পরিকল্পিত বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ: এ জাতিকে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল তারা
এনএম ফখরুদ্দীন: বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করার জন্য এ দেশের শিক্ষক সমাজ, কবি, সাহিত্যিক, গবেষক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী,চিকিৎসক, স্থপতি,ভাষ্কর, সমাজসেবী, নাট্যকার, চলচ্চিত্রকার, সংস্কৃতিসেবী, সংগীতশিল্পী, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, চিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী প্রমুখ বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল অনন্য। মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের অবদান অসামান্য। পাকিস্তানি পাক হানাদার বাহিনী যখন বুঝতে পেরেছিল, তাদের পক্ষে যুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব নয়, তখন তারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে নবগঠিত দেশকে সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে দূর্বল ও পঙ্গু করার নীলনকশা এঁকেছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। ১৯৭১ সালের ১০-১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই অল্প সময়ে তারা বাছাই করে করে হত্যা করেছিল এ দেশের প্রথম শ্রেণির বহু বুদ্ধিজীবীকে। এ হত্যাযজ্ঞ বড়ই মর্মান্তিক! একটি জাতিকে জ্ঞানহীন ও মেধাশূন্য করতে তারা শেষ চেষ্টাটা করেছিল এমন নোংরা হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে। তাদের এই নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রেক্ষাপট ও কারণ কি ছিল আসুন দেখি। ব্রিটিশ আমলে পরাধীনতার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের প্রতিটি সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন এ দেশের বুদ্ধিজীবীরা। ভাষা আন্দোলন, স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন এবং ৬৯’-এর গণ-অভ্যুত্থানে তারা ছিলেন অনুপ্রেরণাদানকারী। কেউ কেউ সামনের কাতারে। বাঙালি জাতির ওপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ, অত্যাচারের বিষয় সাধারণ মানুষকে অবগত করেছিলেন তারা। বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যাচ্ছে- এ কথা সবাই জানত। কিন্তু, অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন সারণীর মাধ্যমে যে সত্যটাকে জনগণের সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরেছিল। তারাই সর্বপ্রথম পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে দুইটি স্বতন্ত্র অর্থনীতি চালুর কথা বলেছিলেন। বাঙালি সাংবাদিকরা তুলে ধরেছেন আন্দোলনের প্রতিটি খবর শিল্পী-সাহিত্যিকরা গল্প-উপন্যাস, নাটক, গানসহ লেখনীর মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক মৌলিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের প্রতি সচেতন করে তুলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা কখনো স্বতন্ত্র, কখনো একই সঙ্গে করেছেন আন্দোলন। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন বুদ্ধিজীবীরা। বিভিন্ন তথ্য ও গবেষকদের লেখা থেকে জানা যায়; ভারতে আশ্রয় নেওয়া বুদ্ধিজীবীরা গড়ে তোলেন ‘বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি’ যার সভাপতি ছিলেন ড. আজিজুর রহমান মল্লিক। তিনি পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য হয়েছিলেন। এ ছাড়া, তাকে সভাপতি ও জহির রায়হানকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় বুদ্ধিজীবী সংগ্রাম পরিষদ। বুদ্ধিজীবীদের সংগঠন মুজিবনগর সরকারের অধীনে পরিকল্পনা সেল গঠন করেন। বিশ্বের বুদ্ধিজীবীদের কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সরবরাহ ও বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদীয় পার্টির সঙ্গে সাক্ষাৎ সাহায্যের আবেদন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বক্তব্য প্রদান, শরণার্থীদের উৎসাহ প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে তারা ভূমিকা রাখেন। শরণার্থীশিবির শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে ৫৬টি স্কুল খুলে শরণার্থীদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করে। বাঙালি বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, যা বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামীদের প্রেরণার উৎস ছিল। এভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখেন। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বুঝতে পেরেছিল, তাদের পরাজয় অনিবার্য। তারা আরও মনে করেছিল যে, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা বেঁচে থাকলে এ মাটিতে বসবাস করতে পারবে না। তাই, পরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাহীন ও পঙ্গু করতে দেশের বুদ্ধিজীবীদের বাসা ও কর্মস্থল থেকে রাতের অন্ধকারে পৈশাচিক কায়দায় চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে হত্যা করে। অনেকে ভাগ্যবশত মৃত্যু এড়াতে পেরেছিলেন। পরে বিক্রমের সঙ্গে যুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন কিংবা মুজিবনগর সরকারের পক্ষে বিদেশে জনমত গঠনে কাজ করেছেন। দিল্লি ও কলকাতার লেখক বুদ্ধিজীবীরাও সে সময় বাংলাদেশের পক্ষে কলম ধরেছেন। জনমত গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। শাবানা আজমির বাবা বিখ্যাত উর্দু কবি কাইফি আজমি নিজের টাকা খরচ করে লঙ্গরখানা খুলেছিলেন। তাদের সেই ভূমিকার কথা বিস্মৃত হওয়ার নয়।১৯৭২ সালে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সংকলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক’-এর সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা এক হাজার ৭০। তবে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চার ধাপে প্রকাশিত তথ্য মোতাবেক এখন পর্যন্ত শহিদ বুদ্ধিজীবী হিসাবে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেলেন ৫৬০ জন শহিদ বুদ্ধিজীবী। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় যাদের নাম এসেছে, তাদের মধ্যে সাহিত্যিক রয়েছেন ১৮ জন, দার্শনিক একজন, বিজ্ঞানী তিনজন, চিত্রশিল্পী একজন, শিক্ষক ১৯৮ জন, গবেষক একজন, সাংবাদিক ১৮ জন, আইনজীবী ৫১ জন, চিকিৎসক ১১৩ জন, প্রকৌশলী ৪০ জন, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারি ৩৭ জন, রাজনীতিক ২০ জন, সমাজসেবী ২৯ জন, সংস্কৃতিসেবী, চলচ্চিত্র, নাট্যকার প্রমুখ। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যশোর ও মানিকগঞ্জের বুদ্ধিজীবী বেশি। তার মধ্যে যশোরের ৩৭ জন ও মানিকগঞ্জে ৩৬ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী, হত্যার শিকার হওয়া বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে নওগাঁর ২৮ জন ও ২৫ জন সিরাজগঞ্জের। তার পরের অবস্থানেই ঢাকায় শহিদ বুদ্ধিজীবীরা। গবেষকরা বলছেন, ‘ঢাকা, চট্টগ্রামের বাইরে বহু বুদ্ধিজীবী নিজ এলাকাতেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ৩৮৬ জন মুসলমান, ১৬৭ জন হিন্দু, তিনজন বৌদ্ধ ও তিনজন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ছিলেন।’ তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক। এর পরেই পেশার দিক থেকে আছেন চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী, সংস্কৃতিসেবী ও শিল্পীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। চার বারে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাওয়া ৫৬০ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীর তালিকায় আছেন ভারত ও ইতালির নয়জন শহিদ বুদ্ধিজীবী। ৪৬ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীর এলাকার ঠিকানা পাওয়া যায়নি। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬১টি জেলাতেই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের তথ্য পাওয়া যায়। নিহত বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় শীর্ষ কয়েকজনের নাম আলতাফ মাহমুদ শহীদুল্লা কায়সার, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুর, সিরাজুদ্দীন হোসেন, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, আবদুল আলীম চৌধুরী, সেলিনা পারভীন, মেহেরুন্নেসা, নিজামুদ্দীন আহমেদ, চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান, দর্শনশাস্ত্রের গোবিন্দ চন্দ্র দাশ, বাংলা সাহিত্যের মুনীর চৌধুরী, আনোয়ার পাশা ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী; ইতিহাসশাস্ত্রের আবুল খায়ের, শিক্ষা ক্যাডারের সিরাজুল হক খান ও ফাইজুল মাহী প্রমুখ। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অতি পরিচিতমুখ জহির রায়হান ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি নিখোঁজ হয়েছিলেন। নিখোঁজ হওয়ার আগে তিনি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক বুদ্ধিজীবী হত্যা করতে সক্ষম হয়নি। তবে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছুটা ব্যর্থ হলেও তারা বাঙালিকে মেধাশূন্য করার জন্য নির্ভূলভাবে গোপন তালিকা প্রনয়ন করেছিল কিন্তু।’বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দীন আহমেদ ১৪ ডিসেম্বরকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। আর সেই থেকেই ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, তত দিন প্রতিজন বাঙালীর হৃদয়ে এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞের হৃদয়বিদারক কাহিনী স্মরণে অমর থাকবে। লেখক: অধ্যক্ষ, বোয়ালখালী হাজী মো. নুরুল হক ডিগ্রি কলেজ, চট্টগ্রাম।
জুলাই শ্রেণি সংগ্রামে মওলানা ভাসানী
উপমহাদেশের নানা ঘটনা প্রবাহের বাঁক বদলের ইতিহাসে বারবার আলোচনায় এসেছেন যেকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন মানুষ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। মওলানা ভাসানী ছিলেন শ্রেণি বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। আমাদের শ্রেণি সংগ্রামের আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু দুঃখজনক এই যে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে সব থেকে উপেক্ষার শিকার হয়েছেন সেই তিনিই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যাদের অগ্রগণ্য ভূমিকা ছিল, যাঁরা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোদ্ধা তাঁদের প্রত্যেককেই স্বার্থান্বেষী কায়েমি রাজনৈতিক শক্তি ইতিহাস থেকে দূরে সরে রেখেছে বারবার। বিশেষত একাত্তর পরবর্তী জিয়াউর রহমান, মুহাম্মদ এরশাদ, বেগম খালেদা থেকে শেখ হাসিনা পর্যন্ত যে কটি সরকার গঠিত হয়েছে, তাদের সবার হাতেই আমাদের জাতীয় ইতিহাস কুক্ষিগত হয়েছে, কাটছাঁট করা হয়েছে আমাদের জাতীয়তার ভিত্তিপুরুষদের অবদানকে। এর প্রধানভাগজুড়েই ইতিহাসের আড়ালে ফেলে দেওয়া হয়েছিল মওলানা ভাসানীকে। সব শাসকই নিজেদের রাজনৈতিক তত্ত্ব ও বয়ান নির্মাণ করতে গিয়ে ‘থোড় বড়ি খাড়া/খাড়া বড়ি থোড়’ টাইপের রাজনৈতিক দর্শনের বিকাশ ঘটিয়েছে। একাত্তর কেন্দ্রিক তাদের রাজনৈতিক অর্জনের বায়াসটা বহুমুখী না হয়ে একমুখী হয়ে উঠেছিল। যেখানে আমরা সব মানি, কিন্তু ‘তালগাছটা আমারই’ প্রতিপাদ্যের ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর মধ্যে আমাদের ইতিহাস পাঠে প্রজন্মকে মওলানা ভাসানী থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও বিএনপি জেনারেল জিয়াউর রহমানকে অতিরঞ্জিতভাবে মহিমান্বিত করতে গিয়ে আমাদের ইতিহাসের অনেক প্রবাদপ্রতিম মানুষকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। যার ফলে আমরা পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস পাঠ থেকে বঞ্চিত থেকেছি এবং খণ্ডিত ইতিহাস পাঠ করে হয়ে উঠেছি ইতিহাস মূর্খ। আমাদের মূর্খামিতা আমাদেরকে অসহিষ্ণু এবং কায়েমি সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। তারপরও বারবার স্বমহিমায় উজ্জ্বল তারকার মতো ইতিহাসের কাঠগড়ায় হাজির হয়েছেন শ্রেণি সংগ্রামের মহানায়ক মওলানা ভাসানী। ভাসানীর জীবন সংগ্রামের পুরোভাগজুড়েই বাংলার খেটে খাওয়া মানুষেরা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিল। আমাদের তথাকথিত সভ্য সমাজে যারা নিম্ন শ্রেণির মানুষ বলে আখ্যায়িত, বিশেষত কৃষক শ্রমিক ক্ষেতমজুর রিকশা চালক কামার কুমার জেলে তাঁতি মুদি দোকানীসহ নান শ্রেণি পেশার মানুষ তারাই ছিলেন মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক লড়াইয়ের বড় শক্তি। রাজনৈতিক শহুরে কেন্দ্র থেকে দূরে থাকা এসব মানুষের মাঝেই তিনি সময় অতিবাহিত করেছেন এবং খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে রাজনৈতিক চিন্তাবোধের বিকাশ ঘটিয়েছেন ক্রমাগত। