আসাদের পতনে নেতৃত্ব দেয়া কে এই জোলানি?
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৭:৩৯ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনে অবদান রাখা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবার আগে আসবে হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নাম। আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি এই গোষ্ঠীটির প্রধান। সিরিয়ায় আল কায়েদার শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও পরে এইচটিএস আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য আরও মধ্যপন্থী অবস্থান নেন জোলানি। সংবাদ এএফপির।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) যখন যখন বিদ্রোহীরা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ঢুকে তখন তিনি তার বাহিনীকে নির্দেশ দেন, যাতে তারা জনসাধারণের জন্য নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে না যায়। গুলি ছুড়ে উদযাপন না করে। এই মধ্য দিয়ে তার তুলনামূলক মধ্যমপন্থা গ্রহণের দিকটিই প্রকাশিত হয়।
আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি বছরের পর নেপথ্যে থেকে কাজ করেছেন। তবে, সম্প্রতি তিনি আলোচনায় এসেছেন, আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন এবং এমন ঘোষণা দিচ্ছেন যা বিশ্বের সব সিরিয়ানের নজর কেড়েছে। বিশেষ করে, তাদের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে সে সম্পর্কে কিছু সূত্র খুঁজতে সিরিয়ানরা এখন জোলানির বক্তব্যের দিকে তাকিয়ে আছেন।
শুরুর দিকে আল কায়েদার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তিনি তথাকথিত আল কায়েদা নেতাদের মত পাগড়ি পরতেন না। বরং, বেশির ভাগ সময়ই সামরিক পোশাক পরতে পছন্দ করেন। ২০১৬ সালে আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর জোলানি নিজেকে একজন আরও মধ্যপন্থী নেতা হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। তবে, তিনি এখনো বিশ্লেষক এবং পশ্চিমা সরকারগুলোর সন্দেহ দূর করতে পারেননি। তাদের অনেকেই এখনো এইচটিএসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মনে করেন।
আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি ১৯৮২ সালে দামেস্কে জন্ম নেন। সেখানেই বেড়ে ওঠেন তিনি। তার পরিবার ছিল বেশ উচ্চবিত্তের এবং শিক্ষা জীবনে তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। তবে, তার প্রকৃত নাম আহমদ আল-শারা। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন চ্যানেল পিবিএসকে বলেছিলেন, ‘তার ছদ্মনামটি মূলত তার পরিবারের মূল উৎস গোলান মালভূমির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের কারণে।’
ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা শুরু হলে তিনি সিরিয়া ছেড়ে যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি আল কায়েদা ইন ইরাকের সদস্য হন, যার নেতৃত্ব দেন আবু মুসাব আল-জারকাবি। সে সময় তিনি পাঁচ বছর কারাগারে বন্দী ছিলেন। পরে ২০১১ সালের মার্চে সিরিয়ায় আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হলে তিনি দেশে ফিরে আল-নুসরা ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৩ সালে জোলানি ইসলামিক স্টেটের প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদির আনুগত্য করতে অস্বীকার করেন এবং পরিবর্তে আল কায়েদার প্রধান আইমান আল-জওয়াহিরির প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন।
সমর্থকদের চোখে জোলানি একজন বাস্তববাদী ও প্রতিপক্ষের কাছে সুযোগসন্ধানী। ২০১৫ সালের মে মাসে জোলানি বলেছিলেন, ‘তিনি আইএসের মত পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর কোন ইচ্ছা রাখেন না।’ তিনি আরও ঘোষণা করেছিলেন, আসাদ পরাজিত হলেও প্রেসিডেন্টের গোত্রভুক্ত আলাওয়ি বা আলভি সংখ্যালঘুর ওপর কোন প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালানো হবে না।’
আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে জোলানি দাবি করেন, তিনি এটি করেছেন যেন, পশ্চিমা দেশগুলো তার সংগঠনের ওপর হামলা চালানোর কারণ না পায়। এর পর থেকে তিনি নিজেকে একজন বিশ্বাসযোগ্য রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে জোলানি উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামি গোষ্ঠীগুলোর ওপর চাপ দিয়ে তাদের সঙ্গে এইচটিএসের (হায়াত তাহরির আল-শাম) একীভূত হওয়ার ব্যবস্থা করেন, এর ফলে সরকারবিরোধী ইদলিব প্রদেশের বিশাল অংশ তার নিয়ন্ত্রণে আসে।
নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোতে এইচটিএস একটি বেসামরিক সরকার গড়ে তোলে এবং ইদলিব প্রদেশে একটি রাষ্ট্রের আকার সৃষ্টি করে, একই সঙ্গে বিদ্রোহী প্রতিপক্ষদের দমন করে। এই প্রক্রিয়ায় এইচটিএস স্থানীয় বাসিন্দা এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছ থেকে গুরুতর নির্যাতনের অভিযোগের মুখোমুখি হয়, যা জাতিসংঘ যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
নিজ দলকে ঘিরে থাকা ভীতি ও ঘৃণার ব্যাপারে সচেতন জোলানি আলেপ্পোর বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেন, তার নতুন শাসনের অধীনে তারা কোন ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। তিনি তার যোদ্ধাদের আহ্বান জানান, আসাদের শাসন থেকে ‘মুক্ত’ করা এলাকাগুলোর নিরাপত্তা বজায় রাখতে।