বাংলাদেশ-স্কটল্যান্ড সম্পর্ক জোরদারে কাজ করছে ক্রস পার্টি গ্রুপ

  • প্রকাশঃ ১১:০৩ পিএম, ২২ জুন ২০২৪

News Defalt/64d24369-a2ec-4f8a-a2f7-7215f8933f72.jpg

ইউরোপ থেকে তুহিন মাহামুদ: স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবার্গে  Cross-Party Group on Banglsdesh এর আয়োজনে স্কটিশ পার্লামেন্টে ১৯ জুন বিকালে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ এবং স্কটল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা মূলক গুরুত্বপূর্ণ সভা।

Your Image

অনুষ্ঠানের শুরুতেই সিপিজি সদস্য ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সাথে পরিচিতি হওয়া এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের পরিচয় পর্বের মধ্যে দিয়ে এজেন্ডা ভিত্তিক আলোচনা শুরু হয়। স্কটিশ পার্লামেন্ট সদস্য ফয়সাল আহমেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ এবং স্কটল্যান্ড দু'দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও সম্পর্ক জোরদার করণের লক্ষে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশনার সৈয়াদা মুনা তাসনীম ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষা,সংস্কৃতি,শিল্প,সাহিত্য ও বানিজ্য সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য উপস্হাপন করেন। শুরুতে তিনি ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী (এমএসপি) পূণরায় গ্রুপের আহবায়ক নির্বাচিত হওয়ায় তাঁকে ধন্যবাদ জানান। 

তিনি বলেন,"জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে ৪,জানুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন সফরে যান এবং ১৯৭১ সালে মুল্যবোধের উপর ভিত্তি করে  বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং এই ঐতিহাসিক সফর ছিল একটি বড় পদক্ষেপ এর সাধারণ মূল্যবোধের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্য এবং স্কটল্যান্ডের সাথে মহান বন্ধুত্বে গণতন্ত্র,ধর্মনিরপেক্ষতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ,সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতা বিষয় সমূহের দিক গুলো কথা বলেছিলেন সেই ধারাবাহিকতায় বিগত ৫২ বছর ধরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। 

হাইকমিশনার আরোও উল্লেখ্য করেন যে,ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব (বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের রপ্তানি বেড়ে ৫০% এবং ৫৪% বৃদ্ধির সাথে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি - যুক্তরাজ্য তৃতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগকারী। 

 এছাড়া নিরাপত্তা সহযোগিতা;  প্রতিরক্ষা সংগ্রহ; প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলগত স্বার্থ সহ নানা বিষয়ে স্কটল্যান্ডের সাথে বিশেষ সম্পর্কের উপর জোর দিয়েছেন এবং বাংলাদেশকে উপস্থাপন  করেছে। তিনি, এখন স্কটল্যান্ডের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে চান এবং স্কটল্যান্ডে বিনিয়োগের জন্য  আরও উৎসাহিত করেন। হাইকমিনার আরোও উল্লেখ্য করেন যে, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর ফোকাস সহ পশ্চিমা দেশগুলিতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব অব্যাহত থাকবে।

বিএইচসি (বাংলাদেশ হাই কমিশনার) বাংলাদেশে সরকারের উদার নীতি ও মানবিক মূলবোধের কথা উল্লেখ্য করে বলেন,"শেখ হাসিনা ১:৩ মিলিয়ন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন।এর কারণ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন নির্যাতিত,নিপীড়িত শরণার্থী শেখ হাসিনা সে ব্যথা নিজে অনুভব করেন।বিএইচসি, বাংলাদেশকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এজন্য যে, (রোহিঙ্গা শরণার্থীদের) সাহায্য সঙ্কুচিত হচ্ছে,দেশের অর্থনীতি ও জনসাধারণের উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে এবং প্রতি বছর $২ বিলিয়ন সেবা বাবদ খরচ হচ্ছে। 

বিএইচ সি,নারীর ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্ব,জলবায়ুর ন্যয়বিচার,সমুূ্দ্রের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইন,তৈরি পোষাক কারখানা,পরিবহন কাঠামো,টেকসই উন্নয়ন,অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভোক্তা বাজার সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছেন।

