এলডিসি উত্তরণে মানবসম্পদের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন : বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় নিরাপত্তা ও পূর্বাভাস প্রদানের ক্ষেত্রে বিরোধ নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এলডিসি উত্তরণের পরিবর্তনে আমাদের ব্যবসায়িক সংগঠন এবং মানবসম্পদের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকার স্থানীয় একটি হোটেলে "বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত জাতীয় কর্মশালার" উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন তিনি।বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন,বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি থেকে উত্তীর্ণ হতে চলেছে, যা আমাদের অর্থনৈতিক যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই পরিবর্তনটি প্রচুর সুযোগ তৈরি করবে,তবে এর জন্য আমাদের ব্যবসায়িক সংগঠন এবং মানবসম্পদের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।তিনি বলেন, আমরা যতই এগিয়ে যাব, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক আলোচনায় জড়িত হবে। এছাড়াও, ইইউ, এসএএসইসি এবং আসিয়ানের মতো আঞ্চলিক ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হবে।তিনি আরো বলেন, তিন দিনের কর্মশালা ডব্লিউটিওর নিয়ম ও পদ্ধতি সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের বোধগম্যতা বৃদ্ধি করবে এবং তাদের কাজে এই অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগ করার সক্ষমতা উন্নত করবে।অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন , আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স ডিভিশনের পরিচালক জর্জ ক্যাস্ট্রো এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাব্লিউটিও অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাওসার চৌধুরী বক্তৃতা করেন।তিনদিনব্যাপী কর্মশালায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ অংশ নিবেন।

এবার এনআরবিসি ব্যাংকের ৬ বিভাগীয় প্রধানের অ্যাকাউন্ট তলব

বেসরকারি খাতের এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ তিনজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের পর এবার ব্যাংকটির ৬ বিভাগীয় প্রধানের অ্যাকাউন্টের তথ্য তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট–বিএফআইইউ। আগামী পাঁচদিনের মধ্যে এদের লেনদেন বিবরণীসহ যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে। গতকাল ব্যাংকগুলোতে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়।অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়েছে– হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মোহাম্মদ কামরুল হাসান, হেড অব আইটি দিদারুল হক মিয়া, হেড অব এমআইএস মো. রাজিদুল ইসলাম, চিফ ডিলার মুহাম্মদ জমির উদ্দিন, হেড অব সিকিউরিটি ফোর্সেস ফরহাদ সরকার এবং সিএফও মো. জাফর ইকবাল হাওলাদার। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে এদের প্রত্যেকের অ্যাকাউন্ট খোলার ফরম, হালনাগাদ লেনদেন বিবরণীসহ সব ধরনের তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। বিএফআইইউ এর আগে গত ১৪ নভেম্বর বিভিন্ন অনিয়ম–জালিয়াতিতে আলোচিত এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যানের পদ হারানো মোহাম্মদ আদনান ইমাম এবং ব্যাংকটির সিএফও মো. জাফর ইকবাল হাওলাদারের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে। এখন আবার জাফর ইকবাল হাওলাদারের অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি

চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর চার মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে এক লাখ এক হাজার ২৮১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে এক হাজার ৫৫ কোটি টাকা কম। আগের বছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল এক লাখ দুই হাজার ৩৩৬ কোটি ৪৫ লাভ টাকা। রাজস্ব কমার হার ১ শতাংশ। এসব তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের। জুলাই-অক্টোবর চার মাসে আমদানি শুল্ক থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। মূল্য সংযাজন কর (ভ্যাট) বাবদ আদায় হয়েছে ৩৬ হাজার ৭২৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আয়কর থেকে এসেছে ৩১ হাজার ৮৮০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে আমদানি থেকে আদায় ইতিবাচক ধারায় আছে। আর সব চেয়ে বেশি কমেছে মূল্য সংযোজন কর বাবদ আদায়। আগের বছর ২০২৩-২৪ সালের এ সময়ে আমদানি শুল্ক আদায় হয়েছিল ৩২ হাজার ৪০০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এবার এ চার মাসে শুল্ক আদায় শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়েছে। আগের বছর ভ্যাট আদায় হয়েছিল ৩৮ হাজার ৬১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা এবার প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে।

ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) ঢাকায় ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে এ সভা হয়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ এতে সভাপতিত্ব করেন। সভায় এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান এম মাসুদ রহমান, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম, স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা, অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খান, মো. আলতাফ হুসাইন ও মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন মজুমদার, কোম্পানি সেক্রেটারি (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন।

ফেনীতে এনসিসি ব্যাংকের বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি বিতরণ

কৃষি খাতে বিশেষ সিএসআরের আওতায় ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর, পরশুরাম, ফুলগাজী, দাগনভূঁইয়া ও সোনাগাজীতে এক হাজার বন্যাদুর্গত ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি বিতরণ করেছে এনসিসি ব্যাংক। শনিবার (৩০ নভেম্বর) তাদের মাঝে বিভিন্ন প্রকারের সবজি ও ধানবীজ, সার ও ব্যাকপ্যাক স্প্রে মেশিন বিতরণ করা হয়। ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদরের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন এনসিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নূরুন নেওয়াজ সেলিম।এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শামসুল আরেফিনের সভাপতিত্বে ছাগলনাইয়ার অনুষ্ঠানে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অভিষেক দাশ ও ছাগলনাইয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবল চাকমা বিশেষ অতিথি ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন এনসিসি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুল আলম ও মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, সিআরএম ডিভিশনের এসভিপি মুহাম্মদ শাহিদুল ইসলাম, এসভিপি ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের প্রধান মোহাম্মদ নুরুল হক। সাইফুল ইসলাম এনসিসি ব্যাংকের কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি বিতরণের মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,‘ ফেনী জেলার কৃষকরা এনসিসি ব্যাংকের এই কার্যক্রমের মাধ্যমে উপকৃত হবেন এবং এ এলাকার খাদ্যউৎপাদন বৃদ্ধিতে এই কার্যক্রম সহায়ক হবে।’ কৃষকেদের পাশে দাড়ানোর জন্য এনসিসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান জেলা প্রশাসক। অনুষ্ঠানে মো. নূরুন নেওয়াজ সেলিম বলেন, ‘এনসিসি ব্যাংক শুধু মুনাফা অর্জনের জন্যই ব্যবসায় করে না। বরং, সামাজিক দায়বদ্ধতায় কাজ করে যাচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ সিএসআরের আওতায় দেশের বিভিন্নঅঞ্চলের কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের সবজির বীজ, সার, কীটনাশক ও যন্ত্রপাতি বিতরণ করছে।’ ভবিষ্যতে উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ ও আরও উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রাংশ কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এম শামসুল আরেফিন বলেন, ‘এনসিসি ব্যাংক দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষি উপকরণ ও কৃষি যন্ত্রপাতি নিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে এনসিসি ব্যাংক কৃষকদের পাশে দাড়িয়েছে।’ এ এলাকার চাষীদের সবজি চাষে আরও বেশী উদ্বুদ্ধ করতে ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে এ উদ্যোগ সহায়তা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশে সুইডেনের বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে আরও বেশি সুইডিশ বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েন। তিনি বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দেশে ব্যবসায় সহজ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম চালাচ্ছে।’ সোমবার (২ ডিসেম্বর) ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে মুহাম্মদ ইউনূস এ কথা বলেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে আরও বেশি সুইডিশ বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই’। তিনি জানান, তার সরকার দুর্নীতি দমন করেছে, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে বিনিয়োগ সহজ করেছে এবং শ্রম আইনের বিষয়ে আইএলও কনভেনশন অনুমোদনের উদ্যোগ নিয়েছে। সাক্ষাতে নিকোলাস উইকস জানান, সুইডেনের সরকার ইউনূস-নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এবং পুলিশের সংস্কার, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন পুনর্গঠনের উদ্যোগকে সমর্থন করে। রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, এই পরিবর্তনকালে আমাদের পূর্ণ সমর্থন আপনার সঙ্গে রয়েছে।’ বৈঠককালে তারা জুলাই-আগস্ট বিপ্লব, সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, বাংলাদেশের সুইডিশ বিনিয়োগ ও গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনের আগে তার সরকার সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’ তিনি বলেন, ‘বিপ্লবের মূলমন্ত্রই ছিল ‘সংস্কার’।’ প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়েছে। তবে, কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশেষ করে সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর উচ্চ প্রত্যাশা পূরণের ক্ষেত্রে। ‘দাবিদাওয়া মেটানো একটি বড় কাজ। আমরা চেষ্টা করছি, তবে খুব সতর্কও রয়েছি।’ তিনি বলেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক শাহীনা গাজী।

