ে না যায়। আর কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থী যেন শাস্তি না পান তা নিশ্চিতের মাধ্যমে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।’ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ক্যাম্পাসে নারীসহ শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনা তদন্তে করা হয় সত্যানুসন্ধান কমিটি। সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদনে ১২৮ জনের নাম এসেছে। এতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ও বিশ্বিবদ্যালয় শাখা সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের হামলায় নির্দেশ ও সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে।হামলাকারীর সংখ্যা আরও বেশি, কমিটির রিপোর্ট কেন তার পুরোপুরি তথ্য আসেনি- এমন প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের। উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, প্রাথমিক এ রিপোর্টের ভিত্তিতে নতুন তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। যাতে চিহ্নিত করা যাবে সব অপরাধীকে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, হামলায় কোনো শিক্ষকের পরোক্ষ ইন্ধন ছিল কি না তা খতিয়ে দেখতেও হয়েছে আরেকটি কমিটি।ঢাবির প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘হামলায় জড়িতদের বহিষ্কারের সুপারিশ থেকে অপরাধের ধরন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে। তবে অপরাধী কারও ছাত্রত্ব শেষ হলে বাতিল হতে পারে তার সনদ। অন্য প্রতিষ্ঠানের যারা হামলায় অংশ নিয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই তার শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’শুধু ঢাবি নয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও জুলাই আন্দোলনে হামলাকারী শিক্ষার্থী ও ইন্ধনদাতা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘স্বচ্ছ তদন্ত প্রক্রিয়ায় অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’ নিরপরাধ কারও প্রতি অবিচার না করারও পরামর্শ তার।এছাড়া আবাসন সংকটসহ নানা সমস্যাকে পুঁজি করে ছাত্র সংগঠনগুলো যাতে কাউকে সহিংসতায় ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য শিক্ষার্থীদের এসব সুবিধা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরও আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ এ বিশ্লেষকদের।

সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রশাসক অধ্যক্ষ ইলিয়াস, আদেশ জারি শিগগির
প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রশাসক হচ্ছেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক একেএম ইলিয়াস। সেই হিসেবে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসই হচ্ছে নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডকোয়ার্টার্স সদরদপ্তর। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এরপর অধ্যাপক ইলিয়াসকে প্রশাসক পদে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে শিগগির চূড়ান্ত নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করা হবে। গত রোববার (১৬ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টা উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ব্রিফিংয়ে জানান, সাত কলেজ নিয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত হবে, সেটির জন্য অন্তর্বর্তী প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। সাত কলেজের অধ্যক্ষদের মধ্য থেকে একজনকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। জানা গেছে, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির নামকরণ চূড়ান্তের পর এটি কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়ে রূপরেখা তৈরির কাজ করছে ইউজিসি। রূপরেখা চূড়ান্ত হলে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে সংস্থাটি। মন্ত্রণালয় সেটি যাচাই শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদনের জন্য পাঠাবে। সেখানে অনুমোদনের পর অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের অধীনে পরিচালিত হবে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি। ইউজিসির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অধ্যক্ষদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এটা মূলত সাক্ষাৎকার নয়, তাদের মতামত। সেখানে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে অধিকাংশ অধ্যক্ষ সমর্থন দিয়েছেন। তাকে প্রশাসক নিয়োগ করা হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের পর সাতটি কলেজে কো-অর্ডিনেশন ডেস্ক করা হবে। সেই ডেস্ক পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন প্রশাসক তথা ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ। তার নিজ কলেজে বসে তিনি সব দায়িত্ব সামলাবেন। এ জন্য তার কলেজটি হবে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির হেডকোয়ার্টার্স বা সদরদপ্তর। খুব শিগগির এ নিয়ে আদেশ জারি হতে পারে।’

অনুমোদন পেল ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’
দেশে নতুন করে আরও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এটি নিয়ে দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১১৬টিতে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ট্রাস্টের অধীনে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম হচ্ছে ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি, ঢাকা’। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকছেন গ্রামীণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল হাসান। গত জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি প্রতিনিধি দল রাজধানীর উত্তরায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেছিলেন। পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধি দল তাদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঠায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে দুই মাস পর নতুন এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিলো। সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২২টি শর্তে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিয়ে আদেশ জারি করে। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দেওয়া শর্তের মধ্যে আছে সাময়িক অনুমতির মেয়াদ হবে সাত বছর, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের নিজস্ব বা ভাড়া করা ভবন থাকতে হবে। ন্যূনতম তিনটি অনুষদ এবং এসব অনুষদের অধীন কমপক্ষে ছয়টি বিভাগ থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সংরক্ষিত তহবিলে কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা যেকোনো তফসিলি ব্যাংকে জমা থাকতে হবে।

এসএসসি পরীক্ষায় বসছে ১৯ লাখ ২৮ হাজার পরীক্ষার্থী
আগামী ১০ এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এবারের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ১৯ লাখ ২৮ হাজার ১৮১ জন। গতবারের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় এক লাখ। গতবার ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। রোববার (১৬ মার্চ) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির এ তথ্য তুলে ধরে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৫ সালে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সর্বমোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ১ হাজার ৫৩৮ জন, ছাত্রী ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন। পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ২ হাজার ২৯১টি, প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৪টি। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সর্বমোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন, ছাত্রী ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন। পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ৭২৫টি, প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ হাজার ৬৩টি। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সর্বমোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ জন, ছাত্রী ৩৪ হাজার ৯২৮ জন।

