চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরছে কনটেইনার ডেলিভারি!
- চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৩:৩১ পিএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
নিরাপত্তা ঝুঁকির পাশাপাশি কার্গো চুরি ঠেকাতে বছরে ২৫ লাখের বেশি ফুল কনটেইনার লোড (এফসিএল) কনটেইনার শেডের বদলে বেসরকারি অফডকগুলোতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। পৃথিবীর কোন বন্দরের শেড থেকে পণ্য ডেলিভারির বিধান না থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে একমাত্র চট্টগ্রাম বন্দর এ কাজ করে আসছিল। তবে, অফডকগুলোর কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা না বাড়িয়ে বন্দরের এমন সিদ্ধান্তে বড় ধরনের জটিলতার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
পণ্য ডেলিভারি নিতে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ হাজার ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান যেমন চট্টগ্রাম বন্দরে ঢুকে যানজটের সৃষ্টি করছে, তেমনি যানবাহনগুলোর সঙ্গে ১০-১২ হাজার ড্রাইভার-হেলপার এবং কর্মচারী চট্টগ্রাম বন্দরকেই নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। অবশেষে, এ ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি পণ্য চুরি ঠেকাতে সব ধরনের এফসিএল কনটেইনার অফডক থেকেই খালাস দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চবক।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে তুলে ধরা হয়েছে বন্দরের অভ্যন্তরে এফসিএল কনটেইনার খালাস দিতে গিয়ে জটিলতা সৃষ্টির বিভিন্ন তথ্য।
চবকের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘বন্দরের অভ্যন্তরে যানজট ও হ্যাজার্ড না করার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। যাতে করে সবগুলো কনটেইনার অফডক থেকে খালাসের অনুমতি দেয়া হয়।’
আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে গতি আনতে এক দশক আগে বন্দরের পাশাপাশি চালু হয়েছিল ২১টি অফডক। অফডকগুলোর বছরে ৬-৭ লাখ রফতানি কনটেইনার এবং তিন লাখ আমদানি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা আছে। অফডক থেকেই খালাস দেয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে অন্তত ২৫ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা অর্জন করতে হবে অফডকগুলোকে।
অফডক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে খালাস হওয়া পণ্যগুলো যদি বন্দরের বাইরে অফডকগুলো খালাসের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে অপারেশনাল কার্যক্রমের গতি বহু বেড়ে যাবে।’
তবে, নতুন অফডক নির্মাণ না করে বন্দরের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হলে তৈরি পোশাক খাতকেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। একইসঙ্গে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা অফডকগুলোকে অনুমতি দিয়ে জটিলতা নিরসনের কথা বলছেন শিপিং ব্যবসায়ীরা। অবশ্য সিটির গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যানজট সৃষ্টির জন্য বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অফডকগুলোকে দায়ী করা হয়।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক প্রথম সহ সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘অফডকগুলোর কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা না বাড়িয়ে বন্দরের এমন সিদ্ধান্তে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি করতে পারে।’
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘সহজশর্তে অফডকের অনুমতি দিতে হবে। এরপর নিয়ম মেনে আইন অনুযায়ী অফডক তৈরি ও ব্যবহার করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বন্দর ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার টিইইউএস কনটেইনার এবং ১২ কোটি ৩২ লাখ মেট্রিক টন বাল্ক পণ্য হ্যান্ডলিং করেছে।