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে পুঁজিপতিরা কখনোই মিত্র হয়ে ওঠেনি কিংবা তাঁর সখ্যতাও তাদের সঙ্গে ছিল না। তাঁর সকল সম্পর্কের কেন্দ্রই ছিল এইসব গ্রামীণ হারজিরজিরে নিরন্ন মানুষেরা। তিনি তাদের কাছেই হয়ে উঠেছিলেন একাধারে অবিসংবাদিত রাজনৈতিক নেতা অন্যদিকে বাংলার সহজীয়া ধারার আলেম, পীর। মানুষ তাঁকে নেতা ও পীর জ্ঞান করত এবং তাঁর জীবন যাপনে আকৃষ্ট হয়ে তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের দীক্ষা গ্রহণ করত। এটা ছিল শ্রেণি সংগ্রামে মওলানা ভাসানীর সবচেয়ে বড় অর্জন। মানুষের আস্থা অর্জন এবং তা বহাল রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। এক্ষেত্রে মওলানা ভাসানী আমাদের জন্য রোল মডেল। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ মাত্রই এজন্য পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে ভাসানীতেই তাড়িত। আমরা যদি এই জুলাই আন্দোলনের কথা বলি, তবে ভাসানীর কথা আগে বলতে হয়। এই আন্দোলনে ভাসানীর উত্তরসূরীরাই অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছে এবং এই আন্দোলনকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এই আন্দোলনে সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল একদম সাধারণ ঘরের শিক্ষার্থী, যাদের বংশ বা পরিবার পরম্পরায় কোনো দলীয় রাজনীতি সম্পৃক্ততা নেই, নেই রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ বা উচ্চাকাঙ্ক্ষা। এই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বড় শক্তি ছিল পেটের দায়ে গ্রাম থেকে ছুটে আসা শহুরে রিকশা চালক, পরিবহন শ্রমিক, ফুটপাতের নিরন্ন দোকানি, বাদাম বিক্রেতা, গ্রাম থেকে উঠে আসা সদ্য শহুরে মধ্যবিত্ত এবং কেরানি টাইপ কতিপয় চাকুরে। মোটাদাগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে এরাই ছিল আমাদের সব চেয়ে বড় শক্তি। এই শক্তিকে কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দল মাঠে নামাতে পারেনি, তারা নেমেছে অগোচরে বেড়ে ওঠা তাদের শ্রেণি সংগ্রামের চেতনাগত বিবেক ও বোধের তাড়না থেকে। এসব মানুষের ভেতর পূর্ব পুরুষদের শ্রেণি সংগ্রামের মৌখিক বয়ান তাদের মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে দৈনন্দিন নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়েই। এই শ্রেণি চেতনা মওলানা ভাসানীর চেতনারই ধারাবাহিকতা। মজলুম এই জননেতা মওলানা ভাসানী ব্রিটিশ শাসনের অধীন বাংলা ও আসাম প্রদেশে ১৯২৭-এর দশকে জমিদার-মহারাজা বিরোধী কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে নিজের সংগ্রামী জীবনের যাত্রা শুরু করেছিলেন। এই সংগ্রাম বৃটিশ ও বৃটিশ পূর্ব থেকে- রাজা শিবচন্দ্র রায় ও দেবি চৌধুরাণীদের কৃষক প্রজা বিদ্রোহ, নূরুল দ্বীন ও আদিবাসী কানুদের সংগ্রাম থেকে, ইলা মিত্রদের তেভাগা আন্দোলন থেকে, কমরেড মণি সিংহ ও কুমুদিনী হাজংদের টংক আন্দোলনসহ ছোট বড় নানা রকম আন্দোলন সংগ্রাম থেকে উৎসারিত চেতনা। ধাপে ধাপে তা আমাদের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির রক্তে রন্ধ্রে সঞ্চারিত হয়ে আসছে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ এবং আমাদের তথাকথিত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাঁদা ছোড়াছুড়ির সংস্কৃতির মধ্যে থেকেই রাজনৈতিক সংস্কৃতির উপাদানগুলো সাধারণ মানুষ ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিজেদের মাঝে তুলে নিয়েছে। যার ফলে শাসনের নামে যখনই শোসনের খড়গটা তিব্র হয়েছে তখনই জন বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সাধারণ জনতা। এই সংগ্রামী জীবনবৃত্তে আপনাআপনি ভাসানী দর্শন মূর্ত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতার বিস্ফোরণ আমরা জুলাই আগস্টে দেখেছি। মানুষের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যখন প্রতারণা করা হয় তখনই কিন্তু আমাদের অগোচরেই শ্রেণি শোষণের চিত্র সুস্পষ্ট হয় এবং শ্রেণি সংগ্রাম বিপ্লব বা লড়াইয়ে গড়ায়। মওলানা ভাসানী তাঁর এক বক্তৃতায় বলেছিলেন ‘বহু রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা এসেছে। কোন ব্যক্তিবিশেষ, কোন বিশেষ দল দেশ স্বাধীন করেনি। এই দেশের কামার, কুমার, শ্রমিক, চাষি, জেলে, মধ্যবিত্ত, ছাত্র, যুবক বুকের রক্ত দিয়া বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। লক্ষ মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতাকে কোন বিশেষ দল কোন ব্যক্তিবিশেষের সম্পত্তিতে পরিণত করা যাবে না। গণতন্ত্রের নাম নিয়া গণতন্ত্রের টুটি টিপে ধরা চলবে না। অপরাধী যারা তাদের বিচার করে শাস্তি দাও। কিন্তু বাঙ্গালির নামে বিনা বিচারে কাউকে আটক করে রাখা যাবে না। কোন প্রকার জুলুমকে বাংলার মানুষ বরদাস্ত করবে না। তোমরা যদি ক্ষমতার অহংকারে বাংলার মজলুম মানুষের দাবীকে অস্বীকার করতে চাও, তবে মনে রেখো ঝড় আসছে। যে ঝড় আসছে সে ঝড় বিপ্লবের ঝড়। এই দুর্যোগ বিপ্লবের নমুনা, ‘এই দুর্যোগ আল্লাহর রহমত’। মওলানা ভাসানীর এই কথাগুলো আমাদের জাতীয় জীবনে বারবার সত্য হয়ে ফিরে এসেছে। পঁচাত্তর পরবর্তী সময় থেকে আজ অদ্যাবধি এই কথাগুলো চরম সত্য হিসেবেই প্রমাণিত। আমরা নব্বইয়ের এরশাদের বিরুদ্ধে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন দেখেছি, বিএনপির অপশাসনে বিরুদ্ধে আন্দোলন দেখেছি, সর্বশেষ আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সাক্ষ্য হলাম। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এসব ঘটনার মূল কারণ কিন্তু মানুষের অবমূল্যায়ন, অগণতান্ত্রিকতা এবং শ্রেণি শোষণ। যা মওলানা ভাসানী বারবার বলে গিয়েছেন এবং রাজনৈতিক নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। তারপরও তারা এর থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি। ফলে বারবার আমাদের জীবন দিতে হয়েছে, রাজপথে রক্ত ঢালতে হয়েছে। এর মধ্য দিয়েই এখানে মওলানা ভাসানী পুনর্বার ফিরে আসছেন মুক্তির বারতা নিয়ে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেও তিনি ছিলেন আমাদের অদৃশ্য শক্তি ও প্রতিবাদী মানসকাঠামোর কেন্দ্রবিন্দু। যে জন্য আমরা নতুন প্রজন্মের দেয়াল চিত্র ও গ্রাফিতির মধ্য দিয়েই মওলানা ভাসানীকে চিত্রায়িত হতে দেখেছি অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষায়। লেখক: কবি ও সমাজচিন্তক।
চট্টগ্রামের ভাষার গানের সম্রাট শ্যাম সুন্দর বৈঞ্চব স্মরণে
শাহীন চৌধুরী: শ্যাম সুন্দর বৈঞ্চব ছিলেন একজন নান্দনিক কন্ঠ শিল্পী ও গানের সাধক। চট্টগ্রামের ভাষায় রচিত গানকে তিনি একটি আলাদা মাত্রা তৈরি করে দিয়ে গেছেন। গান যে কেবল শোনার নয়, এটিকে মানুষের মনে রাখার মত একটা অবস্থান তিনি তৈরি করেছেন। তার উপস্থাপনা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা ও নান্দনিক। তিনি গান গাওয়ার সময় তার রসটাকে বুঝতেন ও সেভাবে নিজস্ব ঢঙ্গে গাওয়ার চেষ্টা করতেন। যার ফলে, গানের ভাব ও বিষয় মানুষের খুব সহজ হয়ে যেত। তাই, চট্টগ্রামের গান বলতে শ্যাম সুন্দর বৈঞ্চবের নামটায় আগে আসে। তার গায়কী বহু গীতিকারকে গান লেখায় অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ করত। শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণরেব জন্ম ১৯২৭ সালের ১৫ জুন। নন্দীর হাটের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম। বাবা জয়দাশ ছিলেন আধ্যাত্মিক গানের সাধক। মুলত বাবার হাত ধরে তার গানে আসা। ছোটবেলায় নানা কৌতুক মিশ্রণে গান গাওয়া তার স্বভাবজাত অভ্যাস ছিল বিধায় পরবর্তী তাকে গান গাওয়ার ক্ষেত্রে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে। অল্প বয়সে বাবা মারা যাওয়াতে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে জীবিকার তাগিদে তাকে নামতে হয়। ১৯৬৩ সালে বাংলাদেশ বেতারে ‘গুরা বউ বউরে’ এ গানটি গেয়ে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে শেফালী ঘোষের সাথে পরিচয় হওয়ার পর তাদের জুটি কেবল বাংলাদেশে নয়, বিশ্বে জনপ্রিয়তা তৈরি করতে সক্ষম হয়। তারা আঞ্চলিক গানের সম্রাট ও সমাজ্ঞী হিসেবে আজও মানুষের মনিকোটায় বেঁচে আছেন। বাংলাদেশ বেতারে এ জুটির প্রথম গান ‘নাউয়ুর গেলে বাপর বাড়ি, আইস্যু তাড়াতাড়ি’। দুইজনে প্রায় ২৯টি দেশে গান গেয়েছেন। শ্যাম সুন্দর বৈঞ্চব মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘরে বসে থাকেননি, আকাশবাণীতে গান গেয়ে যোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতেন। গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক সত্য সাহা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তিনি নানাজনের গান গেয়েছেন; তাদের মধ্যে এমএন আকতার, আবদুল গফুর হালী, সৈয়দ মহিউদ্দিন অন্যতম। চলচ্চিত্রেও বহু গান গেয়েছেন। সৈয়দ মহিউদ্দিন ছিলেন একেবারে তার পরিবারের একজন সদস্যের মত। যে কারণে অসংখ্য জনপ্রিয় গান তারা সৃষ্টি করেছেন। চট্টগ্রামের প্রকৃত আঞ্চলিক ঢং ও ভাষার ব্যবহার সৈয়দ মহিউদ্দিনের গানে প্রাধান্য পেত। শ্যাম সুন্দর বৈঞ্চব নিজেও বহু গান রচনা ও সুর করেছেন। তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে তোঁয়াত্তে ক্যান লার, আঁরে হত ভাড়াইবা, বিয়ার পর নিয়ুম তোঁয়ারে, আঁর বাইক্কা টেঁয়া দে, আঁর বউরে আঁই কিলাইয়ুম, ও জেডা ফইরার বাপ, চল আঁরা ধাই, বানুরে জ্বি --, দেশে গেলে কইয়েনগো ভাইজান, আঙ্গো বাড়ি নোয়াখালীসহ এ রকম বহু গান।তার পাঁচ ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। জীবদ্দশায় এ গুণী শিল্পী রাষ্ট্রের কোন পদক পাননি। এমনিতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন তাকে পদক দিয়ে সন্মানিত করেছেন। মৃত্যুর আট বছর পর ২০০৮ সালে তিনি রাষ্ট্রেীয় একুশে পদকে পেয়েছিলেন। বেঁচে থাকতে এমন কোন পদককে তিনি তুচ্ছ করে গানকে উচ্চমাত্রায় নেয়ার ক্ষেত্রে সাধনা করে গেছেন। সরল ও সাদামাটা জীবনে গানই তার আত্মার খোরাক ছিল। যত দিন চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থাকবে, তত দিন শ্যাম সুন্দর বৈঞ্চব মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন। দুঃখ হয় আমাদের চট্টগ্রামে একটা টেলিভিশন কেন্দ্র আছে! কিন্তু, বহু জনের ছবি টাঙানো থাকলেও শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণব ও শেফালী ঘোষের ছবি স্থান পায়নি। এ টেলিভিশনের ঢাকা কেন্দ্রিকতা আমাদের ব্যথিত করে।এ গুণী সুর, গানের সম্রাট দীর্ঘ দিন অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু, কারো কাছে সাহায্য নিয়ে বেঁচে থাকার করুণা চাননি। ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনি আমাদের ছেড়ে যান। আজ ৪ ডিসেম্বর তার ২৪তম মৃত্য বার্ষিকীতে জানায় বিনম্র শ্রদ্ধা। তিনি বেঁচে থাকবেন তার সৃষ্টিতে। লেখক: অভিনেতা, নাট্যকর্মী, চট্টগ্রাম।
জুলাই গণ অভ্যুত্থান ও স্বৈরাচারের পতন
