দীর্ঘ ১৬ বছর পর কিশোরগঞ্জে প্রকাশ্যে জামায়াতের রুকন সম্মেলন


TRT 03-10-2024/jamat-s_20241019_120647957.jpg
দীর্ঘ ১৬ বছর পরে প্রকাশ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে দিনব্যাপী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। 

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলীর সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি মাওলানা নাজমুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও ময়মনসিংহ অঞ্চল পরিচালক ড. সামিউল হক ফারুকী।

দীর্ঘ ১৬ বছর পর প্রকাশ্যে এ রুকন সম্মেলন কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় তোরণ নির্মাণ করে কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতে ইসলামী। আর এই সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

প্রধান অথিতির বক্তব্যে  জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জামায়াত সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি ফর্মুলা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে সেই ফর্মুলা আপাত দৃষ্টিতে অনেকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করছেন। পৃথিবীতে ৯১ বইটি দেশে সংখানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু রয়েছে। এই পদ্ধতিতে জনগণ দলকের মার্কাকে ভোট দেবে কোন ব্যক্তিকে ভোট দিবে না। যে যতো পারসেন্ট ভোট পাবে সে ততো সিট পাবে পার্লামেন্ট। আর পার্লামেন্টে করা যাবে সেটা ঠিক করে দিবে দল। কোন চোর, ডাকাত, ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ আর পার্লামেন্টে ঢোকার মতো কোনো সুযোগ পাবে না যদি এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়। বর্তমান সিস্টেমে এখন জায়গায় ভোট হলো তিন লাখ। এই তিন লক্ষ ভোটের মাধ্যমে যিনি এক লক্ষ একান্ন হাজার ভোট পাবেন তিনি পাশ করবেন। আর এক লক্ষ একান্ন হাজার ভোট নেওয়ার জন্য ওই সিটের মাঝে সবচেয়ে কালো টাকার মালিক যিনি, আর যিনি সবচাইতে বেশি সন্ত্রাসী, ঝর দাপট বেশি, মাস্তানি বেশি তাকেই দল সেখানে মনোনয়ন দেয় যাতে কেন্দ্র দখল করে এক লক্ষ একান্ন হাজার ভোট পেয়ে পাশ করতে পারে। এই সিস্টেম বাংলাদেশের মাটিতে বন্ধ করার জন্য সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির প্রস্তাব বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দিয়েছে। তখন দলগুলো তাদের ইস্তেহার জনগণের সামনে তুলে ধরবে জনগণ যে দলকে পছন্দ করবে সেই দলকেই ভোট দিবে। কারো ভোট মাইর যাবে না। এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সবাই পার্লামেন্টে যাইতে পারবে পার্সেন্টিস অনুসারে।

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বিষয়টিকে নিয়ে কোন কোন সাংবাদিক, কোনো কোনো বন্ধু বলছেন, তাইলে তো আওয়ামী লীগ সিট পেয়ে যাবে। এত ভয় কেন। যে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের মানুষ অগণতান্ত্রিক আচারণের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য আন্দোলন করে এই দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে সেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসার মত কোন পরিবেশ আছে। কোন মুখে জনগণের কাছে এসে তারা ভোট চাইবে। তারাতো জনগণের বুটের সিস্টেমটি ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। 

সুতরাং আপনারা এত ভয় পাচ্ছেন কেন। নির্বাচন দেন পার্সেন্টেজের আলোকে সিলেকশন হোক আগামী পাঁচ বছরের জন্য আমরা এটা দেখছি না আমরা আগামী ২০ বছরের পরে দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি, ১৫ বছর পরে কি হবে সেটা দেখতে পাচ্ছি এই দেশের রাজনীতিবিদরা সব ভদ্রলোক হয়ে যাবে। সবাই তখন ভোটারদের কে সম্মান করবে। আমার দল বাছাইতে হবে না। আর দলও তো কোন চিন্তা করবে খুনিদেরকে বসাইলে আমার দল আর টিকবে না। এইজন্য জামায়সতে ইসলামী সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে। বিশ্বাস করি কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা যেমন সংবিধানের স্বনিবেশিত হয়েছিলো ৯৬ সালে। এই সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি নির্বাচন ব্যবস্তাও জনগণ একদিন সমর্থন করবে ও সংবিধানের স্বনিবেশিত হবে এর ভিত্তিতে বাংলাদেশে পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে।

বাংলাদেশ থেকে ১৭ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছে আওয়ামী লীগ সরকার ও তার দুসোরেরা। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে হিজাব চুরি হয়। বাংলাদেশ থেকে তাও হয়েছ। দেশটাকে একটা মগের মুল্লুক তৈরি করেছিল। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলেছি যে সিস্টেম রয়েছে একানব্বইটি গণতান্ত্রিক দেশে কারা কারা বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করেছে ওয়েব সাইটে আছে তল্লাশি চালি প্রত্যেকের নাম তালিকা বের করে টাকা তো আনবেনই পাচারকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের সরকারি হিসাবে জন সংখ্যা হল ১৭ কোটি। আর বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১৮ লক্ষ কোটি টাকা। তারমানে যে শিশু আজকে বাংলাদেশে জন্ম নিল তার মাথায় ১ লক্ষ ১১ হাজার টাকা হল ঋণ। আমার মনে হয় একজন গ্রামের মানুষ সারা জীবনেও এক লক্ষ টাকা ঋণ নেয় না। অল্পতেই সন্তুষ্ট। কিন্তু রাষ্ট্রের ১ লক্ষ ১১ হাজার টাকা ঋণের দায় এদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার মাথায় আছে। এই ঋণের দায় থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য যারা ঋণ নিয়ে দেশের ডেভলপমেন্টের নাম নিয়ে দুর্নীতি করেছেন, অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তাদের সবার ব্যাপারে ইনভেস্টিগেশন করার পর তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তার বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, কেয়ারটেকার নির্বাচন ব্যবস্থা ফিরে আনতে আজকে সারা বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। এই অবদান হচ্ছে শুধু জামাতের। শুধু একটি অবদানের জন্যই তো জামাতকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করার উচিত ছিল। কিন্তু এই সাহসিকতা দৃঢ়তা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ দেখানোর সাহস হিম্মত আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের নেই।

তিনি তার বক্তব্য আরো বলেন, দেশের প্রয়োজনেও সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের পক্ষেই জামায়াতে ইসলামী।

জামায়াতে ইসলামী কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলী বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে এভাবে প্রকাশের সকল রুকনদের একসাথে নিয়ে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু কার্যাক্রম থেমে থাকেনি। গ্রুপ গ্রুপ করে স্মমেলন হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এবারে বড় পরিসরে জেলার প্রায় ৬০০ রুকনদের নিয়ে সম্মেলন হয়েছে।

এই সম্মেলনের মাধ্যমে রুকনদের সরাসরি ভোটের মধ্যে জেলার নতুন আমির নির্বাচিত হবে।
ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×