‘একসময় কথা বলতে হতো হিসেব করে, এখন বলছে লাগামছাড়া’

দেশের স্বনামধন্য অভিনেতা আফজাল হোসেন। অভিনয়ের পাশাপাশি সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে লেখালেখি করতেও পছন্দ করেন তিনি। যার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে দেশের বর্তমান চিত্র নিয়ে নিজের উপলব্ধির কথা জানিয়েছেন। 

যেখানে আফজাল হোসেন বলেছেন, ‘কিছুদিন আগে যখন ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছিল, সে সময়টাতে একদিন অফিসে দাঁড়িয়ে তিনতলা থেকে সে নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অবাক হয়ে দেখছিলাম। দেখছিলাম, আমাদের অনিয়মের শহর ছুঁ মন্তরে নিয়ম মেনে চলতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ ও বিভিন্ন ধরনের যানবাহন এই শহরের রাস্তায় কীভাবে চলাচল করে তা সকলেরই জানা। নিয়ম মানা কারও ধাঁতে নেই। দীর্ঘকাল ধরে অনিয়ম করতে করতে স্বাভাবিক চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে নিয়ম না মানা। যে যত বেয়াড়া সে তত স্মার্ট এই শহরে।’

বাঙালী ‘শক্তের ভক্ত নরমের যমত’ উল্লেখ করে অভিনেতা বলেন,‘রাস্তায় চলাচলের যতরকম নিয়ম আছে, কেউই মানতে পছন্দ করে না। করতো না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম, চাইলেই সব পারা যায়। মনে কথাটা ভেসে ওঠে, বাঙালী শক্তের ভক্ত নরমের যম। যে মানুষ যতো উল্টোপাল্টা সমস্ত শহরজুড়ে বীরদর্পে করে থাকে, একই মানুষ ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে চলাচলের সময় চিরকালের ভদ্রলোকের মতো কড়ায় গণ্ডায় নিয়ম মানে। সেদিন উপর থেকে দেখছিলাম, কেউ এগোনোর জন্য একটু অনিয়ম করতে চেয়ে গাড়ির মাথাটা লাইন থেকে অল্প বের করে দিতে চেয়ে যেই দেখেছে সামনে একটু দূরে কোনো ছাত্রকে দেখা যাচ্ছে, সাথে সাথে গাড়ি জায়গামতো ফিরিয়ে নিয়ে খুব ভালো মানুষ হয়ে যাচ্ছে।’

তবে এখন আবারও সেই পুরনো জ্যামের চিত্র ফিরে এসেছে রাস্তাঘাটে।সেই পরিস্থিতি তুলে ধরে আফজাল হোসেন বলেন, ‘পথ চলা স্বাধীন করে দেয়া হলো। আবার শহর ও মানুষ নিজের চলা-বলা ফেরত পেয়ে গেল। সবাই চলছে নিজের ইচ্ছামতো, বলছেও যার যার যেমন ইচ্ছা তেমন করে।’

বিগত সরকারের আমলে সাধারণ মানুষ অনেক কিছুই বলতে পারতেন না, তবে এখন সুযোগ পেয়ে সকলেই মুখ খুলছেন। কেউ কেউ নিজ সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে আফজাল হোসেন বলেন, ‘একসময় সবাইকে কথা হিসাব করে বলতে হয়েছে। এখন যার যেমন খুশি বলা যায় বলে লাগাম ছাড়া কথা বলাবলি হচ্ছে। যখন বলার দরকার; বলা হয়নি, বলা যায়নি। বিড়াল হয়ে কাটানো জীবনে হঠাৎ বাঘ হয়ে দেখানোর সুযোগ মিলেছে। এখন মানুষ নিশ্চিত, নিজের গলায় বাঘের গর্জন দিলে কারও চোখ রাঙানি দেখতে হবে না বা ঘর চেপে ধরতে আসবে না কেউ।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সভ্যতার ভব্যতার সীমা জানা নেই। অপমানজনক আচরণ, কথা বলায় আমাদের দক্ষতা সর্বজনবিদিত। এখন যেন বুক ফুলিয়ে অনুচিত কাণ্ড করা যায়। যেমন খুশি বলে ও করে মর্যাদা বৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ এসেছে।’

ঢাকা ওয়াচ২৪/টিআর 

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।