ইসকনকে বাংলাদেশে লেলিয়ে দিয়েছে দিল্লি: হেফাজতে ইসলাম
- চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৯:২৩ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০২৪
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজহার বলেছেন, ‘ইসকনকে বাংলাদেশে লেলিয়ে দিয়েছে দিল্লি। আমাদের দেশে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার চাপিয়ে দিয়েছে। আমাদের দিকে সামরিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এমন কোনো আগ্রাসন নেই যে চালায়নি দিল্লি। আমাদের মূল লড়াই বাংলাদেশি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে নয়। আমাদের লড়াই দিল্লির সাথে।’
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের ওয়াসা মোড়ে জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের সামনে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
হারুন ইজহার বলেন, ‘শুধু ইসকন নয়, সনাতনী জাগরণ পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদও ইসকনের মতো সন্ত্রাসী এবং সাম্প্রদায়িক সংগঠন। এগুলোকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে যে ষড়যন্ত্র হছে তার মাথা চিহ্নিত করতে হবে। ইতোমধ্যে হিন্দুস্তানের সঙ্গে ইসরায়েলও যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করতে ইসরায়েল ও ভারত যৌথ চক্রান্ত করে যাচ্ছে। আমাদের লড়াই সুদূরপ্রসারী। বাংলাদেশের কোনো হিন্দুর গায়ে আমাদের টোকাও পড়বে না।’
মুফতী হারুন ইজহার বলেন, ‘হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠন দাবি করেছে হত্যার সাথে ইসকনের কোনো যোগাযোগ নেই। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ ইসলামপন্থী বিভিন্ন দল সংগঠন এবং তাদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তারা বসতে চায়। কিন্তু তিনটি শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো হিন্দু সংগঠনের সাথে আলাপে বসবে না হেফাজতে ইসলাম।’
‘আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, আলাপে বসা একটা নতুন চক্রান্ত। শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটি থেকে বিদায় করার পর এ দেশের ম্যাক্সিমাম হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে।’
হেফাজত নেতা বলেন, ‘ইতোমধ্যে তারা তাদের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শাস্তির আওতায় এলো তখন তারা নতুন একটি দল তৈরি করে তাদের সরকার এবং আলেম-উলামাদের সাথে সমঝোতা করতে বলতে লাগল।’
মুফতী হারুন ইজহার বলেন, ‘আমি আজকের এই সমাবেশ থেকে ইসকন এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদসহ সকল হিন্দু সংগঠনকে বলে দিতে চাই, তিনটি শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আগামীতে কোনো হিন্দু সংগঠনের সাথে আলাপে বসতে রাজি নই।’
হেফাজতের এই নেতা বলেন, ‘২০২০ সালে আমি চট্টগ্রামের একটি হোটেলে ইসকন নেতাদের সাথে বসেছিলাম আপনাদের সকলের জানা আছে। বিগত হাসিনা সরকার পতনের পরে আমাদের দেশের ইসলামপন্থীরা হিন্দুদের মন্দির পাহারা থেকে শুরু করে তাদের আত্মরক্ষা ও সুরক্ষার সকল ব্যবস্থাপনা করে। এমনকি অতি উদারতা দেখাতে গিয়ে আমাদের কিছু ভাই তাদের পূজামণ্ডপে গিয়েছিল, যা আমরা সমর্থন করি না। এত উদারতা দেখানোর পরেও তারা আমাদের ভাইকে জবাই করে তার উত্তর দিল।’
তিনটি শর্ত দিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো হিন্দু সংগঠন যদি আমাদের সঙ্গে ডায়লগে বসতে চায়, এক নম্বর শর্ত হলো এসমস্ত হিন্দু সংগঠনগুলোকে ভারতের সঙ্গে সম্পূর্ণ এবং সকল প্রকাশ সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। দুই নম্বরটি হলো বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের যত ভুয়া প্রোপাগান্ডা হয়েছে সেসব ব্যাপারে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। তাদের বলতে হবে, বাংলাদেশে হিন্দুরা মুসলমানদের পাশাপাশি অবস্থান করে নিরাপদে রয়েছে এবং যেসব ভারতীয় মিডিয়া অপপ্রচার চালিয়েছে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে তা মিথ্যা-ভুয়া।’
‘তিন নম্বর শর্ত হলো, আপনাদের বিভিন্ন সংগঠনে ঘাঁপটি মেরে থাকা যেসব জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসী এবং গুন্ডা রয়েছে সবাইকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আপনাদের তথ্যের ভিত্তিতে আপনাদের সহযোগিতায় সকলকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হস্তান্তর করতে হবে।’
সমাবেশে আগামী সোমবার (২ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় চট্টগ্রামে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনার অফিস অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচির ঘোষণা দেন মুফতি হারুন ইজহার। তিনি বলেন, এই সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। ওই সমাবেশে আপনারা কোনো বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করবেন না। আমরা কোনো পাটকেল নিক্ষেপ করব না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, ছাত্র সমন্বয়ক ও সরকারকে জানিয়ে দেব, যে আমরা ভারতীয় দূতাবাস অভিমূখে শান্তিপূর্ণ যাত্রা করব। শান্তিপূর্ণ দূরত্বে থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা তৌহিদি জনতার পক্ষ থেকে দূতাবাসে গিয়ে স্মারকলিপি দেবেন।
সমাবেশের আগে হাজার হাজার মুসল্লি বিক্ষোভ র্যালি করেন। যেটি নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের সামনে শেষ হয়।