ঘূর্ণিঝড় রিমালে বাগেরহাটে ৬৪৪ কোটি টাকার ক্ষতি

বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়েছে পুরো বাগেরহাট জেলা। ঝড়ের ৭ দিন পরে রোববার (২ জুন) জেলার বিভিন্ন খাতের ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে এ ঝড়ে ২৭ টি খাতে ৬৪৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের সময় গাছ পড়ে মারা গেছেন এক নারী এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৭ জন। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষয়ক্ষতির উল্লেখযোগ্য খাতগুলো হচ্ছে, কৃষি, মৎস্য, বিদ্যুৎ, সড়ক, পানি, বন, নৌকা-জাল ও ট্রলার। এবারের ঝড়ে ৪ হাজার ৩৪৫ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে, যা টাকার অঙ্কে ৭৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ৩৫ হাজার মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এতে চাষিদের ক্ষতি হয়েছে ৭২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ১ হাজার ৭২১ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পল্লী বিদ্যুতের ৫৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। ৭৬১ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন সড়কে থাকা ৫৩টি ব্রিজ ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা টাকার অঙ্কে এক কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ৪৫ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ১০৫ হেক্টর বনভূমি নষ্ট হয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং ১২ হেক্টর নার্সারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ১৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৯ হাজার ১২৭টি পুকুর জলাশয়সহ সুপেয় পানির বিভিন্ন উৎস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ৪৪ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ৬ শতাধিক নৌকা-ট্রলার এবং ৫৭২টি জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে জেলে ও নৌকার মালিকদের ২ কোটি ৪১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর বাইরে ৬৮ হাজার ৪১৯টি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ হাজার ১২৪টি ঘর সম্পূর্ণ ও ৫৫ হাজার ২৯৫টি ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেছি। বিভিন্ন দপ্তর থেকে আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি। বাগেরহাটে ২৭টি খাতে ৬৪৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কিছু সহযোগিতা করা হয়েছে। সময়-সময়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ও অনুমোদন সাপেক্ষে আরও মানুষকে সহযোগিতা করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

ঘূর্ণিঝড় রিমাল: সুন্দরবনে মিলল ৯৬ হরিণসহ ১০০ মৃত প্রাণী

বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে কাজ করে যাচ্ছে বন বিভাগ। এখন পর্যন্ত ৯৬টি হরিণ ও চারটি শূকরের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২৮ মে) থেকে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) পর্যন্ত বন বিভাগের বিভিন্ন চর থেকে এসব মৃতদেহ উদ্ধার করে বনরক্ষীরা। এছাড়া এ সময়ে জীবিত ও আহতাবস্থায় ১৮টি হরিণ ও একটি অজগর উদ্ধার করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এসব প্রাণী বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মিহির কুমার দে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রোব ও সোমবার (২৬ ও ২৭ মে) দুদিন জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের বেশিরভাগ অংশ প্লাবিত হয়। কোথাও কোথাও স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে ২-৬ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে। উচ্চ জোয়ারের পানি সুন্দরবনের গহীনে চলে যাওয়ায় হরিণগুলো ভেসে গিয়ে সাঁতরে কূলে উঠতে পারেনি। এ কারণে হরিণগুলো মারা যেতে পারে বলে ধারণা বন বিভাগের। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবের দফায় দফায় উচ্চ জোয়ারে সুন্দরবনের সব নদী-খাল উপচে বনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এই জোয়ারের উচ্চতা ছিল ১০-১২ ফুট। তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের বেশিরভাগ অংশ প্লাবিত হয়েছে। মিষ্টি পানির পুকুরগুলো সব লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঝড়ের পরে বনের কটকা, কচিখালী, করমজল, পক্ষীর চর, ডিমের চর, শেলারচর ও নারিকেলবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মৃত অবস্থায় ৯৬টি হরিণ ও চারটি বন্য শূকর পাওয়া গেছে। এসব মৃতদেহ মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৮টি জীবিত হরিণ এবং একটি জীবিত অজগর সাপ উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। সুন্দরবনের প্রাণীদের রক্ষায় করণীয় বিষয়ে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের মতো সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীরাও প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয়। পানি তাদের কাছে নতুন কিছু নয়। তারা নিয়মিত দিনে দুবার জোয়ার-ভাটা দেখে অভ্যস্ত। এছাড়া অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে ভরা কটালের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পানি থাকে। দুর্যোগের সময় যখন তীব্র ঝড় ও পানির উচ্চতা অনেক বেশি হয়, তখন হয়ত তাদের টিকে থাকা অনেক কষ্টকর। তবু তারা বছরের পর বছর সিডর, আইলা, বুলবুল, আম্পান, ইয়াস, মোখা, নার্গিস, রিমালসহ বহু প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। শুধু দরকার সুন্দরবনের সুরক্ষা। তাহলেই যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, শিগগিরই উদ্ভিদ ও প্রাণীরা সেটা কাটিয়ে উঠতে পারবে।

