চা খেতে ২৫ হাজার নেন ইউএনওর অফিস সহকারী
- রংপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৭:৫৮ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
রংপুর জেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেওয়ার নামে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের অফিস সহকারী (কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক) মো. রায়হান মিয়ার বিরুদ্ধে। তিনি নিজেই ঘুষ নেওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাতাসন লতিবপুর গ্রামের মৃত রজব উদ্দিনের স্ত্রী কহিনুর বেগম ও তার পুত্রের স্ত্রী বানেছা বেগম আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ চেয়ে ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট ইউএনও বরাবর দুইটি আবেদন করেন। দীর্ঘ দিন পর আচানক মিঠাপুকুর ইউএনওর অফিস সহকারী রায়হান ভুক্তভোগী বিধবা কহিনুরের কল দিয়ে আবেদন খরচের কথা বলে দুই দফায় পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ নেন। পরে কহিনুর ও বানেছা বেগম ঘর বরাদ্দ পেয়েছে এই কথা জানিয়ে দুই দফায় আরও ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। এতে মোট ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে রায়হান।
এ দিকে দীর্ঘ দিন পর উপজেলার রাণীপুকুর ইউনিয়নের ভক্তিপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ পায় কহিনুর বেওয়া (৭০)। কিন্তু, ঘরে উঠার আগেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশপাশের স্থানীয়রা ঘর দখল করে নেওয়ায় ঘরে উঠতে পারেননি এই বিধবা। এক দিকে সুদ কারবারির কাছে নেওয়া টাকার সুদের চাপ, অন্য দিকে বরাদ্দ পাওয়া ঘরে উঠতে না পাওয়ায় টাকা ফেরত পেতে চাপ দেওয়ার পর স্থানীয় এক নেতার মধ্যস্থতায় ১৩ হাজার টাকা ফেরত পেলেও বাকি ১২ হাজার টাকা ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বিধবা এই বৃদ্ধা নারী।
মিঠাপুকুরের রাণীপুকুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার মেহফুজ আল রেজা বলেন, ‘এসিল্যান্ড স্যারের নির্দেশে রাণীপুকুর ইউনিয়নের ভক্তিপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে বৃদ্ধা কহিনুরকে ঘরে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু, আমি যাওয়ার পর সেখানে বসবাসকারীরা ঘরে তালা দিয়ে সরে থাকায় অবৈধ বসবাসকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
অভিযুক্ত রায়হান বলেন, ‘আমার অত চাওয়া-পাওয়া নেই। মিঠাপুকুরে এমনও লোক আছে দিনে ১০-২০ হাজার টাকা ইনকাম করে। আমি তো তার কাছে টাকা চেয়ে নেইনি। ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পর ওই মহিলা খুশি হয়ে দুই দফায় বিশ হাজার টাকা চা খাওয়ার জন্য দিয়েছিল। আমি কাজ করে দেই, এ জন্য অনেকে খুশি হয়ে এক-দুই হাজার টাকা এমনি দেয়।’
তিনি বলেন, ‘২৫ হাজার টাকা নেইনি। ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পর ওই মহিলা খুশি হয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিল চা খাওয়ার জন্য। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তো একটা করে ঘরের জন্য ৩০-৪০ হাজার টাকা নিয়েছে। ওই মহিলা ঘরে উঠতে না পারায় স্থানীয় এক নেতার মধ্যস্থতায় ১৩ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছি। তার সঙ্গে আমার আর কোন ঝামেলা নেই।’
মিঠাপুকুরের ইউএনও বিকাশ চন্দ্র বর্মণকে মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন, ‘আমি পরিদর্শনে আছি। আপনি অফিসে আসেন, এ ব্যাপারে সরাসরি কথা বলব।’