বিএইচসি মহান রাজনৈতিক,অর্থনীতি এবং সম্প্রদায়ের উপর আলোকপাত করেছেন,যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন,ইউকে এবং স্কটল্যান্ড জুড়ে প্রায় ২০০ ব্রিটিশ-বাংলাদেশী কাউন্সিলর সব দলের প্রতিনিধিত্ব করে আসছে এছাড়া পেশাদারিত্বে শিক্ষক  ব্যারিস্টার,সলিসিটর,ডাক্তার তাদের স্ব স্ব স্হানে থেকে অসামান্য অবদান রাখার জন্য সকলকে অভিনন্দন জানান। 

বাংলাদেশী হাইকমিশনার (বিএইচসি) এমএসপি-কে তাদের CPG-তে পুনঃনির্বাচনের জন্য অভিনন্দন জানান এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সিপিজি সদস্যদের জন্য হাইকমিশন বাংলাদেশে তাদের প্রথম সরকারী সফরে বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করা এবং বাংলাদেশ ও স্কটল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা স্হাপনের জন্য CPG কে ধন্যবাদ জানান।

বিএইচসি ক্রস-পার্টির প্রতি কয়েকটি সুপারিশ পেশ করেন। যেমন,

১।  বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে সংসদে আলোচনা করা ও ১৯৭১ সাল -কে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি সাধারণ পদ্ধতির আহ্বান। উল্লেখ্য :গণহত্যা, গ্যারি জে এর একটি বই 'দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম। 

২।  রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনার জন্য স্কটিশ পার্লামেন্টের আহ্বান উদ্বাস্হ সংকট।

৩। স্কটল্যান্ড এন্টারপ্রাইজের সাথে একটি EMU স্বাক্ষর  উৎসাহিত করণ।

৪।  ডিজিটাল উদ্ভাবন: বাংলাদেশের ৬৫% তরুণ  জনসংখ্যা, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে এন্টারপ্রাইজ অনুসরণ করছে এবং 
 ডিজিটাল উদ্ভাবন এবং আশা করে তারা স্কটল্যান্ডের সাথে কাজ করতে পারবে এই সম্প্রসারণশীল খাতে।

 ৫) স্মার্ট সিটির প্রস্তাব 

ফয়সল চৌধুরী এমএসপি মাইলস ব্রিগস এমএসপি সারাহ বয়াক এমএসপি, ইভেলিয়ন টুইড,কাজী জিয়াউল হাসান, বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার (ম্যানচেস্টার) স্কটল্যান্ডের বাংলাদেশি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ ক্যাটারিং অ্যাসোসিয়েশন স্কটল্যান্ড(ELREC),অধ্যাপক মোজাম্মেল হক - অর্থনীতি বিভাগ, স্ট্র্যাথক্লাইড বিশ্ববিদ্যালয়, গ্লাসগো সিপি,বাংলা স্কট ট্রাস্ট স্কটিশ যুব সংসদ অর্থনীতি বিভাগ,স্ট্র্যাথক্লাইড বিশ্ববিদ্যালয়,গ্লাসগো চ্যারিটি এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (CEI) জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (লন্ডন)মিলান অ্যাবারডিন সিটি কাউন্সিল,স্কটল্যান্ডে বৃহত্তর সিলেট উন্নয়ন ও কল্যাণ পরিষদ জেএমএন স্কটল্যান্ড লিমিটেড এবং স্কটল্যান্ডের বাংলাদেশী কমিউনিটির অন্যান্য স্বতন্ত্র,ইভান ম্যাকি এমএসপি সহ সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্কটল্যান্ড ও বাংলাদেশের মধ্যকার মহান সম্পর্কের প্রশংসা করে হাই কমিশনার তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

অনুষ্ঠানে ড.ইব্রাহীম রশিদ( পিএইচডি ফিলো স্টিরলিং ইউনিভার্সিটি  ইউকে) বাংলাদেশী ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতার উপর একটি প্রতিবেদন উপস্হাপন করে যার ফলশ্রুতিতে ইউকে তে শিক্ষা খাতে বাংলাদেশ আরও সম্প্রসারিত হবে সে বিষয় বিশদ আলোচনা করেন।এছাড়া আজরিনা আফরিন স্কটিশ বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানের শেষান্তে স্কটিশ পার্লামেন্ট সদস্য,শ্যাডো কালচারাল মিনিস্টার ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী, সৈয়দা মুনা চৌধুরী( বিএইচসি), কাজী জিয়াউল হাসান   (বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার ম্যানচেষ্টার)সহ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে অনুষ্ঠান সমাপ্ত করেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×