ডেঙ্গুতে আরও পাঁচ মৃত্যু, এক দিনে হাসপাতালে ২৭৪ জন

এডিস মশাবাহী রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত এক দিনে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর মশাবাহী রোগটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫৫৬ জনে। এছাড়া গত এক দিনে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৭৪ জন। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত এক দিনে ডেঙ্গুতে মৃত পাঁছজনের মধ্যে চারজনই ঢাকার বাসিন্দা। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) দুইজন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি একজন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। অন্য দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী (৬১ জন) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।’ পাশাপাশি, এই সময়ে খুলনা বিভাগে ৪৩ জন ছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগে ৪১ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ৪০ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ৩৮ জন, বরিশাল বিভাগে ৩৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে নয়জন, রাজশাহী বিভাগে চারজন, রংপুর বিভাগে তিনজন ও সিলেট বিভাগে দুইজন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গেল ১ জানুয়ারি থেকে বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ৫৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এই সময়ে মশাবাহিত রোগটি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৯ হাজার ৫৬৯ জন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায়। ডিএসসিসিতে মশাবাহিত রোগটিতে চলতি বছর মোট ২৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে, গেল ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ঢাকা উত্তর সিটিতে ১০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি, এই সময়ে বরিশাল বিভাগে ৫৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫২ জন, ঢাকা বিভাগে ৪৯ জন, খুলনা বিভাগে ৩৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬ জন, রাজশাহী বিভাগে আটজন ছাড়াও রংপুর বিভাগে তিনজন এবং চট্টগ্রাম সিটিতে ডেঙ্গুতে একজন মারা গেছেন।

গ্রিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ, চিকিৎসক আটক

নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) খরচ বহন করতে পারবে না মন্তব্য করে চিকিৎসায় কালক্ষেপণ করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকার গ্রিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থীর বাবা মৃত্যুবরণ করলে ক্ষোভে ফুঁসে উঠে সহপাঠীরা জড়ো হন হাসপাতালে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে আটক করে অভিযুক্ত চিকিৎসককে।প্রাপ্ত তথ্যমতে, সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে ষাটোর্ধ মো. আজিজুর রহমান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে গ্রিন রোডে অবস্থিত গ্রিন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।স্বজনদের দাবি, চিকিৎসায় কালক্ষেপণ ও চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলায় এমন পরিণতি হয়েছে মৃতের। এ ঘটনায় রাতেই হাসপাতালে জড়ো হন ঢাবির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডাক্তার সজিব নজরুলকে আটক করে পুলিশ।মরহুমের পুত্র সাজিদ হাসান সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমার রোগীকে গুরুত্ব না দিয়ে তারা অন্য রোগীকে গুরুত্ব দেয়। পরে আমি যখন আইসিইউতে শিফট করতে বলি, তখন তারা বলেন, আইসিইউতে কত টাকা খরচ হবে, সেটা কি আপনার ধারণা আছে? আগে দেখেন এফরড করতে পারবেন কিনা।’ তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, চিকিৎসায় কোন গাফিলতি করা হয়নি। গ্রিন লাইফ হাসাপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক একরাম হোসেন বলেন, ‘রোগীকে জরুরি বিভাগে আসান পর মাত্র ১৯ মিনিটেই ভর্তি ছাড়া আইসিইউতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এখানে দায়িত্ব অবহেলার কোন প্রমাণ পাইনি।’এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় এজাহার দায়ের করেন নিহতের স্বজনরা। কলাবাগান থানার ডিউটি অফিসার মো. বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘টাকা না দিলে চিকিৎসা হবে না বলে কালক্ষেপণ করার অভিযোগ করা হয়েছে। আর এ অবহেলাজনিত কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়। এ অভিযোগে এজহার দায়ের করেন নিহতের স্বজনরা।’

আইন করে সাংসদ-মন্ত্রীদের দেশে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করার দাবি

