.png)
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড একটি বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক, যা ১৯৯৮ সালে কার্যক্রম শুরু করে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ১২টি ব্যাংকের পর্ষদ বিলুপ্ত করে নতুন পর্ষদ নিয়োগ দেন, যার মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকও রয়েছে।
সেই হিসেবে বর্তমান নতুন পর্ষদে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. আতাউর রহমান, মেঘনা ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মহসিন মিয়া, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব কামরুল হক মারুফ, জনতা ব্যাংক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম মরতুজা এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট শেখ আশ্বাফুজ্জামান। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে রয়েছেন মোহাম্মদ জিয়াউল করিম।
এই পর্ষদ যোগদান করার পর থেকে ব্যাংকটির আমানত, হিসাবধারীর সংখ্যা, বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স প্রবাহ, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ও খেলাপি ঋণ আদায়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সূচকে অগ্রগতি হয়েছে। ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থা ও আগামীর পরিকল্পনা ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. মহসিন মিয়া যা জানিয়েছেন তা পাঠকের কাছে তুলা ধরা হলো। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকাওয়াচ এর বিজনেস এডিটর ফরিদ উদ্দিন শ্রাবন।
ঢাকাওয়াচ: বর্তমান ব্যাংক খাতের সংকট কাটিয়ে উঠতে কী প্রদক্ষেপ নিচ্ছেন?
মহসিন মিয়া: বর্তমানে পুরো ব্যাংকখাতই চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা ব্যাংকের সার্বিক দুর্বলতা খুঁজে পদক্ষেপ নিচ্ছি। গ্রাহকের সমস্যা কিভাবে দ্রুত সমাধান করা যায়, সেই দিক বিবেচনা করে কাজ করছে বর্তমান পর্ষদ। সেবার দিক থেকে গ্রাহকেরদের জন্য ট্রেড অপারেশন অটোমেশন করা, কর্পোরেট ব্যাংকিং-এ নতুন নতুন সেবার সংযোজন করা, ব্যাংকের গ্রাহক সেবার মান উন্নয়ন নিরাপদ ও নির্ভুল সেবার নিশ্চয়তার বিভিন্ন ধরনের সেবা চালু রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভরশীল আধুনিক ব্যাংকে রূপান্তরিত একটি ব্যাংক বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।
গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর অনেক ব্যাংকই গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে হিমশিম খেয়েছে। অনেক ব্যাংক গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে পারেনি। সেখানে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক গ্রাহকের যতো টাকারই চেক হোক না কেন, কোনো গ্রাহকেই টাকা না দিয়ে ফেরত দেয়া হয়নি। ফলে গ্রাহকের আস্থা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে আমানত ও গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে। আট মাসে ৭৭১ কোটি টাকারও বেশি আমানত বেড়েছে।
গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে ৬০ হাজারেও বেশি। এছাড়া এই ব্যাংকে শতভাগ সুশাসন রয়েছে। আমানত বৃদ্ধি ও হিসাবধারীর সংখ্যা বৃদ্ধি মানেই গ্রাহকের পুরোপুরি আস্থা রয়েছে। এই আস্থা নিয়ে সামনে অনেক দূর এগিয়ে যাবো আমরা। গ্রাহকের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাদের আমানতের নিরাপত্তা। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক সেটা সব সময় নিশ্চিত করেছে। গ্রাহকরা তাদের আমানতের নিরাপত্তার কথা, সবার আগে চিন্তা করে। তাই আস্থা আছে বলেই, গ্রাহকরা আসছেন।
ঢাকাওয়াচ: নতুন গ্রাহকরা আপনার ব্যাংকে কেন আসবে ?
