একই সময়ে দুই স্বামীর সাথে সংসার, কাউইকে বঞ্চিত করেননি জান্নাতুল!


2024-Novemer 18/Jannatul.jpg

রাজবাড়ী জেলা সদরের আলীপুরে একই সময় দুই স্বামীর সাথে সংসার করছিলেন জান্নাতুল। আর এ ঘটনা জানাজানিতে গোটা এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ যেন চলচ্চিত্রের গল্পকেও হার মানিয়েছে। প্রথম স্বামীর সাথে সংসার করতে করতেই বসেন দ্বিতীয় বিয়ের পিঁড়িতে। অধিকার থেকে বঞ্চিত করেননি দুই স্বামীর কাউকেই। গোপনে মন জয় করে চলছিলেন দুই স্বামীরই। প্রায় দুই বছর দুই স্বামীর সংসার করার পর অবশেষে ব্যাপারটি জানাজানি হলে গোটা এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

Your Image

চার বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে হলফনামার মাধ্যমে গোপনে বিয়ে করেন রাজবাড়ী সদরের আলীপুর ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামের আবু হানিফ শেখের ছেলে ইউটিউবার সাগর শেখ ও আলীপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম ভূঁইয়ার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস। পিতা, মাত ও ভাই প্রবাসে থাকায় পিতার বাড়িতে একাই বসবাস করতেন জান্নাতুল। সেখানে যাতায়াত করতেন স্বামী সাগর শেখ। সংসার জীবন ভালই চলছিল এ দম্পতির। আচানক জান্নাতুলের পিতা প্রবাস থেকে দেশে ফেরায় শ্বশুরবাড়ি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় সাগরের। এরই মধ্যে প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে পরিবারের সিদ্ধান্তে অন্য এক যুবককে দ্বিতীয় বিয়ে করেন জান্নাতুল।

এ দিকে, স্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের বাড়িতে তুলে না নেয়ায় শ্বশুরবাড়ি গিয়ে স্ত্রীর সাথে নিয়মিত সময় কাটান জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী।

প্রথম স্বামী সাগরের দাবি, প্রায় দুই বছর ধরে তার সাথেও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ঠিক রেখে চলছিলেন জান্নাতুল। স্ত্রীর পরিবার তাকে মেনে না নেয়ায় তার বোনের বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে একান্তে সময় কাটাতেন স্বামী-স্ত্রী। গেল ২ নভেম্বর তারা একসাথে নিজেদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী পালন করেছেন বলেও দাবি করেন সাগর।

তবে, দুই সপ্তাহ আগে স্ত্রীর সাথে দ্বিতীয় স্বামীর ঘনিষ্ঠতার ব্যাপারে জানতে পারেন সাগর। আর এতেই বাঁধে বিপত্তি। তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন জান্নাতুল। এখন দ্বিতীয় স্বামী নিয়েই সংসার করতে আগ্রহী তিনি। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে ফিরে পেতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি আদালতে মামলা করেছেন সাগর।

সাগর শেখ বলেন, ‘জান্নাতুল ও আমার বিয়ের ব্যাপারটি জান্নাতুলের মা ও বোন জানত। বিয়ের পর আমাদের সংসার জীবন ভালই কাটছিল। তবে, আচানক জান্নাতুলের পিতা প্রবাস থেকে দেশে ফেরায় তাদের বাড়িতে আমার যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের বিয়ের চার মাসের মাথায় আমি ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির কাজে কয়েক দিনের জন্য রাজবাড়ীর বাইরে যাই। কাজ থেকে এসে শুনি আমার স্ত্রী জান্নাতুল অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করেছে। আমি আমার স্ত্রীকে প্রশ্ন করলে সে বলে, পরিবারের চাপে বিয়ে করেছি। ওই ছেলের সাথে আমার কোন সম্পর্ক হয়নি। আমি তোমার স্ত্রী আছি, তোমারই থাকব। আমার আম্মু দেশে আসলে আমি তোমার কাছে চলে আসব।’

সাগর বলেন, ‘আমি জান্নাতুলদের বাড়ি যাতায়াত করতে না পারার কারণে বিভিন্ন সময় আমরা রাজবাড়ী শহরে আমার বোনের বাসায় ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতাম। ওর কলেজে আনা-নেওয়াসহ সবকিছু আমিই করতাম। এমনকি গেল ২ নভেম্বরও আমরা আমার বোনের বাসায় আমাদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী পালন করেছি। তবে, বিবাহ বার্ষিকী পালনের দুই দিন পরে আমি জানতে পারি জান্নাতুলের সাথে ওই ছেলের (দ্বিতীয় স্বামীর) ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চলছে। ওই ছেলে নিয়মিত জান্নাতুলের পিতার বাড়িতে এসে তার সাথে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাচ্ছে। এ ব্যাপারে আমি জান্নাতুলকে প্রশ্ন করলে সে আমাকে গালাগাল করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এক পর্যায়ে সে আমার সাথে সংসার করবে না বলেও জানায়।

তিনি আরো বলেন, ‘সম্প্রতি জান্নাতুলের মা প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছে। তিনিও এখন আমাকে মেয়ের জামাই হিসেবে অস্বীকার করছেন। অথচ তার মেয়ের সাথে আমার প্রেম থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত সবকিছুই তিনি জানতেন। এখন বাধ্য হয়ে আমি আমার স্ত্রীকে ফিরে পেতে আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে গেল ১১ নভেম্বর লিখিত অভিযোগ করেছি। এ ছাড়া, ১৭ নভেম্বর রাজবাড়ীর বিজ্ঞ এক নম্বর আমলি আদালতে মামলা করেছি।

