‘প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের প্রকৃষ্ট উদাহরণ টিসিবি, ১৪২ জনের বাজেট সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা’
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৬:০২ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
‘গুটিকয়েক মানুষ দেশ থেকে দেড় বছরের আয়ের সমপরিমাণ অর্থ পাচার করে নিয়ে গেছে। এটা নাগরিক হিসেবে আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়। এই ধরনের সাগর চুরি করতে যেয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। এই ধ্বংস থেকে রেহাই পায়নি আমাদের কৃষি ও বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোও। গত ১৫ বছরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল টিসিবি। এখানে ১৪২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য বছরে বাজেট সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা।’
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকার পুরানা পল্টনে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২৪ অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘কৃষির বীজ ও সারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নষ্ট করার জন্য কোন একটা জায়গা বা বিভাগকে বাদ রাখা হয়নি। প্রতিটি জায়গায় গুটিকয়েক মানুষের অবস্থান তৈরি করা হয়েছিল।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি যখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করতে যাই, তখন সরকারি প্রতিষ্ঠাগুলোর যে তথ্য পাই, তা বাস্তবতার সাথে মেলে না। এতে সিদ্ধান্ত নিতে বহু সমস্যা তৈরি হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে যৌক্তিক সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। এই বিষয়ে আওয়াজ তুলতে হবে। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদের শিক্ষা, কৃষি, বিচারালয়, রাজস্ব বোর্ড থেকে শুরু করে যত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। এটি করতে পারলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম-যারা দায়িত্বে আসবে তাদের জন্য এটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে।’
বৈদেশিক বাণিজ্যে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলে শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, ‘আমরা কি সব সময় জোয়ার ভাটার ওপর নির্ভরশীল থাকব? না, আমাদের নিজেদের কর্মক্ষমতা এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে জোয়ার আসুক ভাটা আসুক যাতে নিজেদের সক্ষমতা জানান দিতে পারি। চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের পণ্যের চাহিদা বাড়বে। তখন যেন আমরা সুযোগ নিতে পারি।’
টিসিবির কার্যক্রম প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘টিসিবি যে এক কোটি পরিবারকে সামাজিক সুরক্ষার জন্য খাদ্য পণ্য বিতরণ করে থাকে- এটা তাত্ত্বিকভাবে খুবই সুন্দর একটা প্রকল্প। কিন্তু, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল টিসিবি।’
উপদেষ্টা জানান, টিসিবির বছরে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার একটা বাজেট আছে। যার মধ্যে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে।
তিনি বলেন, ‘আপনারা শুনে অবাক হবেন, দেশে টিসিবির ১৬টি অফিস রয়েছে। এই ১৬টা অফিসে কর্মকর্তা, কর্মচারী, ড্রাইভার, দরোয়ান- সব মিলিয়ে লোক মাত্র ১৪২ জন, যার বাজেট সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। এটি হাস্যকর!’
শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, ‘এই যে এক কোটি কার্ড (টিসিবির) দেওয়া হয়েছে এবং এর যে ডিলার রয়েছে, এখানে ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে। এই অনিয়মগুলোকে চিহ্নিত করতে চাই। ইতিমধ্যে আমরা ৫৭ লাখ কার্ড নির্দিষ্ট করেছি এবং এক কোটি থেকে বাকি কার্ডগুলো আমরা বাদ দিয়েছি। একই সঙ্গে স্মার্টকার্ড নিয়ে এসেছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমি নিজে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় যারা কার্ড নিয়েছেন এবং ডিস্ট্রিবিউটর আছেন, তাদের দেখতে যাব।’
পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা তৈরি করতে পারলে দাম বেঁধে দেওয়ার কোন প্রয়োজন নাই। আমাদের প্রতিযোগিতা কমিশন এটি নিশ্চিত করবে।’
শেখ বশিরউদ্দিন সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা শুধু কৃষির ফলন নিয়ে কথা বলবেন, বিষয়টা এমন না। দয়া করে আপনারা কৃষি সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার নিয়েও কথা বলবেন। কৃষি নিয়ে যৌক্তিক দাবিগুলো আপনারা উপস্থাপন করুন।’
ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মৃধার সভাপতিত্বে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।