চিন্ময়কাণ্ড: চট্টগ্রামে সহিংসতার ঘটনায় আরো এক মামলা, আসামি ২৯
- চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৩:৩৫ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪
ইসকনের নেতা ও সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে জেলে নেয়ার সময় চট্টগ্রাম আদালতের প্রাঙ্গণে ঘটে যাওয়া সহিংসতার ঘটনায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ২৯ জনকে আসামি করে আরো একটি মামলা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটির কোতোয়ালী থানায় মোহাম্মদ উল্লাহ নামের ব্যক্তি মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) মামলাটি করেছেন বলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম জানিয়েছেন। এ নিয়ে সহিংসতা ও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে তিনটি মামলার বাদী পুলিশ।
আব্দুল করিম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘নতুন মামলায় দুই সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ২৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া, অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৪০-৫০ জনকে।’
বাদী মোহাম্মদ উল্লাহ নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে মামলাটি করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাদী মামলায় অভিযুক্তদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী লীগ ও ইসকনের সমর্থক বর্ণনা দিয়েছেন।’
মামলায় প্রথম আসামি করা হয়েছে ৩২ নম্বর আন্দরিকল্লা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা জহর লাল হাজারিকে। দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনকে।
যদিও গেল ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর থেকে এই সাবেক দুই কাউন্সিলরের কোন খোঁজ নেই।
মামলার অভিযোগে মোহাম্মদ উল্লাহ বলেছেন, ‘তিনি ব্যবসায় সংক্রান্ত বিষয়ে আইনি সহায়তা নিতে গেল ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত ভবনে আইনজীবীর চেম্বারে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে সড়কে এজাহারভুক্ত ২৯ জন আসামিসহ অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, আওয়ামী লীগ ও ইসকনের সমর্থকদের সশস্ত্র অবস্থায় দেখে ভীত হয়ে রঙ্গম কনভেনশন হলের গলিতে ঢুকে পড়ি। ওখানে আসামিরা তার মাথায় টুপি দেখে ‘শিবির ধর’ ‘শিবির ধর’ বলে এগিয়ে এসে এলোপাতাড়ি মারধর করে ও ছয় হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।’
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করে জেলে পাঠানোর আদেশের পর গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালতের প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। ওই দিন দুপুর সোয়া ১২টা থেকে পৌনে বিকাল তিনটা পর্যন্ত বিক্ষোভের পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে জেলে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাংচুর করে। বিক্ষোকারীদের ছোড়া ঢিলে আদালত মসজিদ কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলার কাঁচ ভেঙে যায়, যেখানে আইনজীবীদের চেম্বার রয়েছে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। এ সময় উভয় পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের আইনজীবীকে হত্যার ঘটনা ঘটে।
২৬ নভেম্বর আদালত এলাকায় সংঘর্ষ, ভাংচুর ও পুলিশের কাজে বাধাদানের ঘটনায় এর আগে পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছে। ওই তিন মামলায় মোট ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো মোট ১৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া, সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার ঘটনায় তারা পিতা ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাত আরো ১৫-১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি, আলিফের ভাই খানে আলম যানবাহন ভাঙচুর ও জনসাধারণের ওপর হামলার ঘটনায় ১১৬ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেছেন কোতোয়ালি থানায়।