সাড়ে তিন বছর পর কারামুক্ত হলেন বাবুল আক্তার


30 November/Prison free Babul Akhter.jpg
বাবুল আক্তার

উচ্চ আদালতে জামিনের আদেশের পর অবশেষে কারামুক্ত হয়েছেন স্ত্রী খুনের মামলার আসামি চট্টগ্রাম জেলার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার।

Your Image

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি। বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. ইব্রাহিম।

তিনি বলেন, ‘বাবুল আক্তারের জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।’

২০২১ সালের ১২ মে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে গ্রেফতার হন বাবুল আক্তার। এরপর থেকে কারাগারে রয়েছেন তিনি। দীর্ঘ সময়ে তিনি মামলাটিতে বেশ কয়েক বার জামিন আবেদন করলে আদালত নামঞ্জুর করেন। সবশেষ গেল ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে জামিন দেয়। এরপর রোববার (১ ডিসেম্বর) বাবুল আক্তারের জামিনের আদেশ বিচারিক আদালত অর্থাৎ তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে জমা দেওয়া হয়। ওই দিন বিকালে জামিনের আদেশ কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু, কারা কর্তৃপক্ষ তারপরও কালক্ষেপণ করতে থাকে।

এক পর্যায়ে খবর আসে বাবুল আক্তারের জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করবেন তার শ্বশুর অর্থাৎ মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হকের আদালতে সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি হয়। আদালতে বাবুল আক্তারের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক। মিতুর বাবার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান।

শুনানি শেষে মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছেন চেম্বার আদালত। ফলে, বাবুল আক্তারের মুক্তিতে আর আইনগত বাধা নেই।

বাবুল আক্তারের চট্টগ্রামের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন বলেন, ‘বাবুল আক্তারের মুক্তিতে আইনগত কোন বাধা আগেও ছিল না। রোববার (১ ডিসেম্বর) তাকেই জামিন দেওয়া যেত। কিন্তু, কারা কর্তৃপক্ষ অকারণে বিলম্ব করেছে। যেটি দণ্ডবিধি আইনের ৩৪২ ধারায় অপরাধ। আমরা এটি নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে আইনগত নোটিশ দিয়েছি। এখন বাবুল আক্তারের পরিবারের কেউ যদি চায়, সেক্ষেত্রে আমরা আদালতে কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করব।’

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম সিটির ওআর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

তবে, মামলাটিতে স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে স্বামী বাবুল আক্তারেরই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। একই দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম সিটির পাঁচলাইশ থানায় দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওই দিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন বাবুল।

এ দিকে, প্রথম মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর নারাজির আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর নারাজি ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এরপর দুটি মামলাই তদন্ত করতে থাকে পিবিআই। তবে, পরবর্তী আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবার দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে বাবুলসহ সাতজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।

গেল বছরের ১৩ মার্চ আলোচিত মামলাটিতে বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। 

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×