পদত্যাগ করলেন এবি ব্যাংকের এমডি তারিক আফজাল
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৫:৫৫ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪
পদত্যাগ করেছেন এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আফজাল।
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রোববার (৮ ডিসেম্বর) কানাডা থেকে ইমেইলে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংকটির রোববারের (৮ ডিসেম্বর)পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে তার পদত্যাগপত্রের বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘দীর্ঘ ছুটি শেষে রোববার (৮ ডিসেম্বর) আফজালের যোগদান করার কথা ছিলো। যোগদান না করে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। সেখানে শারিরীক নানা অক্ষমতার কথা উল্লেখ করেছেন।
তারিক আফজাল ২০১৮ সালে ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে এবি ব্যাংকে যোগ দেন। ২০১৯ সালের ৮ জুলাই তিনি প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর হন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিচারে এককালের জৌলুসপূর্ণ এবি এখন রুগ্ন প্রায় ব্যাংকের উদাহরণ। ব্যাংকটির পেছনে ঘুরতে হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত কর্মকর্তাদের, গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে আসছেন থানা পুলিশ। এমন দৃশ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন আমানতকারীসহ গ্রাহকদের আনাগোনা বাড়তে থাকে ব্যাংকের শাখাগুলোতে।
বিএনপির নেতা এম মোরশেদ খানের উদ্যোগে ১৯৮২ সালে এবি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলছিল ২০০১ সাল নাগাদ। ওই বছর এম মোরশেদ খান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শপথ নিয়ে ব্যাংকের দায়িত্ব দেন ছেলে ফয়সাল মোরশেদ খানের হাতে। তখন থেকেই অনিয়ম ভর করে ব্যাংকটিতে।
২০০৭ সালে চেয়ারম্যান পদ ছাড়েন ফয়সাল মোরশেদ খান। কিন্তু, নেপথ্য কলকাঠি ছিল তারই হাতে। ওয়ান-ইলেভেনের পর একে একে দুর্নীতির পাহাড়ের খোঁজ মেলে এবি ব্যাংকে। ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। চোখ পড়ে বিএনপির নেতার এ ব্যাংকটিতে। অদৃশ্য ইশারায় দুদকের ফাইল চলছিল রকেট গতিতে। দুদকে অর্ধডজন মামলা। ফলে, ব্যাংকটির প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ধসে যাচ্ছিল বালুর বাঁধের মত।
এ পরিস্থিতিতে এবি ব্যাংকের পাশে দাঁড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। একজন সাবেক ডেপুটি গভর্নরকে চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসায়। তবে, এ সুযোগ হাতছাড়া করেনি শেখ হাসিনা সরকার। দলীয় নেতা তারিক আফজালকে বসান প্রধান নির্বাহীর (ভারপ্রাপ্ত) আসনে। এরপর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। শুরু হয় ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন। এ অবস্থা চলমান জুলাই বিপ্লবের পরেও।
বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক এবি ব্যাংক। আশির দশকে সাধারণ জনতা চিনত আরব বাংলাদেশ ব্যাংক নামে। দেড় যুগ আগে পরিবর্তিত হয়ে ইংরেজির প্রথম দুই বর্ণ নিয়ে এখন শুধুই এবি ব্যাংক। আধুনিক সেবার কারণে এবি ব্যাংকের জুড়ি ছিল না। ইসলামি ব্যাংকিং শাখা করায় গ্রাহক বেড়েছিল হু হু করে। কালের আবর্তে নতুন পুরোনো ঘটন-অঘটনের কারণে এ ব্যাংকের জৌলুস এখন ইতিহাস।
চার দশকের পথচলায় ঘরে-বাইরে নানামুখী চক্রান্তে বদল হয়েছে ব্যাংকটির চালিকা শক্তি। সর্বদিক থেকে প্রশংসিত হওয়ায় এতে নজর পড়েছিল স্বৈরাচারের। উদ্যোক্তাদের অতিলোভ আর দখলদার চক্রের কারণে এবি ব্যাংক হয়েছে চিঁড়েচ্যাপটা।