কর ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রকল্পে লক্ষ্য লক্ষ্য কোটি টাকার দুর্নীতি

এক দিকে কর ফাঁকি, কর ছাড়ের অপব্যবহার ও অর্থ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় রাষ্ট্র রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। অন্য দিকে, বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত অপচয় হয়েছে। বাংলাদেশে এ চিত্র বিগত ১৫ বছরের। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী সরকারের সময়ে গড়ে প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে প্রতিটি খাতে লুটপাট ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। রোববার (১ ডিসেম্বর) বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তিন মাসের অনুসন্ধান শেষে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করে। প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিবেদন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ছাড়াও অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ বিষয়ে বলেন, ‘৩০ অধ্যায়ের ৪০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে কীভাবে ক্রোনি পুঁজিবাদ অলিগার্কদের জন্ম দিয়েছে, কীভাবে তারা নীতি প্রণয়নকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।’ কমিটি ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র’ শিরোনামের প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক ভারসাম্য, ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি, সরকারের ঋণ, পরিসংখ্যানের মান, বাণিজ্য, রাজস্ব, ব্যয়, মেগা প্রকল্প, ব্যবসার পরিবেশ, দারিদ্র্য ও সমতা, পুঁজিবাজার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও জলবায়ু ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ রয়েছে। কমিটি পদ্মা সেতু, রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কর্ণফুলী টানেলের মত মেগা প্রকল্পগুলোর ওপর তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। কমিটির পর্যবেক্ষণে যে-সব বিষয় উঠে এসেছে তা হল- রাজস্ব ফাঁকি ও আর্থিক ক্ষতি: কর ফাঁকি, কর ছাড়ের অপব্যবহার ও দুর্বলভাবে পরিচালিত সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনা রাষ্ট্রকে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ থেকে বঞ্চিত করেছে। ফলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ২০০৯-২০২৩ সালের মধ্যে বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। যা বিদেশি সাহায্য এবং এফডিআই প্রবাহের সম্মিলিত মানের দ্বিগুণেরও বেশি। তদুপরি, কর ছাড় অর্ধেকে নামিয়ে আনলে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দ্বিগুণ ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ তিনগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। সরকারি বিনিয়োগ: বড় আকারের সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে গড় ব্যয় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ও সময়সীমা পাঁচ বছরের বেশি পেরিয়ে গেছে। গত ১৫ বছরে এডিপি এবং উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে ১৪-২৪ বিলিয়ন বা এক লাখ ৬১ হাজার থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির কারণে নষ্ট হয়েছে। রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ ও ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তৈরি বাজেটের কারণে সম্পদ হারিয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের সময় তহবিলের অপব্যবহার ও পক্ষপাতদুষ্ট প্রকল্প পরিচালকদের নিয়োগ আরও বেশি সম্পদ সংকট সৃষ্টি করেছে। যার ফলে, অবকাঠামো ও সামাজিক বিনিয়োগ থেকে সম্ভাব্য সুফল কমেছে। খাদ্যপণ্যের সরবরাহ চেইন ধ্বংস: গৃহস্থালির উৎপাদন পরিসংখ্যান বিকৃত করা ও চাহিদা কম দেখানো হয়েছে। বিশেষ করে চাল, ভোজ্য তেল ও গমের মত প্রধান পণ্যের ক্ষেত্রে এমন চিত্র দেখা গেছে। যা বাজারকে অস্থিতিশীল করেছে। এলোমেলো ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ক্রয় নীতিমালা শক্তিশালী ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোকে সুবিধা দিয়েছে ও সাধারণ ভোক্তাদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। নিয়মিত মজুত পর্যবেক্ষণের অভাবে এই সমস্যাগুলোকে আরও জটিল করেছে। ব্যাংকিং ও আর্থিক ব্যবস্থা: রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ঋণদান প্রক্রিয়া ব্যাংকিং খাতের সংকটকে আরও গভীর করেছে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত আর্থিক মূল্য হিসাব করলে ১৪টি ঢাকা মেট্রো সিস্টেম বা ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণের সমান হবে। ধারাবাহিক ঋণ খেলাপি ও উচ্চ প্রোফাইল জালিয়াতি আর্থিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং উৎপাদনশীল খাত থেকে মূলধন সরিয়ে নিয়েছে। শ্রম অভিবাসন: গেল এক দশকে ১৩ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো ভিসা ক্রয়ের জন্য ব্যয় করেছে। যা ঢাকা এমআরটি-৬ (উত্তরা-মতিঝিল) নির্মাণের খরচের চার গুণ। সিন্ডিকেট ও শোষণমূলক রিক্রুটমেন্ট কার্যক্রম অভিবাসী শ্রমিকদের ন্যায্য চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। যার রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সামাজিক সুরক্ষা নেট: সামাজিক সুরক্ষা প্রোগ্রামের মধ্যে তহবিলের অযথা ব্যয় লাখ লাখ মানুষকে বিপন্ন অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। ২০২২ সালে ৭৩ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাভোগী গরিব হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ হয়নি। পরিবেশ ব্যবস্থাপনা: জলবায়ু অভিযোজন তহবিলের মধ্যে দুর্নীতি পরিবেশগত অবক্ষয়কে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত জলবায়ু সম্পদের অপব্যবস্থাপনা স্থায়িত্বমূলক উদ্যোগগুলোকে ব্যাহত করেছে ও জলবায়ু-উদ্ভূত ঝুঁকির বিরুদ্ধে দীর্ঘ মেয়াদি স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