জোয়ারে ভাসছে ভোলার উপকূল

ভোলা: ঘূর্ণিঝড় রিমাল কেটে গেলেও ঝড়ের ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ভোলা। বিশেষ করে জোয়ারের পানি এখনও নামেনি। টানা ৪ দিন ধরে জোয়ারের পানিতে ডুবে আছে অন্তত ২৫ গ্রাম। অনেকেই বিধ্বস্ত হওয়া বাড়িঘর মেরামত করতে পারেননি। ফিরে আসতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে। সব মিলিয়ে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছে রিমালে বিধ্বস্ত এলাকার বাসিন্দারা। যদিও ত্রাণ সহায়তায় এগিয়ে এসেছে জেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ডসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। পুরো জেলায় এখন পর্যন্ত ৩৭৫ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ১৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে ঝড়ের ভয়াবহ তাণ্ডবচিত্রের দেখা মিলল। বিধ্বস্ত এলাকায় রাস্তাঘাট ভেঙে আছে, ঘরবাড়ি ভেঙে চুরমার, ও গাছপালা উপড়ে পড়ে আছে ঘরবাড়ি ও রাস্তার ওপর। ভোলা সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চর ভেদুরিয়া গ্রামের দিনমজুর মনির হোসেন। চারদিন আগে ঝড়ের তাণ্ডবে তার একমাত্র মাথাগোঁজার ঠাঁই ভেঙে যায়। এখন পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। কিন্তু দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরির বেতনে ঘর মেরামত করার সামর্থ্য নাই তার। রীতিমতো অসহায় অবস্থায় পড়ে আছেন তিনি। এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহায়তাও পাননি মনির হোসেন। এ দিনমজুর বলেন, কীভাবে ঘর মেরামত করবো! কীভাবে জীবিকা চালাব! তার কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ পেলে কিছুটা হলেও সংকট দূর হবে। শুধু মনির হোসেন নয়, তার মতো যেন একই অবস্থা পুরো গ্রামের। ঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পানি বন্দি হাজার হাজার মানুষ। অনেকের ঘরে জ্বলেনি রান্নাঘরের চুলা। তাই শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটছে তাদের। পানিবন্দি রাজিয়া, বিলকিস ও জাকিয়া বেগম বলেন, জোয়ারের পানিতে পুরো এলাকায় ডুবে আছে, এখনও জলাবদ্ধতা। অনেক মানুষ রান্না করতে পারছে না। আমাদেরও একই অবস্থা। ঘূর্ণিঝড় রিমাল কারো ঘর, কারো টিনের চালা, কারো বা রান্নাঘর ও গাছপালা ভেঙে দিয়েছে। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। কষ্টের যেন শেষ নেই। ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা করা হচ্ছে। সব উপজেলায় চলছে ত্রাণ বিতরণ। তিনি তথ্য দেন, ঝড়ে ৫ হাজার ঘর আংশিক ও ২ হাজার ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে কোটি টাকার মাছের ঘের ও ফসলি জমি। এছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০টি, মাধ্যমিক ২টি সম্পূর্ণ এবং ৫৪টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কলেজ আংশিক ৪টি, মাদরাসা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি,মৎস্যের ক্ষতির পাশাপাশি ১১ কিলোমিটার বাঁধ এবং অসংখ্য কাঁচা-পাকা রাস্তার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ঘূর্ণিঝড় রিমালে ১৬ জনের মৃত্যু, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত পৌনে ২ লাখ

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে দেশের সাত জেলায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া উপকূলীয় ও আশপাশের ১৯ জেলায় পৌনে ২ লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৪০ হাজার ৩৩৮টি এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫২৮টি ঘরবাড়ি। মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটেছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, চট্টগ্রাম ও পিরোজপুরে। আজ বুধবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো–অর্ডিনেশন সেন্টারের দুর্যোগসংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গত রোববার রাতে বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রিমাল।জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে উপকূল ও আশপাশের ১৯ জেলা। এগুলো হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর। সবচেয়ে বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে খুলনা জেলায়। এই জেলায় ২০ হাজার ৭৬২টি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। বাগেরহাটে বিধ্বস্ত হয়েছে ১০ হাজার ঘরবাড়ি। বাকিগুলো বিভিন্ন জেলায়। এই ঝড়ে দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৬ লাখ।

রিমালের প্রভাবে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত চাঁদপুরে, ঢাকায় ২২৪ মিলিমিটার

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ২৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চাঁদপুরে। এছাড়াও চট্টগ্রাম ও সিলেটে ২৪৯, ঢাকায় ২২৪, শ্রীমঙ্গলে ২১৭, মাদারীপুরে ২০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মানিকগঞ্জ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে সিলেট এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; বরিশাল ও রংপুর বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। বুধবার যেমন থাকবে আবহাওয়া ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। বৃহস্পতিবার যেমন থাকবে আবহাওয়া রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুল্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় রিমাল: ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জারি

ঘূর্ণিঝড় রিমাল দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ বৃষ্টিপাত ঝরিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হবে। ফলে সমুদ্রবন্দরসমূহকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।সোমবার (২৭ মে) আবহাওয়ার ১৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।এতে বলা হয়েছে, খুলনার কয়রায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল উত্তর দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপ হিসেবে বর্তমানে যশোর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ বৃষ্টিপাত ঝরিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হবে। ফলে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে এবং সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের সর্বশেষ অবস্থান জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

ঘূর্ণিঝড় রিমাল বর্তমানে যশোর পূর্ববর্তী অঞ্চলে অবস্থান করছে। আজ দুপুর ৩টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় রিমাল রাজধানী ঢাকা অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সময় ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত হবে। তবে ধীরে ধীরে এটি দুর্বল হয়ে যাবে। সোমবার (২৭ মে) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র রাজধানী ঢাকার ওপর দিয়ে গেলেও তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। সামান্য বৃষ্টিপাত হবে। এর সঙ্গে থাকবে দমকা হাওয়া। আগামীকাল ঢাকার আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে পারে। আজিজুর রহমান বলেন, সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৫৯ কিলোমিটার। ভোর থেকে ঢাকায় ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই আবহাওয়াবিদ বলেন, আমরা যে পথের কথা বলেছিলাম, ঘূর্ণিঝড় সেই পথ দিয়ে অতিক্রম করেছে। সাগরে যেসব ট্রলার নিরাপদে আছে, তাদের আগামী ২৪ ঘণ্টা নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালে ৭ জনের মৃত্যু