প্রথম স্বামী সাগর বলেন, ‘আমাকে ডিভোর্স না দিয়ে আমার স্ত্রী অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে আমার সাথে প্রতারণা করেছে। সে আমাকেও ম্যানেজ করে চলেছে। একইভাবে তার দ্বিতীয় স্বামীকেও ম্যানেজ করে চলেছে। এটা আইন ও ধর্মীয় দুই দিক থেকেই অপরাধ। এ ছাড়া, আমি এ পর্যন্ত আমার স্ত্রীর পেছনে ২৫-৩০ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। তারপরও আমি আমার স্ত্রীকে ফেরত চাই। তাকে আমি আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসি।’

এ দিকে, ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী। তবে তার দাবি, জান্নাতুলের সাথে সাগরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে তিনি জানতেন। সাগরের সাথে বিয়ের ব্যাপারটি তিনি জানতেন না।

জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামীর পিতা বলেন, ‘কোন এক সূত্রে আমার শ্বশুর জান্নাতুলদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তাকে পছন্দ করে। পরে আমি গিয়ে তার পিতার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলে বিয়ের দিন ধার্য হয়। বিয়ের পূর্বে দিন সাগর নামে এক ছেলে আমার ছেলেকে ফোন করে বলে জান্নাতুলের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক আছে। সে জান্নাতুলের সাথে নিজের একটি ছবিও আমার ছেলেকে পাঠায়। এরপর আমি ওই এলাকায় আমার আত্মীয়দের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, জান্নাতুলের সাথে সাগরের কোন সম্পর্ক ছিল না। এ ছাড়া জান্নাতুলকেও আমি সরাসরি প্রশ্ন করলে সেও সম্পর্কের ব্যাপারটি অস্বীকার করে। পরে ঘরোয়া আয়োজনে জান্নাতুলের সাথে আমার ছেলের বিয়ে হয়। এখন সাগর নামে ছেলেটি জান্নাতুলকে তার স্ত্রী হিসেবে দাবি করছে। আমি যত দূর জেনেছি, সাগরের স্ত্রী ও সন্তান আছে। এখন ব্যাপারটি আইনগতভাবেই সমাধান হবে।

এ দিকে, জান্নাতুল ফেরদৌসের সাথেধ কথা বলতে তার পিতার বাড়িতে গেলে ভেতরে ঢোকার অনুমতি মেলেনি।

বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে তার মা হাসিনা বেগম বলেন, ‘সাগরের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। তবে, বিয়ের দুই মাসের মাথায় তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। আমার মেয়ে তো ছোট, বুঝে নাই। যে কারণে সেসময় ওরা ডিভোর্সের কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছে। এর ৪-৫ মাস পরে আমার মেয়ের ফের বিয়ে হয়েছে। সাগর আমার মেয়েকে চাপে ফেলে এত দিন তার সঙ্গে সময় কাটাতে বাধ্য করেছে।’

আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কার ছিদ্দিক জানান, সাগর ও জান্নাতুলের বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তার নোটিশের একটি কপি ইউনিয়ন পরিষদে আসার কথা। এ রকম কোন কপি কখনো পাননি তারা।

তিনি বলেন, ‘সাগর আমার ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেছে। আমিও খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, সাগর জান্নাতুলের প্রথম স্বামী। সে সাগরকে তালাক না দিয়েই বিয়ের চার মাসের মাথায় অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করে। প্রায় দুই বছর সে চালাকি করে দুই স্বামীর সাথেই সংসার করেছে। সাগরের কাছ থেকে জান্নাতুল বহু টাকা-পয়সা খেয়েছে বলেও আমি জানতে পেরেছি।’

আবু বক্কার বলেন, ‘সাগরের অভিযোগের ভিত্তিতে আমি জান্নাতুলের পিতাকে নোটিশের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদে ডাকি। তবে, নোটিশ পেয়ে তিনি তার ছোটভাই ও তাদের এলাকার ইউপির সদস্য আবুল কালামকে সাথে নিয়ে আমার বাড়িতে এসে বলেন, আমি যেন পরিষদে বসে বিষয়টি সমাধান করে দেই। তবে, এর ১-২ দিন পরে তিনি জানান, এ ব্যাপারে তারা বসতে চান না। আইনগতভাবে তারা বিষয়টি সমাধান করতে চান। পরে আবার তারা বসতে সম্মত হলে জান্নাতুল ও তার বাবা এবং আবুল কালামসহ পরিষদের অন্য সদস্যদের নিয়ে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ইউনিয়ন পরিষদে বসেছিলাম। সাগরও সেখানে ছিল। তবে সেখানে জান্নাতুল বলে দিয়েছে, সে কোনভাবেই সাগরের সাথে ঘর সংসার করবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা নির্যাতিত হয়। কিন্তু, ছেলেরা যে কতটুকু নির্যাতিত হয়, তা এই সম্পর্কের জের দেখলে বোঝা যায়। আমাদের সমাজে ছেলেরা আরো বেশি নির্যাতিত হচ্ছে। সেটা নীরবে নিভৃতে ছেলেরা সহ্য করে যাচ্ছে। আমি আশা করব, আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা বিষয়টি তুলে ধরবেন। আপনাদের সংবাদের মাধ্যমে মানুষ যাতে সচেতন হতে পারে। আজকে আমার ইউনিয়নে এমন ঘটনা ঘটেছে। আর কোন ইউনিয়নে যেন এমন ঘটনা কোন দিন না ঘটে।’

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×