ভৈরবে স্বামী-স্ত্রী ও দুই সন্তানের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা
- কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১০:৪৬ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় একটি বাসায় স্বামী, স্ত্রী দুই ছেলে-মেয়ের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) ভৈরব থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন নিহত জনি বিশ্বাসের মা শিখা রানী বিশ্বাস।
নিহতরা হলেন-নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের আনোয়ারাবাদ গ্রামের গৌরাঙ্গ চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে জনি বিশ্বাস (৩২), তার স্ত্রী নিপা রানী মল্লিক (২৬), ছেলে দ্রুব বিশ্বাস (৭) ও মেয়ে কথা বিশ্বাস (৫)।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহিন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অনুসন্ধান ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভৈরবের একটি বাসায় স্বামী, স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীও এটা মেনে নিতে পারছেন না। তারা বলছেন, জনি বিশ্বাস ও নিপা রানী মল্লিক দম্পতি যে সাততলা ভবনে সাবলেট হিসেবে ভাড়া থাকতেন, সেই ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা তাদের সুখী দম্পতি হিসেবে জানতেন। কখনো ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে, তাও কেউ বলছেন না। চাকরি করার সুবাদে জনি বিশ্বাস আট বছর ধরে স্ত্রীকে নিয়ে ভৈরবে বসবাস করে আসছিলেন। ভৈরব বাজারের বাগানবাড়ি এলাকায় মিজান মিয়ার ওয়ার্কশপে হেডমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন জনি। ৯ বছর আগে গাজীপুরের নির্মল মল্লিকের মেয়ে নিপা রানী মল্লিককে বিয়ে করেন তিনি। জনি-নিপা দম্পতির দুই সন্তান ধ্রুব ও কথা। ধ্রুব স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। নিপা আবারও অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
নিহত জনি বিশ্বাসের স্বজনরা জানান, গত রোববার (২৪ নভেম্বর) স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে জনি গ্রামের বাড়িতে যান। পরদিন সোমবার (২৫ নভেম্বর) ভৈরব ফিরে যান। জনি সকাল ১০টার মধ্যে ওয়ার্কশপে কাজে যেতেন। একই ওয়ার্কশপে কাজ করেন জনির আপন খালাতো ভাই ঝোটন প্রামাণিক। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১০টা পেরিয়ে গেলেও কাজে না আসায় ওয়ার্কশপের মালিক মিজান মিয়ার নির্দেশে ঝোটন যান জনিকে ডেকে আনতে। অনেক ডাকাডাকির পরও দরজা না খোলায় ফিরে আসেন ঝোটন। আবার তিনি যান বেলা আড়াইটার দিকে। তখনো দরজা না খোলায় ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে যান ঝোটন। পরে দরজার চৌকাঠের একটি ছিদ্র দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে দেখতে পান জনির মরদেহ ঝুলছে। এরপর বিষয়টি জানাজানি হয় এবং প্রতিবেশীরাও ঘটনা জানতে পারেন।
এ বিষয়ে নিহত জনি বিশ্বাসের ছোট ভাই পলাশ বিশ্বাস জানান, আমাদের মনে হচ্ছে, ঘটনাটির পেছনে অন্য ঘটনা থাকতে পারে। এ জন্যই হত্যা মামলা করেছি।
এদিকে এক পরিবারের চারজনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা। এ ছাড়াও র্যাব, সিআইডির ক্রাইম সিন ও পিবিআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহিন জানান, এ ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। ঘটনার মোটিভসহ নানা দিক সামনে রেখে তদন্ত করছি। এ ঘটনায় এখনো কাউকেই আটক করা হয়নি।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ উপজেলা সদরের রাণীর বাজার শাহী মসজিদ এলাকার একটি বাসা থেকে স্বামী, স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করে।