হংকংয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ইসলাম
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:০০ পিএম, ০২ নভেম্বর ২০২৪
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় এবার নিয়ে টানা তিনবার শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে হংকং। মার্সার কস্ট অব লিভিং সার্ভে থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। বিশ্বের ২২৬টি শহর নিয়ে এই জরিপ করা হয়েছে। জরিপটিতে প্রতিটি শহরের পরিবহন, খাদ্য, পোশাক, গৃহস্থালিসামগ্রী, বিনোদনসহ ২০০-এর বেশি সূচক বিবেচনা করা হয়েছে। এরপর বিভিন্ন শহরের মধ্যে জীবনযাত্রার ব্যয়ের মধ্যে তুলনামূলক হিসাব করা হয়েছে। এমন ব্যয়বহুল এলাকায়ও থেমে নেই ইসলাম ও মুসলমানদের অগ্রযাত্রা।
চীনের বিশেষ প্রাশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে ইসলাম। ১৯৯৩ সালে এ অঞ্চলে মুসলমানের সংখ্যা ছিল ৬০ হাজার আর ২০১৬ সালে মুসলমানের সংখ্যা তিন লাখ অতিক্রম করে। ২০১৪ সালের পরিসংখ্যান মতে হংকংয়ে মুসলিম জনসংখ্যা ৪.১ ভাগে উন্নীত হয়। ১১১০.১৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের হংকংয়ের বর্তমান জনসংখ্যা ৭৫ লাখের কাছাকাছি।
বৌদ্ধ, তাওবাদ ও খ্রিস্ট ধর্মের পর ইসলাম হংকংয়ের চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম। তবে হংকংয়ের বিপুলসংখ্যক মানুষ নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী। হংকংয়ে বসবাসকারী মুসলিমদের মধ্যে ৬০ শতাংশ ইন্দোনেশিয়ান। এ ছাড়া ৪০ হাজার চীনা মুসলিম, ৩০ হাজার পাকিস্তানি মুসলিম রয়েছে।
মুসলিমদের সঙ্গে সঙ্গে হংকংয়ে ইসলামি সংগঠন ও হালাল রেস্টুরেন্টের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
ধারণা করা হয়, আজ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার বছর আগে হংকং ভূমির জন্ম হয় এবং ছয় হাজার বছর আগে সেখানে মানববসতি গড়ে ওঠে। খ্রিস্টপূর্ব ২১৪ সালে হংকংকে কিন সাম্রাজ্য হংকংকে চীনের অন্তর্ভুক্ত করে। তবে ১৮৪১ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার পর আধুনিক হংকংয়ের যাত্রা শুরু হয়।
স্বীকৃতি ইতিহাস অনুযায়ী ব্রিটিশ বাহিনীর সদস্য হিসেবে ভারতীয় মুসলিমরা হংকংয়ে পদার্পণ করলে সেখানে ইসলাম বিকশিত হতে শুরু করে। ব্রিটিশ প্রশাসনই হংকংয়ে মসজিদ ও মুসলিম কবরস্থান নির্মাণের জন্য জায়গা প্রদান করে। সে সময় আসা বেশির ভাগ মুসলিমই ছিলেন সেনা সদস্য। তবে তাদের মধ্যে মুসলিম ব্যবসায়ীও ছিল।
ক্রমবর্ধমান মুসলিমরা একটি জামে মসজিদও নির্মাণ করেছে। ৩০ শেলি স্ট্রিটে ১৮৫০ সালে যার সূচনা হয়েছিল। ১৯১৫ সালে তার পুনর্নির্মাণ হয়। তারপর থেকে তা এখনো দাঁড়িয়ে আছে আশপাশের সুউচ্চ ভবনের ছায়ায়।
হংকংয়ের দ্বিতীয় মসজিদ নির্মিত হয় ১৮৯৬ সালে নাথান রোডে ভিক্টোরিয়া হার্বারের পাশে, যা কলিন মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নামে পরিচিত। ১৯৭৬ সালে সিম শ সুইয়ের মধ্য দিয়ে রেললাইনের টানেল করার সময় মসজিদটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৮০ সালে তা ভেঙে পুনর্নির্মাণ করা হয়।
মসজিদে আম্মার হংকংয়ের তৃতীয় মসজিদ। ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত মসজিদের নামের সঙ্গে ‘সাদিক’ শব্দটি পরে যুক্ত করা হয়। সাদিক ছিলেন এক চীনা মুসলিম স্থপতি। তিনি মসজিদে আম্মারের প্রতিষ্ঠাতা ও নকশাকারী। একটি নির্মাণাধীন মসজিদসহ বর্তমানে হংকংয়ে মসজিদের সংখ্যা সাতটি। এ ছাড়া মুসলিমদের জন্য শতাধিক স্বীকৃত হালাল রেস্টুরেন্ট, দশটি ইসলামিক স্কুল, কয়েকটি মাদরাসা ও দুটি পৃথক কবরস্থান রয়েছে।
ব্রিটিশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান এইচএসবিসি ইসলামি অর্থব্যবস্থা (Islamic finance system) প্রবর্তন করে। ২০০৭ হংকংয়ে অবস্থিত ‘আরব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ প্রতিষ্ঠা করে ‘এইচকে ইসলামিক ইনডেক্স।’ ইসলামিক ইউনিয়ন অব হংকং, ইসলামিক কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন, হংকং ইসলামিক ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশন, ইউনাইটেড মুসলিমস অ্যাসোসিয়েশন অব হংকং অত্র অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য ইসলামি সংগঠন।