সাংসদ-মন্ত্রীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ ভিআইপিদের বাংলাদেশে চিকিৎসা নেওয়ায় বাধ্যবাধকতা আরোপের দাবি জানিয়েছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তিনি বলেন, ‘সাংসদ-মন্ত্রীরা দেশে চিকিৎসা নেয় না বলেই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয় না। তাই, প্রয়োজনে আইন করেই তাদেরকে বাংলাদেশের চিকিৎসা নিতে বাধ্য করতে হবে।’ রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ৪২তম বিশেষ বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগবঞ্চিত চিকিৎসকদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্তা-ব্যক্তিরা কিছু হলেই ডাক্তার দেখাতে বিদেশ চলে যান। এই দেশের নাগরিক হয়ে আরেক দেশে চিকিৎসা করাতে যারা চলে যায়, এমনকি যাওয়া এবং আসার সময়ে আবার গণমাধ্যমে ঢাক-ঢোল পেটায়, তাদের কি বিন্দু পরিমাণ লজ্জা হয় না? এ রকম একটা নির্লজ্জ রাষ্ট্রব্যবস্থা স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আমরা পেয়েছি। কোন রাজনৈতিক নেতারাই এ জন্য লজ্জিত না। তারা স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে যাবে অথচ কখনোই ঢাকা মেডিকেলে যাবে না। তারা মরার জন্য থাইল্যান্ড চলে যাবে, ভারত-ব্যাংককে চলে যাবে তবুও দেশের স্বাস্থ্যখাতকে তারা ভাল করবে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘দেশের সব হর্তাকর্তা, ভিআইপিসহ সব রাজপুত্র-রাজকন্যাকে ঢাকা মেডিকেল ও পিজি হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করতে হবে। তাহলে, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে। প্রয়োজনে আইন করার মাধ্যমে এসব ব্যক্তিদের দেশে চিকিৎসা নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া, কখনই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়।’ বিশিষ্ট এই আইনজীবী বলেন, ‘যত দিন পর্যন্ত রাজনৈতিক ব্যক্তি-আমলাসহ কর্তাব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যাওয়া অ্যালাউ করবেন, তত দিন পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ভাল হতে দেবে না। কারণ, তারা বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বিশ্বাসই করে না। তাদের কারণে দেশের সাধারণ মানুষও চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে।’ দেশের চিকিৎসার ব্যবসায়ের উন্নয়নে মিডিয়ার ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অসংখ্য মিডিয়াতেই দেখবেন কিছু দিন পরপর নিউজ হয় ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা বদলে গেল, উন্নত হয়ে গেল, বিশ্ব মানের হয়ে গেল। এই সংবাদগুলো বাংলাদেশের কিছু ভিডিও পরিকল্পিতভাবে করে থাকে। তারাই বাংলাদেশের চিকিৎসা নিয়ে নিউজ করে সম্পূর্ণ বিপরীত। বিনা চিকিৎসা মারা গেল, ভুল চিকিৎসা শিকার হল-এই নিউজগুলো বাংলাদেশ নিয়ে নিয়মিত আপনারা দেখবেন। একটা ছোট দুর্ঘটনা ঘটলে দশটা মিডিয়া প্রথম পাতায় বড় করে নিউজ করে দেয়। এগুলো পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর অনাস্থা তৈরি করতেই করা হয়ে থাকে। তাই, আমি মিডিয়াকর্মীদের আহ্বান করব, নিজেদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার উন্নয়নের কথা ভেবে আমাদের মূল সমস্যাগুলো তুলে ধরুন এবং সংস্কারে সহযোগী ভূমিকা পালন করুন।’ ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, ‘দেশের মোট বাজেটের ১০-১২ শতাংশ বরাদ্দ স্বাস্থ্য খাতের জন্য রাখা উচিত। কিন্তু, আমরা কখনোই ৩-৪ শতাংশের বেশি দেখতে পাচ্ছি না। একটা রাষ্ট্রকে যদি সেবার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, সেখানে জিডিপির ন্যূনতম ৫-৭ শতাংশ স্বাস্থ্য কাদের জন্য বরাদ্দ থাকা উচিত। ব্রিটেনসহ উন্নত দেশগুলোতে দেখেছি, এই খাতে বরাদ্দ ১০-১২ শতাংশও ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু, এই জায়গাতে ৫৩ বছর ধরে রাষ্ট্র যারা চালিয়েছেন, তাদের মধ্যে সেবা খাতটাকে রাষ্ট্রের উপযোগী করার সদিচ্ছার অভাব আমরা দেখেছি এবং দেখতে পাচ্ছি।’ দেশে চিকিৎসক সংকটের কথা উল্লেখ করে এ রাজনীতিবিদ আরও বলেন, ‘চিকিৎসক সংকটে আমাদের উপজেলা হাসপাতালগুলোতে যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে না। তাই, ৪২ বিসিএসে যে ভাই-বোনরা টিকে গেছেন ৪৩, ৪৪, ৪৭, ৪৯তম বিসিএসের নাটক না করে দ্রুত দেশের স্বার্থে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে তাদের অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করুন।’ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও এবি পার্টির আহ্বায়ক মেজর (অব.) ডাক্তার আব্দুল ওহাব মিনার, ৪২তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত ডাক্তার মো. রেজওয়ান কবীর, ডাক্তার ফাতেমা আক্তার, ডাক্তার আশিক আহমেদ।

বাংলাদেশ থেকে ওষুধ আমদানি করতে আগ্রহী পাকিস্তান

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে বেশ ভাল অবস্থানে আছে, পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে ওষুধ আমদানিতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাই কমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার অফিসকক্ষে উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সৈয়দ আহমেদ মারুফ। তারা প্রায় এক ঘণ্টা দুই দেশের সম্পর্কসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। সাক্ষাতে সৈয়দ আহমেদ মারুফ ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম দুই দেশের স্বাস্থ্যসেবা, বাণিজ্যসহ সার্বিক বিষয়ে মতবিনিময় করেন। এ সময় পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনার মোহাম্মদ মারুফ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মামুনুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন।

ভর্তির সুযোগের আবদারে ‘অনুত্তীর্ণ’ চিকিৎসকদের বিক্ষোভ, অবরুদ্ধ ভিসি

রেসিডেন্সি কোর্সে ভর্তির সুযোগের দাবিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডাক্তার মো. শাহিনুল আলমসহ সিন্ডিকেট সদস্যদের অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করছেন উত্তীর্ণ হতে না পারা চিকিৎসকরা। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ‘বঞ্চিত’ হয়েছেন- এমন দাবি করে তারা এবার বিশেষ বিবেচনায় ভর্তি হতে চান। বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার শাহবাগে ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কনভেনশন হলে সিন্ডিকেট মিটিং চলাকালীন তাদের ঘেরাও করে বিএসএমএমইউয়ে কর্মরত এসব মেডিকেল কর্মকর্তারা। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৪তম সিন্ডিকেট সভা চলাকালে আচানক কিছু লোক এসে উত্তেজিত হয়ে হৈচৈ শুরু করে। তাদের দাবি, বিগত সরকারের দীর্ঘ সময়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ভর্তি হতে পারেনি। আবার অনেকে পরীক্ষাও দিতে পারেনি। তারা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। তাই, তাদের এবার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করে দিতে হবে। এ সময় তারা ভিসিসহ সিন্ডিকেট সদস্যদের আটকে রাখে। এমডি-এমএস রেসিডেন্সি ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করা ১৩ চিকিৎসক বৃহস্পতিবার সকালে সিন্ডিকেট সভা চলাকালে রুমের বাইরে হট্টগোল করে। চিকিৎসকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ড্যাব) দুই গ্রুপের ভেতরকার উত্তেজনায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী অফিসাররা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ড্যাবের সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাক্তার ফরহাদ হালিম ডোনারের অনুসারী এবং কর্মীরা ভিসি ও সিন্ডিকেট সদস্যদের অবরুদ্ধ করে। এরপর খবর পেয়ে সেখানে আসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডাক্তার এজেডএম জাহিদ হাসানের অনুসারীরা। এ সময় তারা অবৈধভাবে ভর্তির সুযোগ না দেওয়ার পক্ষে স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে অনুত্তীর্ণ হয়েও ভর্তি হতে থাকা চিকিৎসকরা পিছু হটেন। এসব নিয়ে মো. শাহিনুল আলম বলেন, ‘২০০৩-২০০৬ সাল থেকে বিএসএমএমইউতে কর্মরত রয়েছেন, কিন্তু রেসিডেন্সি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি- এমন এক দল মেডিকেল অফিসার ‍বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে আচমকা এসেই হৈচৈ শুরু করে। তারা রেসিডেন্সি ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেও উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এবার তারা বঞ্চিত বিবেচনায় ভর্তির সুযোগ চায়।’

ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল আরো সাতজনের মৃত্যু, শনাক্ত ৫৯৬

দেশে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল আটটা থেকে রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকাল আটটা পর্যন্ত (এক দিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরো সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। একইসঙ্গে এই সময়ে ভাইরাসটি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরো ৫৯৬ জন। রোববার (৮ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৩১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৭ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩৬, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৯৮, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৩০, খুলনা বিভাগে ৭২ জন রয়েছেন। এছাড়াও, রাজশাহী বিভাগে ৩২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন, রংপুর বিভাগে আটজন ও সিলেট বিভাগে দুইজন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।’ এ দিকে, গেল এক দিনে সারা দেশে ৭৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৯৩ হাজার ৪৬৭ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৯৬ হাজার ২২৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে, বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৫২৯ জনের। এছাড়াও, গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মারা যান এক হাজার ৭০৫ জন।

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ৫৬২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২৫৯ জন এবং বাকিরা ঢাকার বাইরের। এ সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৫০৩ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৫ হাজার ৬৩২ জন। এর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৯২ হাজার ৭০২ জন। মারা গেছেন ৫২২ জন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান জানান, ডেঙ্গু এখন সিজনাল নেই, সারা বছরই হচ্ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনে পক্ষ থেকে সব জায়গায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। একইসঙ্গে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর চৌধুরী বলছেন, মশানিধনে শুধু জেল-জরিমানা আর জনসচেতনতা বাড়িয়ে কাজ হবে না। সঠিকভাবে জরিপ চালিয়ে দক্ষ জনবল দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী আক্রান্ত এবং ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়।

ডেঙ্গু প্রাণ নিল আরো পাঁচজনের, এক দিনে হাসপাতালে ৫৭০ রোগী

দেশে মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন পাঁচজন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৫১৪ জন। গেল ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৫৭০ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৪ হাজার ৮৮৪ জন ডেঙ্গুরোগী। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গেল ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া পাঁচজনের তিনজনই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা। বাকি দুইজন ঢাকা বিভাগের। আলোচ্য সময়ে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ১৯৭ জন রয়েছেন। এছাড়া, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশন বাদে) ১৩৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৭ জন, বরিশাল বিভাগে ৫৪ জন, খুলনা বিভাগে ৬৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৭ জন, রাজশাহীতে ৫০ জন, রংপুর বিভাগে একজন ও সিলেট বিভাগে দুইজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৯৪ হাজার ৮৮৪ জন। যাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ২০ শতাংশ পুরুষ ও ৩৬ দশমিক ৮০ শতাংশ নারী। এছাড়া, এখন পর্যন্ত মৃত ৫১৪ জনের মধ্যে ৫১ দশমিক ৪০ শতাংশ নারী ও ৪৮ দশমিক ৬০ শতাংশ পুরুষ। প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গত বছর দেশে তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ঢাকায় এক লাখ দশ হাজার আটজন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন। এর আগে ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়। ২০২০ সালে করোনা ভাইরাস মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জন মারা যান। এছাড়া, ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২৮১ জন।

ঢাকায় ডেঙ্গুতে কর্মক্ষম মানুষের মৃত্যু বেশি

২০২৩ সালের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম হলেও এতে আক্রান্ত হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া, এবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ডেঙ্গু বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাক্তার মো. আবু জাফর এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে আবু জাফর জানান, এ বছর ঢাকা সিটিতে ২০-৪০ বছর বয়সী মানুষ বেশি মারা গেছেন। যাদের বেশিরভাগই কর্মক্ষম ব্যক্তি। অন্য দিকে, চট্টগ্রামে শিশু ও বয়স্ক মানুষের মৃত্যুহার বেশি। তিনি বলেন, ‘আমরা মৃত্যুর কারণ জানার জন্য ডেথ রিভিউ শুরু করেছি। আমাদের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, দেরিতে হাসপাতালে যাওয়ায় মৃত্যু বেশি। রোগীরা একেবারেই শেষ পর্যায়ে হাসপাতালে আসছেন। তখন সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।’ সংবাদ সম্মেলনে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডাক্তার হালিমুর রশিদ বলেন, ‘ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ, যা মূলত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোতে হয়ে থাকে। সাধারণত ডেঙ্গু রোগটি শহরাঞ্চলের একটি রোগ। তবে, বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশেও বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। সবমিলিয়ে এ বছর এখন পর্যন্ত (১ ডিসেম্বর) ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯২ হাজার ৩৫১ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৯৪ জন।’ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুতেও রাজধানী ঢাকা এগিয়ে উল্লেখ করে হালিমুর রশিদ জানান, ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে সর্বমোট মৃত্যুর এক হাজার ১৬৩ জনই ছিলেন ঢাকার বাসিন্দা। তবে, এ বছর ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩৩৯ জনের। গত বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল ১২৪ জনের, এ বছর মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের। গত বছর খুলনা বিভাগে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল ২০৬ জনের, এ বছর মারা গেছে ২৭ জন। এছাড়া বরিশালে গত বছর ১২৫ জন এবং এ বছর ৫৬ জন, ময়মনসিংহে গত বছর ৬০ জন এবং এ বছর ১৩ জন, রাজশাহীতে গত বছর ১৬ জন এবং এ বছর সাতজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ বছর সিলেটে ডেঙ্গুতে কোন মৃত্যু হয়নি। গত বছর সেখানে একজনের মৃত্যু হয়েছিল। রংপুরে গত বছর দশজন মারা গিয়েছিল, এ বছর মৃত্যু হয়েছে দুইজনের।

