পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১০:৪৩ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
পানামা খাল ব্যবহারের ফি কমাতে কিংবা একে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার অভিযোগ, মধ্য আমেরিকার দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ ও অন্য নৌযান থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করছে।
রোববার অ্যারিজোনায় এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, পানামা যে ফি আদায় করছে, তা হাস্যকর, একেবারেই অন্যায্য। আমাদের দেশের সঙ্গে এই প্রতারণা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।’ প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনরায় শপথ নেওয়ার সময় উল্লেখ করে ওই সমাবেশে কথা বলেন তিনি। খবর বিবিসির।
রোববার অ্যারিজোনায় এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, পানামা যে ফি আদায় করছে, তা হাস্যকর, একেবারেই অন্যায্য। আমাদের দেশের সঙ্গে এই প্রতারণা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।’ প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনরায় শপথ নেওয়ার সময় উল্লেখ করে ওই সমাবেশে কথা বলেন তিনি। খবর বিবিসির।
রক্ষণশীল অধিকারকর্মীদের একটি গ্রুপ- টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ- সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প এমন মন্তব্য করেন। এই গ্রুপটি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে ব্যাপক সমর্থন যুগিয়েছে।
ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের জের ধরে দ্রুত প্রতিক্রিয়া এসেছে পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনোর কাছ থেকে। তিনি বলেছেন, এই খাল ও আশপাশের এলাকার প্রতি বর্গমিটার এলাকা তার দেশের, যুক্তরাষ্ট্রের নয়।
প্রেসিডেন্ট মুলিনো বলেছেন, পানামার সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা কোন বিতর্কের বিষয় নয়।
কোনো দেশের ভূখণ্ড নিয়ে নেয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নেতার এ ধরনের মন্তব্য নজিরবিহীন উদাহরণ। যদিও ট্রাম্প বলেননি যে, তিনি কীভাবে এটি করবেন। তবে এটি একটি ইঙ্গিত দেয় যে আগামী ২০ জানুয়ারি তার শপথ গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতির কেমন পরিবর্তন হতে পারে।
এর আগেই তিনি একই ধরনের আরেকটি পোস্ট করেছিলেন, সেখানে তিনি লিখেছিলেন যে পানামা খাল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ’।
রোববার ওই পোস্টে ট্রাম্প লিখেছিলেন যে, নৌপরিবহন ফি কমানো না হলে ‘আমরা দ্রুতই সর্বাত্মক ও কোন প্রশ্ন ছাড়াই পানামা খাল ফিরিয়ে নেয়ার দাবি তুলব।’
৫১ মাইল বা ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ পানামা খাল আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে এবং এটি বিশ্ব বাণিজ্যে মালামাল পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানামা খালের কারণে দেশটির বিশাল ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। দুটো মহাসাগরকে যুক্ত করেছে এই খাল। এর ফলে বিশ্ববাণিজ্যে পানামা খাল বড় ভূমিকা পালন করে।
লাতিন আমেরিকার দেশ পানামার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ ছিল। তবে গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে পানামার সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের আলোচনা শুরুর পরই পানামার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে ভাবনা তৈরি হয়েছে।
১৯০০ সালের শুরুর দিকে এটি তৈরি করা হয়েছিল এবং ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এর রক্ষণাবেক্ষণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই ছিল। এরপর পর্যায়ক্রমে পানামার হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য করা এক চুক্তির আওতায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খালটি যৌথ ব্যবস্থাপনায় ছিল।
১৯৯৯ সালে এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় পানামা। প্রতি বছর প্রায় ১৪ হাজার জাহাজ এ খাল ব্যবহার করে থাকে। কন্টেইনারবাহী এসব জাহাজ মূলত গাড়ি, প্রাকৃতিক গ্যাস, সামরিক উপকরণসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করে থাকে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য পানামার মতো মেক্সিকো ও কানাডাকে উদ্দেশ্য করেও মন্তব্য করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মাদক ও অভিবাসী আসার জন্য দেশ দুটিকে অভিযুক্ত করেছেন। যদিও তিনি মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবমকে একজন 'চমৎকার নারী' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ট্রাম্প টার্নি পয়েন্টের বার্ষিক সমাবেশে হাজারো মানুষের সামনে তার মন্তব্য করেছেন। এটিকে রক্ষণশীলদের অন্যতম বড় সমাবেশ বলে মনে করা হয়। এবারের নির্বাচন দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে ট্রাম্প ও রিপাবলিকান পার্টির প্রচার তারা ব্যাপক কাজ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া বা 'শাটডাউন' এড়াতে শুক্রবার বিল পাশ হওয়ার পর ট্রাম্পের এটাই প্রথম বক্তৃতা। যদিও তিনি তার বক্তৃতায় সেই প্রসঙ্গ আনেননি। বরং তিনি কথা বলেছেন অভিবাসী, অপরাধ ও বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ে। এগুলো নির্বাচনী প্রচারণায় মূল ইস্যু ছিল তার।