পদ্মাকে একীভূত করবে না এক্সিম ব্যাংক
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১১:৪৬ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
পদ্মা ব্যাংককে একীভূত করার প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এক্সিম ব্যাংক।
মঙ্গলবার দেশের বড় পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তথ্য দিয়ে এক্সিম ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
যদিও পদ্মা ব্যাংক বলছেন, এক্সিম ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি তারা জানে না। সোমবার এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পদ্মা ব্যাংককে একীভূত করার প্রক্রিয়াটি আর চলমান না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
ব্যাংকটি বলছে, দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে তারা পদ্মা ব্যাংকের দায়িত্ব নিতে পারবে না। পদ্মা ব্যাংক অপেক্ষা করলে ‘ভালো সময় এলে দেখা যেতে পারে’।
ব্যাংক খাতের সংস্কারে সবচেয়ে আলোচিত হওয়া ‘মার্জার’ বা সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল ব্যাংক দুটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্ততায় ওই চুক্তি হয় গত মার্চে।
সরে আসার কারণ তুলে ধরে এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, “দেশের অনেক কিছুই বদলে গেছে। এই মুহূর্তে পদ্মা ব্যাংকের দায়িত্ব নিতে পারব না আমরা (এক্সিম ব্যাংক)।
“বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পদ্মা ব্যাংকের দায়িত্ব নিতে পারবে না। তারা যদি (পদ্মা ব্যাংক) অপেক্ষা করে, তাহলে ভালো সময় এলে দেখা যেতে পারে।’’ সিদ্ধান্তের আগে পদ্মা ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
এদিকে পদ্মা ব্যাংক বলছে, সোমবার ব্যাংকটির পরিচালক পর্ষদের সবশেষ বৈঠকেও এক্সিম ব্যাংকের সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
সরকার বদলের পর পদ্মা ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদ ওইদিন প্রথম বৈঠক করে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পদাধিকার বলে পদ্মা ব্যাংকের পরিচালক হওয়া জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, “আমরা ব্যাংকটির (পদ্মা ব্যাংক) ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য নতুন কিছু উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেছি। খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
“এক্সিম ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বোর্ড তাদের (এক্সিম ব্যাংকের) সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানেও না।’’
ব্যাংক সংখ্যা কমিয়ে আনার পদক্ষেপ হিসেবে গত বছরের ডিসেম্বরে দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক ।
এর পর গত ১৮ মার্চ প্রথমবারের মত শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম ব্যাংক ও প্রচলিত ধারার পদ্মা ব্যাংক একীভূত হতে সমঝোতা চুক্তি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্ততায়।
কিন্তু গত অগাস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বদলে যায় হিসাবনিকাশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে থাকা ‘ভালো ব্যাংক’ এক্সিমের আর্থিক সূচকের ক্ষত বেরিয়ে আসতে শুরু করে।
তাতে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া থমকে গেলে গত অক্টোবরে এক্সিম ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান হওয়া নজরুল ইসলাম স্বপন বলেছিলেন, “কি আর বলবো, ব্যাংক তো ফাঁকা করে দিয়ে গেছে। আমরা সামাল দিচ্ছি, তারল্য সংকট থাকলেও অন্যদের মত তীব্র না। এতটুকু ব্যবস্থা করতে পেরেছি।’’
তিনি বলেছিলেন, “সুন্দর সময়ের অপেক্ষায় আছি। ব্যাংক আগে ভালো হোক, তারপর পদ্মা ব্যাংকের দায়িত্ব নেওয়া বা মার্জারের বিষয়টি আসবে।”
সেই ‘সুন্দর’ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, “কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ মাস সময় দিতে হবে। তার আগে বলা যাবে না।”
যদিও মার্জার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংকের নিরীক্ষা শেষ করেছে ব্যাংক দুটো। নিরীক্ষা প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে জমাও পড়েছে।
গত মার্চ মাসে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর থেকে পদ্মা ব্যাংক আমানত সংগ্রহ কার্যত বন্ধ করে রেখেছে। নতুন ঋণও বন্ধ। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদত্যাগ করায় কাজ চলছে ‘ভারপ্রাপ্ত’ দিয়ে।
আমানত না পেয়ে আর্থিক সংকট সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সম্প্রতি ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তাও চেয়েছে পদ্মা ব্যাংক।