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে দমকা হাওয়াসহ ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি বয়ে যাচ্ছে দেশের উপকূল অঞ্চলে। এর প্রভাবে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও সাতক্ষীরা এবং চট্টগ্রামে সাত জনের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২৭ মে) সকালে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দুর্যোগের পূর্বেই সঠিক পূর্বাভাস এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতার প্রতিফলনস্বরুপ শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়েও তেমন কোন প্রভাব পড়েনি।তবে অনেক জেলায় দুর্বল বাঁধের কারণে ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগেই বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার ঢেউ আঘাত হানে উপকূলে। পটুয়াখালীতে উত্তাল ঢেউয়ে ভেসে একজন এবং সাতক্ষীরায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে একজনের প্রাণ গেছে। মোংলায় ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ রয়েছে শিশুসহ দুইজন। এছাড়াও বরিশাল, ভোলা ও চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ রেমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে বর্তমানে খুলনার কয়রার নিকট অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ বৃষ্টিপাত বাড়িয়ে পরবর্তী ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে কিছুটা দুর্বল হয়ে ‘ঘূর্ণিঝড়ে’ রূপ নিতে পারে।এরইমধ্যে রেমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে বর্তমানে কয়রা, খুলনার কাছে অবস্থান করছে। এরপর ধীরে ধীরে সমুদ্র এবং উপকূলীয় এলাকার পরিবেশ শান্ত হয়ে উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে বৃষ্টিপাত বাড়বে ঢাকাসহ এর আশপাশের এলাকায়। সকাল থেকে ঢাকায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে তীব্র বৃষ্টিপাত হচ্ছে।আবহাওয়া অধিদফতরের ১৮ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হলো।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ০৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদুরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরসমূহকে ০৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চীদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ০৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।

রাতভর তাণ্ডবের পর ঘূর্ণিঝড় রিমাল গভীর নিম্নচাপে পরিণত

খুলনার কয়রায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল উত্তর দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপ হিসেবে বর্তমানে যশোর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ বৃষ্টিপাত ঝরিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সোমবার (২৭ মে) আবহাওয়ার ১৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে নয় নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে এবং সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

বাঁধ ভেঙে বহু এলাকা প্লাবিত, ৩০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে এখন পর্যন্ত ২ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান জানিয়েছেন। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন দুর্গত জেলাগুলোর ৩০ লাখের বেশি গ্রাহক। স্বাভাবিকের চেয়ে সাত-আট ফুট বেশি উচু জোয়ারের চাপে সাতক্ষীরা, বরগুনাসহ কয়েক জেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে শত শত গ্রাম। এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা হাওয়াসহ ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরা, কুয়াকাটাসহ উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে বাঁধ ভেঙে হু হু করে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। সুন্দরবনসহ বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকা এসব এলাকার লাখ লাখ মানুষ নিকটবর্তী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ছুটে গেছেন। তবে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে সোমবার সকালে। উপকূলে তাণ্ডব চালিয়ে এ ঝড়ের পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসতে সোমবার ভোর হয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা।এর আগে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান রোববার রাত ৯টা সংবাদ সম্মেলন করে ‘ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির’ খবর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ঝড়ের মধ্যে মানুষ বিপদের মধ্যে রয়েছেন।বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল রোববার রাতে উপকূলে আঘাত হানে। রাত আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। এছাড়া ঝড়ের প্রভাবে হওয়া অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে বরগুনার আমতলীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক রাত ১২টার দিকে গণমাধ্যমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি এখনও উপকূল অতিক্রম করছে। অতিক্রমের এই সময়ে উপকূলজুড়ে ঝোড়ো হাওয়া ও অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের বিস্তৃতির কারণে সোমবার উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হতে পারে। কোনো কোনো জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।ঘূর্ণিঝড়ের আগে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বাড়ি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে পড়ে গিয়ে শওকাত মোড়ল (৬৫) নামের এক ব্যক্তি মারা যান। উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তিনি শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের প্রয়াত নরীম মোড়লের ছেলে।অন্যদিকে রিমালের প্রভাবে উচ্চ জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে শরীফুল ইসলাম (২৪) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।এদিকে, মোংলা ও পায়রা বন্দরকে ১০ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় আছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় আছে। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরগুলোকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

খুলনার কাছাকাছি ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’, দুর্বল হতে লাগবে ৩ ঘণ্টা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল' উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম করে বর্তমানে কয়রা, খুলনার কাছাকাছি অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ বৃষ্টি ঝরিয়ে পরবর্তী ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে কিছুটা দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ১৮ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। এ ছাড়া কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। অন্যদিকে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমাল: রাজধানীতেও বইছে দমকা হাওয়া, ঝরছে বৃষ্টি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দমকা বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। সোমবার ভোর থেকে এ অবস্থা শুরু হয়। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় স্থান থেকে ঝোড়ো বাতাস ও বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে রোববার বিকেল ও সন্ধ্যা থেকে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ভোলা, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল রোববার রাতে উপকূলে আঘাত হানে। রাত ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়।

