তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটি গঠনে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০২:৫৪ পিএম, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের প্রশ্নে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য কমিটি গঠনে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) সকালে তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ২০১৯-২০ সেশনের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন রাব্বী বলেন, ‘আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কমিটি গঠনের তথ্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।’
‘কমিটি প্রকাশের পর তিন কর্মদিবসের মধ্যে তিতুমীর কলেজে এসে সরেজমিনে পরিদর্শন করার মাধ্যমে কাজ শুরু করতে হবে। কমিটি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট দেবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কমিটির বিষয়ে আমাদের এই তিন দফা দাবি মেনে না নেওয়া হলে আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচির দিকে ধাবিত হতে বাধ্য হব।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী আবদুল হামিদ বলেন, ‘গেল ১৮ নভেম্বর আলোচনায় মন্ত্রণালয় আমাদের দাবির যৌক্তিকতা বুঝতে পারে এবং তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের জন্য একটি শক্তিশালী কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেয়; যা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও তারা তা প্রকাশে তালবাহানা শুরু করে।’
‘এর প্রতিবাদে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতেই ফের রাস্তায় নেমে আসে। পরবর্তী রাতেই রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আমাদের আলোচনা হয় ও তারা এটি নিশ্চিত করেন যে, ১৯ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বসে আমাদের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
আবদুল হামিদ আরো বলেন, ‘১৯ নভেম্বর তারা আমাদের সাথে পুনরায় আলোচনায় বসেন, যেখানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এম আমিনুল ইসলাম এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এ আলোচনায় সিদ্ধান্ত আছে যে, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার সম্ভব্যতা যাচাইয়ে একটি পৃথক কমিটি হবে এবং এই কমিটি গঠনের জন্য সাত দিন সময়ের কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে রাস্তায় আমাদের সব কর্মসূচি স্থগিত করে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরে আশার আহ্বান করি এবং মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সাত দিন সময় অপেক্ষা করতে বলি। আমরা তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে এই সাত দিন ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ নিই।’
‘কিন্তু সাত দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও তারা কমিটি করার বিষয়ে কোন আপডেট আমাদের দেয়নি। আমরা তাদের সাথে বার বার যোগাযোগ করি। কিন্তু বার বারই বলা হয়, ‘কমিটি করার প্রক্রিয়া চলমান, অপেক্ষা করুন’।’
অপেক্ষার সেই সাত দিন ইতোমধ্যে পার হয়েছে জানিয়ে শিক্ষার্থী হামিদ বলেন, ‘সময় শেষ হওয়ার পর তারা শিক্ষা উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর ব্যক্তিগত সহকারী মুসতাহসিন তাসমিম রহমান অনিদ্র জানান, কমিটি করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের অনুলিপি দেওয়া হবে। কিন্তু, সেই অনুলিপি এখনো আমাদের কাছে এসে পৌঁছাইনি।’
‘মন্ত্রণালয়ের এমন দোদুল্যমান সিদ্ধান্তে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ব্যথিত। তাদের এমন তালবাহানার কারণেই আমরা বলতে বাধ্য হই, ‘আপনারা এখনো কমিটি প্রকাশ করতে পারলেন না’।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বললেন, ‘অনুলিপি দেওয়া হবে’, কোথায় আপনাদের অনুলিপি? এখনো আপনাদের কমিটির অনুলিপি আমাদের কাছে পৌঁছায়নি কেন? মাননীয় উপদেষ্টা, মহাখালী কতদূর?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে গেল ১৮ নভেম্বর মহাখালীর আমতলী, কাঁচাবাজার ও রেলক্রসিংয়ে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হন। তারা তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে কমিশন গঠনের দাবি জানান। শিক্ষার্থীরা মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করলে ঢাকাজুড়ে চরম যানজট সৃষ্টি হয়। দিনভর অবরোধের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আলোচনার কথা বলে বিকাল চারটায় কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা। তবে, আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ার কথা জানিয়ে ওই দিন সন্ধ্যা ছয়টায় ক্যাম্পাসের সামনের সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। পর দিন তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ‘ক্লোজডাউন তিতুমীর’ কর্মসূচি পালন করেন। সেদিন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার পর তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা সম্ভব কি না তা যাচাইয়ে পরের সপ্তাহে কমিটি গঠন করার আশ্বাস দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার সিরাজ-উদ-দৌলা খান সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘কমিটি গঠন হচ্ছে বলে শুনছি। কিন্তু, এখনো এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক কোন আদেশ হাতে পাইনি।’