এনএম ফখরুদ্দীন: ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট ২০১৮ সালের সরকারের কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেওয়ার প্রতিবাদে ও কোটা বাতিলের দাবীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী ও চাকুরী প্রত্যাশীরা বিক্ষোভ করে এবং আন্দোলনকারীরা সরকারকে দাবী মানতে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। ২-৬ জুলাই দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ হয়। ৭ জুলাই ‘বাংলা ব্লকেড’ ঘোষিত হয়। এরপর সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে রাজপথে আলাদাভাবে এই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেয়। ছাত্রদের এই আন্দোলনের সাথে একের পর এক বিভিন্ন পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিমনা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল সংহতি প্রকাশ করতে থাকে। ফলে, এক পর্যায়ে এই আন্দোলন গণ অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ১৪ জুলাই ঢাকায় পদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিন কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে মধ্যরাতে ঢাবির ক্যাম্পাস এলাকায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়া এই আন্দোলন দমাতে সরকার কঠোর অবস্থানে অটল থাকায় পুলিশের গুলিতে ২০০’র বেশি ছাত্র-ছাত্রী আহত হওয়ার খবর আসে। এরপর থেকে একের পর এক সহিংসতার ঘটনা ঘটতে থাকে। ১৭ জুলাই ইউজিসি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। সরকার সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখে। ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ১৯ জুলাই সরকার কারফিউ ও অনির্দিষ্টকালের জন্য সভা, সমাবেশ ও মিছিল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। ২৩ জুলাই পর্যন্ত ছয় দিন ইন্টারনেট সেবা অচল রাখা হয়। ২৪ জুলাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হলেও মোবাইল ইন্টারনেট অফ থাকে। এ দিকে, দেশে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী নিহত,অগণিত আহত ও ভুরিভুরি গণ গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়ে। ২৬ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামসহ তিন সমন্বয়ককে আটক করা হয়। ২৯ জুলাই পর্যন্ত আরো তিন জন সমন্বয়ক গ্রেপ্তারসহ বহু নাটকীয় ঘটনার পাশাপাশি হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ৩০ জুলাই সরকার ঘোষিত শোক দিবসকে প্রত্যাখ্যান করে ছাত্র জনতা। সেদিন আন্দোলনকারীরা শোকের কালো ব্যাজের বদলে সকলের ফেইসবুক আইডিতে লাল প্রোফাইলের ছবি ছড়িয়ে দিয়ে অন্য রকম প্রতিবাদ জানায়। এই লাল রংটি রাজপথে রঞ্জিত শত শত আহত ও নিহত শিক্ষার্থীদের লাল রক্তের প্রতীকী রং হিসেবে চিহ্নিত হয়। ৩১ জুলাই ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ (ন্যায় বিচারের জন্য পদযাত্রা) কর্মসূচি চলে। এ দিকে, ডিবির অফিসে হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়ক আটক অবস্থায় অনশন কর্মসূচি শুরু করলে তাদেরকে শেষ পর্যন্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সরকার। ছয় সমন্বয়কের মুক্তির পর সব হিসাবনিকাশ উলটপালট হয়ে যায়।সারা দেশে ছাত্র জনতার উপর হত্যা, গণ গ্রেপ্তার, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও শিক্ষকদের উপর হামলার প্রতিবাদে ১ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নয় দফা দাবী ঘোষণা করে। অবস্থা বেগতিক দেখে ৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী আলোচনার প্রস্তাব দেন। কিন্তু, সমন্বয়করা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জানান, ‘গুলি আর সন্ত্রাসের সাথে কোন সংলাপ হয় না!’ সংলাপের পরিবর্তে শিক্ষার্থীরা এক দফা, এক দাবী নিয়ে মাঠে নামে। তাদের দাবী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এই এক দফার দাবীতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী, শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণী, আবাল-বৃদ্ধ-বর্ণিতা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়। সেদিন ৩ আগস্ট বিকাল পাঁচটার দিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম উপস্থিত সকলের পক্ষ হয়ে প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রী সভার পদত্যাগের এক দফা দাবী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। এ দিকে, রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম একজন সমন্বয়ক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যু ও ঢাকার উত্তরায় আন্দোলনকারীদের মাঝে পানি সরবরাহ করা অবস্থায় মুগ্ধের নিহত হওয়ার মত কিছু হৃদয় বিদারক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশবাসী প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে।আন্দোলনকারীদের দমাতে বিভিন্ন স্থানে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার নিউজ ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার শনির আখড়ায় বিল্ডিংয়ের ছাদে খেলা করা অবস্থায় হেলিকপ্টার থেকে গুলিতে শিশু হত্যার খবরও আসে। চট্টগ্রামের ষোলশহর, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট ও চট্টগ্রাম কলেজ এলাকায় গুলিতে ও সংঘর্ষে পথচারীসহ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া আন্দোলনের বহু লোমহর্ষক দৃশ্য ও সহিংসতার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হতে লাগল। দ্রুত আরও হতাহত বৃদ্ধির খবর ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। ৪ আগস্ট ঢাকার শাহবাগ এলাকা এবং সিটি কলেজ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। একই দিন চট্টগ্রাম সিটির নিউমার্কেট এলাকায়ও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এভাবে সারা দেশে আরো বহু হতাহতের ঘটনা চলতে থাকে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন দমাতে সরকার ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট তিন দিনের কারফিউ ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন। কিন্তু, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা এসব অবজ্ঞা করে নতুন কর্মসূচি ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ ঘোষণা করে। প্রথমে ৬ আগস্ট পালন করার কথা থাকলেও পরে তা ৫ আগস্ট করা হয়। তাই, ৫ আগস্ট কারফিউ অমান্য করে বেলা ১১টার পর সারা দেশে থেকে শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ জনগণ ঢাকার শাহবাগে জমায়েত হতে থাকে। তারপর শাহবাগ থেকে আন্দোলনকারীরা গণভবনের দিকে পদযাত্রা শুরু করে। শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট দুপুর দুইটার দিকে পদত্যাগ করে এবং আড়াইটার দিকে হেলিকপ্টারযোগে ভারতে পালিয়ে যান। এভাবে স্বৈরাচারের পতন হয়। ২০২৪ সালের জুলাই গণ অভ্যুত্থানের (১৮ জুলাই থেকে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত) এই রক্তাক্ত ইতিহাস বাঙালি জাতির নিকট চিরস্মরণীয় থাকবে। লাল প্রোফাইলের এই কাহিনীতে যে গণহত্যা ও নির্যাতন হয়েছিল, তা একাত্তরের কাহিনীকেও যেন হার মানিয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫৮১ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। আহতদের সংখ্যা অগণিত। কতই মর্মান্তিক! কতই না হৃদয় বিদারক ঘটনা! আমি চব্বিশের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহত সবাইকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ও শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। লেখক: অধ্যক্ষ, বোয়ালখালী হাজী মো. নুরুল হক ডিগ্রি কলেজ, শাকপুরা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম।
দুটি দিবসের প্রস্তাব, ছুটিও চান পিনাকী
দুটি দিবসে ছুটির প্রস্তাব করেছেন সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য। বুধবার (১৬ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ প্রস্তাব দেন তিনি। ফেসবুকে পোস্টে পিনাকী লিখেছেন, ‘বাতিল হচ্ছে আট জাতীয় ছুটি। আমি ১৫ আগস্টের ছুটি চাই। ওইদিন হবে ‘নাজাত দিবস’। বাকশালের জিঞ্জির থেকে জাতির মুক্তির দিবস। আর পাঁচই আগস্ট ফ্যাসিবাদ পতন দিবস বা মহান পলায়ন দিবস।’ ফেসবুক পোস্টে পিনাকী আরও লিখেছেন, ‘কে কে আমার প্রস্তাব সমর্থন করেন?’ এদিকে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে বাতিল করছে জাতীয় শোক দিবস, শিশু দিবস ও ঐতিহাসিক ৭ মার্চসহ আটটি দিবস। গত সেপ্টেম্বরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সরকার এসব জাতীয় দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাতিল হওয়া আটটি দিবসের মধ্যে পাঁচটিই শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের জন্ম ও মৃত্যু সংক্রান্ত। এর মধ্যে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভাই শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল দিবস। এ ছাড়া বাতিলের তালিকায় রয়েছে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস ও ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস।
রিজার্ভ চুরির তদন্ত রিপোর্ট কতবার পিছিয়েছে জানা নেই
সাগর রুনি হত্যার তদন্ত রিপোর্ট একশো বারেরও বেশী পিছিয়েছে। কি করে আশা করা যায় যে, একই লাইনআপ রেখে এই বিচারটা হবে! বেহেস্ত যাওয়া সহজ। কিন্তু এই বিচার অসম্ভব! বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করার সময় কতবার পিছিয়েছে জানা নেই। কারণ যারা এর সুবিধা ভোগী তারা যে নিজে চেয়ারে বসে এর বিচার করবে না, এটা নিয়ে অগ্রসর হবে না, এটা জানাই। তাই কোন আগ্রহ নাই। সেদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগকৃত লোকদের বিদায় নিতে বলে সাধারণ চাকুরেরা। কারণ তারা একটা স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখতে চায়। দুর্নীতি এবং দুর্নীতিবাজদের চেহারা ও দাপট দেখতে দেখতে এরা ক্লান্ত। বিরক্ত। ক্লান্ত না তারাই যারা এদের কাছ হতে প্রচুর সুযোগ নিয়েছে। পা চেটেছে। মাসে মাসে বিদেশ ট্যুর বাগিয়ে নিয়েছে। অনেকে আবার বিদেশে গিয়ে হোটেল সঙ্গীও হয়েছে কারো কারো। হ্যাঁ। বুঝেই বলছি। কোন রাগ বা অভিমান থেকে না। আজ সকালে রমনায় কয়েকজন জুনিয়রের সাথে দেখা। কথা প্রসঙ্গে জানালো, বিতাড়িতদের ভেতর হতে দুজন নাকি, একজন উপদেষ্টার বাসায় গেছে। তার পা ধরেছে ফিরে আসতে! ওরাই জানালো, ২০০ জনের একটা লিষ্টও করেছে এইচআরডি, যারা তাদের বিতাড়িত করেছে, তার মধ্য হতে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিবে! তেল বের করে ছাড়বে! সত্য হলে ব্যাপারটা উদ্বেগের! বেশ উদ্বেগের! এরা যে কোন কিছুই করতে পারে। গোপালগঞ্জ এবং মাদারীপুরের দুজন নেতা গোছের কর্মকর্তা নাকি তাতে উৎসাহ দিচ্ছে। এদের মধ্যে একজন এইচআর এই কাজ করে! ডিজি কাজী ছাইদুর রহমানের নির্দেশেই নাকি তা করছে! আচ্ছা ধরা যাক এই ২০০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলো ফিরে এসে। সুবিধা ভোগীরা চুপ থাকলো বা পেছন হতে এদের লাত্থি মারলো, তাতে কি এই কম্পাউন্ডটা সহীহ শুদ্ধ হয়ে যাবে! উত্তরটা হচ্ছে না। ডিজি কাজী ছাইদুর রহমান এর বিরুদ্ধে ঐ সময় হওয়া আট মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ চুরির সহায়তাকারী হিসেবে অভিযোগ রয়েছে। ফিরে এসে উনি কি চাইবে যে তার বিরুদ্ধে আসা তদন্তটা রিপোর্টটা আলোর মুখ দেখুক! উত্তরটা হচ্ছে না! দ্য গ্রেট আবু ফারাহ মোঃ নাসের ফিরে এলেন। যে সাবেক গভর্নর ফজলে কবির এর সহায়তা নিয়ে এস আলম এর মতো একটা দানব সৃষ্টি করেছে। দেশের ব্যাংকিং সেক্টর শেষ করে দিয়েছে। সে কি চাইবে যে তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের তদন্ত হউক! উত্তর হচ্ছে না। জনতা ব্যাংকের টিম লিড দেয়ার সময় একবার ঐ ব্যাংকের এমডি সালাম সাব, দ্যা মোস্ট করাপ্ট ম্যান ইন ব্যাংকিং সেক্টর এবং একজন ডিএমডি, আসাদ নাম বোধ হয়, একটা দালাল এবং আমার টিমের সাথে ত্রিপক্ষীয় মিটিং হয় বোর্ড রুমে। এ মিটিংয়ে দরবেশ এবং এনন টেক্সের ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নেয় আমার টিম। জনতার এমডির কথা শুনে মেজাজ হারাই। আশ্চর্য জনক ব্যাপার হলো, মি. ফারাহ তাদের পক্ষ নিয়ে আমাকে রীতিমতো নাজেহাল করে ছাড়ে! মনে হচ্ছিলো, এই লোক কি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজি, না জনতা ব্যাংকের এমডির সহকর্মী! এতো দালাল হয় কি করে! মিটিংয়ের মাঝেই ফজলে কবির সাব এর কল আসে দুই থেকে তিনবার! সে ফিরে আসলে কি সবাইকে নিয়ে ইমামতি করবে! উত্তরটা হচ্ছে না। মি. মাসুদ বিশ্বাস একজন আপদমস্তক, আপাদপেটওয়ালা দুর্নীতিবাজ! এটা সবাই জানে। এর জন্য কোন গবেষণা বা তদন্তের দরকার নেই। ব্যাংক কম্পাাউন্ডে গিয়া নাম বললেই যে কেউ এক নিঃশ্বাসে বলে দেবে, এইডা একটা চোর! প্রায় দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার সুযোগ নেয়া এরা সবই একেকটা রাসেল ভাইপার। সবাইকেই এটা বুঝা উচিত। বিপদের মধ্যে এরা অলস ভান করে পড়ে থাকবে। আর সুযোগ পেলেই এমন ছোবল দেবে যে জানটা আর হইধামে থাকবে না! এরা কখনোই- "সুখের আশায় নাঙ্গ ধরিয়া ভাতার হারাবে না!" একটু সাবধানে। শেষ লাইনটা মিস লিটনের গানের কলি।যারা বেশী রুচিশীল তারা হয়তো মিস লিটনের গান শুনেন না। ছেলে মানুষ। মেয়েদের সুরে গান গায়। আমি শুনি। লেখক: গোলাম বহলুল, অতিরিক্ত পরিচালক বাংলাদেশ ব্যাংক।
কোটা জটিলতা নিরসনের জন্য আপিল বিভাগের রায়ের অপেক্ষা করা কি একান্ত জরুরি?