৭ কলেজের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হচ্ছে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে এই সাত কলেজের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আজ রবিবার (১৬) ইউজিসিতে শিক্ষার্থীদের ৩২ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কী হবে, এ নিয়ে প্রতিনিধি দলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুটি মত আসে। তাদের মধ্যে ১৭ জন ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির পক্ষে মত দেন। তবে অন্য শিক্ষার্থীরা এই নাম চান না। তারা বলছেন, ঢাকা কলেজের পূর্ব নাম ছিল ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ। তারা ফেডারেল ইউনিভার্সিটি নামের পক্ষে মত দেন। পরে ইউজিসি তাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে বলে। পরে তারা আলোচনা করে একটি নামের পক্ষে নিজেদের মত দেন। এর আগে গত ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সাত কলেজের নামকরণ-সংক্রান্ত বিষয়ে ছাত্র প্রতিনিধিদের টিম লিডারদের মতবিনিময় সভা আয়োজনের ঘোষণা দেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রদানের লক্ষ্যে কমিশনের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সভাপতিত্বে কনফারেন্স রুমে ১৬ মার্চ সকাল ১০টায় প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মর্যাদায় প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষক ১০ গ্রেডে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মর্যাদা পাবেন বলে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে দশম গ্রেডে এসব শিক্ষকদের বেতন হবে বলে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদালতে শিক্ষকদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন।

সড়কে শুয়ে পড়েছেন শিক্ষকরা, যান চলাচল বন্ধ
প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদযাত্রায় বাধা দিয়েছে পুলিশ। ফলে শিক্ষকরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে শুয়ে পড়েছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে সড়কের যান চলাচল। বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর প্রেস ক্লাব এলাকায় কদম ফোয়ারা মোড়ে এই ঘটনা ঘটে। অনতিবিলম্বে সব বিশেষ (অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী) বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্ত সুনিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ে দীর্ঘ দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থানের পর প্রধান উপদেষ্টা বাসভবন যমুনা অভিমুখে যাত্রা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। সরেজমিন দেখা যায়, বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় সমন্বয় পরিষদ ব্যানারে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যাত্রার প্রস্তুতি নেন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কিন্তু শুরু থেকে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। শিক্ষকরা কিছুটা অগ্রসর হয়ে কদম ফোয়ারা মোড়ে এলে পুলিশ সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মানববন্ধন তৈরি করে তাদেরকে বাধা দেয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষকরা কদম ফোয়ারা মোড়েই বসে যান। ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি জলকামান আনাও হয়েছে। শিক্ষকরা সড়কে বসে যাওয়ায় পল্টন থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে হয়ে হাইকোর্টের দিকে আসার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে মৎস্য ভবন থেকে শিক্ষা ভবনের দিকে আসার রাস্তা দিয়েও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে পথিমধ্যে থাকা যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হন। পরে পুলিশ পল্টন থেকে কদম ফোয়ারার দিকে আসার রাস্তায় থাকা গাড়িগুলো প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে ইউটার্ন দিয়ে আবারো পল্টনের দিকে পাঠায়। অন্যদিকে মৎস্য ভবন থেকে আসা রাস্তার গাড়িগুলোকে বিকল্পভাবে শিক্ষা ভবনের দিকে যাওয়ার পথ করে দেয়। বর্তমানে এই দুটি সড়কে গাড়ির তীব্র জট তৈরি হয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে যদি কেউ এখানে না আসে, তবে রাস্তা থেকে উঠবেন না।’ বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় সমন্বয় পরিষদের অন্যান্য দাবিগুলো হলো হচ্ছে সব বিশেষ বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো সুনিশ্চিত করতে হবে; বিশেষ শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম শিক্ষা ভাতা তিন হাজার টাকা নিশ্চিত করতে হবে; শিক্ষার্থীদের মিড ডে মিলসহ শিক্ষা উপকরণ, খেলাধুলা সরঞ্জাম প্রদান ও থেরাপি সেন্টার বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ভোকেশনাল শিক্ষা কারিকুলামের আওতায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পুনর্বাসন সুনিশ্চিত করতে হবে।