রিক্রুটিং এজেন্সির আড়ালে পাচার ১৩ লাখ কোটি টাকা

বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর নামে হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে যে টাকা পাচার করা হয়েছে, তা দিয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল- এমন মেট্রোরেল বানানো যেত চারটি। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর এমন ভয়াবহ অর্থপাচারের চিত্র উঠে এসেছে শ্বেতপত্রে। বলা হচ্ছে, সামাজিক সুরক্ষা খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হত যাদের পেছনে, তাদের ৭৩ শতাংশই ভুয়া। যা বাড়িয়েছে সরকারি খরচ ও বঞ্চনা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কিংবা ওএমএসের পণ্য কিনতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের অপেক্ষার দীর্ঘ লাইন চোখে আঙুল দিয়ে যখন বুঝিয়ে দেয় আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে সাধারণ মানুষের হিমশিম অবস্থার কথা। এমন দৈন্যদশার মধ্যেই শ্বেতপত্র প্রতিবেদনে জানানো হয়, দরিদ্র মানুষ নিয়ে রীতিমত ছিনিমিনি খেলা হয়েছে গেল সরকারের আমলে।সামাজিক সুরক্ষা খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে; যাদের জন্য, ২০২২ সালের তথ্য- তাদের ৭৩ শতাংশই ভুয়া, অর্থাৎ, তারা গরিব নয়। দুর্নীতির জালে বন্দি রয়েছে নিম্ন আয়ের দুেই কোটি মানুষ; যারা দুই দিন কাজ করতে না পারলেই পড়ে যায় দারিদ্রসীমার নিচে।শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, ‘সরকার টাকা খরচ করছে ঠিকই, তবে যাদের জন্য খরচ করছে সুবিধা তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। সুবিধা সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য সুবিধাভোগীদের সঠিক তালিকা তৈরি করতে হবে।’এ দিকে, অর্থপাচারের নানা মাধ্যম খুঁজতে যখন হয়রান সরকারি বিভিন্ন সংস্থা; তখন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বলছে, ‘বিদেশে শ্রমিক পাঠাতে শুধু ভিসার আড়ালে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো গেল এক দশকে পাচার করেছে ১৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। যা দিয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল বানানো যেত চার বার।’এ অবস্থায় জনশক্তি রফতানির প্রতিটি ধাপে অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে রিক্রুটিং এজেন্সিকে বাধ্য করার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। রামরুর পরিচালক মেরিনা সুলতানা বলেন, ‘সিস্টেমটিকে স্বচ্ছ করতে হবে। যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’গেল ১৫ বছরে তথ্যের অস্বচ্ছতা আর ঘুষ-দুর্নীতিকে স্বাভাবিক কর্মযজ্ঞে পরিণত করা হয়েছিল বলেও জানানো হয়েছে শ্বেতপত্রে।

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ, যা জানালেন উপদেষ্টা

শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে দুর্নীতি হয়ে থাকলে সেটি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ। সোমবার (২ ডিসেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ (এটিজেএফবি) আয়োজিত তৃতীয় টার্মিনালের সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।বৈঠকে উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণে অস্বাভাবিক ব্যয় হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। এটি কেন হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হবে।’এর আগে নভোএয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মফিজুর রহমান বলেন, ‘নকশায় ভুল ও কয়েক বছরের ব্যবধানে সাত হাজার কোটি টাকার তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ হাজার কেটি টাকা। বাহ্যিকভাবে এ টার্মিনাল সুন্দর মনে হলেও সর্বস্তরে নিম্নমানের সামগ্রী, অখ্যাত ব্র্যান্ডের বহু যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। যা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।’তবে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তৃতীয় টার্মিনালে কোয়ালিটি সার্ভিস দেবে জানিয়ে বিমানের পরিচালক বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনালে একসঙ্গে ২০টি ফ্লাইট পরিচালনায় বিমানের এক হাজার জনবলের ঘাটতি রয়েছে। স্বল্পতা রয়েছে যন্ত্রপাতির। তবে, সবকিছুই সমাধান প্রক্রিয়াধীন।’আর এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘কোন দেশেই শহরের মাঝখানে এয়ারপোর্ট হতে পারে না। তৃতীয় টার্মিনাল কতটুকু অপারেশনাল সুবিধা কতটুকু বাড়বে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শহরের মধ্যে এয়ারপোর্ট রেখে এভিয়েশন হাব হিসেবে স্বপ্ন দেখা যাবে না।’

শেয়ারবাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেয়ারবাজার থেকে এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। এ তথ্য উঠে এসেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রতারণা ও কারসাজিসহ প্লেসমেন্ট শেয়ার এবং আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।’ তিন মাসের অনুসন্ধান শেষে রোববার (১ ডিসেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এ কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। শ্বেতপত্র প্রতিবেদনে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শেয়ারবাজারে প্রভাবশালী উদ্যোক্তা গোষ্ঠী, ইস্যু ম্যানেজার, নিরীক্ষক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কারসাজির একটি বড় নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। বাজারের মধ্যস্থতাকারী দেউলিয়া হয়েছে, তাদের ইক্যুইটি ৩০ হাজার কোটি টাকা নেতিবাচক হয়েছে।’ যারা ব্যাংক খাতের অপরাধী, তারা শেয়ারবাজারে আস্থা নষ্ট করার পেছনেও ছিল বলে শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, ‘শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একটি স্বার্থান্বেষী মহলের হস্তক্ষেপের কারণে নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।’ গেল ২৯ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, সিপিডি ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক একে এনামুল হক, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো কাজী ইকবাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম আরিফা সিদ্দিকী।