ঘূর্ণিঝড় রিমাল : জলোচ্ছ্বাসে ডুবেছে উপকূল

দিনভর গুমোট আবহাওয়া। মাঝেমধ্যে ঝোড়ো হাওয়া। থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই বদলে যায় সবকিছু। ফুঁসতে থাকে নদনদী। শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি। জলোচ্ছ্বাসে ডুবতে থাকে উপকূল। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের অগ্রভাগ গতকাল রোববার দুপুর থেকে উপকূল স্পর্শ করতে শুরু করে। পরে রাত পৌনে ৯টার দিকে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বাগেরহাটের মোংলার কাছ দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র আঘাত হানতে শুরু করে। এ সময় গ্রামের পর গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যায়। জোয়ারের অথৈ পানিতে ডুবেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। আগাম প্রস্তুতির কারণে প্রাণহানি কম হলেও জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে গবাদি পশু, মাছের ঘের ও ফসলি ক্ষেত। বাড়িঘর ও জনপদ ভাসছে নোনাপানিতে। ঝড়ের সময় উপড়ে গেছে গাছপালা। বিচ্ছিন্ন হয়েছে লাখো গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ। বিঘ্নিত হয়েছে মোবাইল ফোন-ইন্টারনেট সেবা। বিভিন্ন এলাকায় সড়কে গাছ পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পটুয়াখালীতে একজন পানিতে ডুবে মারা গেছেন। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে মারা গেছেন এক বৃদ্ধ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপপরিচালক শামীম আহসান বলেন, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৯০ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল। ঘূর্ণিঝড়টির আকার প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। এর অগ্রভাগ গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে খুলনা উপকূলের কাছে সুন্দরবনের দিকে প্রবেশ করে। এর প্রভাবে উপকূলে ব্যাপক বৃষ্টি হয়। কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ‌ বলেন, রোববার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের পর থেকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা এবং বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটের ওপর দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ শুরু করে। ঘূর্ণিঝড়ের ৭০ ভাগ বাংলাদেশ এবং ৩০ ভাগ পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে গেছে। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, মোংলা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল দিয়ে সাতক্ষীরা ও পশ্চিমবঙ্গের সাগর আইল্যান্ডের মাঝখান দিয়ে ঢুকেছে ঘূর্ণিঝড়ের মূল কেন্দ্রটি। মূল কেন্দ্রের ব্যাসার্ধ অনেক বড় থাকায় এটির প্রভাব আশপাশের এলাকাগুলোতেও পড়তে শুরু করেছে। আঘাতের সময় সাগরে ভাটা থাকায় তেমন বড় কোনো জলোচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। ঝড়ের শেষ ভাগটি উপকূল অতিক্রম করার সময় সাগরে জোয়ার থাকার কারণে উপকূলীয় জেলাগুলোতে জলোচ্ছ্বাস বাড়বে।গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রিমালে পরিণত হয়। গতকাল সকালে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর পাশাপাশি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়। উপকূল পানির নিচেঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল বিকেল থেকে উপকূলের নদী, খালে পানি বাড়তে শুরু করে। রাত ১১টা পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। কিছু নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে সাত ফুট বেশি পানি বাড়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিতে উপকূলীয় অঞ্চলের নদনদী উত্তাল হয়ে ওঠে। রিমালের সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা গেছে বাগেরহাটের মোংলা ও সুন্দরবন এলাকায়। এবারও ঘূর্ণিঝড়ের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে সুন্দরবন। রিমালের সঙ্গে টানা কয়েক ঘণ্টার যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লাখো গাছ। অতি জোয়ারে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে; এতে বন্যপ্রাণীর প্রাণহানির শঙ্কা করছে বন বিভাগ। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপের পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। বাগেরহাটের প্রধান প্রধান নদনদী বিপৎসীমার ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়েছে বলে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল-বিরুণী জানান। তিনি বলেন, নদনদীর পানি দুই থেকে পাঁচ ফুট বেড়েছে। এদিকে সুন্দরবনের মিষ্টি পানির আধার শতাধিক পুকুর তলিয়ে গেছে নোনাপানিতে। ফলে প্রাণিকুল ও বনকর্মীর বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট তৈরি হতে পারে।সুন্দরবনের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল তলিয়ে যাওয়ায় প্রাণিকুলের প্রাণহানির শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। দুর্যোগ চলে যাওয়ার পর প্রাণিকুলসহ অন্য ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ওসি আজাদ কবির বলেন, দুপুরের পর থেকে দমকা বাতাসের সঙ্গে পানিও বাড়তে শুরু করে। এ কারণে প্রজনন কেন্দ্রে থাকা বন্যপ্রাণী ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দুবলারচর জেলেপল্লি টহল ফাঁড়ির ইনচার্জ ফরেস্ট রেঞ্জার মো. খলিলুর রহমান জানান, বাতাস ও জোয়ারের তোড়ে দুবলা অফিসের জেটি উড়ে গেছে। কয়েকটি ট্রলার স্রোতে ভেসে গেছে। পুকুরের মধ্যে জোয়ারের লবণপানি ঢুকেছে।বরগুনার আমতলীর বালিয়াতলী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। আমতলী ও তালতলীর ২৭ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া পোটকাখালী, বরইতলা, ডালভাঙ্গা, বাওয়ালকার বাইন চটকি, মাঝেরচর এলাকার চরাঞ্চল অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া উচ্চ জোয়ারের কারণে পায়রা ও বিষখালী নদীর ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বরগুনা সদর উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী এলাকার বাসিন্দা সাথী সুমাইয়া বলেন, জোয়ারের পানিতে আমাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। আজ থেকে আমাদের ঘরে কোনো রান্না হবে না। আমরা যারা বড়রা রয়েছি, তারা না খেয়ে থাকতে পারেন, কিন্তু আমার দুটো ছেলেমেয়ে আছে, ওদের নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় আছি। পাশাপাশি ভয়ও আছে। কারণ, আমাদের ঘরের চারপাশে প্রায় ২ থেকে ৩ ফুট পানি রয়েছে। এ পানিতে আমার ছেলেমেয়ে ডুবে যেতে পারে। ভোলার দক্ষিণে চরফ্যাশনের কুকরীমুকরী, ঢালচর, মুজিবনগর ইউনিয়নসহ ৭৪টি চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ জোয়ার ও ঘূর্ণিঝড়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চরফ্যাশনের কুকরীমুকরী ইউনিয়নের চর পাতিলার বাসিন্দা মোহাম্মদ আল-আমিন মাতব্বর বলেন, ঝড়, বাতাস ও জলোচ্ছ্বাসে চর পাতিলার সব ঘরে পানি ওঠে। এতে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও মসজিদ ডুবে যায়। কুকরীমুকরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, চর পাতিলার চারদিকে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে এলাকার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ প্লাবিত হয়। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে চরে বুকসমান পানি উঠেছে, এতে চরের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ বন্দি হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম নগরের উপকূলীয় এলাকা পতেঙ্গার আকমল আলী সড়কের জেলেপাড়াটি বরাবরের মতো ডুবেছে জোয়ারের পানিতে। এখানকার প্রায় ৩০০ ঘরে জোয়ারের পানি ঢুকে। জেলেপাড়ার সরদার হরিদাস বলেন, জোয়ারের পানি ঢুকে সব তলিয়ে যায়। জাল এবং জিনিসপত্র আগেই সরিয়ে নেওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে ঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কক্সবাজারে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে সদর উপজেলার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরাটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর নুনিয়াছটাসহ অন্তত ২১টি গ্রাম। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর ২০ গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমোন্তাজ নয়ার চর এলাকায় গ্রাম রক্ষা বাঁধ অতিক্রম করে গ্রামে পানি ঢুকেছে। এতে ববাজার, নয়ারচর, দক্ষিণ চরমোন্তাজ, উত্তর চরমোন্তাজ, মোল্লাগ্রাম ও চর আণ্ডাসহ ২০ গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পিরোজপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় পানির উচ্চতা দুই থেকে আড়াই ফুট পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তুলনামূলক নিচু এলাকার ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ১৩টি বসতবাড়ি। রোববার বিকেলে স্বাভাবিকের তুলনায় পানির উচ্চতা বাড়লে উপজেলার কলবাড়ী জেলেপাড়া তলিয়ে যায়। নোয়াখালীর হাতিয়ায় টানা বর্ষণ ও জোয়ারে পানিতে নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। হাতিয়ার চারপাশে নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১০ ফুট পানি বেড়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৯ ওয়ার্ডের ৫০ হাজার মানুষ। কক্সবাজারের মহেশখালীর চারটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলার চারদিকে মেঘনা ও তার শাখা নদী। হিজলার সংবাদকর্মী দেলোয়ার হোসেন জানানা, চরাঞ্চল ২-৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বাগেরহাটের মোংলায় যাত্রীবাহী একটি ট্রলার ডুবে গেছে। রোববার সকালে মোংলা নদীর ঘাটে অতিরিক্ত যাত্রী তোলার কারণে ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারটিতে ৫০ থেকে ৬০ জন যাত্রী ছিলেন। তবে স্থানীয় ট্রলার মাঝি ও অন্যান্য যাত্রীরা নদীতে পড়ে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন। পটুয়াখালীর গলাচিপার চর কারফারমা, চর বাংলা, চর নজির, চর মহিউদ্দিন, চর মায়া, চর ওহাবসহ, পৌরসভার নতুন বাজার, আড়তপট্টি, তালেবনগর ও কলাবাগানে ৪ থেকে ৫ ফুট পানি বেড়েছে। এতে ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে উপকূলীয় রক্ষা বাঁধে দেখা দিয়েছে ভাঙন। উত্তাল কচা নদীর সাঈদখালী এলাকার সাঈদখালী বাজারের পূর্ব পাশের বেড়িবাঁধে এ ভাঙন দেখা দেয়। ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে দুই থেকে আড়াই ফুট উঁচু দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৈদ্যুতিক খুঁটিতে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপের চারপাশে সাগরের পানির উচ্চতা আগের চেয়ে ৪-৫ ফুট বেড়েছে। বাঁধ না থাকায় দ্বীপ দুটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের সোরা এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ রক্ষায় নির্মিত রিং বাঁধটি ভেঙে গেছে। দু’জনের মৃত্যুপটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় গতকাল দুপুরে উচ্চ জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে মো. শরীফুল ইসলাম (২৪) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আশ্রয়কেন্দ্রের সিঁড়িতে ওঠার সময় পড়ে মারা গেছেন শওকত আলী মোড়ল (৭২) নামের এক বৃদ্ধ। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ১০০ নম্বর নাপিতখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাইক্লোন শেল্টারে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিমানবন্দর বন্ধ, বাতিল ৩৫ ফ্লাইটচট্টগ্রামের শাহ আমানত, কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের গতকালের ৩৫টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়। কর্মকর্তারা জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ৬টা থেকে আগামীকাল সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বিমানবন্দর থেকে এসব ফ্লাইট গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। বন্ধ রয়েছে ফেরি-লঞ্চসহ সব রকম নৌযান চলাচল। উপকূলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করায় বন্ধ আছে শ্রেণি কার্যক্রম। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ভারতে ৩৪০টি অভ্যন্তরীণ এবং ৫৪টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করেছে দেশটির বিমান সংস্থা। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মুহিবুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ে এখনও ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যাযনি। তবে উপকূলের অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আগে থেকে প্রস্তুতি ছিল বলেই মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৮ লাখ মানুষ উঠেছেন। সেখানে খাদ্য, চিকিৎসাসহ সব ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু ঝড় মোকাবিলা নয়, ঝড়ের পর দুর্গত মানুষের সহায়তায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রস্তুত আছেন।

ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোংলা থেকে ১১৫ কিলোমিটার দূরে, জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোংলা সমুদ্বরন্দর থেকে ১১৫ কিলোমিটার দূরে আছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। রোববার (২৬ মে) রাত ৯টায় আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আব্দুল কালাম মল্লিকের দেওয়া আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি-১৫ -এ এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (২১.৫ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.২ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি রোববার (২৬ মে) রাত ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৫ কি.মি. দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৫ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থান করছিল। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর দিকে ধীর গতিতে অগ্রসর হয়ে মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ- খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম অব্যাহত রেখেছে। ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে পরবর্তী ৫ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কি.মি। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা/ঝড়ো হাওয়া সহ ভারী (৪৪-৮৮ মিমি / ২৪ ঘন্টা) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিমি / ২৪ ঘন্টা) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমাল: বাগেরহাটে ৫ লক্ষাধিক গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন

বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে তীব্র ঝোড়ো হওয়া শুরু হয়েছে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে। জেলার উপকূলীয় উপজেলা মোংলা, শরণখোলা, মোড়লগঞ্জে বাতাসের চাপ সবচেয়ে বেশি। রোববার (২৬ মে) বিকেল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি ও বাতাস হলেও রাত বাড়তে থাকায় তীব্র ঝড় হওয়ার কারণে আতঙ্ক আরও বেড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রোববার সকাল থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন জেলার অধিকাংশ এলাকা। জেলা জুড়ে প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। এর মধ্যে মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, মংলা ও রামপাল উপজেলার প্রায় অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না সারাদিন। অন্যান্য এলাকাতেও বিদ্যুৎ ছিল আশা যাওয়ার মধ্যে। তবে জেলা সদরের পৌর শহরে রাত সাড়ে ১০টায়ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছে। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ সন্ধ্যা থেকে পুরোপুরি সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। ঝোড়ো হাওয়ায় বিদ্যুতের লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। সমিতির মহাব্যবস্থাপক সুশান্ত রায় বলেন, বাগেরহাট জেলায় চার লাখ ৮৫ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। রিমালের প্রভাবে দমকা ঝোড়ো হাওয়ায় পল্লী বিদ্যুতের মূল সঞ্চালন লাইনের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিড়ে পড়েছে। এতে কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুর্যোগ শেষ হলে লাইনে মেরামত করে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করা হবে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ২ জন নিহত : ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে এখন পর্যন্ত দুইজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। রোববার (২৬ মে) রাত সাড়ে ৯টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের অগ্রভাগ অতিক্রম করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটি আগামী ১ থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করবে। কেন্দ্রটি অতিক্রম করার পর ঘূর্ণিঝড়ের শেষ ভাগটি ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা পর বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সব উপকূল এলাকায় বর্তমানে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। উপকূলীয় এলাকাগুলো ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ভেতরে ঢুকেছে। এই মুহূর্তে উপকূলীয় এলাকার মানুষজন বিপদের মধ্যে আছেন। লাখ লাখ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষজন যেন সঠিকভাবে খাবার পায় সে বিষয়গুলো আমরা মনিটরিং করছি। মহিববুর রহমান বলেন, জোয়ার ভাটার সম্ভাবনা আছে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। আমাদের আতঙ্ক কাটেনি, সামনে আতঙ্ক বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করার পরও সারা দেশে প্রবল বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এটাও একটি দুর্যোগের মধ্যে পড়ে। এর ফলে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। এসব দুর্যোগকে লক্ষ্য করে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডসহ আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করছি।‌ দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে মানুষের প্রয়োজনে ইতোমধ্যে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ৯ হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে কী পরিমাণ মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে– জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বলেছি দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। সন্ধ্যার ভেতরে সব মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। আমি এটা বলতে চাই, ৯ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র উপকূলীয় মানুষজনের জন্য পর্যাপ্ত। এছাড়া আরও একদিন আগে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে আমাদের যেসব কাজ করা প্রয়োজন সেগুলো আমরা ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যেন সেবা পায় সেজন্য সব মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করছে। পায়রা বন্দরে নৌবাহিনীর রেসকিউ যানগুলো তৈরি হয়ে আছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এখন পর্যন্ত কোনো নিহতের খবর আছে কি না– জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা জেনেছি এখন পর্যন্ত দুইজন মারা গেছে। এর মধ্যে একজন মারা গেছে আমার এলাকায় (পটুয়াখালী)।

বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব শুরু

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব শুরু হয়েছে বরগুনায়। সকাল থেকে থেমে থেমে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তবে প্রশাসনের তৎপরতায় উপকূলের অধিকাংশ বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় বরগুনায় ৬৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্র ও তিনটি মুজিব কেল্লায় প্রায় চার লাখ মানুষ নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারবে। এর মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় ২০২টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়াদের পর্যাপ্ত শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে নিয়োজিত রয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের সেচ্ছাসেবীরা। ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রভাবে বরগুনার বিভিন্ন নদীতে রাতে জোয়ারের পানি বাড়তে শুরু করেছে। তবে দিনের থেকেও রাতে পানির তীব্রতা অনেক বেশি। এতে উপকূলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মো. খাইরুল বলেন, দিনের তুলনায় রাতে জোয়ারের পানি বেশি বৃদ্ধি পাবে। এতে প্রায় ৫০ সেন্টিমিটারেরও বেশি পরিমাণ পানি স্বাভাবিকের তুলনায় নদীতে বিপদসীমার উপর থেকে প্রবাহিত হতে পারে। বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামীম মিঞা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকেই বরগুনায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জানিয়ে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করা হয়েছে। এ ছাড়া দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যেই আমরা অধিকাংশ মানুষকেই আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এসেছি।

ঘূর্ণিঝড় রিমাল : চট্টগ্রামে ফ্লাইট বাতিল , হজযাত্রীদের  বাসে পাঠানো হলো ঢাকায়

ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে বৈরী আবহাওয়ায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের ফ্লাইট ওঠা-নামা বন্ধ রয়েছে। বাতিল হয়েছে বিমানের বাংলাদেশের ফ্লাইট বিজি-১৩৫। এটি চট্টগ্রাম থেকে সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় সৌদি আরবের জেদ্দা বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। ওই ফ্লাইটে মোট ৩১৭ হজযাত্রীর চট্টগ্রাম থেকে রওনা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব না হওয়ায় বাসযোগে তাদের পাঠানো হয়েছে ঢাকায়। হজযাত্রীরা পৌঁছানোর পর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাবে বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইটটি। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার ব্যবস্থাপক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, বিমান বাংলাদেশের বাতিল হওয়া ফ্লাইটে মোট ৩২০ জন যাত্রী চট্টগ্রাম থেকে যাওয়ার কথা ছিল। তাদের মধ্যে ৩১৭ জনই ছিলেন হজযাত্রী। সবাইকে বাসযোগে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তারা ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছে রিপোর্ট করার পর ফ্লাইট ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে হবে বলেছে। এ পরিস্থিতিতে রোববার (২৬ মে) বেলা ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে সেটির সময় সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। অন্যদিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল ’-এর কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে এটি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এর আগে বিকেল থেকেই রেমালের অগ্রভাগ উপকূল তীরবর্তী অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে শুরু করে।

উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাত শুরু হয়েছে। রোববার সন্ধ্যার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে আঘাত শুরু করে। পরে রাতআটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণপশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এর প্রভাবে উপকূলে ভারী বর্ষণের পাশাপাশি তীব্র বাতাস বইছে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান রাত সাড়ে আটটার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলের প্রতিটি জেলায় ঝোড়ো হাওয়াসহ ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. শামীম আহসান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির আকার প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। এর অগ্রভাগ আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকেই খুলনা উপকূলের কাছে সুন্দরবনের দিকে প্রবেশ করে। এর প্রভাবে উপকূলে ব্যাপক বৃষ্টি হয়।আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র আরও উত্তর দিকে এগিয়ে আগামী পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়া আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠী, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুন্দ্রবন্দরকে নয় নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর নয় নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।

ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে ঝড়, নদীতে জোয়ারের তীব্র চাপ

ঘুর্ণিঝড় রিমাল-এর প্রভাবে উপকূলবর্তী শ্যামনগরসহ আশপাশের এলাকায় বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টির পাশাপাশি দমকা বাতাস বইতে থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হচ্ছে। রোববার দুপুর পর্যন্ত স্থানীয়রা সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় না নিলেও মূল্যবান ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে।এদিকে দুপুরের আগে থেকে সুন্দরবন উপকূলবর্তী নদীসমূহে জোয়ারের চাপ তীব্রতর হয়েছে। এর আগে থেকে দমকা বাতাস থাকায় কপোতাক্ষ ও খোলপেুটয়া নদীর ঢেউ গাবুরার নেবুবুনিয়া ও লক্ষীখালীসহ বুড়িগোয়ালীনির দুর্গাবাটি এলাকার উপকূল রক্ষা বাঁধে আছড়ে পড়তে শুরু করেছে বলে জানান স্থানীয়রা।দুর্গবাটি গ্রামের বাসিন্দা মলিনা রপ্তান জানান, গ্রামের ৫০ জনের বেশি মানুষ বাঁধ রক্ষার কাজ শুরু করেছে। ঢেউ ও স্রোতের তীব্রতা থেকে উপকূল রক্ষা বাঁধের ক্ষতি এড়াতে এলাকার মানুষ বাঁধের বাইরের অংশে জিও শিট (জিও ব্যাগের কাপড়) লাগানো হচ্ছে।পোড়াকাটলা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য নীলকান্ত রপ্তান বলেন, ওয়াপদার লোকজন বালু ভর্তি বস্তা ফেলে গেছে। কিন্তু বালু যেন বস্তা থেকে বের হয়ে না যায় সে ব্যবস্থা নেয়নি। বাধ্য হয়ে ঢেউয়ের আঘাত থেকে বস্তার বালু রক্ষায় এলাকাবাসীকে আলাদাভাবে কাজ শুরু করতে হয়েছে।এদিকে গাবুরার নেবুবুনিয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার জানান, তাদের বাড়ি থেকে সাইক্লোন শেল্টার ২-৩ কিলোমিটার দূরে। গাবুরা গাইনবাড়ীর সাইক্লোন শেল্টারের ধারণক্ষমতা কম। বাধ্য হয়ে অধিকাংশ এলাকাবাসী নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন।স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিপিপির সদস্য আব্দুস সামাদ জানান, মানুষজন বাড়িঘর ছেড়ে সাইক্লোন শেল্টারে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তবুও স্থানীয়দের বুঝিয়ে স্বল্প সংখ্যক মানুষকে সাইক্লোন শেল্টারে নেওয়া হয়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইমরান সরদার বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাঁধ রক্ষায় তারা মাটি ফেলাসহ জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শেষ করেছেন। স্বাভাবিকের তুলনায় ৭-৮ ফুট পর্যন্ত জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলেও ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।শ্যামনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিবুল আলম বলেন, শনিবার রাত থেকেই মাইকিং করে স্থানীয়দের নিরাপদে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

রেমালের প্রভাব: জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে সুন্দরবন

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে পুরো সুন্দরবন। এদিকে, সুন্দরবন উপকূলসহ মোংলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত বহাল রয়েছে। এরই মধ্যে বৃষ্টিসহ দমকা বাতাস বইতে শুরু করেছে।রোববার (২৬ মে) দুপুরে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্র ও পর্যটন স্পটের ওসি আজাদ কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে চার ফুট পানি বেড়ে সুন্দরবন তলিয়ে গেছে। পানির চাপ আরও বাড়বে। তবে বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতির কোনও আশঙ্কা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পুরো সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বন বিভাগের ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাম্পগুলোতে থাকা বনরক্ষীদের এরই মধ্যে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।মোংলা পৌর মেয়র শেখ আব্দুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে এরই মধ্যে মোংলা নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ঝুঁকি এড়াতে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে জরুরি কাজ ও রোগীদের কথা চিন্তা করে মোংলা নদীতে ফেরি চালু রাখা হয়েছে। পৌর শহরের আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজনকে আনতে ব্যাপক তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।মোংলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ হারুন অর রশিদ জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। এটি রোববার সন্ধ্যা নাগাদ সুন্দরবন ও মোংলা উপকূল অতিক্রম করে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় আছড়ে পড়বে।এদিকে, রোববার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা হয়। সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান জানিয়েছেন, দুর্যোগ মোকাবিলা এবং দুর্গত মানুষের পাশে থাকার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সকল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৮ লাখের বেশি মানুষ ইতোমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন। বাকিদের আসার জন্য আহবান জানানো হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে আপাতত স্কুল খোলা থাকবে তবে ক্লাস বন্ধ থাকবে। এছাড়া আজ সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু টানেলও বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন প্রতিমন্ত্রী।এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আজ রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যা/মধ্যরাত নাগাদ মোংলার কাছ দিয়ে সাগর আইল্যান্ড (পশ্চিমবঙ্গ) খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে দমকা হাওয়াসহ প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল, পায়রা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে

বাংলাদেশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল। ঘূর্ণিঝড়টি এখন পায়রা বন্দর থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে আছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।রোববার (২৬ মে) দুপুরে আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুকের দেওয়া আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি-১২ -এ এসব তথ্য জানানো হয়।এতে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (২০.৫ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.৩০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি রোববার (২৬ মে) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২২০ কি.মি. দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২০০ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থান করছিল। বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে বৃষ্টিসহ দমকা/ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে মোংলার নিকট দিয়ে সাগর আইল্যান্ড (পশ্চিবঙ্গ) খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র অতিক্রমের পর এর নিম্নভাগ অতিক্রম করতে পারে।আরও বলা হয়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ০৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থকের আধ্যিকের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতর বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। অতিভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমাল: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল

ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং অধীন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান।রোববার (২৬ মে) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ঘূর্ণিঝড় বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।প্রতিমন্ত্রী বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়ার পর থেকেই আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি। গতকাল আমরা দুটি মিটিং করেছি।আমরা বলেছিলাম আজ ভোর থেকে আবহাওয়া দুযোগাগপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু ঝড়ের গতিটা একটু কম ছিল বলে আজ ভোরে আসেনি।গতকাল গতি ছিল ১৬-১৭ কিলোমিটার। কিন্তু রাতে গতি কমে ১০ এর নিচে আসে এবং পরে ৬ কিলোমিটারে আসে।যার জন্য এটা সময় মতো পৌঁছায়নি। তিনি আরও বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, যেহেতু মহাবিপৎসংকেতে পরিণত হয়েছে, এটা আজ সন্ধ্যা নাগাদ প্রথম ভাগ বাংলাদেশে অতিক্রম শুরু হবে এবং মধ্য রাতে মূল ঝড় বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। যেখানে ঝড় সৃষ্টি হয়েছে সেখানে বাতাসের গতিবেগ ৯০-১২০ কিলোমিটার। এটা যখন উপকূলে আসবে তখন এটার গতিবেগ ১১০-১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত হবে। ঝড়ের কারণে উপকূলে ১০-১২ ফুট পর্যন্ত প্লাবিত হবে। জোয়ার থাকলে এটা আরও বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকাটাই কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এজন্য আমরা সবাইকে নিয়ে সভা করেছি। আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, ঝড়ের আরেকটা দিক হলো এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। এটা যখন শুরু হবে তখন থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। যার জন্য আমরা মনে করি সমস্ত বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য আমাদের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে ব্যাপকভাবে ল্যান্ড স্লাইড হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমাদের শহর, গ্রাম, সিটি করপোরেশন, পৌরসভাগুলোতে জলাবদ্ধতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাফিক জটের সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এজন্য আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে সমস্ত মন্ত্রণালয়ের সব কর্মচারীদের ঝড় শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছুটি বাতিল করা হয়েছে। লঞ্চ-স্টিমার চলাচল বন্ধ থাকবে। ছুটি কী শুধু এ মন্ত্রণালয়ের বাতিল না সবার- প্রশ্নে তিনি বলেন, সব মন্ত্রণালয়ের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও সব মন্ত্রণালয়ের সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল আজ সন্ধ্যা থেকে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, অভিজ্ঞতার আলোকে মোকাবিলার জন্য সার্বিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার কাজ চলছে। আশা করি, সবাইকে নিয়ে আসতে পারবো। পরে রেসকিউ করার জন্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। সেনাবাহিনী দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী প্রস্তুত হয়েছে। আমরা সক্ষমতা অনুযায়ী মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আছি। আমরা কাল বিলম্ব না করে এখনই সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। সেখানে ৮-৯ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করে রেখেছি। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, বিস্কুট এবং পানিসহ চিকিৎসা সামগ্রী সেখানে পৌঁছে গেছে। এছাড়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে তৈরি রেখেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যারা জড়িত তারা যেন কাছাকাছি থেকে। আশ্রয়ের যেন সমস্যা না হয়। আমাদের কাছে যে তথ্য, এ পর্যন্ত প্রায় আট লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। মহাবিপৎসংকেত যেহেতু ঘোষণা করা হয়েছে সে কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছি দ্রুত আনার জন্য।

মোংলায় যাত্রীবাহী ট্রলারডুবি, নিখোঁজ অনেকেই

বাগেরহাটের মোংলায় যাত্রীবাহী একটি ট্রলার ডুবে গেছে। তাদের মধ্যে কিছু যাত্রী উঠে গেলেও অনেকে নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে। তারা সবাই মোংলার ইপিজেডসহ বিভিন্ন কলকারখানায় চাকরি করেন।তবে নদীর পাড়ের কাছে ডুবে যাওয়ায় কিছু যাত্রী উঠে গেলেও অনেকের নিখোঁজের আশংকা করা হচ্ছে। তাদের উদ্ধারে নৌপুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডের ডুবুরি দল নদীতে তল্লাশি চালাচ্ছেন।আজ রবিবার (২৬) সকাল পৌনে ৯টার দিকে মোংলা ইপিজেড ছুটি শেষে মোংলা বাসস্ট্যান্ড ঘাট থেকে মোংলার মামার ঘাটে আসার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ডুবে যাওয়া ট্রলারে ধারণ ক্ষমতার থেকে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।বিষয়টি নিশ্চিত করে মোংলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী তোলার কারণে ট্রলারটি ডুবে গেছে। ট্রলার দুর্ঘটনার পরপরই খোঁজ-খবর রাখছি, কোনও যাত্রী নিখোঁজ আছে কিনা, সে বিষয়ে পৌরসভার সিসি ক্যামেরায় দেখা হচ্ছে।তিনি আরও বলেন, যাত্রী নিখোঁজ আছে কিনা, সে বিষয়ে পৌরসভার সিসি ক্যামেরায় দেখা হচ্ছে এবং নৌপুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডের ডুবুরি দল নদীতে তল্লাশি চালাচ্ছে।