নন-এমপিও শিক্ষকদের দাবি মেনে নিল সরকার, আন্দোলন প্রত্যাহার
নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিক্ষকদের টানা ১৭ দিন আন্দোলনের পর শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরারের সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সম্মিলিত নন এমপিও ঐক্য পরিষদ। শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন শিক্ষকরা। বুধবার (১২ মার্চ) থেকে এমপিওভুক্তির কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. সেলিম মিঞা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট আলাপ আলোচনা মানববন্ধন ও স্মারকলিপির মাধ্যমে আমাদের দাবির স্বপক্ষে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলাম। গত ১০ ফেব্রুয়ারি সব জেলার জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন করে সরকারকে এমপিওভুক্তির আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার আমাদের আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে আজ ১৭তম দিনে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চলমান রেখেছিলাম। জাতীয় প্রেসক্লাবে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে দুইজন নন-এমপিও শিক্ষক আর্থিক অভাব-অনটনে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন এবং উক্ত কর্মসূচি চলাকালীন রোজা, তারাবির নামাজ, ইফতার সেহরি ও রাতে অবস্থান করে অনেক শিক্ষক কর্মচারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘অবস্থান কর্মসূচি চলাকালীন বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশের লাঠিচার্জে অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আমরা সর্বোপরি চেয়েছি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘ ২৫/৩০ বছর ধরে বেতনহীন শিক্ষকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে তাদের বেতনের ব্যবস্থা করা হউক। আজ আমরা এ দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাতের লক্ষ্যে পদযাত্রা করি। এ অবস্থায় পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের দাবির বিষয়ে আলোচনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আলোচনা প্রস্তাব পাই। আলোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জোবায়ের। নন এমপিওদের পক্ষ থেকে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক প্রিন্সিপাল সেলিম মিয়ার নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলের বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় শিক্ষা সচিব আমাদের সকল কথা লিপিবদ্ধ করেন এবং উভয়েই আমাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন। আলোচনা চলার সময় সরকারের পক্ষ থেকে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সচল সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকার এমপিও প্রদানের সিদ্ধান্ত নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছেন। এমতাবস্থায় শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিব আমাদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করেন।’ মো. সেলিম মিঞা জানান, শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিব অভিমত পোষণ করে মঙ্গলবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রাথমিক কাজ শুরু হবে এবং আগামী মে মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত আকারে এমপিওর তালিকা প্রকাশ করা হবে। সরকার আমাদের এমপিও করণের দাবি মেনে নেওয়ায় সমন্বয়ক পরিষদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হলো। আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী নন এমিপও শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে হতে যারা আহত, অসুস্থ হয়েছেন এবং চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা ও দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। বিভিন্ন সময়ে আর্থিক অভাব অনটনের জন্য সুচিকিৎসা না পাওয়ায় আমাদের ৯ জন শিক্ষক মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের রূহের মাগফেরাত কামনা করছি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির মুখ্য সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. দবিরুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মো. নাজমুস শাহাদাৎ আজাদী, সাংগঠনিক সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মনিমুল হক, যুগ্ম সাংগঠনিক সমন্বয়ক অধ্যক্ষ ইমরান বিন সোলায়মান, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. সাজ্জাদ হোসেন, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. আব্দুস সালাম প্রমুখ।

প্রাথমিক স্কুলে কোচিং ও প্রাইভেটে নিষেধাজ্ঞা
সারাদেশে সব সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস শেষে ছুটির পর এবং বন্ধের দিনে শ্রেণিকক্ষে প্রাইভেট পড়ানো ও কোচিং করানোয় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অফিস আদেশে এ নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়। এর আগে গত সোমবার এ আদেশে সই করেন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) রাইহুল করিম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের মতো ঘটনা ঠেকাতে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। যদিও আদেশের কোথাও ধর্ষণ, নিপীড়নের কথা উল্লেখ করা হয়নি। আদেশে বলা হয়েছে, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম ছুটির পর এবং বন্ধের দিন শ্রেণিকক্ষে প্রাইভেট পড়ানো, কোচিংসহ নানাবিধ কার্যক্রমে ব্যবহার করা হয়, যা অনভিপ্রেত। কোনোক্রমেই বিদ্যালয়ের কক্ষ প্রাইভেট পড়ানো বা কোচিংসহ অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায়ী থাকবেন। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং তা আবশ্যিক প্রতিপালনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দুইজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,সম্প্রতি দেশে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে। ঘটনাগুলো নিয়ে অভিভাবকসহ সব মহল আতঙ্কিত। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্লাসের পর ও স্কুল বন্ধের দিনে শিক্ষার্থীদের কোনোভাবে স্কুলে থাকার সুযোগ রাখা হচ্ছে না।

ভর্তি পরীক্ষার নম্বর বণ্টনে পরিবর্তন, বাড়লো আবেদনের সময়ও
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষার শাখাভিত্তিক নম্বর বণ্টনে সংশোধন আনা হয়েছে। একই সঙ্গে অনলাইনে প্রাথমিক আবেদনের সময় বাড়ানো হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী-আগামী ২০ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩ মে। আগ্রহী প্রার্থীদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। প্রাথমিক আবেদন ফি ৭০০ টাকা। রোববার (৯ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, সংশোধিত নম্বর বণ্টনের ভিত্তিতে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রমে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদাভাবে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষায় ১০০টি প্রশ্নের উত্তর এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে দিতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিজ্ঞান শাখা, মানবিক/গার্হস্থ্য অর্থনীতি এবং ব্যবসায়ে শিক্ষা শাখায় বাংলায় ২০, ইংরেজিতে ২০, সাধারণ জ্ঞানে ২০ এবং প্রত্যেক শাখার জন্য আলাদাভাবে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ৪০ নম্বরসহ মোট ১০০ নম্বরে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার পাস নম্বর ৩৫। বিজ্ঞান, মানবিক/গার্হস্থ্য অর্থনীতি এবং ব্যবসায়ে শিক্ষায় এসএসসি-সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ’র ৪০ শতাংশ (চতুর্থ বিষয়সহ) ৪০ নম্বর, এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএর ৬০ শতাংশ (চতুর্থ বিষয়সহ), ৬০ নম্বরসহ মোট ২০০ (১০০+৪০+৬০) নম্বরে মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হবে। এদিকে গত ২০ জানুয়ারি প্রকাশিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণিত অন্য সব শর্ত ও নিয়মাবলি অপরিবর্তিত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