দেশের দশ শতাংশ মানুষ ৮৫ শতাংশ সম্পদ ভোগ করছে

অর্থনীতির শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘বিগত ১৫ বছরের শাসনামলে চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রের সৃষ্টি হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির কাজ হল চুরির বর্ণনা দেয়া, চোর ধরা নয়। আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোর চোরতন্ত্র করেছে। বাংলাদেশে উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশ অর্থ তছরুপ হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের দশ শতাংশ মানুষ ৮৫ শতাংশ সম্পদ ভোগ করছেন।’ সোমবার (২ ডিসেম্বর) ঢাকার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে শ্বেতপত্র কমিটির সংবাদ সম্মেলনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন। এর আগে, রোববার (১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরো বলেন, ‘এই স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার ভয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের অনেকেই সরকারের চাপিয়ে দেয়া উন্নয়নের বয়ানকে বৈধতা দিতে বাধ্য হয়েছেন। মোট ১২ জন নামজাদা অর্থনীতিবিদ নিয়ে শ্বেতপত্র কমিটি গঠন করা হয়েছিল। একটি প্রতিনিধিত্বশীল কমিটির মাধ্যমে এই শ্বেতপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। এই শ্বেতপত্রে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নয়, দুর্নীতির পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। কমিটির কাজ চোর ধরা না, চুরির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা।’ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘কমিটির প্রতিটি সদস্য বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন। তিন মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই শ্বেতপত্র তৈরি করা হয়েছে। এমনকি যতটি সভা হয়েছে, সেখানে একটি পয়সা সিটিং অ্যালাউন্স নেয়া হয়নি।’ তবে, বিদেশি পরামর্শক এনে এই শ্বেতপত্র করা হলে ন্যূনতম ২৫ কোটি টাকা খরচ হত বলে জানান তিনি। ‘কমিটি এটি দেশের জন্য নিঃস্বার্থ অবদান হিসেবে করেছে, যা দেশের স্বার্থে উদহারণ হয়ে থাকবে। রিপোর্টটিকে সাবধানতার কারণে এখনো খসড়া হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কিছু পরিসংখ্যান পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে। আগামী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে এটি ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করা হবে। এই রিপোর্টের গ্রন্থস্বত্ব স্বয়ং বাংলাদেশ সরকার। এটিকে সরকার নিজস্ব দলিল হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছে।’ শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান বলেন, ‘প্রথাগত গবেষণা পদ্ধতির বাইরে গিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক আলোচনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশি-বিদেশিদের সাথে আলোচনা করে এই প্রতিবেদনের নানা দিক অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ৯০ দিনের মধ্যে আমরা নিজেরা ১৮ বার সভা করেছি। নীতিনির্ধারকদের সাথে ২২ বার সভা করেছি। আমাদের প্রথম সভা ছিল ছাত্রদের সাথে। তাদের সর্বোচ্চ জোর ছিল মানসম্মত শিক্ষার ওপরে। শ্বেতপত্রের পুরো প্রক্রিয়া না বুঝলে এই দলিলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। জনমানুষের সাথে সম্পৃক্ততা বজায় রেখে এটি প্রস্তুত হয়েছে।’ শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ডক্টর জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিগত সময়ে দেশের অর্থনীতিবিদরা মধ্য আয়ের ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনার কথা বলত। আমরা বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এখন বলছি, বাংলাদেশ মধ্য আয়ের ফাঁদে পড়ে গেছে। তবে, বিগত সরকার যেহতু বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির তথ্য-উপাত্তকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেখিয়েছিল। তাই, এই ফাঁদের মধ্যে পড়ে যাওয়াটা আমরা এত দিন বুঝতে পারেনি।’ শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে শুরুর দিকে বাংলাদেশে যে দুর্নীতি হয়েছিল, তা ছিল শ্যাডো ইকোনমি। বাংলাদেশের বিভিন্ন উৎপাদন ক্ষেত্রে সে অর্থনীতি কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে, সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু, শেষের দিকে যে দুর্নীতি হয়েছে তার অধিকাংশই বিদেশে পাচার হয়ে গিয়েছে। মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব টাকা লোপাট করা হয়েছে, পরবর্তী প্রজন্মের ঘাড়ে সেই বোঝা থেকে গেল।’ কমিটির আরেক সদস্য সেলিম রায়হান বলেন, ‘যেসব খাতে সংস্কার দরকার সেখানে শক্তিশালী উদ্যোগ নিতে হবে।’ সদস্য ইমরান মতিন বলেন, ‘দশ শতাংশ মানুষের কাছে ৮৫ ভাগ সম্পদ।’ নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যেই ৪০০ পৃষ্ঠার এই দলিলটি তৈরি হয়েছে, সর্বোচ্চ দেড় মাসের মধ্যে ছোট খাট সংশোধন শেষে রিপোর্টটি বই আকারে প্রকাশ হবে বলে জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা পাচারের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে ব্যাংক খাত। এরপর অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং তথ্য প্রযুক্তিখাত থেকে বিপুল অংকের টাকা লোপাট হয়েছে।’ সম্মেলনে শ্বেতপত্র কমিটির সদস্যরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আগামী ছয় মাস অর্থনীতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ এ থেকে উত্তরণে সরকারকে একটি মধ্য মেয়াদি নীতি গ্রহণের পরামর্শ তাদের।

অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম: ক্যাব

বাজারে প্রচলিত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে বলে মনে করছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। বাজারে নিত্য পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা ও বাজার মনিটরিং বাড়ানোসহ মোট ৮ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। সোমবার (২ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ক্যাব কর্তৃক ‘আলু, পেয়াঁজ ও ভোজ্য তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে’ আয়োজিত মানববন্ধনে এসব দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। বিশেষত আলু, পেঁয়াজ এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ জনগণের নাভিশ্বাস অবস্থা। বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু মান ভেদে এখনো ৭৫-৮০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১১৫-১৩০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৫-১৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে তারা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নভেম্বর মাসে এমন চড়া দামে আলু বিক্রি হতে দেখা যায়নি। মূলত সিন্ডিকেটের কারণেই এবার আলুর দামের এমন অবস্থা। বিপুল আলু হিমাগারে মজুদ থাকায় ও আমদানি জটিলতার কারণে এবার আলুর দাম ভোগাচ্ছে ক্রেতাদের। অবশ্য দাম নিয়ন্ত্রণে বা আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক করতে নেই যথাযথ তদারকি। হিমাগার পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর তদারকি না থাকায় আলুর দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না। একইসঙ্গে আলুর মতো নিয়ন্ত্রণে আসেনি পেঁয়াজের দাম। দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি থাকা পেঁয়াজের দামও এখনও কেজি প্রতি ৭০-৮০ টাকা। মানবন্ধনে উপস্থিত ক্যাব নেতারা বলেন, কৃষক পর্যায় থেকে নামমাত্র মূল্যে আলু কিনে মজুদ করে অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন থেকে এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসব ঘটনা বারবার ঘটছে। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারি সংস্থাগুলোকে আরও বেশি সজাগ ও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। এসময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন তারা৷ সেগুলো হচ্ছে — ১. অসাধু দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।২. নিত্য পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।৩. টিসিবির ট্রাক সেল বাড়াতে হবে।৪. ভোজ্য তেল খোলা বাজারে যারা বিক্রি করছেন তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।৫. ভোক্তা স্বার্থ দেখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা বিভাগ বা কনজুমারস মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।৬. সরকার ১ কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে নিত্যপণ্য দিচ্ছে এর সংখ্যা দেড় কোটি করতে হবে।৭. বাজারে খোলা ভোজ্য তেল বিক্রেতাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।৮. বাজার অভিযান বা মনিটরিং বাড়াতে হবে। মানবন্ধনে এসময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ, ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. শওকত আলী খান।