গুরুত্ব কম দেওয়ায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু বাড়ছে বললেন স্বাস্থ্যের ডিজি

দেশে অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। স্বাস্থ্যের ডিজি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই সময়ে ডেঙ্গু সংক্রমণ অব্যাহত থাকলেও রোগটিকে গুরুত্ব না দেওয়ায় তুলনামূলক মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের জটিল পরিস্থিতি তৈরি না হলে সাধারণত তারা হাসপাতালে আসছেন না। এতে দেখা যায়, খুব অল্প সময়ে রোগী শকে চলে যাচ্ছে। রোগীদের পেটে ও ফুসফুসে পানি আসছে। এমন একটা সময়ে তারা হাসপাতালে আসছেন, যখন আর তাদের জন্য কিছু করা যাচ্ছে না। শুধুমাত্র দেরি করে হাসপাতালে আসার কারণেই মৃত্যুটা বেশি হচ্ছে। ডা. আবু জাফর বলেন, ডেঙ্গুতে বেশি মারা যাচ্ছে ঢাকায়, যাদের বয়স ২০ থেকে ৪০ বছর। তবে চট্টগ্রামে শিশু ও বৃদ্ধদের মৃত্যুহার তুলনামূলক বেশি। এর কারণ হলো ডেঙ্গু হলে মানুষ গুরুত্ব কম দিচ্ছে, তাই মৃত্যুটা বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুর পাশাপাশি দেশে চিকনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। জিকা ও চিকনগুনিয়া নিয়ে অনেক বেশি দুশ্চিন্তার কারণ নেই। জিকা ভাইরাসে আক্রান্তদের ৯০ শতাংশর ক্ষেত্রেই কোনো লক্ষণই দেখা দেয় না। এছাড়া এই রোগে মৃত্যু হার শূন্য। তবে এ বিষয়ে আমরা সচেতন থাকতে হবে।

ডেঙ্গু প্রাণ নিল আরো ছয়জনের, শনাক্ত ৮৮২

সারা দেশে সবশেষ গেল ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরো ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরো ৮৮২ জন। রোববার (১ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৯২ হাজার ৩৫১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪৯৪ জনের। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়াদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৬৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪১ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ২৩৩, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৪০ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১০৪ জন, খুলনা বিভাগে ৯১ জন রয়েছেন। এছাড়া, রাজশাহী বিভাগে ৫৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৩ জন, রংপুর বিভাগে ১১ জন ও সিলেট বিভাগে আটজন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।’গেল বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মারা যান এক হাজার ৭০৫ জন। এ দিকে, সবশেষ গেল ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে এক হাজার ১১০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮৮ হাজার ৯৮৯ জন।

বিশ্ব এইডস দিবস আজ

আজ ১ ডিসেম্বর, বিশ্ব এইডস দিবস। এইডসের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এ রোগে মারা ব্যক্তিদের প্রতি শোক প্রকাশের লক্ষ্যে সারা বিশ্বে এই দিন পালিত হয় দিবসটি। এ বছর ‘অধিকার নিশ্চিত হলে, এইচআইডিভ/এইডস যাবে চলে’ প্রতিপাদ্যে প্রতিবারের মতো বাংলাদেশেও যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করার মাধ্যমে পালিত হচ্ছে এ দিবস। ইউএনএইডসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন এইডস আক্রান্ত রোগী রয়েছে এবং প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মানুষ এ মরণঘাতী রোগে মারা গেছেন। মূলত এইচআইভি সংক্রমণের মাধ্যমে এইডস মহামারি ছড়িয়ে পড়ার বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং যারা এ রোগে মারা গেছেন তাদের প্রতি শোক পালন করতে এ দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সরকারি ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, বেসরকারি সংস্থা এবং বিশ্বে বিভিন্ন ব্যক্তি, এইডস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সবাইকে সচেতন করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় এইডস সম্পর্কিত বিশ্ব কর্মসূচির দুজন জনতথ্য কর্মকর্তা জেমস ডব্লু বুন এবং টমাস নেটটার ১৯৮৭ সালের আগস্টে প্রথম বিশ্ব এইডস দিবসের পরিকল্পনা করেন। এইডস সম্পর্কিত বিশ্ব কর্মসূচির (বর্তমানে আনএইডস নামে পরিচিত) পরিচালক ড. জোনাথন মানের কাছে বুন এবং নেটটার তাদের ধারণাটির কথা জানিয়েছিলেন। ড. মান এই ধারণাটি পছন্দ করে এটির অনুমোদন করেন এবং ১৯৮৮ সালের ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবসটি প্রথম পালন করা উচিত এমন পরামর্শের সঙ্গে একমত হন। এইচআইভি ভাইরাসের মাধ্যমে এই মরণব্যাধি একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে সংক্রমিত হয়। ভাইরাসটি ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অকার্যকর করে দেয়। ফলে এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে রোগী। তাই রোগটি থেকে বাঁচতে প্রতিরোধ এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই।

৪০ জনের বেশি চিকিৎসক বিদেশে গিয়ে ফেরেননি জানালেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

বিদেশে গিয়ে চিকিৎসকদের আর দেশে না ফেরাকে অপচয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি বলেন, দেশের বাইরে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে ৪০ জনেরও বেশি চিকিৎসক ফেরেননি। দরিদ্র দেশের জন্য এটা অপচয়। এসব ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে বিদেশে প্রশিক্ষণে যেতে পারবেন চিকিৎসকরা। শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ‘বিশ্ব মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার দিবস’ পালন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা জানান। বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া চিকিৎসকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, দুই থেকে তিন দিনের প্রশিক্ষণে ভালোভাবে শেখার সুযোগ নেই। তাই সাত দিন বা লম্বা সময় ধরে প্রশিক্ষণের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু ৪০ জনেরও বেশি সংখ্যক ডাক্তার দেশের বাইরে প্রশিক্ষণ বা উচ্চতর ডিগ্রি নিতে গিয়ে আর ফেরত আসেননি। তাদের কয়েকবার চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি। দরিদ্র দেশের এই অপচয় কীভাবে ঠেকাবেন? তিনি বলেন, তাদের কয়েকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। তবুও কাজ হয়নি। তাই দেশে ফেরার শর্ত সাপেক্ষে বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে বা উচ্চতর শিক্ষার জন্য যেতে পারবেন ডাক্তাররা। দেশে ওষুধের দাম দিন দিন বাড়ছে জানিয়ে নূরজাহান বেগম বলেন, মহামারি বা দুর্যোগকালে কাউকে চিকিৎসা নিতে দেশের বাইরে যেতে হয়নি। দেশেই সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে দেশের স্বাস্থ্য খাত। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমায় এনে ওষুধের মূল্য নির্ধারণের আহ্বানও জানিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।