কিছুদিন থেকে শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। চারপাশের সব কিছু দেখে হাসপাতালের বেডে শুয়ে অনেক কিছুই ভালো লাগছে না। এই পরিবেশ-পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য ছিল না স্বাধীন বাংলাদেশে এত দিন পর। সাত ছাত্রের বেদনাদায়ক মৃত্যু স্তম্ভিত করেছে আমাদের সবাইকে। রংপুরের ঘটনাটি কেউই মানতে পারছেন না। ঘটে যাওয়া দুঃখজনক সব ঘটনাবলির বিচার এখন সময়ের দাবি। বিশ্বাস করি দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা শান্তি ও স্বস্তির বাংলাদেশ দেখতে চাই। আর এ কারণে আমাদের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের দাবিকে ইতিবাচক বিবেচনায় নিতে হবে। দ্রুততম সময়ে তা বাস্তবায়ন করে নিরসন করতে হবে চলমান সংকটের। অন্যথায় স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জনই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একজন লেখক হিসেবে মনে করি কোনো কিছু অসম্ভব নয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিলেই সম্ভব। একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বললাম। জানতে চাইলাম কোটা জটিলতা নিরসনের জন্য আপিল বিভাগের রায়ের অপেক্ষা করা কি একান্ত জরুরি? আমাকে সেই বিশেষজ্ঞ বললেন, রাষ্ট্র ও সরকার জরুরি মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই সংবিধান, বিচার বিভাগ জনগণের জন্য। আমাদের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের দাবি নিয়ে আর সময়ক্ষেপণ নয়। দ্রুত সিদ্ধান্তে আসতে হবে। বন্ধ করতে হবে সব রক্তপাত, সংঘাত, সংঘর্ষ। আদালতের ওপর নির্ভরশীলতা নিয়ে আমার একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ বন্ধু জানালেন, সরকার চাইলে এক ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে কোটা বিষয়ে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে বর্তমান রক্তপাত বন্ধ করতে পারে। কোটা বিষয়ে অধ্যাদেশ প্রণয়ন হাইকোর্টের রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। এমনকি কেউ যদি মনে করেন অধ্যাদেশ প্রণয়ন হাইকোর্টের রায়ের সাংঘর্ষিক বা আপিল বিভাগে বিচারাধীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ হবে, তাদের উদ্দেশ্যে সবিনয়ে বলতে চাই, রাষ্ট্রপতির (প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে) যে কোনো বিষয়ে অধ্যাদেশ প্রণয়নের সাংবিধানিক ক্ষমতা হাইকোর্ট বা আপিল বিভাগ খর্ব করতে পারে না। তবে অধ্যাদেশটি সংবিধানসম্মত কীনা তা আদালত বিচার করতে পারে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ বন্ধু আরও বললেন, কোটা বিষয়ে আমার জানা মতে, কোনো আইন (জাতীয় সংসদে পাস করা আইন বা অধ্যাদেশ) নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোটা বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে অধ্যাদেশ (আইন) প্রণয়ন করা আবশ্যক। আদালতের রায়ের অপেক্ষা করা বা সংসদের পরবর্তী অধিবেশনের অপেক্ষা করা বর্তমান সংঘর্ষকে আরো দীর্ঘায়িত করতে পারে। সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকদের মধ্যে যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে তা গৌরবের প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংস করে দিবে। সংবিধানের আর্টিকেল ৯৩ রাষ্ট্রপতিকে অর্ডিন্যান্স (আইন) প্রণয়নের যে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করেছে। ৯৩(১) অনুচ্ছেদে রয়েছে ‘সংসদ ভাঙিয়া যাওয়া অবস্থায় অথবা উহার অধিবেশনকাল ব্যতীত কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে বলিয়া সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে তিনি উক্ত পরিস্থিতিতে যেরূপ প্রয়োজনীয় বলিয়া মনে করিবেন, সেইরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করিতে পারিবেন এবং জারি হইবার সময় হইতে অনুরূপভাবে প্রণীত অধ্যাদেশ সংসদের আইনের ন্যায় ক্ষমতাসম্পন্ন হইবে : তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার অধীন কোনো অধ্যাদেশে এমন কোনো বিধান করা হইবে না, (ক) যাহা এই সংবিধানের অধীন সংসদের আইন-দ্বারা আইনসঙ্গতভাবে করা যায় না;(খ) যাহাতে এই সংবিধানের কোনো বিধান পরিবর্তিত বা রহিত হইয়া যায়; অথবা(গ) যাহার দ্বারা পূর্বে প্রণীত কোনো অধ্যাদেশের যে কোনো বিধানকে অব্যাহতভাবে বলবৎ করা যায়।(২) এই অনুচ্ছেদের (১) দফার অধীন প্রণীত কোনো অধ্যাদেশ জারি হইবার পর অনুষ্ঠিত সংসদের প্রথম বৈঠকে তাহা উপস্থাপিত হইবে এবং ইতঃপূর্বে বাতিল না হইয়া থাকিলে অধ্যাদেশটি অনুরূপভাবে উপস্থাপনের পর ত্রিশ দিন অতিবাহিত হইলে কিংবা অনুরূপ মেয়াদ উত্তীর্ণ হইবার পূর্বে তাহা অননুমোদন করিয়া সংসদে প্রস্তাব গৃহীত হইলে অধ্যাদেশটির কার্যকরতা লোপ পাইবে।’’ লেখক হিসেবে এত সংবিধান বুঝি না। দেশটা বুঝি। মানুষের কষ্ট বুঝি। দেশের কোনো খারাপ কিছু চোখে পড়লে মনটা কেঁদে উঠে। সব কিছু এলোমেলো মনে হয়। বাংলাদেশ একটা কঠিন সময় অতিক্রম করছে। আর কোনো মায়ের কোল খালি হতে দেওয়া যাবে না। সংঘাত তৈরি করে তৃতীয় কোনো সুযোগ সন্ধানীকে মাঠে নামতে দেওয়া যাবে না। তাই দেশের স্বার্থে, আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ ধরে রাখার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনয়ের সঙ্গে আবেদন দ্রুত উদ্যোগ নিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা আমাদের সন্তান, আমাদের আগামী। রংপুরের বেদনাবিধুর ঘটনাটি কেউই মেনে নিতে পারছে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে হিসেবে আপনি পারেন অনেক কিছু করতে। রংপুরসহ সব হত্যার বিচারের ব্যবস্থা নিন। আর যত দ্রুত সম্ভব আদালতের জটিলতাকে সরিয়ে সংবিধানে আপনাকে দেওয়া ক্ষমতাবলে সিদ্ধান্ত নিন। খেয়াল রাখুন এ ঘটনায় কেউ যাতে অপব্যবহার না করতে পারে। বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে, এগিয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক বন্ধ করতেই সংকটের দ্রুত নিরসন প্রয়োজন।
বিমান একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, লিল্লাহ বোডিং নয় : পলাশ রহমান
ইতালি : পত্রিকায় দেখলাম ঢাকা থেকে ২শ যাত্রী নিয়ে রোমে এসেছে বাংলাদেশ বিমান। প্রশ্ন হলো- এই ২শ যাত্রী কারা? এতগুলো যাত্রী কোথায় পেলো বিমান? রোম বা ইতালি থেকে যারা দেশে যান তাদের শতভাগ যাত্রীই রিটার্ন টিকেট করে যান। সুতরাং রোম থেকে অন্য কোনো এয়ারে দেশে গিয়ে- ফিরেছেন বিমানে, তা যেমন হবে না, একই ভাবে ওই ২শ জন নতুন যাত্রী হওয়ারও সুযোগ কম। কারণ একদিনে ২শ নতুন যাত্রী ঢাকা থেকে রোম সফর করার কথা নয়। যারা ঢাকা থেকে রোমে এসেছেন প্রথম ফ্লাইটে তাদের প্রায় ১শ জন ভেনিসে এসেছিলেন শনিবার। তারা একটা রেষ্টুরেন্ট ভাড়া করে ইফতারের আয়োজন করেন। ব্যানারে লেখেন- মিট দ্যা প্রেস। কিন্তু স্থানীয় সাংবাদিকদের অভিযোগ বিমানের কর্মকর্তারা তাদের সাথে বা কম্যুনিটির সাথে কোনো কথা বলেননি। সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ রাখেননি। রাজনৈতিক ঢংগে কিছু বক্তৃতা শুনিয়ে তারা শেষ টেনেছেন। এমন কী প্রবাসীদের সাথে বসে ইফতারিও করেননি, করেছেন আলাদা জায়গায়। ২০১৫ সালে ঢাকা-রোম রুটের বিমান সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। কারণ লোকসান হচ্ছিলো। ৯ বছর পরে তা ফের চালু হয়েছে। এবার লোকসান না হওয়ার নিশ্চয়তা কী? ব্যবসায়িক ডিজাইন কী? আগে কেনো লোকসান হয়েছিলো, তা কী চিহ্নিত করা হয়েছে? সেগুলোর সমাধানে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে? কেনো বিমানের টিকেট কিনতে গেলে পাওয়া যায় না, অথচ সিট ফাকা থাকে? ভেনিসসহ বাংলাদেশিবহুল শহরগুলোর সাথে কী কোনো ভাবে বিমানকে কানেক্ট করা হবে? যেমন, এক টিকেটে ভেনিস থেকে একজন যাত্রী কী রোম হয়ে ঢাকা যেতে পারবে? কথিত ২শ যাত্রীর আড়ালে কী কোনো আদম ব্যবসা হয়েছে? বিমানের অনুষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ কেনো প্রবাসী আওয়ামীলীগ নেতাদের হাতে ছিলো? অন্যান্য সামাজিক, রাজনৈতিক দলের নেতাদের দেখা যায়নি কেনো? সরকারী দল করে না, এমন যাত্রী কী বিমানের দরকার নেই? বিমান কী রাষ্ট্রয়ী প্রতিষ্ঠান, নাকী দলীয় প্রতিষ্ঠান? এমন একগাদা প্রশ্ন পেটে নিয়ে দম আটকে বসে ছিলেন সাংবাদিকরা। প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ তাদের দেয়া হয়নি। কেউ কেউ বলে ফেলেছেন, প্রশ্ন করা না গেলে এ আবার কেমন তরো ‘মিট দ্যা প্রেস’? একটা প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে দিলেই তো হতো। এত টাকা খরচ করার কী দরকার ছিলো? বিমানের বিরুদ্ধে যাত্রীদের মোটা দাগে অভিযোগ তিনটি। টিকেট না পাওয়া, সময় মতো ফ্লাইট না ছাড়া এবং সার্ভিস খারাপ। আমরা সোস্যাল মিডিয়ায় দেখেছি বিমানের মধ্যে কারেন্টের ব্যাড দিয়ে মশা মারতে। আমার এক বন্ধু জানিয়েছেন, ডায়াবেটিকের শরীর নিয়ে বিমানের সারপোকার কামড় খেয়ে তাকে দীর্ঘ দিন চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এই অভিযোগগুলো যে সত্যি তার বড় প্রমাণ হলো বিমানের মধ্যে যাত্রীদের ছবি তোলা, ভিডিও করা নিষেধ করেছে কর্তৃপক্ষ। যাত্রীরা কেনো ছবি তুলতে পারবে না? কী লুকাতে চায় কর্তৃপক্ষ, তা বুঝতে বেশি বুদ্ধির দরকার হয় না। সবাই পারলে বিমান কেনো সময় মতো ফ্লাইট ছাড়তে পারে না? ঘাপলা কোথায়? বিমানের টিকেট পাওয়া যায় না কেনো? যাত্রীরা বলেন, কিনতে গেলে টিকেট নেই, বিমানে চড়লে দেখা যায় শতশত সিট খালি? ঘটনা কী? অন্যান্য দুর্নীতির বাইরে সম্ভবত এখানেই লুকিয়ে আছে বিমানের লোকসান গোনার অন্যতম কারণ। বিমান হয়তো এখনো লটম্যান বিক্রি করে। এজেন্টদের কাছে বড় সংখ্যার সিট দিয়ে রাখে এবং তারা ওগুলো আটকে রাখে। শেষ পর্যন্ত সব সিট তারা বিক্রি করতে পারে না। লোকসান গুনতে হয় বিমানকে। এই পদ্ধুতিতে এয়ারলাইনগুলো ব্যবসা করতো অনেক আগে। এখন আর কেউ করে না। প্রযুক্তি এখন অনেক এডভান্স। টিকেট বুকিং দিয়ে বেশি সময় রাখা যায় না। পেমেন্ট না দিলে সফটওয়্যার অটোমেটিক বুকিং ক্যানসেল করে দেয়। এমন কী বেনামেও টিকেট কিনে রাখা যায় না। যাত্রীর নামের বানান দুই অক্ষরের বেশি সংশোধন করা যায় না। অর্থাৎ বুকিং দিয়ে সিট আটকে রাখার দিন অনেক আগে ফুরিয়ে গেছে। হয়তো বিমানের বেলায় ফুরায়নি এখনো। ফলে টিকেট নিকতে গেলে নেই, অথচ সিট ফাকা থাকে। বিমান কর্তৃপক্ষ বলেন, নন পিক সিজনে সিট খালি যায় বা যেতে পারে। কিন্তু টিকেট কিনতে চাইলে কেনো পাওয়া যায় না, সে ব্যাখ্যা তারা দেন না। এতেই বোঝা যায়- বিমানের বোয়িং নতুন বা আধুনিক হলেও সফটওয়্যার (মানুষগুলো) আগের মতোই আছে। এখানে একটা বিষয় পরিস্কার বুঝতে হবে- বিমান কোনো আবেগ বা আলগা দেশপ্রেমের জায়গা না। এটা একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এর কোটি কোটি টাকার লোকসান দেশের মানুষকেই গুনতে হয়। দেশের মানুষের মাথায় উচ্চ সুদে ঋণের বোঝা চাপিয়ে বোয়িং কিনতে হয়। বিমান কোনো লিল্লাহ বোডিং নয়। আশা করি লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে বিমানকে ঢাকা-রোম রুটের ফ্লাইট ফের বন্ধ করতে হবে না। তবে তাদের বিজনেস ডিজাইন খুব বেশি চিন্তা করে করা হয়েছে বলে মনে হয় না। বিমান সপ্তাহে ৩টা ফ্লাইট পরিচালনা করবে ঢাকা-রোম রুটে। অর্থাৎ বিমানে যেতে চাইলে যাত্রীদের ওই তিন দিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। মাসে ১২টা ফ্লাইটের জন্য রোমে একগাদা কর্মকর্তা/কর্মচারি, অফিস-টফিস পালতে হবে। তাছাড়া ফ্লাই এবং ল্যান্ডের সময়ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কে চাইবে বিকল্প থাকার পরেও রাত একটা/দেড়টায় ঢাকায় নামতে? এত রাতে ঢাকায় নেমে যে বিপদে পড়বে একজন যাত্রী, সে দায় কে নেবে? বিমান কী পারবে অন্যান্য এয়ারলাইনের তুলনায় কম দামে (অন্তত বেশি না) টিকেট বিক্রি করতে? বিমান কী পারবে যাত্রীদের লাগেজ ওয়েট নিয়ন্ত্রণ করতে? সত্যিকারার্থে বিমানে বাংলাদেশিরা কেনো যায় জানেন? অন্য এয়ারে লাগেজের ওজন এক কেজি বেশি হলেও বাড়তি টাকা দিতে হয়। কিন্তু বিমানে দলের পরিচয়, মামা, চাচার পরিচয়, হাম্বিতাম্বি বা হাতের মুঠে হালকা কিছু গুজে দিয়ে পার পাওয়া যায়। (অতীতে এমন হয়েছে) এগুলো বন্ধ করতে না পারলে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিমান চলবে না। পত্রিকায় দেখেছি, ইরানের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিমান ইরানের আকাশ পথ ব্যবহার করতে পারছে না। অন্য পথে যেতে হলে সময় এবং খরচ দুইটাই বেড়ে যায়। এই সমস্যার