আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের দাবিতে রাজশাহীতে বিভাগীয় সম্মেলন
- রাজশাহী প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৩:৫১ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২৪
কার্যকর রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন করার দাবি জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের বিভাগীয় সম্মেলনে এমন দাবি জানানো হয়েছে।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ অডিটোরিয়ামে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ রাজশাহী বিভাগের উদ্যোগে ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়ে এই বিভাগীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে প্রশাসন ক্যাডার ছাড়াও অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের বিভিন্ন ব্যাচের অন্তত ৭০০ কর্মকর্তা অংশ নেন।
বিভাগীয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন গণপূর্ত ক্যাডারের অ্যাডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল গোফফার। বিশেষ অতিথি ছিলেন পোস্টাল ক্যাডারের কর্মকর্তা পোস্টমাস্টার জেনারেল কাজী আসাদুল ইসলাম।
এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগের সব জেলার আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সরকারের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদের জন্য ‘কোটা পদ্ধতি’ বাতিল করে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে।
এ ছাড়া পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় গঠন অর্থাৎ ‘ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার’ এবং পক্ষপাতদুষ্ট জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন পুনর্গঠন করাসহ বেশ কিছু দাবি এবং সুপারিশও করে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ।
কর্মকর্তারা বলেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী হলেও সংবিধান লঙ্ঘন করে প্রশাসন ক্যাডার উপ-সচিব ও তদূর্ধ্ব পদে কোটা পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে অন্যান্য ক্যাডার সদস্যদের সাংবিধানিক অধিকার অনৈতিকভাবে হরণ করে চলছে। ১৯৭৯ সালের ১ মার্চ সিনিয়র সার্ভিসেস পুল (এসএসপি) আদেশ জারি করে মেধাবী সিভিল সার্ভিস গড়ে তুলতে সব ক্যাডারের মধ্যে থেকে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ কর্মকর্তাদের উপসচিব হিসেবে নিয়োগের বিধান করা হয়। কিন্তু এই উপসচিব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যায়ভাবে কোটা আরোপ করেছে প্রশাসন ক্যাডার।
১৯৯৮ সালে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিজেদের জন্য ৭৫ শতাংশ কোটা রেখে অন্য সব ক্যাডারের জন্য ২৫ শতাংশ কোটা আরোপ করে প্রশাসন ক্যাডার। তারা ২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি উপ-সচিব ও তদূর্ধ্ব পদসমূহ প্রশাসন ক্যাডারের তফসিলভুক্ত করে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে কার্যত নিজেদের জন্য ১০০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা করেছে।
কর্মকর্তারা দাবি করেন, অবিলম্বে উপ-সচিব পদে সব কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, বিভিন্ন সেক্টরে যারা বিশেষজ্ঞ, তাদের দমিয়ে রেখে প্রশাসন ক্যাডার সব মন্ত্রণালয় দখল করে রেখেছে। এতে অন্যান্য ক্যাডারের সদস্যদের কাজের স্পৃহা ও অনুপ্রেরণা নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া একটি ক্যাডারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অন্য ক্যাডারের দ্বারা পরিচালিত হলে সেই সেক্টর সম্পর্কে তেমন কোনো জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা না থাকায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পলিসি তৈরিতে ব্যর্থ হয়।
সম্মেলনে এসব বৈষম্য দূর করে সব ক্যাডারের মধ্যে সমতা আনা, পদ আপগ্রেডেশন, পদোন্নতিতে সমান সুযোগ, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের সংশোধন ও পুনর্বিন্যাসসহ বিভিন্ন ক্যাডারের সিনিয়র পদ থেকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করারও সুপারিশ করেন বক্তারা।
রাজশাহী বিভাগীয় এই সম্মেলনে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক ১৮তম বিসিএস গণপূর্ত ক্যাডারের জামিলুর রহমান, ২৪তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ড. মফিজুর রহমান, ২৭তম বিসিএসের সমবায় ক্যাডারের নূর-ই-জান্নাত, রাজশাহী বিভাগের অন্যতম সমন্বয়ক ১৪তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডারের প্রফেসর ড. ইব্রাহীম আলী, ১৩তম পোস্টাল ক্যাডারের কাজী আসাদুল ইসলাম ও ২৮তম তথ্য ক্যাডারের মুনিরুল হাসানসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলন সঞ্চালনা করেন তথ্য ক্যাডার কর্মকর্তা মুনিরুল হাসান ও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা নূরজাহান বেগম।