কিডনি স্টোন: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ

ডাক্তার এএইচএম ইমরুল তারেক: কিডনি স্টোন বা কিডনির পাথর একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেকেরই জীবনে এক বার না এক বার দেখা দেয়। এটি কিডনিতে খনিজ পদার্থের কণিকা জমে জমে তৈরি হয় এবং কখনও কখনও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। কিডনি স্টোন কী: কিডনি স্টোন হল কিডনিতে তৈরি হওয়া কঠিন কণিকা। এটি সাধারণত ক্যালসিয়াম, অক্সালেট, ইউরিক এসিড বা ফসফেটের মত খনিজ পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়। এই কণিকাগুলি ছোট বালির কণার মত ছোট হতে পারে। আবার কখনও কখনও বড় পাথরের মতো বড়ও হতে পারে। কিডনি স্টোনের কারণ: কিডনি স্টোনের সঠিক কারণ সব সময় জানা যায় না। তবে, কিছু কারণ কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যেমন- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পান করা: পানি কম পান করলে মূত্র ঘন হয়ে যায় ও খনিজ পদার্থ জমে কিডনি স্টোন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।কিছু খাবার: অক্সালেটযুক্ত খাবার (যেমন পালং শাক, বাদাম, চকলেট) ও সোডিয়ামযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।পরিবারে কিডনি স্টোনের ইতিহাস থাকা: যদি পরিবারের কারো কিডনি স্টোন হয়, তাহলে আপনারও হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।মেটাবলিক রোগ: গাউট, সিস্টিক ফাইব্রোসিস ও কিছু অন্যান্য মেটাবলিক রোগ কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।অন্যান্য চিকিৎসাগত অবস্থা: হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজম, মোচড়া রোগ ও কিছু অন্যান্য চিকিৎসাগত অবস্থা কিডনি স্টোনের কারণ হতে পারে।কিছু ওষুধ: কিছু ওষুধ সেবন করা কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কিডনি স্টোনের লক্ষণ: কিডনি স্টোনের লক্ষণগুলি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং পাথরের আকার ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, কিডনি স্টোন যখন কিডনি থেকে মূত্রনালীতে নামতে শুরু করে, তখন তীব্র ব্যথা হয়। এই ব্যথাকে রেনাল কোলিক বলা হয়।তীব্র ব্যথা: পেট, পিঠ বা পাশে তীব্র ব্যথা হতে পারে।মূত্রত্যাগের সময় জ্বালাপোড়া: মূত্রত্যাগের সময় জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে।মূত্রে রক্ত: মূত্রে রক্ত দেখা যেতে পারে।মূত্রত্যাগের সময় কষ্ট হওয়া: মূত্রত্যাগের সময় কষ্ট হতে পারে অথবা মূত্রের ফোঁটা ফোঁটা করে পড়া।বমি বমি ভাব: কিছু ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।জ্বর: সংক্রমণ হলে জ্বর আসতে পারে। কিডনি স্টোনের চিকিৎসা: কিডনি স্টোনের চিকিৎসা পাথরের আকার, অবস্থান ও লক্ষণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, ছোট পাথর নিজে থেকেই মূত্রের সাথে বের হয়ে যায়। তবে, বড় পাথরের ক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি হল-ওষুধ: ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। কিছু ওষুধ পাথরকে ছোট করে দেয় যাতে সহজে বের হয়ে যেতে পারে।শকওয়েভ থেরাপি: এই পদ্ধতিতে শকওয়েভ ব্যবহার করে পাথরকে ছোট টুকরো করে দেওয়া হয়।সার্জারি: খুব বড় বা জটিল পাথরের ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। কিডনি স্টোন প্রতিরোধ: কিছু সহজ উপায়ে কিডনি স্টোন প্রতিরোধ করা সম্ভব-পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন: দিনে অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান করুন।স্বাস্থ্যকর খাবার খান: অক্সালেটযুক্ত খাবার কম খান এবং ফল, শাকসবজি ও পুরো শস্য বেশি খান।সোডিয়াম কম খান: লবণ খাওয়া কমিয়ে দিন।স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন: অতিরিক্ত ওজন কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য ভাল ও কিডনি স্টোন প্রতিরোধে সাহায্য করে।ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন: যদি আপনি কোন ওষুধ সেবন করেন, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন। লেখক: চিকিৎসক, এমবিবিএস, এমএস (ইউরোলজি), কনসালটেন্ট - ইউরোলজি, এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৪৮৫

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮৫ জনে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৫৪ জন। ফলে মোট আক্রান্ত হয়েছেন সংখ্যা ৯০ হাজার ৭৯৪ জন। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।এতে বলা হয়েছে, এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩৮ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৬, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৯১, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৮৫, খুলনা বিভাগে ২৫ জন রয়েছেন। এছাড়াও রাজশাহী বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২২ জন এবং রংপুর বিভাগে একজন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৯০ হাজার ৭৯৪ জন। যাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ২০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৮০ শতাংশ নারী। এছাড়াও এখন পর্যন্ত মৃত ৪৮৫ জনের মধ্যে ৫১ দশমিক ৫০ শতাংশ নারী এবং ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশ পুরুষ।প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গেল বছর দেশে তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ঢাকায় এক লাখ ১০ হাজার ৮ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিন লাখ ১৮ হাজার ৭৪৯ জন। গত বছর এক হাজার ৭০৫ জন মশাবাহিত এই রোগে মারা গেছেন, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যু।এর আগে, ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা যান।