কমল স্বর্ণের দাম

দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এবার ভরিতে এক হাজার ৪৮১ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম এক লাখ ৩৭ হাজার ২২৭ টাকা নির্ধারণ করেছে সংগঠনটি। রোববার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস। সোমবার (২ ডিসেম্বর) থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিউর গোল্ড) মূল্য কমেছে। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।’নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে এক লাখ ৩৭ হাজার ২২৭ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি এক লাখ ৩০ হাজার ৯৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি এক লাখ ১২ হাজার ২৮৯ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯২ হাজার ১৩৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজুস জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত পাঁচ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ছয় শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে, গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।

পাচার হওয়া টাকা ফেরাতে এফবিআইসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে বৈঠক করবে সরকার

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসহ (এফবিআই) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে অন্তর্বর্তী সরকার বৈঠক করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বিগত সরকারের আমলে চোখের সামনে লুটপাট হলেও অনেকেই সেগুলোর বৈধতা দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। রোববার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রেস সচিব। এতে উপস্থিত ছিলেন উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর। এ দিন, দুপরে আর্থিক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি সোমবার (২ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।’ প্রতিবেদনটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের উন্নয়নের গল্পের ময়নাতদন্ত বলে উল্লেখ করেন তিনি। শফিকুল আলম বলেন, ‘ময়নাতদন্তে ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে এসেছে। আমাদের চোখের সামনে দিয়ে লুটপাট চলেছে। লুটপাটতন্ত্র জারি হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের অনেকেই এটার বৈধতাও দিয়েছেন। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে।’ শ্বেতপত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতিচিত্রে মুহাম্মদ ইউনূস আতঙ্কিত হয়েছেন বলে জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এটা রক্ত হিম করার মত অবস্থা। বাংলাদেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকা এটা। দেশের বহু গরিব মানুষের টাকা এরা লুটপাট করেছে।’ লুটপাটকারী খুব বেশি নয় জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘সেখান রাজনৈতিক ব্যক্তি, আমলা, অলিগার্ক কিছু ব্যবসায়ী ছিলেন। তাদের যোগসাজশে এ টাকা পাচার হয়েছে।’ যার বৈধতা বহু সাংবাদিক দিয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন শফিকুল আলম। পাচার করা টাকা ফেরত আনা সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘টাকা যেভাবে হোক ফেরত আনার চেষ্টা করব। সেই অনুযায়ী আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে অনেকগুলো কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে। এফবিআইসহ আন্তর্জাতিক যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে, তাদের সঙ্গে বহু ধরনের বৈঠক হচ্ছে, কথা হবে। আমাদের পুরো ফোকাস থাকবে টাকাটা কীভাবে ফেরত আনা যায়।’ তবে, টাকাতো চুরি করে নিয়ে গেছে, সেটা আগে সন্ধান করতে হবে বলেও জানান তিনি। শফিকুল আলম বলেন, ‘যারা চুরি হয়ে যাওয়া টাকা ফেরত আনা নিয়ে কাজ করে তাদের সঙ্গে কথা হবে। টাকা নেওয়া সহজ। কিন্তু, ফেরত আনার বিষয়ে আইনি দিক দেখতে হয়, কোথায় টাকা চলে গেছে তা নিশ্চিত হতে হয়। এ জন্য আন্তর্জাতিক বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান আছে। তাদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে, পরামর্শ নিচ্ছি। কীভাবে টাকা ফেরত আনা যায়।’ তিনি বলেন, ‘টাকা ফেরত আনা কষ্টসাধ্য কাজ। এটা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের একটা।’ আমার বাসার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার এমন বক্তব্য উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘তিনি অনেক বীরত্বের সঙ্গে বলেছিলেন তার পিয়নও ৪০০ কোটি টাকা বানিয়েছে।’ শ্বেতপত্রে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাতের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে বলেও জানান শফিকুল আলম। শ্বেতপত্রে আরও কিছু নতুন তথ্য যোগ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অফিসিয়াল তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। না হলে সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানুষের টাকা কীভাবে লুটপাট হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে ফোকলা করে দেওয়া হয়েছে, তার পুরো চিত্রটা পাওয়া যাবে।’ দুর্নীতি দমন কমিশন খুব শিগগিরই মনোনয়ন পাবে বলে জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, ‘কমিশনের কমিশনারদের বাছাই করা হবে। কারা কারা চুরিতে জড়িত ছিলেন তা বের করতে তারা খুব দ্রুতই কাজ শুরু করবেন।’ মেগা প্রকল্পে বড় দুর্নীতি হয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেলের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘পুরো প্রকল্পটাই করা হয়েছে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর (সাবেক ভূমিমন্ত্রী) সংসদীয় এলাকায় যাওয়ার জন্য। সেখানে উনি সাড়ে ২০০ কোটি টাকা দিয়ে প্রাসাদ করে রেখেছেন। কিন্তু যাবেটা কে? এখন মেনটেন্যান্স খরচ ওঠানো যাচ্ছে না। অথচ এ চুরিটা আমাদের চোখের সামনে হয়েছে। এটা নিয়ে গণমাধ্যমে বহু লেখালেখি হয়েছে। বলতে গিয়ে মুখে ফেনা উঠিয়ে ফেলেছেন। তখন কেউ যদি ভাল অর্থনীতিবিদ বা ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বললে কর্ণফুলী টানেলের অর্থনৈতিক ভ্যালু জানতে পারত।’ দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় আনতে সরকার ধারাবাহিক বৈঠক করছে বলে জানান প্রেস সচিব। সাড়ে ২২ হাজার টাকা ছাপিয়ে ব্যাংককে সহায়তা দেওয়ায় মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে কিনা- এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, ‘এতে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়বে না। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক মাস আগেও ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়েছিল। ওই টাকা ছাপানোর মূল্য উদ্দেশ্য ছিল এস আলমকে টাকা পাচারে সাহায্য করা।’ সরকার কিছু ব্যাংককে সহায়তার জন্য টাকা ছাপিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ টাকাটা চৌবাচ্চার পানির মত। এক দিক দিয়ে আসছে, আরেক দিক দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। ফলে, বাজারে যে টাকা আছে, তা সমান থাকছে। এতে অতিরিক্ত টাকার জোগান হবে না। বিধি মেনেই হয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে না।’

অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে কম এসেছে রেমিট্যান্স

নভেম্বর মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ অক্টোবরের তুলনায় কমেছে। সদ্যবিদায়ী নভেম্বর মাসে দেশে ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশে এসেছিল ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ ডলার, তাই নভেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। নভেম্বর মাসে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে এসেছে ৮২ কোটি ৪২ লাখ ১০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো থেকে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে ১২২ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার, এবং বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো থেকে এসেছে ৬২ লাখ ৮০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ২৪ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৪৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার, ১৭ থেকে ২৩ নভেম্বরের মধ্যে ৪৭ কোটি ১২ লাখ ২০ হাজার ডলার, ১০ থেকে ১৬ নভেম্বর ৬০ কোটি ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার, ৩ থেকে ৯ নভেম্বর ৬১ কোটি ২৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার এবং ১ থেকে ৩ নভেম্বর ৪ কোটি ২৪ লাখ ১০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর আগে, জুন মাসে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসার পর জুলাইয়ে প্রবাসী আয় ছিল সবচেয়ে কম, প্রায় ১৯১ কোটি ডলার। তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং সেপ্টেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স গ্রহীতার স্বীকৃতি পেল ইসলামী ব্যাংক

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আয়োজিত বাংলাদেশ রেমিট্যান্স ফেয়ার এ ঘোষিত “টপ রেমিট্যান্স রিসিভার ব্যাংক অ্যাওয়ার্ড ২০২৪” পুরস্কার পেয়েছে। এ উপলক্ষে রবিবার (১ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের নিকট ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট হস্তান্তর করেন বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী। উল্লেখ্য বাংলাদেশ-আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, মুক্ত ধারা নিউইয়র্ক এবং ইউএস-বাংলা বিজনেস লিংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত রেমিট্যান্স ফেয়ারে ইসলামী ব্যাংকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় সংগ্রহের মাধ্যমে বাংলাদেশে ক্রমাগত রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অসামান্য অবদান রাখায় এ সম্মাননা ঘোষণা করে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা, অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মোঃ ওমর ফারুক খান, মোঃ আলতাফ হুসাইন, মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন মজুমদার, ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মোঃ রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম মাহবুব মোরশেদ, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মাসুদ ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির বাংলাদেশ প্রতিনিধি মধুসূদন সাহা, বাংলাদেশ ইমিগ্র্যান্ট ডে অ্যান্ড ট্রেড ফেয়ারের বাংলাদেশ সমন্বয়ক রীতেশ সাহাসহ ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী ও কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন। ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ পুরস্কার প্রদানকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই স্বীকৃতি প্রবাসী রেমিট্যান্স-যোদ্ধাদের। তিনি ইসলামী ব্যাংকের উপর আস্থা রাখার জন্য প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি আরো বলেন, দেশের প্রবাসী আয়ের এক তৃতীয়াংশ সংগ্রহ করে ইসলামী ব্যাংক এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখার আশা ব্যক্ত করেন।

ইসলামী ব্যাংকের ৫শ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন

শেয়ারবাজারে ব্যাংকিং খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইসলামী ব্যাংক পিএলসির ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। রোববার (০১ ডিসেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, ইসলামী ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার বন্ডটি হবে পঞ্চম মুদারাবা রিডিমেবল নন-কনভার্টেবল সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড। ব্যাংকটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টায়ার-২ মূলধন বৃদ্ধি এবং ব্যাংকের মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী করতেই এই বন্ড ইস্যু করা হবে। এতে ১০ হাজার ইউনিট থাকবে, যার প্রতিটির মূল্য পাঁচ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর পূর্ববর্তী ঘোষণার পর এই অনুমোদন দেওয়া হলো।

শিল্প উদ্যোক্তাদের মূলধনী পণ্যের আমদানিতে ৩ বছর মেয়াদী বৈদেশিক ঋণ

শিল্প উদ্যোক্তাদের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য বায়ার্স এবং সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিটের আওতায় এক বছরের পরিবর্তে এখন থেকে তিন বছর মেয়াদি বৈদেশিক ঋণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর যেসব গ্রাহক মূলধনী যন্ত্রপাতি আনার জন্য ইতোমধ্যে মধ্যমেয়াদী এবং স্বলাপমেয়াদী ঋণের চুক্তি করেছে তাদের ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ঋণের মেয়াদ বাড়লেও সুদের হার না বাড়াতে বলা হয়েছে। এ বিষয় রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য বাড়তি উৎসাহ যোগাতে জারি করা এই নির্দেশনা কেবলমাত্র এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন, প্রাইভেট এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন, ইকোনমকি জোন, হাই-টেক পার্ক এবং সরকার কর্তৃক ঘোষিত বিশেষায়াতি জোনের অভ্যন্তরে কারখানান জন্য প্রযোজ্য হবে। আর সুবিধা প্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বস্ত্র বভিগের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে বিডার ফরেন ঋণ/সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট সংক্রান্ত স্ক্রুটিনি কমিটির ১৮২ তম সভায় তিন বছর মেয়াদী ঋণের সিদ্ধান্ত হয়। মূলত মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য বাড়তি উৎসাহ যোগাতে দেশের সকল অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার এক প্রজ্ঞাপনে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের পক্ষ্য থেকে জানানো হয়, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে যেসব আমদানি–নির্ভর শিল্প খাত ক্ষতির মুখে পড়েছে, সেই ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধে আট বছর পর্যন্ত সময় দিয়েছে। এসব ঋণ আলাদাভাবে হিসাব করে এক বছরের বিরতিসহ প্রতি মাসে বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা যাবে। কোভিড-১৯-এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার মূল্যমান উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় স্থানীয় উৎপাদনমুখী শিল্পগুলো কাঁচামাল আমদানিকালে বিনিময় হারজনিত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতা হ্রাসসহ ফোর্সড ঋণ সৃষ্টি হচ্ছে এবং চলতি মূলধনের ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন সুবিধা দেওয়া হয়।

প্রধান উপদেষ্টার কাছে ‘অর্থনীতির শ্বেতপত্র’ কমিটির প্রতিবেদন জমা

দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত শ্বেতপত্র তৈরির জন্য গঠিত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। রোববার দুপুরে (১ ডিসেম্বর) বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ‍্য জানিয়েছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রতিবেদনের ফলাফল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে তুলে ধরবেন। ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ প্ল্যানিং কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষের একনেক রুমে সোমবার (২ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।জানা গেছে, ২৪টি অধ্যায়ে সন্নিবেশিত হয়েছে দুর্নীতির বর্ণনা। অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরার পাশাপাশি এতে আছে প্রতিবেদনের ভূমিকা, উপসংহার ও অন্যান্য সংযুক্তি। প্রসঙ্গত, গেল ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অর্থনীতির ক্ষত ও পরিস্থিতি পরিমাপ করে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।

