
আশুলিয়ায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ছয় জনকে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় দায়ীদের বিচার করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তে আজ ১৭তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। আজ দুজন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়ার কথা রয়েছে।
গত ৩০ অক্টোবর গুলিবিদ্ধ হওয়া ভুক্তভোগী সানি মৃধা ২১তম সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন। জবানবন্দিতে তিনি পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেন এবং গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। পরে স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার, প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ান ও অন্যান্যরা।
এর আগে গত ২৯ অক্টোবর জব্দতালিকার সাক্ষী হিসেবে আশুলিয়া থানার এসআই মো. আশরাফুল হাসান সাক্ষ্য দেন। তিনি জানান, চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল রাইফেলের ছয় রাউন্ড গুলি আশুলিয়া থানার ওসির নির্দেশে উদ্ধার করে থানায় জমা দেন।
মামলায় আটজন আসামি ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। তারা হলেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল এবং কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ আরও আটজন এখনও পলাতক রয়েছেন।
মামলার প্রথম দিনে, ১৫ সেপ্টেম্বর, শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম এবং শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান সাক্ষ্য দেন। এর আগে সূচনা বক্তব্য দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, যিনি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার হত্যাকাণ্ডের নৃশংস চিত্র তুলে ধরেন।
২১ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল-২ মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার আদেশ দেন। ওই সময় উপস্থিত আটজনের মধ্যে সাতজন নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে এসআই শেখ আবজালুল হক দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হতে চাওয়ার আবেদন করেন। পরে তার অংশিক দোষ স্বীকারের তথ্য রেকর্ড করা হয় এবং আদালত তাকে রাজসাক্ষী হওয়ার অনুমতি দেন।
মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ২ জুলাই জমা দেয়া হয়। অভিযোগপত্রের সঙ্গে ৩১৩ পৃষ্ঠার অন্যান্য তথ্যসূত্র, ৬২ জন সাক্ষীর বিবরণ, ১৬৮ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণ এবং দুটি পেনড্রাইভ সংযুক্ত করা হয়। ট্রাইব্যুনাল এই অভিযোগ গ্রহণ করেন এবং মামলাটি কার্যকরভাবে চলতে থাকে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে ছয় তরুণ নিহত হন। পরে তাদের লাশ পুলিশ ভ্যানে তুলে আগুনে পোড়ানো হয়। ঘটনাস্থলে একজন জীবিত ছিলেন, কিন্তু তাকে বাঁচানো হয়নি; পেট্রোল ঢেলে তাকে পুড়িয়ে মারা হয়। ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এই ঘটনার জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়ের করা হয়।