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১৩০৬, আরও ৪ জনের মৃত্যু

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮২ জনে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৩৭ জন। ফলে মোট আক্রান্ত হয়েছেন সংখ্যা ৯০ হাজার ৪৪০ জন। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৭ জনের মধ্যে ২ জন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ১ জন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ২ জন ঢাকার বাসিন্দা। এছাড়া ১ জন বরিশাল বিভাগের (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ও ১ জন খুলনা বিভাগের (সিটি করপোরেশনের বাইরে)। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৭২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৮৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২২১, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৭১, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১১৫, খুলনা বিভাগে ১০৯ জন রয়েছেন। এছাড়াও রাজশাহী বিভাগে ৩২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৮ জন, রংপুর বিভাগে ১০ জন এবং সিলেট বিভাগে ৪ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৯০ হাজার ৪৪০ জন। যাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ২০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৮০ শতাংশ নারী। এছাড়াও এখন পর্যন্ত মৃত ৪৮২ জনের মধ্যে ৫১.৫ শতাংশ নারী এবং ৪৮.৫ শতাংশ পুরুষ। প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গেল বছর দেশে তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ঢাকায় এক লাখ ১০ হাজার ৮ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিন লাখ ১৮ হাজার ৭৪৯ জন। গত বছর এক হাজার ৭০৫ জন মশাবাহিত এই রোগে মারা গেছেন, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে, ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা যান।

শিক্ষার্থীর মৃত্যু: সেই ন্যাশনাল মেডিকেলের তিন চিকিৎসক বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন

ঢাকার যাত্রাবাড়ির মোল্লা কলেজের ছাত্র অভিজিৎ হাওলাদারের মৃত্যুর ঘটনায় ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের তিন চিকিৎসককে বরখাস্ত করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ রেজাউল হক বলেছেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে ১১ সদস্যদের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।’ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।রেজাউল হক বলেন, ‘ঘটনা তদন্তে কলেজ কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে ১১ সদস্যদের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্তের স্বার্থে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) তিন চিকিৎসককে বরখাস্ত করা হয়েছে। ‘চিকিৎসকের অবহেলায় রোগী মারা গেছেন- এ অভিযোগ করে মিথ্যা দায়ভার চাপানো হচ্ছে। তবে, তদন্ত চলমান। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট প্রকাশ করলে জানা যাবে হাসপাতালের কোন দুর্বলতা ছিল কি না। চিকিৎসকের গাফিলতি ছিল কি না, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে কমিটিতে অভিযোগকারীদের পক্ষ থেকে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককেও চাওয়া হয়েছে’। যোগ করেন তিনি।উপ-পরিচালক আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রোগীর মৃতদেহ বাড়ি নেয়ার জন্য দশ হাজার টাকা অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া পরিশোধ করার জন্য আটকে রাখা হয়। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ আলোচনা সাপেক্ষে আইসিইউ বিলই ছিল ৩৬ হাজার ৪০০ টাকা, যা মওকুফ করে দেয়া হয়। দশ হাজার টাকা দিয়ে কি মৃত্যু ধামাচাপা দেয়া যায়?’প্রসঙ্গত, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হালদার গেল ১৬ নভেম্বর হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। এরপর ১৮ নভেম্বর হাসপাতালে তিনি মৃত্যুরবণ করেন। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ২০ ও ২১ নভেম্বরে হাসপাতাল অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যাপক ভাঙচুরও চালান তারা।

ঢামেকে যৌথবাহিনীর অভিযানে ধরা পড়ল দালাল চক্রের ২১ সদস্য

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে দালালচক্র নির্মূলে অভিযান চালিয়েছে যৌথবাহিনী। এ সময় নারী ও পুরুষসহ দালাল চক্রের ২১ সদস্যকে আটক করা হয়। এতে বিভিন্ন মেয়াদে বেশ কয়েকজনকে সর্বোচ্চ তিন মাসের জেল ও তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরিন জাহানের নেতৃত্বে সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকাল দশটা থেকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, নতুন ভবনের প্যাথলজি বিভাগসহ হাসপাতালের বিভিন্ন প্রাঙ্গণে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন সুমন (সাজা তিন মাস), সাইদুর রহমান (সাজা এক মাস), শিশির আহমেদ (জরিমানা এক হাজার টাকা), কাউসার (সাজা এক মাস), আরিফ (সাজা তিন মাস), নজরুল ইসলাম (সাজা এক মাস), সাগর (সাজা ১৬ দিন), রিমন (সাজা তিন মাস), জয়দেব বর্মন (জরিমানা এক হাজার টাকা), মাহমুদা বেগম (সাজা তিন দিন), মুনতাহার বেগম (জরিমানা এক হাজার টাকা), মমতাজ বেগম (সাত দিনের সাজা), শেফালী আক্তার (তিন দিনের জেল), মোরশেদা বেগম (এক হাজার টাকা জরিমানা), শাহিনুর বেগম (এক মাসের জেল), শাহনাজ বেগম (এক হাজার টাকা জরিমানা), শিউলি বেগম (এক হাজার টাকা জরিমানা), শিউলি বেগম (এক হাজার টাকা জরিমানা), মর্জিনা বেগম (এক হাজার টাকা জরিমানা), সাইফুল (সাত দিনের জেল) ও রাজিব (সাত দিনের জেল)। আফরিন জাহান বলেন, ‘আমাদের কাছে দীর্ঘ দিন ধরে ঢামেক হাসপাতালের দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যের অভিযোগে ছিল। তাই, আজ এনএসআই ঢাকা উইংয়ের তথ্য মতে যৌথবাহিনী সহায়তায় হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ থেকে ২১ জন নারী-পুরুষকে আটক করা হয়। পরে আমরা তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছি।’ এ নিয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দালালচক্র নির্মূলে এটি একটি নিয়মিত অভিযান। এখন থেকে এ অভিযান সব সময় চলমান থাকবে। আমরা চাই, দালালমুক্ত ঢাকা মেডিকেল। আমাদের এখানে চিকিৎসা নিতে এসে কোন রোগই যেন প্রতারণার ফাঁদে না পরে, এই বিষয়টা লক্ষ্য রেখেই ভবিষ্যতে এই অভিযান চলবে।’