মতিউল হাসান মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক

মতিউল হাসান মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এর আগে তিনি একই ব্যাংকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ রিস্ক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি আইএফআইসি ব্যাংকের ওভারসিজ অপারেশনসের পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ পদে এবং নেপাল বাংলাদেশ ব্যাংকের (জয়েন্ট ভেঞ্চার অব আইএফআইসি) ডিএমডি ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ডিএমডি পদে যোগ দেন। কর্মজীবনে তিনি দেশে ও বিদেশে ব্যাংকিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নেন। তিনি ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা অর্জন করেন এবং ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স পাকিস্তানের একজন অ্যাসোসিয়েটস। মতিউল হাসান ১৯৮৪ সালে আইএফআইসি ব্যাংকে প্রবেশনারি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কর্মক্ষেত্রে তিনি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা, হেড অফিস ও লোকাল অফিস মতিঝিল শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন।

এবার সূর্যমুখী ও ক্যানোলা তেলের শুল্ক-কর কমানোর সুপারিশ

সয়াবিন ও পাম তেলে শুল্ক-কর কমানোর পর এবার সান ফ্লাওয়ার ও ক্যানোলা তেল আমদানিতেও শুল্ক-কর কমানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। সম্প্রতি সান ফ্লাওয়ার ও ক্যানোলা তেল শুল্ক-কর কমানোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। যার অনুলিপি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের কার্যালয়েও দেয়া হয়েছে।চিঠিতে ট্যারিফ কমিশন জানায়, দেশের বাজারে ভোজ্যতেল হিসেবে বেশি চাহিদা রয়েছে সয়াবিন ও পাম তেলের। অথচ সান ফ্লাওয়ার (সূর্যমুখী) ও ক্যানোলা তেল উত্তম বিকল্প হতে পারে। বিশ্ব বাজারে এ দুই পণ্যের দাম সয়াবিন ও পামের কাছাকাছিই। উচ্চ শুল্ক আরোপ করে পণ্য দুইটি আমদানি নিরুৎসাহিত করে রাখা হয়েছে।বাংলাদেশে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানিতে আরোপিত শুল্ক-কর বিবেচনায় সানফ্লাওয়ার এবং ক্যানোলা তেলকে বিলাসী পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে উল্লেখ করে বিটিটিসি জানায়, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক নয়। সমজাতীয় তেলে আমদানি শুল্ক-করে পার্থক্য দূর করলে এক দিকে আমদানির উৎস সম্প্রসারিত হবে; অন্য দিকে ভোক্তার পছন্দে বৈচিত্র্য সৃষ্টি হবে।এ পরিস্থিতিতে ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহারের জন্য অপরিশোধিত সানফ্লাওয়ার তেল ও অপরিশোধিত বা পরিশোধিত ক্যানোলা তেল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক প্রত্যাহার করে অপরিশোধিত বা পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের মত ১৫ শতাংশ ভ্যাট (স্বাভাবিক সময়ে) এবং একই কারণে রমজানকে সামনে রেখে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ শতাংশ ভ্যাট ও আরোপ করা যেতে পারে। তবে, পরিশোধিত সান ফ্লাওয়ার ও ক্যানোলা তেলের শুল্ক-কর প্রস্তাব করা হয়েছে ২০ শতাংশ, যার মধ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও পাঁচ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি)।

সরাসরি গ্রাহকের কাছে বিক্রির জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে: জ্বালানি উপদেষ্টা

বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তার সবটা সরকারের কাছে বিক্রির মডেল বহু পুরোনো বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, ‘বেসরকারি খাতে নতুন করে ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হবে না। মার্চেন্ট বিদ্যুৎ নীতি করা হচ্ছে। এতে সরাসরি গ্রাহকের কাছে বিক্রির জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে।’ ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত সেমিনারে এ সব কথা বলেন ফাওজুল কবির খান। ‘জ্বালানির দ্রুত রূপান্তর: স্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক এ সেমিনার শনিবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকার ইআরএফের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘হুইলিং চার্জ দিয়ে সরকারি সংস্থার বিতরণ লাইন ব্যবহার করতে পারবে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র।’ উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত দামে সব বিদ্যুৎ কিনে নেয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বেশি দামে কিনলেও তারা সরকার নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করে বিতরণ সংস্থার কাছে। এতে প্রতি বছর পিডিবিকে লোকসান গুনতে হয়, যা ভর্তুকি হিসেবে দেয় সরকার। সেমিনারে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে বছরে ভর্তুকি ৩২ হাজার কোটি টাকা। জ্বালানিতে ভর্তুকি ২০ হাজার কোটি টাকা। এমন ভর্তুকিনির্ভর বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত চলবে না। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘গেল আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতি করার জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন করেছিল। এটি অসাংবিধানিক, তাই ইতিমধ্যে এটি বাতিল করা হয়েছে।’ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই বলে জানান ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের বাধ্যবাধকতা আছে সরকারের। এর জন্য জমির কোন সমস্যা নেই। সরকারি জমি অব্যবহৃত পড়ে আছে। রেলওয়ের জমি আছে, সড়কের জমি আছে। হাজার হাজার একর জমি ইকোনমিক জোনের নামে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি এসব জমি নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ব্যবহার করা হবে।’ পূর্বের সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারের কথা বললেও আন্তরিকভাবে তা চায়নি বলে মন্তব্য করেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সরকার চাইলে এটি হত। নবায়নযোগ্য জ্বালানির অর্থায়নে সব সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে।’ শুল্ক কমানোর পরিবর্তে উদ্যোক্তাদের আমদানি এড়িয়ে দেশে সৌর বিদ্যুৎ যন্ত্রপাতি উৎপাদনের পরামর্শ দেন তিনি। দেশে জ্বালানির প্রাথমিক চাহিদা পূরণ করাই বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘দিনে গ্যাসের চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ করা হয় প্রায় ৩০০ কোটি ঘনফুট। ঘাটতি ১০০ কোটি ঘনফুট, যা দিন দিন আরও বাড়ছে। আমদানি বেশি বাড়ানো যাবে না। তাই, কূপ খনন করে দেশে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। জ্বালানির অভাবে হাজার হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র পড়ে আছে। বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের ব্যবহার কমাতে পারলে শিল্প খাতে সরবরাহ বাড়বে।’ ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘সম্পদ দেখে নয়, ব্যালান্স শিট দেখে ঋণ দেওয়ায় বেশি উৎসাহী ব্যাংক। খেলাপি ঋণের বেশির ভাগই ব্যালান্স শিটনির্ভর, যা আসলে সবই ফাঁকা, শুধু কিছু সংখ্যানির্ভর। বেক্সিমকো ও এস আলম ব্যালান্স শিট দেখিয়ে ঋণ নিয়েছে, এখন বেতন দিতে পারছে না। খেলাপি ঋণ এখন তিনি লাখ কোটি টাকা।’ সেমিনারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অর্থায়ন এখনো শুরুর দিকে। ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগে ঋণ দিতে উৎসাহী। তাই, নবায়নযোগ্য জ্বালানির মত দীর্ঘমেয়াদি খাতে ঋণের ঝুঁকি নিতে চায় না। ব্যাংকগুলোকে নতুন ধারার অর্থায়নে উৎসাহী করতে হবে। তবে, বিদেশি বিনিয়োগ না এলে জ্বালানি রূপান্তরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ‘গেম চেঞ্জার’ হবে না।’ সিটি ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট ও কান্ট্রি বিজনেস ম্যানেজার মো. আশানুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে দেশি মোট বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ সিটি ব্যাংকের। তারা সম্প্রতি সৌর ও বায়ুচালিত দুইটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করেছেন। উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ চাহিদা নিয়ে ব্যাংকে আসতে হবে। এ খাতের যন্ত্রপাতি আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্কের কারণে বিনিয়োগ লাভজনক মনে করে না অনেকে।’ ইআরএফ, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ (সিইপিআর), কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন) ও বিডব্লিউজিইডি যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করেছে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিইপিআরের চেয়ারপারসন গৌরাঙ্গ নন্দী। তিনি সহজে অর্থায়নের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব করেন। ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মৃধার সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সেমিনার সঞ্চালনা করেন।

