আমরা মানবিক একটি জাতি চাই: জামায়াত আমির
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১১:৩৬ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা চাই, আগামীতে দেশটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পরিচালিত হোক। আমরা এমন একটি জাতি চাই, যেটি হবে মানবিক। প্রত্যেক ব্যক্তি একে অপরকে সম্মান করবে ও ভালোবাসবে। আমরা কারো চাকরি বা শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখব না, আমরা শুধু দেখব তিনি একজন আশরাফুল মাখলুকাত।’
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে কাফরুল দক্ষিণ থানা জামায়াত আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘সমাজে যেখানে কেউ থাকবে, সেখানে তারা নিরাপত্তা ও মর্যাদা পাবে এবং এই দুইয়ের মাধ্যমে সমাজে গর্বিত নাগরিক হিসেবে বসবাস করবে। আমরা ধর্মের প্রতি কোনো বৈষম্য করব না। আল্লাহ যাকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে ধর্ম বেছে নেওয়ার অধিকার দিয়েছেন। আল্লাহ কখনও কারোর ওপর ধর্ম চাপিয়ে দেন না। সুতরাং আমরা সবাই মিলে, সকল ধর্মের মানুষ একসঙ্গে এই ফুলের বাগান গড়ে তুলব, ইনশাল্লাহ।’’
জামায়াত আমির বলেন, ‘এদেশে মানুষ শান্তিতে ও সহমর্মিতার ভিত্তিতে বসবাস করছে। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ এদেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান, এবং তারা জানে, প্রতিটি মানুষের জীবন ও সম্পদ অন্য মানুষের কাছে আমানত। আমরা এটা বিশ্বাস করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন পট পরিবর্তন হওয়ার পর, আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী, আমরা সবার পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা সবার উদ্দেশ্যে আশ্বস্ত করেছি, আমরা সবাই এদেশের নাগরিক, এবং শান্তিতে এখানে বসবাস করব। অশান্তি তৈরি করতে দেওয়া হবে না।’
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট তিন দিন বাংলাদেশে কোনো সরকার ছিল না, সেই তিন দিন সরকার ছিল জনগণ। জনগণ তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। আওয়ামী লীগের কেউ কেউ বলেছিলেন, তারা ক্ষমতায় হারালে দুই দিনের মধ্যে ৫ লাখ লোক মারা যাবে। আল্লাহর মেহেরবানীতে তাদের কিছুই হয়নি, এটা ছিল আল্লাহর বিশেষ মেহেরবানী।’
আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও মন্ত্রীদের উদ্দেশে শফিকুর রহমান বলেন, ‘অনেকে জনগণের হাতে ধরা পড়েছেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ যেভাবে খুনের নেশায় বিভোর ছিল, জনগণ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটি সমাজ চাই, যেখানে মানুষ দায়িত্বশীল এবং মানবিক হবে।’
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের মা-বোনদের নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে, বলা হয়েছে, যদি আমরা ক্ষমতায় আসি, তাহলে মা-বোনদের ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না এবং রাষ্ট্রীয় অর্থে কালো বোরখা কিনে সবাইকে পরানো হবে। কিন্তু ইসলাম কখনো কারো ওপর জোর করে বোরকা পরায় না। ইসলাম মানুষের মানসিক পরিবর্তনের মাধ্যমে শালীনতা পরিধানে উদ্বুদ্ধ করে। মেয়ে যদি খুশি হয়ে নিকাব, হিজাব পরতে চায়, তাহলে আল্লাহ তাদের পরিবর্তন এনে দিবেন।’ তিনি বলেন, ‘এদেশে অন্য ধর্মের মানুষও আছেন, তাদের ওপর আমরা এই বিধান জোর করে চাপিয়ে দিতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী বাকশালীরা দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে তাদের সব চক্রান্ত মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে, যা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি এবং এটি পতিত স্বৈরাচারেরও কল্পনার বাইরে ছিল।’
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, এটি আল্লাহর পরিকল্পনার অংশ ছিল। তারা মানুষের রক্ত নিয়ে খেলেছে। তারা ২৮ অক্টোবর প্রকাশ্যে রাজপথে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছে এবং এরপর পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ৫৭ জন দেশপ্রেমী সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। বিচারের নামে জামায়াতের শীর্ষনেতাদের একের পর এক নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আলেম-উলামা এবং মাদরাসা ছাত্ররাও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। কিন্তু ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই অপশক্তির পতন ঘটেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী শাসনামলে দেশকে অপরাধীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিণত করা হয়েছে। কিন্তু লজ্জাজনক পতনের পরেও তারা নিজেদের খাসলত বদলাতে পারেনি। ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা ভারতে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে। এবং এরাই এক সময় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘এদের হাত থেকে কোনো শ্রেণি বা পেশার মানুষই রেহাই পায়নি। জামায়াতের শীর্ষনেতাদের তারা ফাঁসির মুখে দাঁড় করিয়ে, অপরাধ স্বীকার করিয়ে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার মুখোমুখি করেছিল। কিন্তু তারা হিমালয়ের মতো অবিচল থেকে আমাদের সম্মানিত করেছেন, যা দেশের এবং জাতির জন্য সম্মানজনক।’
অনুষ্ঠানে তিনি আগস্ট শহীদদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশকে কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করার আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
থানা আমির অধ্যাপক আনোয়ারুল করিমের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি আবু নাহিদের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক প্রমুখ।