‘শৈত্যপ্রবাহ’ আসছে ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৩:২৪ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শীতের আবহ ঢুকেছে। বাংলাদেশেও প্রতিদিনই শীত বাড়ার সাথে সাথে কমছে তাপমাত্রা। তবে, দেশের কোথাও এখনও শৈত্যপ্রবাহ হয়নি।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ‘ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে দেশের পাঁচ বিভাগের ওপর দিয়ে চলতি মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।’
শনিবার (৩০ নভেম্বর) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক সংবাদ মাধ্যমকে আগামী ১৫ দিনের আবহাওয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত বলেছেন।
নাজমুল হক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তাপমাত্রা যেমন আছে, তাতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওই রকম শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। শনিবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যার মধ্যে সাগরে অবস্থান করা ঘূর্ণিঝড় ফিনজাল উপকূল অতিক্রম করবে। অতিক্রম করার পরই বাংলাদেশের তাপমাত্রাও কমে যাবে। আজকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেঁতুলিয়াতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দশ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আজকে রংপুর বিভাগের তাপমাত্রা ১৪-১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। এই তাপমাত্রা একবারে ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে, তা কিন্তু নয়। তাপমাত্রা ধারাবাহিকভাবে কমছে। আমরা আপাতত ধরে নিতে পারি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার উল্লেখযোগ্য কোন সম্ভাবনা নেই।’
১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডিসেম্বরে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ হয় ও শেষের দিকেও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ থাকে। বর্তমান আবহাওয়ার যে কন্ডিশন, তাতে আমরা বলতে পারি ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে একটা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে।’
শৈত্যপ্রবাহ হলে কোন অঞ্চলে হবে- এমন প্রশ্নে নাজমুল হক বলেন, ‘দেশের যখন শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়, তখন রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে মূলত হয়ে থাকে। আর ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল বিভাগে শৈত্যপ্রবাহ একটু পরে আসে। অর্থাৎ, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হলে তাপমাত্রা কত থাকে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হলে তাপমাত্রা আট দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে দশ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ছয় দশমিক এক ডিগ্রি থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যেতে পারে, তীব্র শৈত্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা চার দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে এবং অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যাবে। অর্থাৎ, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর তাপমাত্রা আট দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে দশ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যেতে পারে।’
বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিমের (বিডব্লিউওটি) প্রধান আবহাওয়া গবেষক খালিদ হোসেন বলেন, ‘যতটুকু দেখেছি, আগামী ২০ তারিখের আশপাশে একটা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। আজকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে, যা কাল পর্যন্ত থাকতে পারে। এটা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ফিনজালের প্রভাবে। এছাড়া, ডিসেম্বরে আর কোন ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে, একটা লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যেটা বাংলাদেশে আসার কোন সম্ভাবনা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রাতের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের তাপমাত্রা কমতে থাকবে। এই সময়ের মধ্যে সব জায়গায় একসঙ্গে তাপমাত্রা কমবে না, এ জন্য এটাকে শৈত্যপ্রবাহ বলা যাবে না। উত্তরবঙ্গ, খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
অন্য দিকে, আবহাওয়া অফিস জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এছাড়া, পুরো দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে ও দিনের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যেতে পারে।