চট্টগ্রাম সিটির যানজট নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন: মেয়র


December 2024/CCC Traficc jam.jpg
শাহাদাত হোসেন

চট্টগ্রাম মহানগরের যানজট নিরসনে বিভিন্ন সেবা সংস্থার বিচ্ছিন্ন কার্যক্রমের বদলে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে যানজটকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হলে মনে করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র শাহাদাত হোসেন।

Your Image

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে টাইগারপাসস্থ চসিকের কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে চট্টগ্রাম সিটির যানজট নিরসনকল্পে মত বিনিময় সভায় তিনি এ মতামত ব্যক্ত করেন। 

সভায় মেয়র বলেন, ‘নগরীকে যানজট মুক্ত করতে চসিক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিসহ (বিআরটিএসহ) সংশ্লিষ্ট সব সেবা সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রম প্রয়োজন। এ জন্য বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে এই মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য যত্রতত্র চলাচল নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে যানজট কমানোর চেষ্টা করা প্রয়োজন। ব্যাটারি রিকশাগুলোর জন্য যে সব অবৈধ চার্জিং স্টেশন ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো বন্ধে আমি আমাদের যেসব ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন, তাদেরকে বলেছি। তবে, আমি বিআরটিএসহ অন্যান্য  সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলব।’

‘কর্ণফুলী ব্রিজের পাশে যে যানজট হচ্ছে, সেটার জন্য আমরা ডিসিকে একটা জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে বলেছি। আশা করি, এই জায়গাটা বেশি বড় না হলেও ওখানকার যে গাড়িগুলো আছে, আমরা হয়তোবা পাার্কিংয়ের  ব্যবস্থা করতে পারব। আশা করছি, সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কর্ণফুলী ব্রিজের পাশে বাস টার্মিনাল অথবা বাস স্টেশন চালু হবে।  আর বহদ্দারহাট একটা বাস টার্মিনাল আছে, এটাতে আসলে পর্যাপ্ত সুবিধা সেখানে নেই। সেখানে টয়লেট ফ্যাসিলিটিসটা আসলে ভেরি ইম্পর্টেন্ট ও সেখানে লাইটিং ফ্যাসিলিটিস বোধয় কম আছে। তাই, ওগুলো যদি আমরা আরেকটু নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে নাগরিকদের সুবিধা হবে।’ 

শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নগরীর যানবাহনের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হলে যত্রতত্র বাসসহ যে কোন যানবাহন দাঁড়াতে পারবে না। যাত্রী ছাউনি, বাস স্টপেজ যেখানে থাকবে, সেখানে দাঁড়াতে হবে। এই জায়গায় আমাদেরকে কঠোর নজরদারি করতে হবে। যত্রতত্র যানবাহন দাঁড়ানোর কারণে কেবল যে যানজট বাড়ছে, তা নয় বরং সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এই অব্যবস্থাপনা।’

‘আমি কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলেছি। তারা বলছে, আমাদের কর্পোরেশন উদ্যোগে ভূমি বরাদ্দ দিলে সেখানে দিনের বেলায় কার পার্কিং থাকবে। আর রাতের বেলায় তারা ওই জায়গাটাকে ছোট ছোট দোকান হিসাবে যেগুলো এখন রাস্তায় বসছে, সেগুলোকে মার্কেট হিসেবে তারা ব্যবহার করতে পারবে। এই টাইপের একটা চিন্তা আমাদের মধ্যে আছে। এই চিন্তা নিয়ে আমরা আগাচ্ছি। যেখানে ফ্লাইওভারগুলো আছে, সেখানে বেশ স্পেস আছে। সে জায়গাগুলোতে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। অন্যান্য যেসব জায়গায় প্রশস্ত না সেগুলোতে শুধু পার্কিং হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আমি আমার যে চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে বলছি, অনতিবিলম্বে গোলচত্বরগুলোকে সাইন্টিফিক ওয়েতে কিভাবে যানজট নিরসণের জন্য ভূমিকা রাখতে পারে, কীভাবে স্পেসটা কমিয়ে এনে যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে, সে ধরনের একটা স্টাডি এনালাইসিস করে আমাকে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য।’

মেয়র বলেন, ‘বাওয়া স্কুলের যে র‌্যাম্প, সেটি  খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ। এখানে র‍্যাম্প হতে দেওয়া যাবে না, এটা আমি মেয়র হিসেবে স্ট্রংলি বলতে চাই। আমি সিডিএকে বলেছি, সিডিএর চেয়ারম্যানকে এবং এখানে সিটি নিয়ে যারা পরিকল্পনা করে তাদেরও। নগর পরিকল্পনা নিয়ে যারা ভাবেন, তারাও এই র‌্যাম্পের বিরুদ্ধে। আমার মনে হয়, এই জায়গায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে যে, কোন একজন ব্যক্তির লাভের জন্য আমরা আমাদের সিটিতে যানজট করতে পারি না।’

‘এটা ওই সময়কার একজন ব্যবসায়ীকে খুশি করার জন্য, তার হোটেলের ব্যবসায় ভাল হওয়ার জন্য একটা র‌্যাম্প সেখানে বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তার হোটেলের যাত্রীগুলো খুব দ্রুত এয়ারপোর্ট চলে যাওয়ার জন্য। আমি সেদিন উপদেষ্টা আদিলুর রহমানের সামনে স্পষ্ট বলেছি। যারা সাংবাদিক ছিল তারা হয়তোবা আমার কথা শুনেছেন। আমি পূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সামনে স্পষ্ট বলেছি যে, পেনিনসুলার যে মালিক, তার খুশি করার জন্য এই কাজটি করা হয়েছে। এখানে জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে সেটা করা হয়েছে।’ 

সভায় ট্রাফিক বিভাগের ডিসি (ট্রাফিক-উত্তর) জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য চট্টগ্রাম শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা। একটি শহরকে শৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য ২৫ শতাংশ সড়কের প্রয়োজন।  তবে, চট্টগ্রামে সড়ক আছে মাত্র দশ শতাংশ। এক্ষেত্রে, আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে পার্কিংয়ের সংকট। অতি দ্রুত চট্টগ্রাম শহরে পার্কিং প্লেস নির্ধারণ করা জরুরি। আনফরচুনেটলি দেখা যায়, রাস্তার পাশে বিভিন্ন যে কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, মার্কেটগুলো আছে তারা তাদের যে পার্কিংগুলো আছে, সেগুলোকে অকুপাইড করে রেখেছে অন্য কাজে। এগুলো উন্মুক্ত করা দরকার। এক্ষেত্রে সিডিএ’র নিজস্ব ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানোর মত ম্যাজিস্ট্রেট আছেন। আমাদের সিটি কর্পোরেশনও আছে। যে সব জায়গায় যতগুলা পার্কিং থাকার কথা, সিডিএর কাছে নিশ্চয় প্ল্যানে আছে। ওগুলো যদি অকুপাইড হয়ে থাকে, সেগুলোকে উন্মুক্ত করলে দেখা যাবে যে, মার্কেটকেন্দ্রিক যে গাড়িগুলো আসে, সেগুলো বেশিরভাগই মার্কেটের নিচে পার্কিংয়ের সুযোগ পাবে।’

সভায় বক্তব্য দেন চসিকের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ডিসি (ট্রাফিক-দক্ষিণ) মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান, বিআরটিএর পরিচালক মো. মাসুদ আলম, ট্রান্সপোর্ট প্রফেসনালস এলাইয়েন্সের সিইও মোহাম্মদ নুরুল হাসান, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী। 

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×