ববির তিন শিক্ষার্থীকে মারধর, দুই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে বাস ও তিন চাকার গাড়ির (মাহিন্দ্রা) দ্বন্দ্ব থামাতে গিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) তিন শিক্ষার্থী মারধরের শিকার হয়েছেন। এর প্রতিবাদে ২ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৮ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ভোলা রোডসংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিল আজাদ, রবিউল ইসলাম ও ২০২২-২৩ বর্ষের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম। এ দিকে এ ঘটনায় আলফা সমিতির ও স্থানীয় ৫-৭ জন জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। আহত শিক্ষার্থীরা জানান, বাস ও তিন চাকার গাড়ির মধ্যে ঝামেলা চলছিল। তারা বিষয়টি শান্ত করতে গেলে এক সহপাঠীকে মারধর করা হয়। তখন তারা প্রতিরোধ করতে গেলে অভিযুক্তরা তাদেরও মারধর করেন এবং ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাস ও তিন চাকার মাহিন্দ্রার চালকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে কিছু যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়। বরিশাল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মারধরের ঘটনাটি দুঃখজনক। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সোনিয়া খান সনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মারধরের খবর পেয়েই আমি ঘটনাস্থলে যাই। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি, যাতে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়।’

রাবির ভর্তিচ্ছুরা পছন্দ অনুযায়ী কেন্দ্র পাননি, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এবার পাঁচটি আঞ্চলিক কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকদের সুবিধার জন্য এই পদ্ধতি চালু করা হলেও কারও কারও জন্য তা চরম ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী চূড়ান্ত আবেদনে যেখানে কেন্দ্র চয়েজ দিয়েছেন, সেখানে আসেনি। কেন্দ্র এসেছে দূরবর্তী স্থানে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। চাহিদামতো কেন্দ্র না আসা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন কাজের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ‘রংপুরের শিক্ষার্থীদের এখন চট্টগ্রাম গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে, রাজশাহীর শিক্ষার্থীদের যেতে হবে খুলনা! এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন নিম্নবিত্ত শিক্ষার্থীরা। যাদের আর্থিক সামর্থ্য কম, তাদের অনেকেই হয়তো পরীক্ষা দিতেই পারবেন না। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য দূরবর্তী কেন্দ্রে যাওয়া আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী শুধুমাত্র এই অব্যবস্থাপনার কারণে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। যেখানে সুবিধা হওয়ার কথা, সেখানে উল্টো অসুবিধা তৈরি করা হচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’ অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘তাদের বাড়ি জামালপুর। তার ছোটভাই রাজশাহীতে সেন্টার চয়েজ দিয়েছিলেন। কিন্তু অ্যাডমিট কার্ডে তার সেন্টার উল্লেখ করা হয়েছে চট্টগ্রাম।’ স্বজন রায় নামে রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘তার ভাতিজা সেন্টার দিয়েছিলের রংপুরে। কিন্তু তার অ্যাডমিট কার্ডে এসেছে চট্টগ্রাম। ঠাকুরগাঁও থেকে এখন চট্টগ্রাম যাওয়া ভোগান্তির থেকেও বড় কিছু।’ এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভর্তি কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে শুধুমাত্র বিভাগীয় শহরের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবে। এক্ষেত্রে সমস্যা যেটা হয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেওয়ার আসন কম, সেখানে বেশি আবেদন করেছে। আবার যেখানে সিট বেশি, সেখানে কম আবেদন করেছে।’ ‘আর তাই মেরিট অনুসারে সিট প্ল্যান করা হয়েছে। ফলে এই সমস্যা হয়েছে। তাছাড়া এক শিফটে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে এ মুহূর্তে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া খুবই কঠিন। পরবর্তী বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করা হবে। এছাড়া বর্তমান করণীয় নিয়েও সভা আহ্বান করা হয়েছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন বলেন, ‘বিষয়টি জানার পরপরই আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে কীভাবে উদ্ভূত সমস্যাটা সমাধান করা যায়, সেটি নিয়ে কাজ করছি।’ আইসিটি সেন্টারের তথ্যমতে, এ বছর এ, বি, সি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ‘এ’ ইউনিটে ৯৬ হাজার ১৬২, ‘বি’ ইউনিটে ৪২ হাজার ৪৩৩, ‘সি’ ইউনিটে ৯৮ হাজার ৮২০ জন চূড়ান্ত আবেদন করেছেন। তবে অভিন্ন পরীক্ষার্থী সংখ্যা দুই লাখ ৩০ হাজার ৯৪ জন। পাঁচ বিভাগীয় শহরে পরীক্ষার কেন্দ্র রয়েছে আটটি। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ হাজার ৭০০টি, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অগ্রণী স্কুলে শুধু ‘সি’ ইউনিটের জন্য অতিরিক্ত আসন এক হাজার ৮০৮টি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন হাজার ২৬৩টি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ হাজার ৫০টি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩ হাজার ৮০টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ হাজার ২০০টি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ হাজার ৪১৯টি ও শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত হাজার ৩০০টি পরীক্ষা নেওয়ার আসন রয়েছে।