ই-কমার্স খাতে নতুন মাইলফলক গড়ে শেষ হল দারাজ ১১.১১ ক্যাম্পেইন

দেশের বৃহত্তম অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজ নতুন মাইলফলক গড়ে সফলভাবে শেষ করেছে বছরের সবচেয়ে বড় অনলাইন শপিং উৎসব দারাজ ১১.১১। ১১ নভেম্বর মধ্যরাতে শুরু হয়ে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত চলা এই ক্যাম্পেইনে ভোক্তাদের জন্য ছিল ৫০ কোটি টাকার ভাউচার, ফ্রি ডেলিভারি সুবিধা এবং ফ্ল্যাশ সেলে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের মতো আকর্ষণীয় অফার। ক্রেতাদের পছন্দের পণ্য ও কেনাকাটার ধারাএবারের ১১.১১ ক্যাম্পেইনে পুরুষ ও নারীদের এক্সেসরিজ, অডিও ডিভাইস, মোবাইল এক্সেসরিজ, স্কিনকেয়ার এবং বাথ অ্যান্ড বডি পণ্যগুলো শীর্ষ বিক্রিত পণ্যের তালিকায় ছিল। বিশেষ করে, ডিটারজেন্ট, ফোন কাভার, স্যানিটারি ন্যাপকিন, বডি ওয়াশ এবং ক্যাপ ও মোজা ছিল সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন পণ্য। ফ্যাশন, ফার্নিচার ও ডেকর, গ্রোসারি, হেলথ অ্যান্ড বিউটি এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্স ক্যাটাগরিগুলোর বিক্রি গত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দেয় যে, ক্রেতারা এখন দারাজের প্ল্যাটফর্মে শুধুমাত্র দৈনন্দিন পণ্য নয়, বরং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের পণ্য কিনছেন। জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহও ছিল লক্ষণীয়। লোটো, প্যারাস্যুট, টেকনো, হায়ার এবং ডেটল ছিল ক্যাম্পেইনের শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই সফলতা দারাজের মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ এবং ক্রেতাদের আস্থা অর্জনের ধারাবাহিকতার প্রতিফলন। শহরের বাইরে ই-কমার্সের প্রসারএবারের ক্যাম্পেইনে অর্ধেকের বেশি অর্ডার এসেছে মেট্রোপলিটন শহরের বাইরের অঞ্চল থেকে। দারাজের এই সফলতা ই-কমার্সকে গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সহজলভ্য করার প্রচেষ্টার একটি বড় উদাহরণ। অন্যদিকে, ডিজিটাল পেমেন্টের জনপ্রিয়তাও ছিল লক্ষণীয়। ক্যাম্পেইনের মোট লেনদেনের এক-তৃতীয়াংশই মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এবং ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। এটি ক্রেতাদের মধ্যে ক্যাশলেস পেমেন্ট পদ্ধতির প্রতি আস্থা বৃদ্ধির ইঙ্গিত। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পণ্যের ডেলিভারিক্যাম্পেইনের সময় দারাজের লজিস্টিকস টিম ডেলিভারির গতি ও কার্যকারিতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। ডেলিভারি রুট উন্নত করা, লাস্ট-মাইল কানেকশন শক্তিশালী করা এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত এবার ১১.১১ ক্যাম্পেইনে চট্টগ্রাম থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত ৫৮২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দেশের দীর্ঘতম ডেলিভারি সম্পন্ন হয়। দারাজ বাংলাদেশের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস রুশো বলেন, ‘১১.১১ ক্যাম্পেইন আবারও দেখিয়েছে কীভাবে ই-কমার্স আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। ক্রেতা, বিক্রেতা এবং ব্র্যান্ডগুলো আমাদের সঙ্গে একসঙ্গে এই ইভেন্টকে সফল করতে কাজ করেছে। দারাজ গর্বিত যে আমরা এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য এবং আনন্দ যোগ করতে পেরেছি।’ ১১.১১ ক্যাম্পেইনের এই সাফল্যের মধ্য দিয়ে দারাজ স্থানীয় ব্যবসা ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আরও দৃঢ় সংযোগ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দেশের প্রতিটি কোণে ই-কমার্সকে আরও সহজলভ্য ও উপভোগ্য করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দারাজ।

অনিয়ম-দুর্নীতি ২-৪ মাসে স্বাভাবিক করা সম্ভব নয় : অর্থ উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগের সরকারের রেখে যাওয়া অনিয়ম-দুর্নীতি ২-৪ মাসে স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতে কেউ আর টাকা পাচার করতে পারবে না। শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক বাণিজ্য সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ক্ষয় হয়ে যেতে শুরু করা দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে। একইসঙ্গে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও। এ ক্ষেত্রে বিদেশি সহযোগী সংস্থাগুলো খুবই ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে। এ সময় বিগত সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়েও কথা বলেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন, ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ রহমান, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি জাভেদ আখতারসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।