এবার নাফ নদীতেও নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
- কক্সবাজার প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৮:৫৯ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথসহ এবার নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশেও সব নৌযান চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন।
এর আগে গেল ৪ ডিসেম্বর মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরও শতভাগ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর আরাকান আর্মি নাফ নদীর মিয়ানমারের অংশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘মিয়ানমারের অদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশি জেলেসহ সব ধরনের নৌযান চলাচলকারীদের পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নাফ নদীতে নৌযান নিয়ে না নামতে সীমান্ত এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। গত প্রায় এক বছর ধরে টেকনাফ সীমান্তে পূর্ব পাশে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছিল। নাফ নদী সীমান্ত এখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই, নাফ নদীতে কোন নৌকা বা ট্রলার না নামার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। পাশাপাশি, সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধ ও যে কোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য নাফ নদীর জলপথ ও সীমান্তে বিজিবি এবং কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে।’
তবে, কক্সবাজার থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল অব্যাহত থাকবে। কেবল মাত্র নাফনদীতে নৌ যান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।
সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমদ বলেন, ‘বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে ট্রলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে, বুধবার সকাল থেকে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ থেকে কোন ট্রলার ছাড়া যাবে না বলে জানানো হয়। এ নৌপথে ২৭টি সাভিস ট্রলার ও ৪৭টি স্পিডবোট রয়েছে।’
একই সঙ্গে পাশাপাশি টেকনাফ সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়ানের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা উপঅধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ।
তিনি বলেন, ‘সীমান্ত নিরাপত্তায় বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে দায়িত্ব পালন করছে বিজিবি। সীমান্তের সুরক্ষা ছাড়াও চোরাচালান, মাদকদ্রব্য, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সীমান্ত অপরাধ দমনে দায়িত্ব পালন করে আসছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় নাফ নদীতে টহল তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তে নিছিদ্র নিরাপত্তায় বিজিবি দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা জলে ও স্থলে টহল চালানো হচ্ছে ও সোচ্চার রয়েছে। এছাড়া, সীমান্তের যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।’
এ দিকে গেল শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত পাঁচ দিন ধরে মিয়ানমার থেকে পণ্যবাহী কোন কার্গো ট্রলার ও জাহাজ টেকনাফ স্থলবন্দরে আসেনি এবং মালামাল খালাস করা কার্গো ট্রলার ও জাহাজ মিয়ানমারের ফেরত যেতে পারছে না বলে জানিয়েছেন টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘গত শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর থেকে মাছ ভর্তি একটি কার্গো ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরের জেটিতে নোঙর করেছেন। গত শনিবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত পাঁচ দিন আর কোন ধরনের ট্রলার বা জাহাজ আসেনি। বর্তমানে মালামাল নিয়ে আসার চারটি কার্গো ট্রলার স্থলবন্দরের জেটিতে নোঙর করে রয়েছে। এরমধ্যে দুইটি কার্গো ট্রলার থেকে মালামাল খালাস করা হলেও মিয়ানমারের ফেরত যেতে পারছে না।’
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর পুরোপুরি দখলে নিয়েছে বলে বিবৃতিতে দাবি করেছেন সেই দেশের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।
টেকনাফে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা ও সাবেক মংডুর সিকদারপাড়া আলীর জোহার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানতে পারলাম, আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিফ দখলে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় পতাকা উত্তোলন করেছেন। এ জন্য সরকারি বাহিনী মংডু টাউনে কারফিউ জারি করেছেন। লোকজন বাড়িঘর থেকে বাইরে থেকে পারছে না বলে নিকটাত্মীয়-স্বজনরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেখানকার পরিস্থিতি জানিয়েছেন।’