স্নাতক পাসের আগেই কী করে প্রথম শ্রেণির চাকরি পেলেন রাবির শিক্ষার্থী?
স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারে প্রথম শ্রেণির একটি চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। স্নাতক পাসের আগেই চাকরিতে নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে গত ১৮ নভেম্বর তাকে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগপত্রের অফিস আদেশ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের প্রকাশিত ফলাফল পর্যালোচনা করে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। অফিস আদেশ ও ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের ১৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অফিস আদেশে মোমেন খন্দকার অপি নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে আইসিটি সেন্টারে সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে নিয়োগ দেয়। তার নিয়োগের প্রায় এক মাস পর ১২ ডিসেম্বর তার স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়।বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরা বলছেন, ‘দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী স্নাতক পাস করেই একজন প্রার্থীকে প্রথম শ্রেণির চাকরিতে যোগদান করতে হয়। সহকারী প্রোগ্রামার পদটি সেকশন কর্মকর্তা পদমর্যাদার। অর্থাৎ প্রথম শ্রেণির চাকরি। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নিয়োগের প্রথম ধাপ। এ পদে নিয়োগের জন্য ন্যূনতম স্নাতক পাস হতে হয়। চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগেই যদি নিয়োগ দেয়া হয়, তবে অনিয়ম করা হয়েছে।’নিয়োগপ্রাপ্ত মোমেন খন্দকার অপি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। চাকরিতে যোগদানের এক মাস পর প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় তিনি স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষায় ৩ দশমিক ২০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাকে নিয়োগের অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারে সহকারী প্রোগ্রামার পদে টাকা ২২০০০-৫৩০৬০/- (বাইশ হাজার) টাকা মাত্র বেতনে সহকারী প্রোগ্রামার পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে ৬ মাসের জন্য নিয়োগ করা হলো। এ নিয়োগ যোগদানের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, ‘স্নাতকের চূড়ান্ত সনদ পাওয়ার আগে কাউকে প্রথম শ্রেণির চাকরি দেয়ার সুযোগ নেই। স্নাতকের সনদ না পাওয়া মানে তিনি এইচএসসি পাশ। এইচএসসি পাসের সার্টিফিকেট দিয়ে কাউকে প্রথম শ্রেণির চাকরি দেয়া মানে তা অন্যায়। এ ধরনের কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের সাবেক এক পরিচালক বলেন, ‘সহকারী প্রোগ্রামার পদে নিয়োগ দিতে হলে কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে তাকে ন্যূনতম স্নাতক পাশ হতে হবে।’নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোমেন খন্দকার অপি বলেন, ‘গত নভেম্বরে আমাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর আগেই আমার স্নাতক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আমাদের অফিসিয়াল ফলাফল বের হতে দেরি হয়েছে। তবে আমি আনঅফিসিয়াল ডকুমেন্ট দেখিয়েছি।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. রোকানুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আনঅফিসিয়াল ফলাফল কখনো প্রকাশ হয় না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারও ইমপ্রুভমেন্ট ইস্যু বা হলের সিটের আবেদনের জন্য হলে তাকে এ বিষয়ে জানানো হয়ে থাকে। তবে কেউ যদি চাকরির মতো জায়গায় ব্যবহার করে তাহলে আমি দায়িত্ব নিব না। চাকরির ক্ষেত্রে আমরা বলি, ফলাফলের অপেক্ষা করতে।’ নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘বিষয়টি আমি আগে জানতাম না। কিছুক্ষণ আগেই জানতে পেরেছি। সে ‘অ্যাপিয়ার্ড’ করে করেছে কি না, আমাকে একটু দেখতে হবে। এই নিয়োগের বিষয়টি আমি সম্পূর্ণ আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের এখতিয়ারে ছেড়ে দিয়েছিলাম। নিয়মকানুনের বিষয়ে আমি রেজিস্ট্রার ও আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলব। বিষয়টি আমি দেখছি।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ছাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার দফতরে তখন লোকবলের দরকার ছিল। আমি তখন সব ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করে লোক পাইনি। তাই তাকে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তিনি তার কাজে অত্যন্ত দক্ষ। তিনি তার ব্যাচের সবথেকে ভালো প্রোগ্রামার।’

এমপিওভুক্ত হচ্ছেন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা
ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। এমপিওভুক্ত হতে যাচ্ছেন প্রথম ধাপে ১ হাজার ৫১৯ মাদ্রাসার ৬ হাজারের বেশি শিক্ষক। তাদের এমপিওভুক্তির প্রস্তাবের ফাইলে শেষ দিন বুধবার স্বাক্ষর করেছেন বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে খুব দ্রুত তারা এমপিওভুক্ত হবেন। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, একই কারিকুলামে পড়াশোনা করলেও সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে ইবতেদায়ি শিক্ষকদের চরম বৈষম্য আছে। এটি নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশে অনেক ইবতেদায়ি মাদ্রাসা আছে। এর মধ্যে অনেকগুলো অনানুষ্ঠানিক। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানের নথি (রেজিস্ট্রেশন) আছে। সরকারি প্রাথমিক স্কুলের মতো তারা বাংলা, ইংরেজি, গণিত পড়াচ্ছেন। অবকাঠোমো, শিক্ষক থাকার পরও তাদের এমপিওভুক্ত করা হয়নি। সেই কাজ আমি করে দিয়েছি। কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, বিদায়ী উপদেষ্টা এই ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন। ফাইলটি প্রধান উপদেষ্টার অনুমতির জন্য পাঠানো হবে। তিনি অনুমতি দিলে খুব দ্রুত শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা হবে। কত দিন লাগতে পারে জানতে চাইলে সচিব বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় চলতি বছরের বাজেট বরাদ্দ থেকে অর্থ ছাড়ের আশ্বাস দিয়েছে। মে মাসের বেতন যেন শিক্ষকরা পান সেই চেষ্টা চালাচ্ছি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর আগে এ বিষয়ে কয়েক দফা উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন সচিবের নেতৃত্বে শিক্ষকদের দুঃখ মোচনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই শিক্ষকদের এমপিও দিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট থেকে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাবনা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে।

