সুদের ভয়ানক পরিণতি
- প্রকাশঃ ০৬:০৯ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০২৪
মুফতি আবদুল্লাহ তামিম: সুদ এমন একটি রোগ, যা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, বরং ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যও ধ্বংস ডেকে আনে। ইসলাম যে কারণে সুদকে নিষিদ্ধ করেছে, তা আজকের আধুনিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও স্পষ্ট। সুদ সমাজে বৈষম্য, লোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করে, যা একটি জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি বিনষ্ট করে।
সুদের বিকল্প হিসেবে দান ও হালাল ব্যবসায় প্রবর্তনের মাধ্যমে সমাজে ভারসাম্য ও ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠা করা যায়। কোরআন ও হাদিসের নির্দেশ অনুযায়ী, একটি সুদমুক্ত অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করতে পারি।
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের প্রত্যেককে সুদ থেকে বিরত থাকতে হবে আর দান, সাদাকাহ ও হালাল উপার্জনে নিজেদের জীবন পরিচালিত করতে হবে।
সুদ কি হারাম: ইসলামে সুদ (রিবা) হারাম হিসেবে ঘোষিত। কুরআন ও হাদিসে সুদকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ব্যবসায়কে হালাল করেছেন ও সুদকে হারাম করেছেন।’ (সুরা বাকারা ২৭৫)
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোন কর্জ থেকে কোন ফায়দা নিলে, সেই ফায়দাটাই এক ধরনের রিবা। (বায়হাকি) সুতরাং, সুদ যে ইসলামিক শরীয়তে স্পষ্টভাবে হারাম, এতে কোন সন্দেহ নেই। এর কারণ সুদ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক দিক থেকে মানবজীবনের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে।
সুদ হারাম কেন: সুদকে হারাম করার পেছনে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ। সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি সুদ একটি শ্রেণিকে সম্পদশালী ও অপর শ্রেণিকে দরিদ্র করে তোলে। এটি অর্থনৈতিক বৈষম্যকে ত্বরান্বিত করে। মানবতাবিরোধী চরিত্র সুদ সম্পদশালী শ্রেণিকে অন্যায়ভাবে গরিবের সম্পদ কেড়ে নেওয়ার সুযোগ দেয়। আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন ও দানকে বৃদ্ধি করেন।’ (সুরা বাকারা ২৭৬)
সুদ সমাজে লোভ, হিংসা ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করে, যা শান্তি বিনষ্ট করে। রসুল (সা.) সুদগ্রহীতা, সুদদাতা, সুদ লেখক ও সাক্ষীদের অভিশাপ দিয়েছেন। (সহিহ মুসলিম ৪১৭৭)
সুদের কারণে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতির ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়ে। রসুলুল্লাহ (সা.) মেরাজের রাতে সুদখোরদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাদের পেট ছিল মটকার মত বড়, যার ভেতরে বহু সাপ ছিল; যা বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল।’ (ইবনে মাজাহ ২২৭৩)
ধ্বংস সুদের মাধ্যমে যে অর্থ আয় করা হয়, তা আল্লাহর দৃষ্টিতে বরকতমুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের সম্পদের সাথে যুক্ত হয়ে যা বৃদ্ধি পায়, আল্লাহর কাছে তা বাড়ে না।’ (সুরা রুম ৩৯)
সুদ সমাজে অবিশ্বাস ও অসন্তোষ সৃষ্টি করে, যা একটি জাতির উন্নয়ন ব্যাহত করে।
সুদে সরাসরি লাভবান হয় সম্পদশালী মহল, যারা ঋণ দেয়। তারা পরিশ্রম ছাড়াই অর্থ উপার্জন করে।
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও সুদের বকেয়া পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।’ (সুরা বাকারা ২৭৮)
আসুন, আমরা সকলেই সুদের ভয়াবহতা থেকে বিরত থেকে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলি ও একটি সুদমুক্ত সমাজ গড়ে তুলি।
সুদ মানবতার জন্য এক অভিশাপ। এটি ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। ইসলামে সুদের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে এবং এর বিকল্প হিসেবে দানের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সুদমুক্ত অর্থনীতি গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা নৈতিক ও সামাজিক উন্নতি অর্জন করতে পারি।