ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বিশেষ নির্দেশনা


News Image/download - 2024-09-20T171906.423.jpeg
কয়েকদিন ধরে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে শুরু করেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। এমন পরিস্থিতি এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া একই সঙ্গে মৌসুম জরিপ পরিচালনা এবং চিকিৎসা নির্দেশিকা (গাইডলাইন) আপডেট করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন করে ৮৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, যা চলতি বছর এক দিনে সর্বোচ্চ। এ সময় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে ১৫ নির্দেশনা: এদিকে দেশের চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ১৫ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল হাসানের সই করা এ নির্দেশনায় দেশের সব মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের এই নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো—১. সব হাসপাতালের বহির্বিভাগের ফিভার ক্লিনিক স্থাপন করতে হবে। শনাক্ত ডেঙ্গু রোগীকে জাতীয় ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। ২. ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত কিট মজুত রাখতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু স্ক্রিনিং চার্জ (সিবিসি ১০০ টাকা, এনএসওয়ান ৫০ টাকা, আইজিএম-৫০ টাকা এবং আইজিজি-৫০ টাকা) হারে প্রযোজ্য হবে। ৩. তবে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে সিবিসি ৪০০ টাকা এবং বাকি পরীক্ষাগুলো ৩০০ টাকা হারে প্রযোজ্য হবে। ৪. জাতীয় ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা অনুসারে ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে এবং প্রয়োজনে উচ্চতর হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। ৫. সব হাসপাতালে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড করতে হবে। ৬. সব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় প্রশিক্ষিত মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখতে হবে। ৭. ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় আইভ ফ্লুইডের ব্যবস্থা রাখতে হবে, প্রয়োজনে কেনার ব্যবস্থায়ও রাখতে হবে। ৮. গুরুতর অসুস্থ ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে আইভ ফ্লুইড প্রদান ও বের হয়ে যাওয়ার সঠিক রেকর্ড রাখতে হবে। ৯. ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং মিথস্ক্রিয়া পরিহারের জন্য ওষুধ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ১০. ডেঙ্গু রোগীদের জাতীয় ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। নির্দেশিকা অনুসারে প্লাটিলেট কনসেনট্রেট প্রয়োজনে সরকারিভাবে সংগ্রহ করতে হবে। ১১. হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত মশারির ব্যবস্থা রাখতে হবে। ১২. ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে গঠিত ডেথ রিভিউ কমিটির প্রতিবেদন ৭ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখায় পাঠাতে হবে। ১৩. যে কোনো প্রয়োজনে আইইডিসিআর এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখায় যৌথ উদ্যোগে খোলা কন্ট্রোল রুম (০১৭৫৯১৪৪৮৮) খোলা হয়েছে সেখানে যোগাযোগ করতে হবে। ১৪. শনাক্ত রোগীর তথ্য প্রতিদিন বিনা ব্যর্থতায় ডেঙ্গু কন্ট্রোল রুমে পাঠাতে হবে। ১৫. ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই এডিস মশার বংশ বিস্তারে হাসপাতাল ভবনসহ আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।

মহাপরিচালকের নেতৃত্বে সভা: এদিকে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কক্ষ একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অধিদপ্তরে পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. শেখ দাউদ আদনান, ম্যালেরিয়া অ্যান্ড এডিস ট্রান্সমিটেড ডিজিজের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আকতারুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মৌসুম জরিপ পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করার নিশ্চয়তা দেন মহাপরিচালক। সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একটি সূত্র জানায়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে জরিপের কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া ডেঙ্গু রোগ চিকিৎসায় যে গাইডলাইন বা নির্দেশিকা রয়েছে, সেটি আপডেট করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।

ডেঙ্গুতে বছরের সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি: ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গতকাল এক দিনে আরও ৮৮৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি মৌসুমে এক দিনে এটাই সর্বোচ্চ রোগী ভর্তির ঘটনা। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১ হাজার ৯৬৬ জন। এ সময় মারা গেছেন ৩ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১২২ জনের। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য থেকে এসব জানা যায়। এতে বলা হয়, সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ২ হাজার ৭০৬ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। যার মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ৪৯৫ জন, বাকি ১ হাজার ২১২ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগে। গতকাল সারা দেশে ৬৩৮ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ছাড়পত্র নিয়েছেন ১৯ হাজার ১৩৮ জন।
ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×