দেশ থেকেই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো শিক্ষাব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) বলেন, আমি এমন শিক্ষাব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি, যেখানে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা দেশের ভেতরেই তাদের ভবিষ্যৎ দেখতে পাবে। এবং বাংলাদেশ থেকেই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। বুধবার (৫ মার্চ) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে বিদায় এবং সিআর আবরারের যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সি আর আবরার বলেন, আমি জীবনে কোনোদিন এ ধরনের পরিসরে এসে বসে... এই দিকে বসবো, এটা কিন্তু কখনোই ভাবা হয়নি। বিভিন্ন সময় আইন-নীতি পরিবর্তন করার বিষয়ে মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে বসেছি। আমি শিক্ষকতার পাশাপাশি শ্রম অভিবাসন, শরণার্থী, বাস্তুচ্যুত মানুষ, ক্যাম্পে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠী- এ বিষয়গুলো নিয়ে মোটামুটি সক্রিয় নাগরিক হিসেবে কাজ করেছি। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি, নিয়ম-কানুন মেনে, নৈতিকতা মেইনটেইন করে, জ্ঞাতসারে ক্লাস মিস করিনি। পরীক্ষার খাতা মোটামুটি সময়মতো জমা দিয়েছি। শিক্ষক হিসেবে যেসব প্রশাসনিক দায়িত্ব এসেছে সেগুলো পালনের চেষ্টা করেছি। ‘আমি মনে করেছি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে যে সুযোগ-সুবিধা আমি পেয়েছি, আমি সবসময় সে বিষয়ে সচেতন থাকার চেষ্টা করেছি। সেই দায়িত্ববোধ থেকে আমি বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। সমাজ আমাকে দিয়েছে, এখন আমার সময় এসেছে যতটুকু সম্ভব সমাজকে দেওয়ার।’ নতুন উপদেষ্টা আরও বলেন, এ ধরনের দায়িত্ব যে আমাকে নিতে হবে সেটা আমি বুঝিনি। গত চার-পাঁচ দিন আগে প্রধান উপদেষ্টা আমাকে ডেকে পাঠালেন, অন্য অনেক কথার পর উনি যখন বললেন, স্যার (ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ) এ দায়িত্ব আর পালন করতে চাচ্ছেন না। প্রধান উপদেষ্টা বললেন, আমি যেন এ দায়িত্বটা গ্রহণ করি। এতে আমি রীতিমতো অবাক হয়েছি। ‘আমি বললাম, আমার তো এ ধরনের অভিজ্ঞতা নেই। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বললেন, ইউ কমিট ইয়োরসেলফ, তাহলে তুমি এটা পারবে। আমি মনে করি, এটা আমার জন্য একটা চমৎকার সুযোগ যে, এ ধরনের আস্থা তিনি আমার ওপরে রাখছেন।’ তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন ধরনের নাজুক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বড় ধরনের একটা পরিবর্তন হয়েছে। আমরা কিন্তু কখনোই ভাবিনি, আমাদের জীবদ্দশায় মুক্তভাবে কথা বলতে পারবো। কর্মকর্তাদের উদ্দেশে নতুন উপদেষ্টা বলেন, সমস্যা আছে সমস্যা থাকবে। আমি মনে করি আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে আমাদের যে গুরু দায়িত্ব সেটা পালন করবো। আমরা জনগণের টাকায় বড় হয়েছি, সে কারণেই তাদের প্রতি আমাদের একটা দায়িত্ববোধ আছে। সেই দায়িত্ব আমাদের যোগ্যতা, নিষ্ঠা ও ইনটিগ্রিটি নিয়ে পালন করতে হবে। ‘আমি মনে করি শিক্ষা হচ্ছে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ বাহন। আমি এমন এক শিক্ষাব্যবস্থার কথা ভাবি, যা হবে ব্যক্তির কর্মদক্ষতা অর্জন, তার আত্মোন্নয়নের উপযুক্ত পথ; যা হবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উৎকর্ষের সহায়ক এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরির উপায়।’ ‘আমি এমন শিক্ষাব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি, যেখানে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা দেশের ভেতরেই তাদের ভবিষ্যৎ দেখতে পাবে। এবং বাংলাদেশ থেকেই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে।’ এ প্রসঙ্গে সি আর আবরার আরও বলেন, তা হয়তো এক বছরে হবে না, পাঁচ বছরে হবে না। কিন্তু এজন্য যে ভিত্তি তৈরি করে দেওয়া, এজন্য অনেকগুলো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি অনেক কিছু আছে। ৮-১০ মাসের মধ্যে এ সরকারের মেয়াদকালীন বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা স্বল্পমেয়াদি বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করবো। সেগুলোর ব্যাপারে কাজ শুরু করবো। দীর্ঘমেয়াদি যে ইস্যুগুলো আছে, এগুলো সমাধান করতে হবে বলে আমরা যদি মনে করি, তবে অংশীজনদের সঙ্গে সেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করবো। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন যত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, আশা করি আমরা একই সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারবো। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা হচ্ছে জনগণের বড় রকমের অধিকার। এই ফাউন্ডেশনাল খাত নিয়ে যে দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে, আশা করি সেই দায়িত্ব আমরা যৌথভাবে পালন করবো। সহযাত্রী হিসেবে আমরা সবাই থাকবো।

