যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দিল চীন
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৬:৫৭ পিএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীন। সেমিকন্ডাক্টর তৈরিতে ব্যবহৃত একটি দুর্লভ খনিজ উপাদান রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটি। তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করায় বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দেশটির ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও ঘোষণা দিয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের ১৩টি প্রতিরক্ষা কোম্পানি ও ছয় নির্বাহীর বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে জানানো হয়েছে।
দক্ষিণ চীন সাগর ও ইউক্রেন ইস্যুতে গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক উত্তপ্ত। এরই মধ্যে চীনের উত্থান ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিপণ্য রফতানিতে বেশ কয়েক দফা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গেল সোমবার (২ ডিসেম্বর) চীনের কাছে সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ বিক্রিতে নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি সেমিকন্ডাক্টর চীনের হাতে গেলে তা দিয়ে চীন নতুন অস্ত্র ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার উন্নতি করতে পারে। সেই সঙ্গে চীনের বিভিন্ন কোম্পানির কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি বিক্রির ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা নেয়ার পর ২০২২ সালের অক্টোবরে চীনের কাছে প্রথম এআই চিপ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর ২০২৩ সালের অক্টোবরে ভিন্ন ধরনের এআই চিপও নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসার ঘোষণা দেয় তারা।
আগামী জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের আগে শেষ মুহূর্তে আরও এক বার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল জো বাইডেন প্রশাসন।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) প্রকাশিত আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সেমিকন্ডাক্টর বিক্রির নিষেধাজ্ঞার জবাবে সেমিকন্ডাক্টর তৈরিতে ব্যবহৃত একটি দুর্লভ খনিজ উপাদান রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীন। চীনের এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশ সমস্যা তৈরি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।’
এরপর বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) আরও এক দফায় নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে চীন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, কালো তালিকাভুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ১৩টি প্রতিরক্ষা কোম্পানি ও ছয় নির্বাহী ব্যক্তির সম্পদ জব্দ করা হবে। তাদের সঙ্গে ব্যবসায় নিষিদ্ধ করা হবে। ওইসব ব্যক্তিদের চীনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে।’
কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে টেলিডাইন ব্রাউন ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্রিঙ্ক ড্রোনস, র্যাপিড ফ্লাইট, রেড সিক্স সলিউশনস, শিল্ড এআই, সিনেক্সাস, ফায়ারস্টর্ম ল্যাবস, ক্রেটোস আনম্যানড এরিয়াল সিস্টেমস, হ্যাভোকএআই, নিরোস টেকনোলজিস, সাইবারলাক্স কর্পোরেশন, ডোমো ট্যাকটিক্যাল কমিউনিকেশনস ও গ্রুপ ডব্লিউ।
নির্বাহী ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বিএই সিস্টেমস ল্যান্ড অ্যান্ড আর্মামেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) চার্লস উডবার্ন, ইউনাইটেড টেকনোলজিস ইউনিটের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ রিচার্ড ক্রফোর্ড, ডেটা লিঙ্ক সল্যুশনের প্রেসিডেন্ট বেথ এডলার এবং ব্রিঙ্ক ড্রোনসের সিইও ব্লেক রেসনিক।
চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি তাইওয়ান অঞ্চলের কাছে ফের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। এটা এমন একটি পদক্ষেপ, যা ‘এক চীন নীতি’ ও চীন-যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ‘যৌথ বিধানের’ সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এমন সময়ে ঘটল, যখন নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আরোহণের দিন গুনছেন। তিনি ক্ষমতায় আসার দিন থেকেই চীনের ওপর আরও কড়া ও শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়ে আসছেন। এমনকি চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্কারোপের হুমকিও দিয়েছেন তিনি। যা তার আগের মেয়াদে চীনের সঙ্গে ‘শুল্ক যুদ্ধে’র কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।