ভুল চিকিৎসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ, ন্যাশনাল মেডিকেলের সামনে বিক্ষোভ

ডাক্তার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের অভিজিৎ হালদার (১৮) নামে ছাত্রের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটক আটকে ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থীরা। রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুর একটার দিকে পুরান থাকায় অবস্থিত এ হাসপাতালের সামনে লাঠিসোঁটা হাতে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অভিজিত হাওলাদার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তির দুই দিন পর সোমবার (১৮ নভেম্বর) মারা যান। ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়। কিন্তু ব্যাপারটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। সংবাদ মাধ্যমকে অভিযোগকারীদের একজন বলেন, ‘আমরা আমাদের বন্ধুর মৃত্যুতে শান্তিপূর্ণভাবে আমরা একটি দাবি রাখি। আজকে আন্দোলনে করতে আসার সময় পুলিশের সাথে আমাদের কথা হলে শান্তিপূর্ণভাবেই আমরা এগিয়ে আসি। কিন্তু, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্রদলের কর্মীরা এসে আমাদের উপর হামলা চালায়। আমাদের কারো হাতে লাঠি ছাড়া কিছুই নেই। তবে, তাদের হাতে রামদা, চাপাতি ছাড়াও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র রয়েছে। পুলিশও তাদের সাহায্য করছে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীও আহত হয়েছে বলে জানা যায়।’ এ দিকে, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডাক্তার রেজাউল হক বলেন, ‘গেল ১৬ নভেম্বর সকালে অভিজিৎ হালদার নামে শিক্ষার্থীকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। পরে পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে। পরে তাকে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়। চিকিৎসা চলাকালীন তার অবস্থার অবনতি হলে রোগীর অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু, সব চিকিৎসা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেষ্টার পরও সোমবার (১৮ নভেম্বর) মারা যায় অভিজিৎ। কিন্তু, এখানে আমাদের কোন ত্রুটি কিংবা অবহেলা ছিল না। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত্যু পরবর্তী মরদেহ হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে রোগীর আত্মীয়কে বুঝিয়ে দেন ও রোগীর সম্পূর্ণ বিল স্থগিত রাখা হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থী অভিজিৎ হালদারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে হাসপাতালে পরিচালকের কক্ষে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ছাত্র প্রতিনিধি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা হয় এবং মৃত্যুর বিষয়ে ১১ জনের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আশা করছি, দ্রুত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবেন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরো দশজনের মৃত্যু

পুরো দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গেল ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরো দশজন। এ নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪৪৮ ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। এ সময়ের মধ্যে হাসপাতালে নতুন ৮৮৬ জন ভর্তি হন। শনিবার (২৩ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল আটটা থেকে শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল আটটা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দশজনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়াদের মধ্যে ছয়জন নারী ও চারজন পুরুষ। এ নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪৪৮ ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। এদের মধ্যে গেল অক্টোবর মাসেই ১৩৫ জন মারা গেছেন। মারা যাওয়াদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশী। এছাড়া, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৮৫ হাজার ৭১২ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা অধিক। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল আটটা পর্যন্ত গেল ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৩৭৩ জন ঢাকা মহানগরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। এর বাইরে (সিটি করপোরেশন বাদে) বরিশাল বিভাগে ১৪৪ জন, ঢাকা বিভাগে ১২১ জন, খুলনা বিভাগে ১০৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৭ জন, রংপুর বিভাগে ৪ জন ও সিলেট বিভাগে একজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সর্দিতে নাক বন্ধ? জেনে নিন সমাধানের নয় উপায়

ঋতু পরিবর্তনের ইঙ্গিত বেশ স্পষ্ট টের পাওয়া যাচ্ছে বাতাসে। আচমকাই তাপমাত্রার হেরফের হলেই সর্দি-কাশির একটা সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন অনেকেই। পুরো রাত শুকনো কাশি কাশতে কাশতে বুকে ব্যথা ধরে যায়। এই পরিস্থিতিতে আপনিও নাজেহাল? জানেন তো, আমাদের দেহ যখন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মিউকাস তৈরি করে, তখনই বাড়তি মিউকাস নাকের দিক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। চলতি কথায় সেটাকেই আমরা বলি ‘নাক দিয়ে জল পড়া’। সবচেয়ে বিরক্তিকর হল সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে থাকা। সর্বক্ষণ সবার সামনে নাক টানা আর নাক মুছতে থাকাটা ভীষণ বিরক্তিকর। নাক বন্ধ হয়ে অস্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিতে তো সমস্যা হয়ই, অনেকের শরীরের পাশাপাশি মেজাজটাও খারাপ হয়ে থাকে। নাকের এই সর্দি দূর করার জন্য আপনি বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। কিছু পদ্ধতিতে নাক দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে যাবে। আবার কিছু পদ্ধতিতে কিছু দিন সময় লাগলেও অসুস্থতা কেটে যাবে পুরোপুরি। কীভাবে সারবে: খুব ভাল কাজ হয় স্টিম ইনহেল করলে, তাতে আপনার শ্বাসনালীর সব বাধা সরে যায়। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘দিনে দুই বার স্টিম নেয়ার পাশাপাশি অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধ খেলেই সাধারণত সমস্যা সেরে যায়। যারা খুব অ্যালার্জিতে ভোগেন, তার ডিসপোজেবল মাস্ক ব্যবহার করতে শুরু করুন ঋতু পরিবর্তনের সময়টায় অন্তত।’ গলার কাছটায় আরামের জন্য উষ্ণ জলে অ্যাপল সাইডার ভিনিগার আর মধু মিশিয়ে খেতে পারেন৷ আদা আর মধু দিয়ে চা খাওয়াও চলে। দুধ আর কাঁচা হলুদ বেশ করে ফুটিয়ে পান করুন, দেহের ভিতরের সব ইনফেকশন কমাতে তা কার্যকর। যেসব নিয়ম মেনে চললে উপকার পেতে পারেন: স্যালাইন ড্রপ দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে পারেন; যথেষ্ট পানি পান করুন; নাক ঝেড়ে ফেলুন, সর্দি আটকে রাখবেন না; নাক ও কপালে গরম সেঁক দিন, তবে ত্বক যেন পুড়ে না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন; গরম চা ও স্যুপ পান করুন; ঝাঁঝালো মেনথল মলম ব্যবহার করুন; গরম পানিতে গরগর করুন; কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন; আপনার নাক যদি অ্যালার্জির কারণে বন্ধ হয়ে থাকে তাহলে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন, তবে এর জন্য অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