বিদায় বেলায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সুখবর দিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা
বেসরকারি এমপিওভুক্তি শিক্ষক-কর্মচারীদের ‘বাড়িভাড়া, উৎসব ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা’ বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বুধবার (৫ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব থেকে বিদায় নেওয়ার অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। এ সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নতুন উপদেষ্টা সিআর আবরার (চৌধুরী রফিকুল আবরার) উপস্থিত ছিলেন। বুধবার বঙ্গভবনে সকাল ১১টায় শপথ নেওয়ার পর সিআর আবরার সেখান থেকে দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসে উপস্থিত হন। এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্বে চালিয়ে আসা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদসহ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। অনুষ্ঠানে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘শিক্ষকদের বেতনভাতা নিয়ে অনেক আন্দোলন হচ্ছিল। আমরা নীতিগতভাবে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, শিক্ষকদের মধ্যে (গ্রুপ) অনেক রকমের, এরা কিন্তু এক না। এদের মধ্যে বিভাজন রয়েছে। বিভিন্নভাবে রিক্রুটেমেন্ট হয়েছে পদায়ন হয়েছে। এরাও বিভক্ত। ২০০৫ সাল পর্যন্ত এক রকম, ২০০৫-১০১৫ সাল পর্যন্ত আরেক রকম, ২০১৫ সাল থেকে আরেক রকম। পরীক্ষাসহ সব কিছু আলাদা আলাদা হয়েছে বলেই এদের দাবি-দাওয়া ভিন্ন রকম রয়েছে। তার মধ্যে বেতন ভাতার ব্যাপারে একই দাবি, সবারই বেতন-ভাতা অপর্যাপ্ত।’ তিনি আরও বলেন, ‘নীতিগতভাবে আমি নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, রাস্তায় যদি আন্দোলনে দাবি-দাওয়াতে বাধ্য হয়ে যদি আমাদের সময়সীমার মধ্যে কিছু ঘোষণা করতে হয়, তাহলে ভারসাম্য থাকে না। কিন্তু ন্যায্য দাবিতে যাদের বেশি শক্তি আছে, সেগুলো যদি আগে মেটাতে যাই… আবার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পাঁচ-ছয় বছরের কল্যাণ ও অবসর ভাতার যে ফান্ডে ছিল, সেই ফান্ড এমন একটা ব্যাংকে ইচ্ছে করেই রাখা হয়েছিল, যে ব্যাংকটাতে টাকা পয়সা নেই। আর কিছু ফান্ড চলে গেছে অন্য জায়গায়। যাই হোক... এই পাঁচ ছয় বছরের যে একটা ব্যাকলক। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কল্যাণভাতা ও অবসরভাতা, এটা তো সবচেয়ে ন্যায্য দাবি। কিন্তু তারা তো সংঘবদ্ধ না। তাই বলে এটা কি কম গুরুত্বপূর্ণ? আমি তো মনে করি, এটাই সবচেয়ে আগে মেটানো উচিৎ।’ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘যাই হোক, তাদের এই দাবিগুলো সেকারণে আন্দোলনের মধ্যে বেঁধে দেওয়ার সময়ের মধ্যে পূরণ না করে আমি সবাইকে আশ্বাস দিয়েছিলাম যে, তাদের দাবিগুলো যতটা মেটানো যায়, আমরা চেষ্টা করবো। কিন্তু এই যে ১৫-২০ বছরের বঞ্চনা এক বছর দুই বছরের বাজেট দিয়ে তো মেটানো যায় না। এটাতো বোঝানো কঠিন।‘ সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সঙ্গে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন সমান করে দিতে হবে উল্লেখ করেন তিনি। যদিও ১৫ বছরের এই বৈষম্য দুয়েক বছরের বাজেটে ঠিক করা সম্ভব নয় জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘কিন্তু শুরুটা করা দরকার। শুরুটা আমরা করে দিয়ে যাচ্ছি। তাদের উৎসব ভাতা, বিনোদন ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, বাড়িভাড়া এ বছরের ঈদুল আজহা থেকে শুরু করে আগামী বছরের বাজেটে অন্তত কিছু বাজেটে বাড়াতে পারবো। আমি এখন ঘোষণা দিচ্ছি না। এ বছর এবং আগামী বছরের বাজেটের মধ্যে প্রবিশন রাখা হচ্ছে।’ উপদেষ্টা বলেন, ‘অবসর ও কল্যাণ ভাতার জন্য একটি ফান্ড এ বছরই কিছুটা তৈরি করা হয়েছে। আগামী বাজেটে আরও হবে। এটি টেকসই করতে হলে এক-দুটি বাজেটে হবে না, ভবিষ্যতে হয়ে যাবে।’

