বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১,৩০০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা চায় পদ্মা ব্যাংক
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০২:৫৩ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্বল ব্যাংকের তালিকায় থাকা পদ্মা ব্যাংক।
চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা বলছেন, ‘পদ্মা ব্যাংক গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠানের আমানতের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে। তার আগে পদ্মা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’
‘ব্যাংকটির কাছে বর্তমানে যে টাকা রয়েছে- তা দিয়ে আমানত ফেরত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই, তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তারল্য সহায়তা চাচ্ছে।’
এ নিয়ে পদ্মা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কাজী মো. তালহার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদ্মা ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্যাংকটি তারল্য সংকটে ভোগার কারণে গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। বর্তমানে ব্যাংকটিতে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে। এসব আমানতের টাকা কিছুটা হলেও যেন ফেরত দেওয়া যায়- এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তারল্য সহায়তা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, নভেম্বরে সংকটে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক- এই ছয় ব্যাংককে তারল্য সহায়তা হিসেবে ২২ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নতুন করে টাকা ছাপিয়ে এ সহায়তা দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ‘এক দিকে যেমন টাকা ছাপানো হচ্ছে, তেমনি সেই টাকা বাজার থেকে তুলেও নেওয়া হবে। ফলে ‘মূল্যস্ফীতিকে ঠিক রাখার প্রচেষ্টা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন না’ বলে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
জানা গেছে, আর্থিক অনিয়মের কারণে পদ্মা ব্যাংক বছরের পর বছর আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। পদ্মা ব্যাংকের আগের নাম ছিল ফারমার্স ব্যাংক। অনিয়ম আর ঋণ কেলেঙ্কারিতে ফারমার্স ব্যাংক বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে - মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটে ২০১৭ সালে। আগের সরকারের উদ্যোগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক- সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) মিলে পদ্মা ব্যাংকের মালিকানার বেশিরভাগ অংশ কিনে নেয়। সেজন্য ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন জোগাতে হয়। তাতেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পদ্মা ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দশটি দুর্বল ব্যাংকের তালিকাতেও ছিল পদ্মা ব্যাংক। আর্থিক খাতের সংস্কারের অংশ হিসেবে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় সাত মাস আগে ‘মার্জার’ বা একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় একীভূত হওয়ার শর্ত হিসেবে নিরীক্ষার কাজও শেষ করেছিল পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংক। সেই নিরীক্ষা প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমাও দেওয়া হয়েছিল। তবে, নানা কারণে সেটি থমকে যায়।