মহসিন মিয়া: বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের তার পণ্য ও সেবার গুণমানের বিষয়ে অত্যন্ত বিচক্ষণ। ব্যাংকে একদল মেধাবী কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা নতুন উদ্ভাবনী পণ্য এবং সেবা দিতে সক্ষম। ব্যাংকে অনুপ্রাণিত এবং উদ্যোমী কর্মকর্তারা রয়েছেন, যারা নতুন ব্যবসা অর্জন করতে সক্ষম। সর্বোপরি ব্যাংকের দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ একটি ভাল কর্পোরেট সুশাসন বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত সহায়ক ভ‚মিকা পালন করছে। বর্তমানে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের পর্ষদটি খুবই দক্ষ। সবাই শততার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
এছাড়া এই ব্যাংকটির অর্ধেক মালিকানা রয়েছে সরকারের। ফলে গ্রাহকের আমানত শতভাগ নিরাপত্তা রয়েছে। এই ব্যাংকের অনেক অর্জন রয়েছে। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে বর্তমানে ১০৭টি শাখা রয়েছে। ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। আমাদের ব্যাংকের প্রতিবছরের আর্থিক সূচকগুলো দেখলেই বুঝা যাবে যে, প্রতিবছরই ব্যাংকের আর্থিক সূচক উন্নতি হচ্ছে।
ঢাকাওয়াচ: প্রান্তিক মানুষের জন্য ক্ষুদ ঋণ দিতে অনেক ব্যাংক তেমন আগ্রহ দেখায় না সেক্ষেত্রে আপনার ব্যাংকের অবস্থান কী?
মহসিন মিয়া: কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতে ঋণ বিতরণে বেশি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অবদান অনস্বীকার্য। সার্বিক গুরুত্ব ও ঋণ ঝুঁকি বিবেচনায়, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ছোট ছোট উদ্যোক্তাদেরকে অর্থায়নে বেশ উদ্যোগী ভুমিকায় রয়েছে। আমরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে প্রচলিত নিয়মাচারের আলোকে ঋণদানে সচেষ্ট আছি। এছাড়া ভালো ব্যবসায়ীদের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। সব কর্পোরেটদের ঋণ দিচ্ছি না। বুঝে শুনে ঋণ দিচ্ছি। ছোট ব্যাংক তাই সাবধানে চলতে হবে। একবার হোচট খেলে পড়ে যেতে হবে।
ঢাকাওয়াচ: খেলাপি ঋণের অবস্থা কী?
মহসিন মিয়া: খেলাপি ঋণ আদায়ে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে একটা আইনের জটিলতা রয়েছে। সেই জটিলতা ভাঙতে সময়ের ব্যাপার। তবে ব্যাপক জোর দেয়া হচ্ছে খেলাপি ঋণ আদায়ে। বর্তমানে ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ একটু বেশি রয়েছে। বর্তমান বোর্ড আসার পর থেকে ব্যাংকে খেলাপির পরিমাণ বাড়েনি। ব্যাংকের খেলাপি ঋণগুলো সবই পুরানো ঋণ ছিল।
ঢাকাওয়াচ: ব্যাংকের ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই?
মহসিন মিয়া: আমাদের ব্যাংকিং সেবাকে ‘গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড’-এ উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের দিকে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে মানুষের কাছে বেশি পৌঁছানো যায়। বর্তমানে ডিজিটাল প্লাটফর্ম মানুষ বেশি পছন্দ করে। কারণ ঘরে বসে এখন মানুষ ব্যাংকিং করতে বেশি পছন্দ করে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে সরাসরি এতো গ্রাহকের কাছে যাওয়া সম্ভব না। তাই এখন ডিজিটাল উপরে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে যার যত ডিজিটাল সক্ষমতা বেশি, সেই ব্যাংকই ততো বেশি এগিয়ে যাবে। ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে মানুষের কাছে সহজেই পৌঁছানো সম্ভব। যা শাখা ও উপ-শাখা দিয়ে সম্ভব না। তাছাড়া অনেকটা খরচও কমানো সম্ভব। এছাড়া কর্পোরেট ঋণের পাশপাশি সিএমএসসিএমই এবং সুরক্ষিত রিটেল ঋণ যেমন, হোম লোন, কার লোন, গ্রামীণ গৃহ ঋণ উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ভালো প্রোডাক্ট রয়েছে। সেগুলো মানুষের কাছে পৌঁছানের জন্য আমরা কাজ করছি। কিভাবে মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ানো যায়, সেই জন্য কাজ করছি। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঋণ দেয়া সক্ষমতা রয়েছে। তাই এ সক্ষমতা কাজে লাগাতে চাই। এছাড়া আমদানি ও রপ্তানিতে বৃদ্ধিতে জোর দিতে দিয়েছি। রেমিট্যান্সেও জোর দিচ্ছি আমরা। এছাড়া আমাদের অনেকগুলো শাখা লসে রয়েছে। সেগুলোকে কিভাবে লাভবানে আনা যায়, বিষয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। আশা করছি, ৬ মাসের মধ্যে লস শাখাগুলো লাভে চলে আসবে।