সমাধান কী হয়েছে? কীভাবে হয়েছে, তা জানা যায়নি। যদি খরচ বাড়িয়ে বিমান চালাতে হয়, তবে শুরুতেই তো লোকসানের মধ্যে পড়লো বিমান, লাভ করবে কীভাবে? ব্যানারে মিট দ্যা প্রেস লিখলেও বিমান কর্তৃপক্ষ ভেনিসে মূলত ইফতার পার্টি করেছেন, আর সরকারের কিছু গুণকীর্তন শুনিয়েছেন কম্যুনিটিকে। এর বাইরে কেনো তারা এই আয়োজন করেছেন তা পরিস্কার নয়। অনেকে বলাবলি করেছেন, রাষ্ট্রীয় খরচে তাদের বিশাল বহরের ভেনিস সফর হালাল করতে এই আয়োজন করা হয়েছে। কারণ বিমানের যদি প্রচার প্রচারণা করতেই হয়, রোমসহ আসপাশের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় করবে, ভেনিসে কী? এত মানুষ নিয়ে কিসের প্রচার? রোম থেকে ভেনিসের দুরত্ব ৫শ কিলোমিটারের বেশি। ভেনিস এয়ারপোর্ট থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩টা ফ্লাইট (আমরিাত, তুর্কি) ছাড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে। কে যাবে রোমে বিমানের যাত্রী হতে? শেখ হাসিনা দেশে ইফতার মাহফিলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য। বিদেশে এসে তার নেতা-আমলারা কী করলেন? কতো কী কৃচ্ছ্রসাধন করলেন? এর জবাবদিহিতা কী তিনি জনগণকে দেবেন? ভেনিসে বিমানের অনুষ্ঠানে সবেচেয়ে বেশি অস্থির ছিলেন রোম আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। ঢাকার এমপি, সচিবদের আদর-যত্ন দিতে তার মাত্রাতিরিক্ত অস্থিরতা সবার চোখে পড়েছে। সাংবাদিকদের সাথেও খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এমন কী ভেনিস বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি কথা বলতে চাইলে, সেখানেও তিনি বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। স্বাগতিক কম্যুনিটির প্রতিনিধি হিসাবে ভেনিস আওয়ামীলীগের সভাপতিকেও দু’মিনিট কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। যা অনেকের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ঢাকাওয়াচ/টিআর
দেশ প্রেমের অমর কাব্য : তুহিন মাহামুদ
বাঙ্গালি জাতির বড় পরিচয় “তিনি একজন বাঙ্গালি ” আর এই বাঙ্গালির রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে মোড়ানো শাশ্বতকালের এক উন্নত সংস্কৃতি। যে সংস্কৃতির পথ ধরে অহংকার মাখা হৃদয় নিয়ে মাথা উঁচু দাঁড়িয়েছে বিশ্বের দরবারে। বাঙ্গালি জাতির ওপর বার বার আঘাত এসেছে!অসংখ্যবার এই সংস্কৃতির ওপর অপসংস্কৃতির ধাক্কা লেগেছে!কখনও কখনও রক্তাক্ত আবার কখনও কোনঠাসা হয়েছে। কিন্তু আদর্শচূত হয়নি বরং দিনে দিনে আরও শাণিত তলোয়ারের মত ধারালো চক চক হয়ে উঠছে। ব্রিটিশ সামাজ্রবাদের আগ্রাসনে অনেকটা শব্দ ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও সেটাকে বুকের মধ্যে আটকে রেখে বাঙ্গালির রুপ, রস কাঁদা মাটির মত সংস্কৃতির সাথে মিশিয়ে ভিন্ন মাত্রায় যোগ হয়েছে। সমাদৃত হয়েছে বিশ্ব সংস্কৃতির কোলে। আমরা হয়েছি উন্নত সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। যার বহি:প্রকাশ ঘটে প্রবাসের মাটিতে নিজস্ব সংস্কৃতির আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে আমরা যখন বাংলা কথা বলি। বিশ্বের মধ্যে আমরাই একমাত্র জাতি। যে জাতি তার ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে। এটি ইতিহাস বিরল রক্তের ওপর পা রেখে বাঙ্গালি জাতি ভাষার জন্য লড়াই করেছে এবং জয়ী হয়েছে। মাতৃত্বের টান আর দেশপ্রেমের গভীর ভালোবাসায় জীবনকে তুচ্ছার্থক ভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে সংস্কৃতিকে রক্ষা করেছে। তবুও বাঙ্গালি জাতি শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি!আঘাত এসেছে দেশের ওপর, অস্তিত্ব রক্ষায় আবার রক্তের সাগরে মুক্তির জন্য সাতার কাটতে হয়েছে। জীবন দিতে হয়েছে অসংখ্য নারী-পুরুষ,শিশু-কিশোর আবাল বৃদ্ধ বণিতা সকলকে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা নেই যে বাঙ্গালি জাতির মত এত রক্ত, এত প্রাণ দিতে হয়েছে। শেয়ালের মত নারীর দেহ লুটেপুটে খেয়েছে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীরা। তবুও বাঙ্গালি জাতি মাথা নিচু করেনি বরং আরও দেশ প্রেমে উজ্জ্বিবিত হয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে প্রতিবাদী রূপে । বাঙ্গালি জাতির ইতিহাস বড় নির্মম। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সময়ের ভাঁজে জড়িয়ে আছে আন্দোলন ও সংগ্রামের ইতিকথা!এই সংগ্রামের মাধ্যমেই সাফল্য অর্জন করেছে যুগে যুগে!!আমরা তারই পথ ধরে আজকে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। আমার বড় পরিচয় আমি বাঙ্গালি আমি বাংলাদেশী! বাঙ্গালি হিসেবে গর্ববোধ করি,কেননা আমার রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য! আমি বাংলাদেশী আমি বীরত্ব অনুভব। করি, কারন আমার রয়েছে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক রক্তাক্ত ইতিহাস। যে ইতিহাসের গৌরবময় গোড়ায় দাঁড়িয়ে আত্নাংহকারে লাল সবুজের পতাকা উড্ডায়ন করি নির্মল বিশ্বাকাশে। আমাদের সংস্কৃতির ঊর্বরতায় বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছে!সুগম হয়েছে জাতীসত্ত্বা বিকাশের বিস্তৃত পথ!আর তারই চেতনার দীপ্ততায় সমুজ্জ্বল রয়েছে আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গন। আমরা খু্ঁজে পাই নতুন পথের ঠিকানা। যে পথ আমাদের বাঁচতে শেখায় চেতনাকে জাগিয়ে তোলে উজ্জ্বলিত করে সংকটময় অমানিশার ঘরে। ১৯৭১ সাল ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যে বর্বরোচিত হত্যাকান্ড ঘটায় তা ইতিহাসের বিরল!নীরিহ ঘুমন্ত বাঙ্গালি জাতির ওপর ঝাপিয়ে পরে নির্বিচারে হত্যা করা হয় বাঙ্গালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের!মেধাশূণ্য কঙ্কাল রাস্ট্রে পরিণত করে বাঙ্গালী জাতিকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিলো। কিন্তু বাংলার মুক্তিকামী দামাল ছেলেরা ঝাপিয়ে পরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর!আর এর নেতৃত্ব যিনি দিয়েছেন তিনি সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ দেশের সোনার ছেলেরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশ উদ্ধারের জন্য যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং দু’লক্ষ মা বোনের সংভ্রমের বিনিময় অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। বিশ্বের মানচিঁত্রে স্হান পায় স্বাধীন স্বার্বভৌম রাস্ট্র” বাংলাদেশ” । এ দেশ আমার, আপনার আমাদের সকলের, কিন্তু যাদের আত্নত্যাগ আর প্রাণ বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে যে বাংলাদেশের জন্ম, সে বাংলাদেশে বার বার আঘাত এসেছে। তবুও আমরা বিচলিত হইনি। আমাদের সামনে অপার সম্ভবনা রয়েছে! তরুন সমাজ আজ দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্ব স্ব অবস্হানে থেকে কর্ম সংস্হান খুলেছে । প্রবাসীরা রেমিটেন্সের মাধ্যমে উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা রাখছে । যে যেভাবেই দেখুক আর বলুক দেশে সত্যই অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে তা অনিস্বীকার্য। আমাদের দেশের সেনা বাহিনী সত্যিই গর্বের । এরা দেশের গর্বিত সন্তান, তাদের কে উৎসাহিত এবং কার্যকর করার জন্য বঙ্গবন্ধুর তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সাবমেরিন এনেছে । এটি সময়োপযোগী প্রশংসনীয় একটি কার্যকর পদক্ষেপ । আমাদের সমাজে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে “ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম একজন যোদ্ধা” , ঠিক তেমনি আমাদের দেশে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী রয়েছে কিন্তু শত্রু মোকাবেলা করার জন্য তাদের হাতে কোন ব্যবস্থা নেই । আজ সাবমেরিন এসেছে আগামিতে আরও উন্নত কিছু আসবে যা বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষায় কাজ করবে। আমাদের দেশ, আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে এমন কিছু আমরা তা সহ্য করবো না!আমাদের বড় সাহস ও শক্তি আমাদের দেশপ্রেম, মাতৃত্বের টান আর রক্তে ভেজা লাল সবুজের পতাকা । লেখক: তুহিন মাহামুদ মিলান, ইতালি। ঢাকাওয়াচ/টিআর
দেশের মাটির স্পর্শে জাগুক প্রাণ
ভোরের আলো সবে পুবদিকে উঁকি দিয়েছে। ছুটেছি কৃষকের মাঠের দিকে। আমি একা নই, সঙ্গে ২০ খুদে শিক্ষার্থী। তাদের কারও কারও চোখে এখনো ঘুম লেগে আছে। কেউ কেউ নতুন কিছুর উত্তেজনায় উৎফুল্ল। যাদের চোখে ঘুমের লেশ। তাদের পুরোপুরি জাগিয়ে তুলতে শুরু করলাম গল্প। মাটি ও মানুষে গল্প। কৃষি ও কৃষকের গল্প। বলছি গত সপ্তাহের কথা। চার দশকেরও বেশি সময় টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করার সুবাদে আমাকে কৃষকের মাঠে যেতে হয়। কৃষকের মতোই আমার মাঠে যাওয়ার বিষয়টিও প্রায় নিত্যকার। মাঠের ফসল, গ্রামীণ জীবন, কৃষকের ভালোমন্দ, দেশের খাদ্যপণ্যের বাজার, আধুনিক প্রযুক্তি আর সব মানুষের আশা-নিরাশার জায়গাটি তুলে আনাই আমার কাজ। বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন ব্যবস্থার সব জায়গাই আমার মোটামুটি দেখা। তারপরও গ্রামের প্রতি আমার কৌতূহল যায়নি। কয়দিন পেরিয়ে গেলেই মনটা বড় টানে। ছুটে যাই গ্রামে যাই। গ্রামে যেতে যেতেই আমার বার বার মনে হয়েছে শুধু আমি গ্রামে গেলে তো হবে না, সব শ্রেণি-পেশার মানুষকেও গ্রামে যাওয়া দরকার। বিশেষ করে শহরের সব শ্রেণিরই গ্রামমুখী হওয়াটা খুবই জরুরি। দীর্ঘদিন নগরমুখী চিন্তা আর ইট-পাথরের নাগরিক জীবনের আধুনিকতা খুঁজে খুঁজে আমরা অন্তঃসারশূন্য এক জীবনে এসে পৌঁছেছি। এতে করে আমরা যেন শিকড়হারা হয়ে যাচ্ছি। একটা প্রজন্ম বেড়ে উঠছে শহরের বুকে যাদের অধিকাংশই মাটির স্পর্শ পায়নি। তারা জানে না, মাটি যখন ফলে-ফসলে পূর্ণ হয় তখনই রচিত হয় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সেখানে রয়েছে কৃষকের লালিত স্বপ্ন। তাদের শ্রম আর ঘামের বিনিময়ে উৎপাদন হচ্ছে দেশের মানুষের খাদ্য। তারা নীরবে ঘুরিয়ে যাচ্ছে আমাদের উন্নয়নের চাকা। নতুন প্রজন্ম এগুলো না জানা মানে, আমরা যে ভবিষ্যৎ রচনা করছি তা অপূর্ণাঙ্গ। আজকের পরজন্মই একদিন রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নেবে। তারা জানবে না কী করে রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কৃষক কেন তার জীবনকে নিবেদন করে কৃষিকাজে! শহর-নগরের আধুনিক কিশোর-তরুণদের কাছে পেলেই এই ভাবনাগুলো ওদের মাঝে তুলে ধরি। মনে আছে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের একঝাঁক শিক্ষার্থীর মাঝে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিই, আমার সঙ্গে গ্রামে যেতে রাজি আছ কে? দেখি অনেকেই সাহস করে হাত তুলেছে। তখনই তাদের ভিতর থেকে বাছাই করে চারজনকে গ্রামে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিই। এভাবেই শুরু ‘ফিরে চলো মাটির টানে’ কার্যক্রমের। আজ শহরের ছেলেরা কম্পিউটার আর মোবাইলে বুঁদ হয়ে ভার্চুয়াল পৃথিবীর মানুষ হয়ে আছে। শহর-নগরে তাদের ছোটাছুটি করার জায়গা নেই। পর্যাপ্ত মাঠ নেই খেলাধুলা করার। আমার চিন্তা ছিল এই তরুণদেরই যদি একজনকে কৃষক বা কৃষি শ্রমিকের ভূমিকায় কয়েক দিনের জন্য নিয়োজিত করা যায়, তাহলে তার মধ্য দিয়ে ভালো কিছু আসতে পারে। অর্থাৎ তার মাথায় এমন কিছু ঢুকবে, এমন এক পরিবেশে সে সিক্ত হবে, যা তার সারা জীবনের এক অনন্য শিক্ষা হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গ্রামে গিয়ে একেবারে আত্মহারা হতে থাকল। তাদের অভিজ্ঞতাগুলো অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কারণে কয়েক বছরের মধ্যে সারা দেশেই শিক্ষার্থীদের গ্রামে যাওয়ার প্রবণতা ও আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাবনা-চিন্তায় অনেকটা পরিণত। এই বয়সের মধ্যে তাদের জীবনের একটি লক্ষ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। সে কারণে কৃষকের মাঠে গিয়ে কৃষকের প্রতি তাদের একটি সহমর্মিতা ও আন্তরিকতা তৈরি হলেও তারা সেটিকে গভীরভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ পায় কম। বড় জোর তারা তাদের একাডেমিক অর্জনটাকে কৃষির পক্ষে কাজে লাগানোর একটি লাভজনক সুযোগ খুঁজতে পারে। কিন্তু শিশুদের মাঠে নিয়ে যেতে পারলে তাদের মনের গভীরে কৃষি কৃষক ও গ্রাম একটি স্থায়ী আসন নিয়ে নিতে পারে। এই চিন্তা থেকেই ২০১১ সালে শুরু করেছিলাম ফিরে চলো মাটির টানে জুনিয়র। পঞ্চম শ্রেণির ২০ জন ছেলেমেয়েকে কৃষকের খেতে নিয়ে আলু রোপণ ও আলু তোলার কাজে যুক্ত করে দেখলাম, এর ফলাফল দারুণ। শিশুরা একদিনেই তার মাথার মধ্যে এঁকে ফেলে কৃষকের ভালোমন্দ। আমাদের শিশুদের গ্রামে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ফসল রোপণ ও ফসল তোলার যে আনন্দ তা যদি তারা বুঝত তাহলে ব্যক্তিজীবনে ওদের কোনো ব্যর্থতা থাকত না। কৃষকের পরিশ্রমকে ওরা যদি আবিষ্কার করতে পারত, তাহলে বুঝত জীবনে কোনো কিছুই সহজে আসে না। এর জন্য প্রয়োজন হয় কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার। ১৫১৬ সালে থমাস ম্যুর কৃষির গুরুত্ব অনুধাবন করে কল্যাণ রাষ্ট্রের যে রূপরেখা ও পরিকল্পনা এঁকেছিলেন, তার গুরুত্ব ফুরিয়ে যায়নি। যে রাষ্ট্রের নাগরিকরা সুখী ও সুন্দর। সেখানে নারী-পুরুষ সবার আছে কৃষিবিষয়ক সাধারণ জ্ঞান। পেশা যাই হোক না কেন, ফসল তোলার মৌসুমে যেতে হবে ফসলের মাঠে। সভ্যতার উত্তরণ যতই ঘটুক না কেন, যতই আমরা আধুনিক পৃথিবীর দিকে এগিয়ে যাই না কেন, কৃষির বিকল্প কিছু নেই। সভ্যতার সূচনা তো কৃষি থেকেই। দিন শেষে আমাদের ফিরে যেতে হবে কৃষির কাছেই। দেখতে দেখতে অনেক দিন হয়ে গেল। ২০১১ সালে শুরু হয়েছিল ফিরে চলো মাটির টানে জুনিয়র। শুরুতে অংশ নিয়েছিল রাজধানীর সি ব্রিজ স্কুল। ইংরেজি মাধ্যম বা ভার্সনের শিশুদের নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এদের চিন্তা-চেতনায় বাংলা ও বাঙালি সংস্কৃতির চেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় ইংরেজি ভাষা আর পশ্চিমা সংস্কৃতি। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর ভালো ভালো ইংলিশ মিডিয়ামের শিশুদের নিয়ে গেছি মাঠে। আমি বিশ্বাস করি, যে শিশুরা এই কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে জীবনের সেরা এক অভিজ্ঞতা হিসেবে তারা লালন করছে কৃষকের মাঠে যাওয়ার দিনটিকে। এবার গত ২ ডিসেম্বর রাজধানীর ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ২০ জন শিশু শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাই মুন্সীগঞ্জের রুহিতপুর গ্রামে। সে গল্পই বলছিলাম। সাধারণত এত ভোরে শহরের এই শিশু-কিশোর কখনো ঘুম থেকে জাগে না। ঘুম ঘুম সকালে অন্যরকম এক কৌতূহল থাকে তাদের মধ্যে। কৃষি ও কৃষক নিয়ে তাদের মনে থাকে হাজার প্রশ্ন, অনন্ত জিজ্ঞাসা। এই বয়সে স্কুল, ক্লাস, বাসা আর গেমসের বাইরে অন্য এক ভুবন তাদের জন্য। গাড়িতে চলতে চলতে তারা দেখছে দূর গ্রামের আড়াল থেকে সূর্য ওঠা। আমরা যাচ্ছি কৃষক শামসুল হক মোল্লার আলুর খেতে আলু রোপণ করতে। আরেক কৃষক দেলোয়ার হোসেন শিশুদের জন্য বাড়িতে তৈরি করে রেখেছিলেন নানা রকমের পিঠা। সকালে মিষ্টি রোদে পিঠার উৎসব। পাটিসাপটা, ভাঁপা, পোয়া, চিতই, পুলি কোনটার কী নাম তাদের জানা নেই। কিন্তু এত পিঠা একসঙ্গে দেখে তারা উচ্ছ্বসিত। উঠোনে পাতা টেবিলে এতসব পিঠার আয়োজনে তারা মোহিত। তারা দেখল গ্রামের মানুষের আতিথেয়তা। খাওয়া-দাওয়া শেষে। বাড়ির চাচিরা বসলেন আলুর চোখ কাটতে। দারুণ আগ্রহ নিয়ে তারা দেখলো-কীভাবে আলুর চোখ কাটে! মনে মনে বিস্ময় আলুরও চোখ হয়। কৃষক দেলোয়ার হোসেন বুঝিয়ে দিলেন, আলুর চোখ মানে চোখ নয়, আলুর যে অংশে চারা গজায় সে অংশকে বলে আলুর চোখ। তারা পর্যায়ক্রমে শিখল আলু রোপণের জন্য আলুবীজ প্রস্তুতির কাজ। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাসেল সিকদার শিখিয়ে দিলেন কীভাবে রোপণ করতে হয় আলুর বীজ। কৃষকের বাড়ি থেকে বের হয়ে সারি বেঁধে চললাম মাঠে। এবার আলু রোপণের পালা। শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেই গায়ে মাটি মাখাল। দেখলাম মাটির স্পর্শে তারা কেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠল। নিজেদের জীবনের সঙ্গে যুক্ত করে নিয়েছে কৃষকের শক্তি। তারা জীবনের প্রথম কৃষকের মাঠে কৃষকের ভূমিকায় কাজ করল। যে শিশুদের নিয়ে সকালে রওনা হয়েছিলাম, এ যেন তারা না, মাটি ভিতরে কিছু একটা পাল্টে দিয়েছে তাদের। শিক্ষার্থীরা সরাসরি কথা বলল কৃষকের সঙ্গে। কীভাবে ফসল ফলায়? কী পরিমাণ লাভ? কী কী অসুবিধার ভিতর দিয়ে কৃষকদের যেতে হয়? এসবই ছোট্ট শিশুরা জানতে চাইল। আলু রোপণ শেষে আমরা ফিরে আসলাম। আবার আলু ফলনের পর মার্চের প্রথম সপ্তাহে ওদের নিয়ে যাব আলু তুলতে। এই শিশু-কিশোরের কেউ হয়তো কৃষক হবে না। কেউ হয়তো প্রকৌশলী হবে, কেউ চিকিৎসক, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ শিল্পোদ্যোক্তা, কেউ চিত্রকর, কেউ চিত্রনির্মাতা। নানান পেশায় তারা চলে যাবে। যে যেখানেই যাক, যে পেশায় যুক্ত হোক। এদের ভিতর কেউ যদি কৃষির এই ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা মনে রেখে কৃষির উন্নয়নে সামান্যতম কাজ করে তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে। কিছু না হোক, ফল ফসল উৎপাদনকারী কোনো কৃষকের হাতে হাত রেখে এটুকু যদি বলে, ‘আমি জানি, কৃষি খুব কষ্টের কাজ, এক মহান কাজ।’ তাহলেই সফল হবে এ উদ্যোগ। এটাই হবে সার্থকতা। লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ঢাকাওয়াচ/স
নির্বাচনি খেলায় এরশাদীয় তরিকা
প্রবচন আছে, এক নদীতে দুবার স্নান করা যায় না। এর নিগূঢ় অর্থ হচ্ছে, নদী প্রবহমান। এই প্রবচন রচনার সময় বাংলাদেশের নদীর ভবিষ্যৎ দশা প্রসঙ্গ হয়তো বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এদিকে কারোরই অজানা নয়, আমাদের অনেক নদীই আর প্রবহমান নয়। আবার হারিয়েও গেছে অনেক নদী। যাও আছে তাও আবার যায় যায়। অনেকগুলো উন্নয়নের নামের সর্বনাশা তাণ্ডবে মরণদশায় ভুগছে! ফলে নদী নিয়ে প্রবচন এখন আর আমাদের দেশে প্রযোজ্য নয়। এটি হতাশার। তবে আর একটি আশার কথা আছে। আর এটি প্রবচন নয়। বিজ্ঞান বলে, কোনো কিছুই মৌলিক সৃষ্টি হয় না, রূপান্তর হয় মাত্র। কিন্তু হতাশার কথা হচ্ছে, বিজ্ঞানের এ সূত্রের বিরূপ প্রভাব রাজনীতিতে দৈত্যের মতো অনুপ্রবেশ করেছে। যা পাকিস্তানের শাসক জেনারেল আইয়ুব খানের উত্তরাধিকার হিসেবে আমাদের দেশে কপিপেস্ট করেছেন জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদ। তবে এ ক্ষেত্রে জেনারেল এরশাদের সাফল্য আকাশচুম্বী। বলা হয়, আদর্শিক পিতা আইয়ুব খানকেও অনেকখানি ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন জেনারেল এরশাদ। ’৭১-এ পরাজিত চক্রের থিংক ট্যাংকের নীলনকশায় ’৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটানোর পর দেশ উল্টো রথে চলতে শুরু করে। এ ধারায় যেসব অপকর্ম হয়েছে তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে রাজনীতিকে মূল পর্যন্ত নষ্ট করে দেওয়া। এ ধারা একনাগাড়ে চলতে থাকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। জেনারেল এরশাদের পতন এবং ’৯১-এর সংসদ নির্বাচনের পর রাজনীতিতে যে ধারার সূচনা হয়েছিল তা কিন্তু স্থায়ী হয়নি। সঙ্গে আরও বলে রাখা ভালো, ’৯১-এর সংসদ নির্বাচনও ’৭১-এ পরাজিত শক্তির প্রতিভূ চক্র প্রভাবিত ছিল। যা ছিল খুবই সূক্ষ্ম। যে কারণে সেই নির্বাচনের ব্যালটে জাহাজ প্রতীক ছিল অনেকটা নৌকার আদলে। যাকে ‘বড় নৌকা’ ভেবে অনেকেই সিল মেরেছেন। আরও অনেক কারসাজিতে সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারেনি। যে খেলা আগেভাগে আঁচ করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। বরং নেতারা ছিলেন মসনদে বসার আবেশে বিভোর কিন্তু স্বপ্নভঙ্গের পর দেখলেন তাদের হাসি অন্যেরা হাসে। একটি সিনেমা ছিল, ‘কার হাসি কে হাসে।’ স্মরণ করা যেতে পারে, ’৯১-এর নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ‘সূক্ষ্ম কারচুপির’ অভিযোগ তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এরপর কখনো সূক্ষ্ম আবার কখনো স্থূল কারচুপির মধ্য দিয়েই এগিয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন। আর এ কারচুপির বিরূপ প্রভাবে রাজনীতি কেবল কলুষিত হতেই থেকেছে। এর মধ্যে ’৯৬ সালে কোনো রকম ক্ষমতায় আসে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগ এবং সেটি ছিল খুবই নাজুক সরকার। তবে এই দশা কাটিয়ে এবং ২০০১ সালের পরাজয়ের ধারাকে পাল্টে দিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ গঠিত সরকার দ্রুত শক্ত ভিত্তি সৃষ্টি করতে পেরেছে। ফলে ২০১৪ সালের খেলা সামলিয়ে ২০১৮ সালে পাল্টা খেলা খেলে ২০২৪ সালের দোরগোড়ায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে এবার বিদেশিদের হস্তক্ষেপে আওয়ামী লীগের জন্য খেলা খুবই কঠিন হয়ে গেছে। আর এ খেলার জন্য অনেকটাই নির্ভর করতে হয়েছে এরশাদীয় তরিকার ওপর। যে কারণে রাজনীতির কিছু আবর্জনা দিয়ে নতুন দল গঠন করতে হয়েছে। যাদের না আছে ভোট, না আছে দল। এমনকী এদের অতীত বলেও কিছু নেই। ফলে ভোটের মাঠে কচুরিপানাসম উপযোগহীন এরা। অথচ এদের দায় নিতে হচ্ছে প্রাচীনতম দল আওয়ামী লীগকেই। অনেকেই মনে করেন, বিএনপি নির্বাচন থেকে দূরে থাকার কারণে সরকার যে মাত্রায় বেকায়দায় পড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি হাসির পাত্র হয়েছে হেনোতেনো নামে হরেক কিসিমের দল ও জোট নির্বাচনি মাঠে নামিয়ে। অবশ্য এই ফাঁদে ১৯৯৬ সালেই পা দিতে হয়েছিল আওয়ামী লীগকে। আর এবার নিমজ্জিত হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। তবে এও বলা হচ্ছে, বিভিন্ন বাস্তবতায় ১৯৯৬ সালে যা অনিবার্য ছিল তার রেস টানতে হয়েছে ২০০৯ ও ২০১৪-এর সরকারের আমলেও। তবে এটা ২০২৪ সালের নির্বাচনে এড়ানো যেত। যা করা গেছে ২০১৮ সালের সরকার গঠনের সময়। কিন্তু তা করা হয়নি। বরং উল্টোই একটু বেশি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যা দগদগে ঘায়ের মতো দৃষ্টান্ত হয়েছে আছেন মেজর শাহজাহান ওমর। বরিশাল অঞ্চলে দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী চক্করে নাজেহাল হয়ে আওয়ামীবিরোধী হয়ে গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পরপরই। ৪৫ বছর বিএনপির ব্যানারে থাকার পর আওয়ামী লীগে গাঁটছড়া বেঁধেছেন এবার। অনেকেই এ বিষয়টিকে তার ফিরে আসা বলছেন। কিন্তু এ কাজটি করা হয়েছে খুবই কাঁচাভাবে। অদ্ভুত মামলায় জামিন পাওয়ার এক দিন পরেই বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ঘুচিয়ে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর ঘোষণা করলেন, নির্বাচন করবেন নৌকা মার্কা নিয়ে। হঠাৎ কেন শাহজাহান ওমরের এমন ডিগবাজি? এ কাণ্ডের যুক্তি হিসেবে তাঁর কথা কি খুব একটা গ্রহণযোগ্য? আর এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের ১ ডিসেম্বর বলেছেন, ‘কৌশলগত কারণে ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমরকে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে।’ প্রশ্ন হচ্ছে, কোন কৌশল? কিন্তু জানা কথা, এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে না। ফলে যার যার মতো করে এর উত্তর তৈরি করা হচ্ছে। যার সঙ্গে মিলে যায় সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের তরিকা। কারাগার থেকে বেরিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ যখন এরশাদ সরকারে যোগদান করেন তখন তাঁর পিঠে লাঠির আঘাতের দাগ বিরাজমান ছিল বলে রটনা আছে। আর একজন ব্যারিস্টার, আবুল হাসানাত জেনারেল এরশাদের সঙ্গে যোগদানের দুই দিন আগে বলেছিলেন, ‘এরশাদের সঙ্গে গেলে মানুষ আমার মুখে থুথু দেবে!’ এদিক থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান ওমর কিঞ্চিত আলাদা। তিনি আগে নয়, বাগাড়ম্বর করেছেন আওয়ামী খাতায় নাম লেখানোর পর। এটা সবারই জানা। কিন্তু মানুষ এখন কোন দিকে থুথু দিচ্ছে তা হয়তো জানা নেই। এদিকে স্বাধিকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা মেনন-রব-ইনুদের কেবলই দরপতন হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে। এদের মধ্যে অসময়ের কলরব হিসেবে পরিচিত আ স ম আবদুর রব জেনারেল এরশাদের সময় একটি চাকরি প্রত্যাশা করে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছিলেন। হয়তো তিনি তাঁর মতোই আর এক ‘খলিফা’ আবদুল কুদ্দুস মাখনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেছিলেন। উল্লেখ্য, আবদুল কুদ্দুস মাখন সে সময় মাফিয়া ডন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের কোম্পানিতে চাকরি করতেন। এদিকে আ স ম রবের ভাগ্য ভালো, তিনি এই মাপের চেয়ে অনেক বড় মাপের চাকরি পেয়েছিলেন। তাকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার চাকরি দিয়েছিলেন সামরিক সরকার। সে সময় তাঁকে গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা বলা হতো। রাজনীতির কী পরিহাস! এই আ স ম রবকেই মন্ত্রী করেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাঁর ’৯৬-এর সরকারের। এ সময় রবের অতীত হয়তো বিবেচনায় নেওয়া হয়নি, হয়তো গভীরভাবে ভাবা হয়নি তার ভবিষ্যৎ। কেবল তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মিটানো হয়েছে। একই ধারায়ই হয়তো আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখেই এবার ‘হেনমূল, তেনমূল, অর্শ্বমূল’ নামের দলগুলো মাঠে নামানো হয়েছে। আর এদের আস্ফালন দেখে হয়তো মেনন-ইনু-দিলীপরা ভিতরে ভিতরে শিশুতোষ অস্থিরতা বোধ করছেন। শুধু তাই নয়, মিরসরাইতে ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার মতো ভোট না থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু কন্যার দয়ায় দীলিপ বড়ুয়া কেবল সংসদ সদস্য নন, মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছে। আর আমাদের দেশে মন্ত্রী হওয়া মানেই অনেক ক্ষেত্রে আলী বাবার স্বর্ণ গুদামের দ্বার খুলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। বলা হয়, বাম নেতা দীলিপ বড়ুয়া এই কামে মোটেই পিছিয়ে ছিলেন না। এখন জোট নেতাদের নামে সংসদীয় আসন বরাদ্দ দিতে বিলম্ব হওয়ায় যারা অস্থির হয়ে উঠেছেন তাদের মধ্যে বেশি অস্থিরতায় ভুগছেন দীলিপ বড়ুয়া। শুধু তাই নয়, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জ্ঞান দেওয়ার উত্তেজনায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি অত সোজা না!’ এর আগে তিনি আরও বলেছেন, ‘কাউয়া আওয়ামী লীগাররা আমাদের বলে একজইন্যা পার্টি।’ আওয়ামী লীগে কে ‘কাউয়া’ কে কাক, কে কুকিল সেটি ইতিহাসই বলে দেবে। তবে অতীত যা বলে তা কিন্তু খুব একটা নিরাপদ নয়। স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনালগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগকে উজান ঠেলে আগাতে হয়েছে। আর ১৫ আগস্টের পর দলটি টিকে গেছে অতি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের রক্ত-ঘামে। যা বহুবার বঙ্গবন্ধুকন্যা স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করেছেন। এটিই বাস্তবতা। আর ‘এক নেতার এক দল’ আসলে কোনো কাজেই আসে না। বিপদের সময় এরা নিশ্চুপ হয়ে যায়। নিজেদের গুটিয়ে নেয় শামুকের মতো। আর বিপদ ঘনীভূত হলে যাত্রাগানের বিবেকের মতো ‘সত্য ভাষণ’ দেন। যে ধারায় রাতে ভোট হওয়ার কথা এবং নিজের ভোট নিজে না দিতে পারার ক্ষোভ বড় গলায় উচ্চারণ করেছেন রাশেদ খান মেনন। অবশ্য ক্যাসিনো কাণ্ডের নানান খবরের পালে জোর হাওয়া লাগলে রাশেদ খান মেননের জোসের হাওয়া কোথা থেকে যেন বেরিয়ে যায়। অবশ্য তার জীবনের হাওয়াই একবার বেরিয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়া সরকারের সময় সর্বহারা গ্রুপের গুলি খেয়ে। সেবার তিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচেছেন। উল্লেখ্য, তাঁর নিজের এলাকা বরাবরই সর্বহারা উপদ্রুত। এর সুবিধা-অসুবিধা দুই আছে। যেমন ’৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে বরিশাল শহরের ভোট কেন্দ্রে যে জালাল সর্দার কর্তৃক তিনি অপদস্থ হয়েছেন সেই জালাল সর্দার নবগ্রাম রোডের নিজ বাড়িতে সর্বহারার গ্রুপের গুলিতে নিহত হয়েছেন। আসলে রাজনীতির ঐতিহ্যের ধারক হোক অথবা হোক ভুঁইফোঁড়, জনবিচ্ছিন্ন নেতারা আসলে কোনো কাজে লাগে না। এরা পরগাছা। আশ্রিত হিসেবে এরা কেবল নেয়। দেয় না কিছুই। এরা শীতের পাখিরও অধম। শীতের পাখিরা মাছ-শস্য খেয়ে সাবার করলেও মল ত্যাগ করে যায়। গরু মেরে জুতো দানের মতো হলেও কিছু দেয়। কিন্তু রাজনীতিতে শীতের পাখিরা কিছুই দেয় না, রেখে যায় না কিছুই। যে নামেই আখ্যায়িত করা হোক না কেন এরা আসলে রাজনীতির আগাছা। এরপরও রাজনীতির আগাছাদের কেন বৃক্ষসম সমাদর করেন আওয়ামী লীগ প্রধান? এই সমাদরের ধারা আরও কত বছর চলবে- কঠিন সময় সামনে রেখে এ মোটেই কোনো সাধারণ প্রশ্ন নয়। অনেকের বিবেচনায়ই এটি মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন! লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ঢাকাওয়াচ/স
আরও আগে মহানবীর জীবনী না পড়ে বড় ভুল করেছি: আসিফ নজরুল
মহানবী হযরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। রোববার বিকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া ওই স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘আমার জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে ধর্মীয় বই না পড়ে। এখন যখন পড়ি, বিশেষ করে আমাদের প্রিয় মহানবীর (সা.) জীবনী, মনে হয় কি বিরাট ভুল করেছি। উনি কি শুধু মহানবী ছিলেন? প্রায় ৭/৮টা উনার জীবনীগ্রন্থ পড়েছি। এর মধ্যে আছে ক্যারেন আর্মস্ট্রং, মার্টিন লিংস, আদিল সালাহির মতো স্বনামধন্য লেখকদের বই। উনার সম্পর্কে আগের চেয়ে অনেক বেশ জানি এখন। আমাদের মহানবী (সা.) শুধু শ্রেষ্ঠ নবী ছিলেন না; তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ সমরনায়ক, রাষ্ট্রনায়ক এবং দলনেতা। তিনি যে রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিলেন তার মতো শান্তিময়, কল্যাণকর ও মানবিক রাষ্ট্র পৃথিবীর ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যাবে না। উনার বিনয়, সততা, পরোপকার, দয়া ও ক্ষমাশীলতা ছিল তুলনাহীন। আমাদের এক শ্রেণির শিক্ষিত মানুষ উনার গুণগান শুনতে অস্বস্তি বোধ করেন। আরেক শ্রেণি না জেনে মন্তব্য করেন। আল্লাহর কাছে শোকর করি, আমি দেরিতে হলেও মহানবীর (সা.) ওপর পড়াশোনা করছি। যদি আমার ভাগ্যে থাকে, কিশোর পাঠকদের উপযোগী করে উনার জীবনী রচনারও ইচ্ছা রাখি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।’ ঢাকাওয়াচ/স
বাংলাদেশে সমুদ্র দূষণ রোধে প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস
আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার বেশি সমুদ্র এলাকা এখন বাংলাদেশের। এছাড়া ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৪৫ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহিসোপানের তলদেশে সবধরনের প্রাণিজ-অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রে বিরোধপূর্ণ ১৭টি ব্লকের ১২টি পেয়েছে বাংলাদেশ এবং ভারতের কাছ থেকে দাবিকৃত ১০টি ব্লকের সবগুলোই পেয়েছে বাংলাদেশ। এসব ব্লক থেকে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া সম্ভব। ২ বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল প্রদত্ত এ রায় দুইটি বাংলাদেশের জন্য ‘সমুদ্র বিজয়’ নামে আখ্যায়িত হয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয়ের পর আন্তর্জাতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ একটি দেশ হিসেবে আলোচিত ও স্বীকৃত বাংলাদেশ, যে দেশে মানব স্বাস্থ্য এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি অন্যতম সমস্যা সামুদ্রিক ও উপকূলীয় দূষণ। বাংলাদেশের সমুদ্রাঞ্চল ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার। এই বিশাল সমুদ্র সীমার দূষণ ঠেকাতে না পারলে আমাদের এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জলজ প্রাণিজগৎ বিপন্ন হবে, হুমকির মুখে পড়বে জলবায়ু, মানবসভ্যতা। সাম্প্রতিক সময়ে ডলফিন, তিমি, শুশুকসহ বৃহৎ আকৃতির সামুদ্রিক প্রাণীকে উপকূলের কাছাকাছি আসতে দেখা যায় এবং এসব প্রাণী অতিমাত্রায় প্লাস্টিক-দূষণের শিকার হচ্ছে। একইভাবে ভয়াবহ দূষণে রোগাক্রান্ত ও আহত অবস্থায় মরছে বিপুলসংখ্যক সামুদ্রিক জীব। বাংলাদেশের উপকূলীয় দূষনের একটি উদ্ভূত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বিভিন্ন জলজ ব্যবস্থায় প্লাস্টিক দূষণ। দেশের গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সমস্যাকে বোঝার ও তা সমাধান করার জন্য আমাদের জ্ঞান ও চর্চা এখনো অনেকটা সীমিত। বলতে দ্বিধা নেই যে, আমাদের জাতীয় বোধগম্যতা এবং সক্ষমতা এ ক্ষেত্রে একটি বড় ধরণের সংযোগ বিচ্ছিন্নতা চিহ্নিত করে। বাংলাদেশের সুস্বাদু পানি এবং সামুদ্রিক পরিবেশে প্লাস্টিক দূষণের উপর এখানে সমস্ত উপলব্ধ পর্যালোচনা করার সুযোগ খুবই সীমিত। বাংলাদেশের উপকূলীয় ও সামুদ্রিক পরিবেশের উদ্ভিদ, প্রাণীজগত, হাইড্রোকার্বন, খনিজ দিয়ে সমৃদ্ধ করছে এর আমানত এবং বাণিজ্যিকভাবে শোষণ যোগ্য ভাল স্টক মাছ এবং সামুদ্রিক খাবারের উপর. বাংলাদেশে, সামুদ্রিক দূষণকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, একটি ভূমি ভিত্তিক এবং অন্যটি সমুদ্র ভিত্তিক। সমুদ্র দূষণের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে মিউনিসিপ্যাল বর্জ্য, শিল্প বর্জ্য, জাহাজ ভাঙ্গা কার্যক্রম এবং কৃষি বর্জ্য। পানির বৃহৎ আধার সমুদ্রকে বলা হয় ‘পৃথিবীর রক্তপ্রবাহ’। এ মহাসমুদ্রগুলোকে মহাভাগাড়ে পরিণত করার সম্পূর্ণ দায়ও আমাদের। অক্সিজেনের ৩০ শতাংশের জোগান আসে সমুদ্র থেকে, অথচ এই অক্সিজেন-ভান্ডারকে আমরা প্রতিনিয়ত বিনষ্ট করে চলছি। গবেষণার তথ্য হচ্ছে, বছরে ২৫০ মিলিয়ন টন বর্জ্য নিক্ষিপ্ত হচ্ছে সমুদ্রে। এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্যে ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়ে সমুদ্র বিপন্ন হচ্ছে। এ কারণে পানি ও প্রাকৃতিক পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি বহু সামুদ্রিক প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটছে। হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে ‘সুনীল অর্থনীতি’। বাংলাদেশে সমুদ্র দূষণের কারণগুলোর মধ্যে টেক্সটাইল এবং ডাইং শিল্প বার্ষিক ১২.৭ থেকে ১৩.৫ মিলিয়ন বর্জ্য জল নিঃসরণ করে এবং ২০ শতাংশ মিষ্টি জলকে দূষিত করে। শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড গুলো এক বছরে প্রায় ২২.৫ টন পলি ক্লোরিনযুক্ত বাইফিনাইল ডাম্প করে। সামুদ্রিক তেল দূষণের ৫০ শতাংশ এরও বেশি শহুরে কার্যকলাপ থেকে আসে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে, অব্যবস্থাপিত প্লাস্টিক বর্জ্যের মাত্রার নিরিখে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অবস্থান দশমে। বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণের উপর আলোচনা, পর্যালোচনা ও অধ্যয়ন খুবই সীমিত এবং সামগ্রিক পর্যবেক্ষণ প্রতি তা তির্যক। ২০০৬ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে ২৪টির মতো গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। ৯টির প্রতিবেদনে সামুদ্রিক পরিবেশে প্লাস্টিক দূষণের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে, এছাড়াও ৮টি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে এবং শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু পানির পরিবেশের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলার লক্ষ্যে জাতীয় কোন কার্যকর ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রণয়ন হয়নি। এ নিয়ে গবেষণার ও অভাব রয়েছে, নদীর প্লাস্টিক পরিবহন নিরীক্ষণ ও মডেল এবং জলজ জীবের জন্য প্রভাব পরীক্ষা করায় আরও কাজের প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ জানিয়েছে বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন টন আবর্জনা এবং বে অব বেঙ্গল মধ্যে পলি পাঠায় বর্তমানে, এলএমপি সবচেয়ে বেশি সামুদ্রিক দূষণের একটি সাধারণ রূপ যার জন্য দায়ী ৭৫ শতাংশ বা তারও বেশি, আরেকটি অনুমান পরিসংখ্যান দেয় বিশ্বব্যাপী তথ্যের ভিত্তিতে ৫০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত, সমুদ্র জলে উপকূলীয় জল প্রবাহিত হয়ে প্রবেশ করে ভূমি, ড্রেন, নদী, চ্যানেল এবং অন্যান্য প্রবাহ থেকে যা সামুদ্রিক দূষণের প্রায় ৪৪ শতাংশ এছাড়াও বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক দূষণের ৩৩ শতাংশ জন্য দায়ী করা হয় জাহাজ চলাচলকে। বাংলাদেশে এলএমপির প্রভাব রয়েছে বর্জ্য পরিশোধন সুবিধার অভাবসহ নগরায়ণ, শিল্পায়ন, কৃষি, পলি ইত্যাদি সামুদ্রিক এবং উপকূলীয় সম্পদের অবনতি ঘটায়, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আন্ডারলাইন করে সমুদ্র ইকোনমিতে পৌঁছতে প্রচন্ড বাধা দেয়। বাংলাদেশে কিছু আইন ও প্রবিধান রয়েছে যা সমুদ্র সুরক্ষার জন্য বিশ্বব্যাপী চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধন করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষনে জাতীয় জনমত গঠন করা ও আইনি শাসনের পাশাপাশি দেশীয় স্টেকহোল্ডারদের হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাওয়া ভূমিভিত্তিক থেকে সামুদ্রিক পরিবেশকে রক্ষা, বাংলাদেশের সমুদ্র ও উপকূলকে দূষণমুক্ত করা, বাংলাদেশের মানব স্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য প্রধান হুমকিকে মোকাবেলা করা। লেখক : ডেপুটি চিফ রিপোর্টার, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)। ঢাকাওয়াচ/স