‘দীর্ঘ দিন শিক্ষকতা করেও বেতন পাইনি, পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে গেছি’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১১তম দিনের মতো এই কর্মসূচি পালন করছেন তারা। বুধবার (৫ মার্চ) দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ১১তম দিনের মতো এই কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে এক দফা দাবি নিয়ে তারা আন্দোলন করে আসছেন। শিক্ষকতা করে দেশে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে ভূমিকা রাখলেও তারা সরকার থেকে বেতন পাচ্ছেন না। বেতন না পাওয়ায় তাদের পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন তারা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো সরকারই আন্তরিকভাবে কাজ করেনি। ফলে বাধ্য হয়ে তারা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। রাজশাহী থেকে আসা রাসেল সরকার বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ দিন শিক্ষকতা করে বেতন পাচ্ছি না। নিজের পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে গেছি। এখন আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। আমরা ১১তম দিনের মতো অবস্থান করছি। এখন আমাদের চাওয়া সরকার যেন আমাদের দাবি দ্রুত মেনে নেয়। আমরা যেন রাজপথ থেকে ঘরে ফিরতে পারি।’ সিলেট থেকে আসা মেহেদী হক বলেন, দীর্ঘ দিন শিক্ষকতা করছি, শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছি- কিন্তু বেতন পাচ্ছি না। আমরা যৌক্তিক দাবি জানাচ্ছি, অথচ আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে না। আমরা চাই, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি রয়েছে, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত সময়ের মধ্যে এমপিওভুক্তি করা হোক।’

স্কুল ভর্তিতে ৫ শতাংশ কোটা বাতিলের আদেশ
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও শহিদ পরিবারের সন্তানদের সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কোটার আদেশ বাতিল করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কোটার স্থলে প্রতি শ্রেণিতে একটি করে আসন বেশি রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত সোমবার আগের আদেশ বাতিল করে নতুন আদেশ জারি করে মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার (৪ মার্চ) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব (মাধ্যমিক-১) মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আদেশে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে গণ-অভ্যুত্থানের ফলে অনেক ছাত্র-জনতা আহত ও শহিদ হন। তাদের পরিবারের সদস্যদের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি জারিকৃত আদেশ বাতিল করে নতুন আদেশ জারি করা হলো। এতে আরও বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪ এ আহত/শহিদ পরিবারের সদস্যদের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লটারির মাধ্যমে ভর্তির জন্য নির্ধারিত আসন সংখ্যার অতিরিক্ত প্রতি শ্রেণিতে ১টি করে আসন সংরক্ষিত থাকবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪ এ আহত/ শহিদ পরিবারের সদস্যদের আসন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্র/গ্যাজেটের সত্যায়িত কপি আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হবে এবং ভর্তির সময় মূল কপি প্রদর্শন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে ইস্যুকৃত জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এ শহিদদের গেজেট যথাযথভাবে যাচাই করে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪ এ আহত/ শহিদ পরিবারের সদস্যদের পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে উক্ত আসনে ভর্তি করতে হবে। কোনো অবস্থায় আসন শূন্য রাখা যাবে না।

আজ সরকারি প্রাথমিকে ৬৫৩১ শিক্ষক নিয়োগপত্র পাচ্ছেন, যোগদান ১২ মার্চ
ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে সুপারিশ পাওয়া ছয় হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগপত্র জারি, যোগদান ও পদায়নের বিষয়ে প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সোমবার (৩ মার্চ) বিকেলে এক আদেশে অধিদপ্তরকে এই নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার (৪ মার্চ) নিয়োগপত্র জারি এবং ১২ মার্চ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে তাঁদের যোগদানের ব্যবস্থা করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হযেছে। এর আগে সোমবার সকালে সহকারী শিক্ষক পদে উত্তীর্ণ এই প্রার্থীদের নিয়োগপত্র দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদেশে, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলেরও (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে উত্তীর্ণ ছয় হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগে বাধা কেটে যায়। আদালতে লিভ টু আপিলের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ। রিটকারী ১৫৪ জনরে পক্ষে ছিলেন সাবেক বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। আদেশের পর শিক্ষকদের পক্ষে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে এর বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের অনুমতি দিয়েছেন। ফলে নিয়োগ পরীক্ষায় উর্ত্তীণদের সহকারি শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকছে না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ৬ হাজার ৫৩১ জন সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিল করে গত ৬ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে মেধার ভিত্তিতে নতুন করে এ নিয়োগ সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই রায়ের পর থেকে নিয়োগ বঞ্চিত শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। অন্যদিকে ওই রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। পরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই আপিল শুনানির জন্য ২ মার্চ দিন ধার্য করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার শুনানি নিয়ে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। ২০২৩ সালের ১৪ জুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর ৬ হাজার ৫৩১ জন প্রার্থীকে নির্বাচন করে গত ৩১ অক্টোবর নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। নির্বাচিত প্রার্থীদের অনুকূলে ২০ নভেম্বর নিয়োগপত্র ইস্যু করার কথা ছিল। কিন্তু ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা সংক্রান্ত গত ২৩ জুলাই প্রকাশিত গেজেট অনুসরণ না করার অভিযোগ তুলে ফলাফল প্রকাশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নিয়োগবঞ্চিতদের পক্ষে হাইকোর্টে পৃথক রিট দায়ের করা হয়।