পাকিস্তানের পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রামে, উদ্বেগ ভারতের


IMG_0914.webp

করাচি থেকে একটি পণ্যবাহী জাহাজ সম্প্রতি চট্টগ্রামে পৌঁছেছে। এর মাধ্যমে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর এবারই প্রমবারের মতো সরাসরি সমুদ্রপথে যোগাযোগ হলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের। এ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত।

Your Image

ভাতরীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আজ শুক্রবার এসব তথ্য জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, ভারতের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রতিবেশীদের মধ্যে এ ধরনের সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগের ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের কাছাকাছি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

গত বুধবার করাচির ওই জাহাজটি ৩০০টির বেশি কন্টেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে। এ সময় বাংলাদেশে পাকিস্তানি হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, এটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে একটি প্রধান পদক্ষেপ। এই নতুন রুটটি সাপ্লাই চেইনকে স্ট্রিমলাইন করবে, ট্রানজিট সময় কমিয়ে দেবে এবং উভয় দেশের জন্য নতুন ব্যবসার সুযোগ খুলে দেবে।

প্রতিবদেন বলছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের নতুন শাসনব্যবস্থা সরাসরি সমুদ্র সংযোগকে স্বাগত জানায়। পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধিরও আশা করে কর্তৃপক্ষ।  

বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের সরকারি কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও উদ্বেগও জানিয়েছেন কেউ কেউ। একজন বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ উদ্বেগ প্রকাশ করে টেলিগ্রাফকে বলেন, চট্টগ্রাম এবং মোংলা বাংলাদেশের দুটি প্রধান বন্দর এবং উভয়ই পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের সীমানার বাইরে রয়েছে...। সিঙ্গাপুর বা কলম্বোতে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য হতো।

তিনি বলেন, এখন যেহেতু পাকিস্তানি জাহাজগুলো সরাসরি চট্টগ্রামে আসবে, আপনি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ পণ্য পাঠানোর এবং ভারতের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির এতে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারবেন না। চট্টগ্রামে ২০০৪ সালে ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের কথা উল্লেখ করেন ওই বিশেষজ্ঞ। ওই সময় দেশে অস্ত্রের সবচেয়ে বড় চালানটি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

প্রতিবেদন বলছে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের একটি অভিযানে প্রায় ১৫০০ চীনা অস্ত্র উদ্ধার হয়, যার মূল্য আনুমানিক সাড়ে ৪ থেকে ৭ মিলিয়ন ডলার। সমুদ্রপথে ট্রলারে চট্টগ্রামে পৌঁছেছিল অস্ত্রগুলো। এই অস্ত্র ছিল আসামের নিষিদ্ধ সংগঠন উলফার।

ভারতের নিরাপত্তা সংস্থার একটি সূত্র বলছে, গত বছর ভারত মোংলা বন্দরের একটি টার্মিনালের অপারেটিং অধিকার সুরক্ষিত করে চীনের বিরুদ্ধে কৌশলগত জয়লাভ করেছিল... কিন্তু এখন পাকিস্তান চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশাধিকার পেয়েছে। দুটি বন্দরের সমুদ্রপথে এখন পাকিস্তানি জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেবে। এই বিষয়টি অবশ্যই এই অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে, কারণ মিয়ানমারও চট্টগ্রামের খুব কাছাকাছি।

মিয়ানমারের সীমান্তে উত্তেজনা রয়েছে বহুদিন ধরেই। এ অবস্থায় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ এবং মাদক ব্যবসা নিয়ে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থায় যথেষ্ট উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। করাচি থেকে মালবাহী জাহাজটির বাংলাদেশে ঢোকা নিয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা একটি সূত্র বলছে, প্রথমে কিছু ৪০ ফুটের কন্টেইনার নামানো হয়। এগুলোর চারপাশে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করার জন্য স্থানীয় পুলিশকে বলা হয়। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জিনিসপত্র প্রবেশের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি সামুদ্রিক যোগাযোগ চালুর বিষয়টিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ককে মসৃণ করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। 

একজন ভারতীয় পর্যবেক্ষক বলেছেন, ড. ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ একটি রিসেট মুডে আছে... এবং তাদের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি মনে হচ্ছে, ভারত থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখা এবং পাকিস্তানের আরও বেশি কাছাকাছি হওয়া।

তিনি বলেন,পাকিস্তান প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের তুলা রপ্তানি করে এবং পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। রপ্তানির প্রধান উৎস হিসেবে ভারতকে প্রতিস্থাপন করা বাংলাদেশের পক্ষে অসম্ভব হবে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বন্ধুত্বের কারণে আমাদের উদ্বেগ;এই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×