একটি দুর্ঘটনা ও সারাজীবনের কান্না
১ টরন্টোতে গাড়ি দুর্ঘটনায় একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার রাত সাড়ে এগারোটায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বাংলাদেশি তিন শিক্ষার্থী মারা গেছেন। একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত শিক্ষার্থী গাড়ি ড্রাইভ করছিলেন। নিহত শিক্ষার্থীরা হলেন শাহরিয়ার খান, এঞ্জেলা বারৈ ও আরিয়ান দীপ্ত। আহত শিক্ষার্থী হচ্ছেন নিবিড় কুমার দে। সবার বয়সই ১৭ থেকে ২১ এর মধ্যে। এই ঘটনায় আমার মনটা ভেঙে গেছে। যেসব বাবা মা সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়েছেন উচ্চশিক্ষার জন্য তাদের জন্য এই ঘটনা কতবড় শোকের তা প্রকাশ করা সম্ভব না। তারা আর কোনোদিন সন্তানদের ফিরে পাবেন না। যে যায় সে আর ফেরে না। অনেক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে আমরা সন্তানদের বিদেশ পাঠাই। সেখানে তারা কত কষ্ট করে। দেশে যেমন বাবা মা ভাই বোনের কাছে আদরে থাকে বিদেশে তেমন না। সেখানে পড়াশুনার বাইরেও অনেক কিছু করতে হয় ছোট ছোট সন্তানদের। নিজের রান্নাটা পর্যন্ত তারা নিজেরা করে, কাপড় ধোয়া, ডিশ ওয়াশ করতে হয়। বাইরে কাজ করতে হয়। মধ্যবিত্তরা অনেক কষ্টে টাকার সংস্থান করে সন্তানকে বিদেশ পাঠান। কানাডায় পড়াশুনা অনেক ব্যয়বহুল। সেই আদরের সন্তানদের এভাবে অকাল মৃত্যুতে হৃদয় রক্তাক্ত হয়েছে। ২ কানাডার হাইওয়েতে ওভার স্পীডে গাড়ি চালানো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এতে নিজের বিপদতো ডেকে আনা হয়ই অন্যেরও বিপদ ঘটতে পারে। জীবননাশসহ পঙ্গু হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাছাড়া টিকিট খেতে হয়, ডিমেরিটস পয়েন্টস আছে, কোর্টের বারান্দায় দৌঁড়াতে হয়, এমনকি লাইসেন্স সাসপেন্ডসহ জেলে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তার উপর ইন্সুরেন্সের হ্যাপাতো আছেই। নিজের দোষে কিছু হলে ইন্সুরেন্সে হাই হয়ে যাবে। কানাডায় গাড়ি চালানোতে অনেক কড়াকড়ি। ড্রিঙ্ক এন্ড ড্রাইভ জিরো টলারেন্স। সিঙ্গল লেনে ওভারটেকিং করা যায় না। লাইসেন্সের ক্ষেত্রে তিনটি ধাপ পার হতে হয়। জি লাইসেন্স ছাড়া হাইওয়েতে গাড়ি চালানো যায় না। প্রথমে জি-টু, তারপর জি-ওয়ান, তারপর জি লাইসেন্স নিতে হয়। আমার সন্তানদের সবসময় বলি গাড়ি সাবধানে চালাবা। কখনও ওভারস্পীড করবা না। স্টপ সাইনগুলোতে নিয়ম মানবা। হিডেন বা রেডলাইট ক্যামেরা খেয়াল করবা। কারো সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবা না। গাড়ি যেনো তোমার নিয়ন্ত্রণে থাকে। ৩ নিজের সাবধানতা নিজের কাছে। অন্যে ভুল করলেও নিজেকে সেভ করতে হবে। টরন্টোর মেজর হাইওয়েতে যেমন ৪০১, ৪২৭ বা ৪০৪ গুলোতে সর্বোচ্চ গতিবেগ ১০০ কিলোমিটার। কিন্তু আলোচ্য দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িটি ১৪০ কিলোমিটার গতিতে চলছিল বলে বলা হয়েছে। লেন চেঞ্জ করার সময় এই গতিবেগ অতি মারাত্মক। গাড়ি কন্ট্রোল করা কঠিন। যারা বিদেশে সন্তানদের পাঠাবেন আমার অনুরোধ আপনার সন্তানকে সাবধানে গাড়ি চালাতে বলবেন। একটা দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না। যে ঘটনা ঘটেছে তা পুরো কমিনিউনিটিকে শোকে মুহ্যমান করেছে। এমন ঘটনা আর না ঘটুক এটাই প্রত্যাশা। ঢাকাওয়াচ/স
মনপুরায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ জরুরী : শাখাওয়াত সজীব
শাখাওয়াত সজীব : শতভাগ এলাকায় ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকার কাজ করছে, তা বাস্তবায়নেরও পথে। অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কথা ভাবা যেত না, সেখানেও বাতি জ্বলছে, বৈদ্যুতিক পাখা ঘুরছে। তবে কিছু এলাকায়, বিশেষ করে দ্বীপ এলাকায় বিদ্যুৎ গেছে নামে মাত্রা। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে তা সাধারনের ক্রয় ক্ষমতার উর্ধে। কারখানা গুলু চলছে না তাতে। ভোলার মনপুরা উপজেলা সেখানে বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সৌরবিদ্যুৎ আছে। কিন্তু সে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে গুটিকয় মানুষের ঘরে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী শতভাগ বিদ্যুতায়ন বাস্তবায়নে ভোলা জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলসহ বাংলাদেশের অনেক দুর্গম চরে ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মনপুরা একটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলা হওয়া সত্ত্বেও দেড় লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর এ উপজেলায় আজও জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। এতে মনপুরার সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে অনলাইন ক্লাস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না। সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত বিদ্যুতের অভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল সব ধরনের ব্যবসা ও শিল্প সম্প্রসারণে ব্যাঘাত ঘটছে। এতে মনপুরার বাসিন্দারা নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সাগরকন্যা মনপুরায় রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। মৎস্য আহরণের মাধ্যমে জিডিপিতে মনপুরার মৎস্যজীবীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কিন্তু এই মৎস্যজীবীদের আহরিত রুপালি ইলিশ সংরক্ষণ কষ্টসাধ্য শুধুমাত্র বিদ্যুৎ না থাকায়। এই অবস্থায় মনপুরাকে পুরোপুরি আলোকিত করতে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেই প্রকল্পেও নবায়নযোগ্য এ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। সমস্যা হলো, এই বিদ্যুতে শিল্পকারখানা চালানো যাবে না। এ কারণেই এলাকার লোকজন মনপুরাকে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করার দাবি জানাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি যথেষ্ট যৌক্তিক। এখনে যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে বলে বলা হচ্ছে, তা আসলে স্থানীয় মানুষের খুব একটা কাজে আসবে না। এখানে বর্তমানে তিন হাজারের মতো গ্রাহক দিনে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। বাংলাবাজার, সিরাজগঞ্জ বাজার ও কাউয়ারটেক এলাকায় সৌরবিদ্যুতের যে তিনটি মিনি গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, তা ‘প্রি-পেইড’ পদ্ধতিতে ৩০ টাকা ইউনিট দরে কিনতে হয়। এই দামে বিদ্যুৎ কেনা সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে। সৌরবিদ্যুতের বাইরে ডিজেলচালিত ইঞ্জিনে ৭০০ থেকে ৭৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে ওজোপাডিকো (ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড)। দিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য সেই বিদ্যুৎ পাচ্ছেন উপজেলা শহরের হাজিরহাট বাজার ও আশপাশের ৮৫৪ গ্রাহক। এ অবস্থায় ভোলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন মনপুরাকে লক্ষাধিক মানুষের নাগরিক অধিকার ও আধুনিক ভাবে গড়ে তুলতে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক। লেখক: সাংবাদিক। ঢাকাওয়াচ/স
‘বন্ধ করুন লাইক ও শেয়ারের সংখ্যা বাড়ানোর এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা’
কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরয়ার: ধর্ষণ, ধর্ষিতা আর ধর্ষককে পণ্য করে মিথ্যাচার আর তথ্য বাণিজ্যের অসুস্থ প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে ঘৃণা আর প্রতিবাদ। পৃথিবীজুড়ে অধিকাংশ ধর্ষিতা মেয়েরা সমাজের কাছে তাদের ধর্ষণের ঘটনাকে প্রকাশ করার সাহস রাখে না। তারা “ধর্ষিতা মেয়ে”র অপবাদ বুকে চেপে বাঁচতে চায় না। তাদের কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তাদের কারো কারো মা-বাবারা ধর্ষিতা মেয়েকে বোঝা হিসেবে মনে করেন। অথচ আমাদের বাংলাদেশের প্রাণপ্রিয় একটি ছোট্ট তরুণী ধর্ষিতা হওয়ার পর তার ধর্ষণের ঘটনা চেপে যাওয়ার নানা পরামর্শ, প্ররোচনা আসার পরেও সে ধর্ষণের কথা স্বীকার করার সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়। সাহসী সোনার টুকরো মেয়েটি মনে মনে ভাবে এভাবে ধর্ষণের ঘটনা চেপে গেলে সমাজে ধর্ষকরা হেঁটে বেড়াবে বুক ফুলিয়ে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সে ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে র্যাবের গোয়েন্দা কর্মকর্তা কে বলে যে, “পৃথিবীর সব চেহারা ভুলে গেলেও আমি সেই ধর্ষকের চেহারা ভুলবো না”। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা সাদেকা হালিম তাকে দেখতে গেলে সে ধর্ষকের বর্ণনা দেয়। যা র্যাব কর্তৃক ধৃত ধর্ষণকারীর সাথে প্রায় হুবহু মিলে যায় বলে সম্মানিত অধ্যাপিকা তার টেলিভিশন টকশোতে মন্তব্য করেছেন। ধর্ষক মজনুর ছবি দেখানোর আগে মেয়েটিকে অপর আরেকজন সন্দেহভাজন ধর্ষকের ফটো দেখানো হলে সে সাথে সাথেই সময়ক্ষেপণ না করে বলে দেয় যে এটা সেই পাষণ্ড ধর্ষক নয়। অথচ ধর্ষক মজনুর ছবি দেখার সাথে সাথেই মেয়েটি তাকে সনাক্ত করে। স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এমন একটি সাহসী সোনার টুকরো মেয়ে একটি হতদরিদ্র যুবককে ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য মিথ্যে কথা বলবে এমন জঘন্য বিকৃত মানসিকতার চিন্তা আমাদের সমাজের কিছু কিছু মানুষের মনে কীভাবে আসে সেটা ভাবতেই লজ্জা হয়! এমন একটি সাহসী মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দেশের এবং পৃথিবীর সব ধর্ষিতা নারীদের পাশে দাঁড়ানোর সামাজিক আন্দোলনকে সংঘবদ্ধ না করে আমরা কেউ কেউ বলছি এই দরিদ্র ছেলেটি নাকি ধর্ষক নয়। তাহলে কি মেয়েটি মিথ্যা কথা বলছে? মজনু আসল ধর্ষক নয় এমন অদ্ভুত প্রচারণা করে আমরা আমাদের লাইক, স্ট্যাটাস,কমেন্ট বাড়াচ্ছি বটে। কিন্তু আমরা কি একবারও চিন্তা করছি যে আমরা সাথে সাথে আমাদের একটি ধর্ষিতা বোনকে, আমাদের একটি কোমলমতি হীরের টুকরো সন্তানকে মিথ্যেবাদী বানিয়ে দিচ্ছি? ধর্ষক মজনু ধরা পড়ার পর র্যাবের কাছে স্বীকার করেছে যে সে ধর্ষণ করেছে। সেটা না হয় নাই বা বললাম। সেটা হয়তো কেউ বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু ধর্ষকের কাপড়-চোপড় এবং ধর্ষিতার মেডিকেল চেকআপের ডিএনএ টেস্ট থেকে কিছুদিনের মধ্যেই এই সূর্যের আলোর মত সত্য ঘটনা বের হয়ে আসবে যে এই দুর্বল দাঁতভাঙ্গা যুবকটিই ধর্ষণ ধর্ষক ছিল। তখন হয়তো সোশ্যাল মিডিয়াতে অন্য কোনো ইস্যু চাউর হয়ে যাবে। তারপরও আমরা, কিছু সচেতন মানুষ অপেক্ষা করব। অপেক্ষা করব এই প্রত্যাশায় যে, যখন ধর্ষক আদালতের সামনে অবলীলায় স্বীকার করবে তার ধর্ষণের কথা, যখন ধর্ষিতা নিজে আইনজ্ঞ এবং বিচারকের সামনে ধর্ষককে শনাক্ত করবে, এবং যখন ডিএনএ টেস্ট এর রেজাল্ট বিচারকের হাতে পৌঁছে যাবে, তখন এসব সমালোচক, যারা বলছেন মজনু আসল ধর্ষক নয়, তারা কি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইবেন? কিংবা ক্ষমা চাইবেন আমাদের এই কোমলমতি সাহসী মেয়েটির কাছে? যে সাহসী মেয়েটি কারো কারো স্ট্যাটাস জনপ্রিয় করার হাতিয়ার হল! আর সেই সাথে হয়ে গেল একটি মিথ্যাবাদী মেয়ে? ছি! দয়া করে বন্ধ করুন আপনাদের এই স্ট্যাটাসে লাইক, কমেন্ট আর শেয়ারের সংখ্যা বাড়ানোর এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা। আপনাদের কাছে, আপনাদের বিবেকের কাছে করজোড়ে অনুরোধ করছি, দয়া করে বন্ধ করুন জঘন্য সমালোচনার এই অসুস্থ সংস্কৃতিকে। র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে যোগদানের পর একটি পেশাগত দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আমার দেওয়া এটা প্রথম স্ট্যাটাস। ধর্ষককে ধরতে পারার তৃপ্তির ঢেকুর তোলার জন্য আমি এই স্ট্যাটাস দেইনি। মনের মধ্যে কয়েকটি পংক্তি আমাকে আমাকে তাড়িত করছিল এই স্ট্যাটাস দিতে- “হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা তোমার আদেশে। যেন রসনায় মম সত্যবাক্য ঝলি উঠে খরখড়গসম তোমার ইঙ্গিতে। …………………………. অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।” তাই ঘৃণা ছুড়ে দিলাম পৃথিবীর সব ধর্ষকদের উদ্দেশ্যে, আর ঘৃণা ছুড়ে দিলাম ধর্ষণের মতো একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা নিয়ে যারা মনগড়া তথ্য বাণিজ্য করে তাদের উদ্দেশ্য করে! লেখক: অতিরিক্ত মহাপরিচালক অপারেশন্স, র্যাব ফোর্সেস। ঢাকাওয়াচ/স