একদিনে ডেঙ্গুতে আরও দুইজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৪৫৮

রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি মৃতের তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুইজনের প্রাণহানি হয়েছে। পাশাপাশি এই সময়ে এডিস মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪৫৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।এ নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪৩৮ ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে গত অক্টোবর মাসেই ১৩৫ জন মারা গেছেন। মারা যাওয়াদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশী। এছাড়া চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৮৪ হাজার ৮২৬ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশী।শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ১৮১ জন ঢাকা মহানগরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। এর বাইরে (সিটি করপোরেশন বাদে) খুলনা বিভাগে ৬৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬২ জন, ঢাকা বিভাগে ৫৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২২ জন, বরিশাল বিভাগে ২০ জন, রংপুর বিভাগে ২ জন ও সিলেট বিভাগে একজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।উল্লেখ্য, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৭০৫ জন মৃত্যুবরণ করেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।

দেশে ডেঙ্গু প্রাণ নিল আরো নয়জনের

সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গেল ২৪ ঘণ্টায় নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরো এক হাজার ২১৪ জন। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ৪৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এই সময়ে মশাবাহিত রোগটি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৪ হাজার ৩৬৮ জন।’ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৮২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৪ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেষনের বাইরে) ৪৩০, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৯৫, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৪১, খুলনা বিভাগে ১১৭ জন রয়েছেন। এছাড়াও রাজশাহী বিভাগে ৩৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯১ জন, রংপুর বিভাগে ১৪ জন এবং সিলেট বিভাগে ১১ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপকভাবে শুরু হয় ২০০০ সালে। ২০০০-২০২২ সাল পর্যন্ত দুই লাখ ৪৪ হাজার ২৪৬ জন এ রোগে আক্রান্ত হন। এ সময় মারা যান ৮৫৩ জন। বাংলাদেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয় গেল বছর। ওই বছর তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আর মৃত্যু হয় এক হাজার ৭০৫ জনের। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের অতিবৃষ্টি ডেঙ্গু বাড়ার কারণ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এডিসবিরোধী অভিযান না থাকাও বড় সংকট।

দেশে ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষই নির্যাতনের শিকার

সমাজের প্রায় ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ম্যানস রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএমআরএফ)। সংস্থাটির পরিসংখ্যার অনুযায়ী, বিগত নয় বছরে পুরো দেশে চার হাজার ২৬৮ জন ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় দুই হাজার ৩২৮ জন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবে, প্রকৃত পুরুষ নির্যাতনের সংখ্যা আরো বহু বেশি। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস উপলক্ষে বিএমআরএফের চেয়ারম্যান শেখ খায়রুল আলম সোহেল এ তথ্য জানান। বিএমআরএফের তথ্যানুযায়ী, পুরো বাংলাদেশে চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত এক হাজার ৬৭ জন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর পূর্বে, ২০২৩ সালে ১০৪৯ জন, ২০২২ সালে ৭৯২ জন, ২০২১ সালে ৪৫০ জন, ২০২০ সালে ৩৩০ জন, ২০১৯ সালে ২৪০ জন, ২০১৮ সালে ১৭০ জন, ২০১৭ সালে ১২০ জন ও ২০১৬ সালে ৫০ জন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ হিসেবে গেল নয় বছরে চার হাজার ২৬৮ জন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবে, প্রকৃত সংখ্যা আরো বহু বেশি বলে দাবি করেছে সংস্থাটি। বিএমআরএফের তথ্যানুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ জেলায় চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৬৪৭ জন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর পূর্বে, ২০২৩ সালে ৬৩২ জন, ২০২২ সালে ৩৯৭ জন, ২০২১ সালে ২১২ জন, ২০২০ সালে ১৫৩ জন, ২০১৯ সালে ১১৭ জন, ২০১৮ সালে ৮২ জন, ২০১৭ সালে ৬৫ জন ও ২০১৬ সালে ২৩ জন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ হিসাব অনুযায়ী গেল নয় বছরে দুই হাজার ৩২৮ জন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শেখ খায়রুল আলম সোহেল বলেন, ‘পুরুষের অধিকার ও নির্যাতন প্রতিরোধে আমাদের সংগঠনটি কাজ করছে। আমাদের সংগঠনের জরিপে দেখা গেছে, পুরো দেশে গেল কয়েক বছর গড়ে প্রায় এক হাজারের অধিক ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রায় ৬০০-৭০০ জনের অধিক পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়। বিবাহিত পুরুষরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। পুরো দেশে প্রায় ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তবে, বাস্তবে নির্যাতনের শিকার পুরুষের সংখ্যা আরো কয়েক গুণ বেশি। লোকলজ্জা ও সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে বহু পুরুষ এসব নিয়ে কথা বলতে চান না। এসব ঘটনায় নির্যাতিতদের আইনি সহায়তা দেওয়াসহ নির্যাতন প্রতিরোধে আমরা কাজ করে আসছি।’ আইনের অপব্যবহারের ফলে পুরুষ নির্যাতন বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইন থাকলেও পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আইন নেই। ফলে, নারী নির্যাতন আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। এতে বহু পুরুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, মিথ্যা মামলার মধ্য দিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে। বহু পুরুষ এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। কিন্তু, লোকলজ্জা ও সম্মান হানির ভয়ে অনেকে তা বলতে পারছে না। এমন নানা অভিযোগ নিয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের সংগঠনের কাছে অনেকে আসছে। তবে, তারা প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হন না।’