কয়েক ঘণ্টার নাটকীয়তার পর দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন প্রত্যাহার
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৩:০৪ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪
নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে সামরিক আইন জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জনতার বিক্ষোভের মুখে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। এর আগে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) গভীর রাতে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে হঠাৎ দেশে জরুরি সামরিক আইন জারি করেন ইউন সুক-ইওল। সংবাদ রয়টার্সের।
উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট বাহিনীর হাত থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সুরক্ষায় ও রাষ্ট্রবিরোধী নানা শক্তিকে নির্মূল করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে দাবি করেছিলেন তিনি।
ইউন সুকের পিপল পাওয়ার পার্টি ও প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে আগামী বছরের বাজেট বিল নিয়ে মতবিরোধের মধ্যে এমন পদক্ষেপের ঘোষণা এসেছিল।
সামরিক আইন জারির পরপরই বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নেমে আসে। তারা কোরিয়ার আইনসভা জাতীয় পরিষদের বাইরে জড়ো হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। পার্লামেন্টের আশপাশে নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির আইনপ্রণেতারা সর্বসম্মতভাবে প্রেসিডেন্টের সামরিক আইন জারির ফরমান প্রত্যাখ্যান করেন। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ভোর নাগাদ আইনসভা সামরিক আইন বাতিলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
পরে ভোর সাড়ে চারটায় ফের টেলিভিশন ভাষণে এসে ইউন সুক-ইওল বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে জাতীয় পরিষদ থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে এবং আমরা সামরিক আইন বলবৎ করতে মোতায়েন করা সামরিক বাহিনীকে প্রত্যাহার করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জাতীয় পরিষদের আহ্বান মেনে নেব ও মন্ত্রিসভা বৈঠকের মাধ্যমে সামরিক আইন তুলে নেব।’
সরকারের এই ‘ইউ-টার্নে’ প্রচণ্ড ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে রাস্তায় জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। জনতা চিৎকার করে বলছিল, ‘আমরা জিতেছি!’
একজনকে আনন্দে ড্রাম বাজাতেও দেখা দেখা গেছে।
সামরিক আইন মানে জরুরি সময়ে সামরিক কর্তৃপক্ষের শাসন এবং এর অর্থ স্বাভাবিক নাগরিক অধিকার স্থগিত করা।
১৯৮৭ সালে গণতন্ত্রে ফেরার পর দক্ষিণ কোরিয়ায় আর সামরিক আইন জারির প্রয়োজন পড়েনি।
১৯৭৯ সালে এক অভ্যুত্থানে দীর্ঘ দিনের সামরিক শাসক পার্ক চুং নিহত হওয়ার পর শেষ বার দেশটিতে সামরিক আইন জারি করা হয়েছিল। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই ৪৫ বছর পর ফের এই দমনমূলক আইন জারিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল দেশটির মানুষ।
গেল এপ্রিলে দেশটিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিরোধী দল বিপুল বিজয় অর্জনের পর থেকেই মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল ইউনের সরকার। এছাড়া, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগও ওঠে। এসব অভিযোগের মধ্যে ফার্স্ট লেডির ‘ডিও’র ব্যাগ উপহার নেওয়া ও শেয়ার বাজারে কারসাজির অভিযোগও রয়েছে। চলতি সপ্তাহে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বাজেট কমানোর প্রস্তাবে ভিটোও দিতে পারেনি ইউন সরকার।
ফার্স্ট লেডির দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে ব্যর্থতার জন্য সরকারের নিরীক্ষা সংস্থা, মন্ত্রিসভা ও কৌঁসুলিদের অভিসংশনেও উদ্যোগী হয়েছিল বিরোধীরা। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট যখন আচমকা সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন, তখন প্রথমে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বিরোধের বিষয়টি টেনে আনলেও পরে বিরোধী দলকেও দোষারোপ করেন। বিরোধী দল তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠাতাকে ব্যবহার করে সরকারকে পঙ্গু করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন প্রেসিডেন্ট।
ইউনের সামরিক আইন জারির ঘোষণায় দেশটির মিত্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উদ্বেগ তৈরি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এখনও লৌহকঠিন মজবুত।’
পাশাপাশি সামরিক আইন জারির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশও করেন মুখপাত্র।
‘আমরা গভীর উদ্বেগ নিয়ে (দক্ষিণ কোরিয়ার ঘটনা) পর্যবেক্ষণ করছি ও মাঠ পর্যায় থেকে ঘনিষ্ঠভাবে সেখানে নজর রাখছি।’
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের একজন মুখপাত্রও দক্ষিণ কোরিয়া পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার কথা বলেছেন।